‘মিষ্টিপ্রেমী’ চাঁদাবাজদের রুখতে যশোর পুলিশ সুপারের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
নতুন তৈরি করা বাড়ির মালিকের কাছ থেকে চাঁদাবাজি বন্ধে নয়া উদ্যোগ নিয়েছে যশোরের পুলিশ। এখন থেকে পুলিশের তদারকিতে বাড়ির মালিক বাড়ি নির্মাণ করতে পারবে। কেউ যদি চাঁদা দাবি করে সেক্ষেত্রে পুলিশই চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
যশোরকে স্বাভাবিক, সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে পরিচালিত করতে যশোরের নতুন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার যে কটি উদ্যোগ নিয়েছেন তার মধ্যে এটি অন্যতম।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ‘ক’ সার্কেল গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, যশোরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজির নতুন ধরন দেখা দিয়েছে। প্রত্যেক এলাকায় দুর্বৃত্তরা কথিত ইট, বালি, রড, সিমেন্টসহ বিভিন্ন মালামাল সাপ্লাইয়ার বা ব্যবসায়ীর নাম ধারণ করে বাড়ি নির্মাণকারীদের মালামাল নিতে বাধ্য করে। তাদের কাছ থেকে মালামাল নেয়া না হলে দুর্বৃত্তরা বাড়ি তৈরিতে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এছাড়া কথিত ‘মিষ্টি’ খাওয়ানোর নাম করে চাঁদা আদায় করে থাকে। প্রায় সময় শহরের নাগরিকরা পুলিশের কাছে এই ধরনের অভিযোগ দিয়ে থাকে। দুর্বৃত্তরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকে বলে নাগরিকরা সচরাচর পুলিশে লিখিত অভিযোগ দিতে সাহস পান না। ফলে পুলিশ বাধ্য হয়ে বাড়ির নির্মাণ কাজের তদরকি নিজেরা করবে বলে নাগরিকদের জানিয়ে দিচ্ছে।
তিনি বলেছেন, এই কাজে পুলিশ পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছে। প্রত্যেক এলাকায় বিট পুলিশিং ব্যবস্থা কার্যকর রয়েছে। যশোর শহর ও শহরতলীতে বিট পুলিশিং আছে মোট ২৩টি। আর পুরো জেলায় আছে ১২৯টি। প্রত্যেক বিটে একজন করে সাব-ইন্সপেক্টর রয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসাবে। তারা তাদের স্ব-স্ব মহল্লায় বাড়ি নির্মাণ কাজের তদারকি করবেন। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে এই কাজের তদারকি চলছে।
গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত যশোর শহরের ৯০টি নির্মাণাধীন বাড়িতে পুলিশের সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। সেখানে কোতোয়ালি থানার ওসি ও পুলিশ সুপারের মোবাইল নম্বর দেয়া আছে। ওই নির্মাণাধীন বিল্ডিং এ কাজে কোনও বাঁধা হচ্ছে কি-না তা তদারকি করছেন বিট পুলিশিং এর একজন অফিসার। এছাড়া কোতোয়ালি থানা, ফাঁড়ি পুলিশ বা ডিবি পুলিশকে তদারকি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও অভিযোগ পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, এই উদ্যোগ নেয়ার পর এখনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। একজন বাড়ি নির্মাতা শনিবার অফিসে এসে তার বিল্ডিং এর সতর্কীকরণ বোর্ড ঝুলানোর জন্য অনুরোধ করেছেন। পর্যায়ক্রমে শহরের সকল নির্মাণাধীন বিল্ডিংয়ে এই ধরনের সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি ঝুলানো হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শহরের খড়কী এলাকার এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, তিনি ওই এলাকায় জমি কিনে বিল্ডিং করতে যান। কিন্তু বাড়ি নির্মাণের শুরুতে ওই এলাকার কয়েকজন তার কাছে আসে। এবং তাদের কাছ থেকে ইট, বালি নিতে বলে। তিনি রাজি হয়ে প্রথমে নেন। কিন্তু নিম্নমানের ইট-বালি দেয়ার আর মালামাল নিতে চাননি। কিন্তু তাদের কাছ থেকে নেয়া ছাড়া কোনও উপায়ও ছিলো না। কারণ তারা চিহ্নিত দুর্বৃত্ত।’
তিনি আরও বলেছেন, পুলিশের নতুন উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কারণ তার নির্মাণাধীন বাড়িতে একটি বিজ্ঞপ্তি ঝুলিয়ে দিয়েছে পুলিশ। এরপর থেকে ওই দুর্বৃত্তরা আমার কাছে আসেনি। এই ধরনের উদ্যোগ আগে নিলে তার মতে ওই এলাকায় (খড়কী) বাড়ি নির্মাণকারীরা উপকার পেতেন।
জেবি
মন্তব্য করুন