দ্রুত বিচার আইনে তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের বিচার দাবি
শ্রম আইন সংশোধন করে দ্রুত বিচার আইনে তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের বিচার করতে হবে। এমন দাবি করলেন ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার ওয়াজেদুল ইসলাম।
সকালে রাজধানীর রিপোটার্স ইউনিটিতে তাজরিন অগ্নিকাণ্ডের ৪ বছর শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন তিনি।
ওয়াজেদুল ইসলাম বলেন, শিল্প প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধে মালিক, ক্রেতা ও সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইসঙ্গে বিল্ডিং কোড মানা, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যনীতি বাস্তবায়ন ও কারখানায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে হবে।
ডিএইচ
মন্তব্য করুন
বিমানবন্দরে ডলার আত্মসাৎ, ১৯ ব্যাংকারসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিমানবন্দরে ডলার ও অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা বিনিময় কারসাজিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ১৯ ব্যাংকার ও দুই মানি এক্সচেঞ্জের মালিকসহ ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বুধবার (২৭ মার্চ) মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। দুদকের উপপরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম মামলাটির বাদি হয়েছেন।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিদেশ থেকে আসা যাত্রীরা ডলারসহ প্রতিদিন যে শত কোটি টাকার বেশি মূল্যের বৈদেশিক মুদ্রা আনেন, ও্ই অর্থ জালিয়াতির মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছে ১৯ ব্যাংকার ও দুই দুইজন মানি এক্সচেঞ্জের মালিকের সমন্বয়ে গঠিত চক্রটি।
চক্রটি জাল ভাউচারের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ে তা খোলাবাজারে ছাড়ে। ব্যক্তিগত লাভের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যাংক ও নিবন্ধিত মানি এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা হয়েও তারা বেআইনিভাবে বিদেশি মুদ্রা কিনে খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন।
অভিযুক্ত ব্যাংকগুলো হচ্ছে জনতা ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং এভিয়া ও ইম্পেরিয়াল মানি এক্সচেঞ্জ।
অচল গার্মেন্টসকে সচল দেখিয়ে ২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ
অচল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সচল দেখিয়ে ঋণ দেওয়ার নামে প্রায় ২ কোটি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের ৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদকের কুমিল্লা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে উপপরিচালক সুবেল আহমেদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন বলে বুধবার (২৭ মার্চ) জানিয়েছে সংস্থাটির ঊর্ধ্বতন একটি সূত্র। মামলায় যে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ তোলার অভিযোগ, তার মালিককেও আসামি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, মামলার আসামিরা হলেন মেসার্স সার্ক গার্মেন্টস এক্সসেসরিজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক এস এম কবির, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের সাবেক অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার মির্জা তৈয়বুর রহমান, সাবেক প্রিন্সিপাল অফিসার মো. ছাইদুর রহমান, সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার আফতাব উদ্দিন আহমেদ, কে এম মইন উদ্দিন, মো. নুরুল ইসলাম, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. হারুন উর রশিদ খান ও ইউনিক সার্ভে সার্ভিস ব্যুরোর সার্ভেয়ার মো. মোশাররফ হোসেন দোলন।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ৭ জন ব্যাংক কর্মকর্তা ক্ষমতার অপব্যবহার করে অচল গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানকে সচল দেখিয়ে ও ১৪ শতক বন্ধকীকৃত জমির অতিমূল্যায়ন করে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সিসি ঋণের লিমিট বৃদ্ধি করে এবং প্রতিষ্ঠান চালু না থাকা সত্ত্বেও চালু দেখিয়ে ওই কর্মকর্তারা অচল গার্মেন্টস মালিকের সঙ্গে যোগসাজশ করে বিভিন্ন সময়ে ধাপে ধাপে ব্যাংকের মোট এক কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। তাই আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।
দুদকের অনুসন্ধানকারীরা দেখতে পেয়েছেন যে, মেসার্স সার্ক গার্মেন্টস এক্সেসরিজের নামীয় প্রতিষ্ঠানটি চারতলা রেডিমেইড গার্মেন্টসের ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ পণ্য ইন্টারলাইনিং উৎপাদন করার জন্য ঋণের নাটক সাজিয়ে ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেডের আশুগঞ্জ শাখা থেকে এক কোটি ৯৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা ঋণ উত্তোলন করে।
জাল টাকা তৈরি চক্রের মূলহোতাসহ গ্রেপ্তার ৩
ঈদুল ফিতর টার্গেট করে জাল টাকা তৈরি করা একটি চক্রের মূলহোতাসহ আরিফ ব্যাপারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) ভোরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৩-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, শরীয়তপুরের নড়িয়ার চরমোহনপুর এলাকায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের মূলহোতা আরিফ ব্যাপারীসহ তিনজকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানানো হবে।
গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে জাল টাকা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ বিপুল পরিমাণ জাল নোট জব্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন লে. কর্নেল আরিফ।
শিশু অপহরণ করে বিক্রি করতো চক্রটি
গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) প্রধান হারুন অর রশীদ জানিয়েছেন, রাজধানীতে শিশু অপহরণ বেড়েছে। বোরকা পরে পরিচয় গোপন রেখে শিশু চুরি করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে অভিভাবকদের আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
জানা গেছে, রাজধানীতে অপহরণের এক সপ্তাহ পর বুধবার (২৭ মার্চ) আড়াই বছরের শিশু তাওসীনকে কুমিল্লা থেকে উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। একই সঙ্গে অপহরণকারী সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা (২২), তার স্বামী সাইফুল ইসলাম (২৭) এবং ক্রেতা মো. শাহজাহানকে (৩৪) গ্রেপ্তার করা হয়।
হারুন অর রশীদ জানান, বিভিন্ন এলাকা ঘুরে চাহিদামতো শিশুদের খুঁজতো সুলতানা আক্তার ওরফে নেহা। টার্গেট করা শিশুদের চকলেট, চিপস কিনে দিতো। নানা প্রলোভন দেখিয়ে কোলে নিয়ে সটকে পড়তো। পরে নিঃসন্তান দম্পতির কাছে মোটা অংকের টাকায় ওই শিশুদের বিক্রি করতো।
তিনি জানান, গত ২১ মার্চ বিকেলে রাজধানীর হাজারিবাগের ভাড়া বাসার সামনে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল শিশু তাওসীন। হঠাৎ অপরিচিত এক নারী চকলেট-চিপসের লোভ দেখিয়ে তাকে দোকানে নিয়ে যান। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুটিকে অপহরণ করে নিয়ে যায় ওই নারী। অনেক খোঁজাখুঁজির পর তাওসীনকে না পাওয়ায় তার বাবা আইনরক্ষাকারী বাহিনীর শরাণাপন্ন হন।
তিনি আরও জানান, শিশুটির বাবার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডিবি কুমিল্লা থেকে এক নারীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ডিবি প্রধান জানান, অর্ধ লাখ টাকার বিনিময়ে শিশুটিকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন বোরকা পরা ওই নারী। পরে ওই শিশুকে উদ্ধারসহ বিক্রয়ের ২৩ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, শিশু পাচারকারীর সঙ্গে আরও কেউ যুক্ত আছে কি না এ ব্যাপারে আরও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
বড় মনিরের বিরুদ্ধে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের মামলা
ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে ঢাকায় এক কলেজছাত্রীকে কৌশলে ফ্ল্যাটে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগে টাঙ্গাইলের আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
শনিবার (৩০ মার্চ) তুরাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোস্তফা আনোয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বরে (৯৯৯) কল পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই কলেজছাত্রীকে উদ্ধার করে। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে ভর্তি করা হয়। টাঙ্গাইলের গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ভুক্তভোগী ছাত্রী মামলা করেছেন। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
মামলার অভিযোগে ওই কলেজছাত্রী উল্লেখ করেন, ফেসবুকে গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনিরের সঙ্গে পরিচয় হয়। প্রথম পর্যায়ে হাই-হ্যালো হতো। এক পর্যায়ে বড় মনির ভুক্তভোগীকে ছোট বোন বলে সম্বোধন করে। এরপর তার সঙ্গে ছাত্রীর হোয়াটসঅ্যাপে অডিও-ভিডিওতে কথা হতো। এরপর গত ২৯ মার্চ ইফতারের পর গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মেসেজ দিয়ে জমজম টাওয়ারের সঙ্গে এপেক্স শোরুমের সামনে থাকতে বলে। সন্ধ্যা ৭টা ৩৫ মিনিটের সময় এপেক্স শো-রুমের সামনে অপেক্ষা করি। এর ১০/১৫ মিনিট পর বড় মনির রিকশা নিয়ে আসে এবং রিকশায় উঠতে বলে। বড় মনিরের কথামতো ভুক্তভোগী ছাত্রী তার সঙ্গে রিকশায় উঠেন। রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুরাগ থানাধীন প্রিয়াংকাসিটি ৬ নম্বর রোডের ৭ নম্বর বাসার পশ্চিম পাশের ফ্ল্যাটের তৃতীয় তলার উত্তর-পশ্চিম পাশের রুমের ভেতর নিয়ে যান। এরপর রুমের দরজা বন্ধ করে ধর্ষণ করেন। এরপর ভুক্তভোগী ছাত্রী তার বাবাকে ফোন দেন। তার বাবা ঘটনা শুনে জাতীয় জরুরি সেবা-৯৯৯ এ ফোন দেন। পরে তুরাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়।
উল্লেখ্য, গোলাম কিবরিয়া ওরফে বড় মনির জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিব এবং টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের সংসদ সদস্য তানভীর হাসান ওরফে ছোট মনিরের বড় ভাই। এর আগে, এক কিশোরীকে (১৭) ধর্ষণের অভিযোগে গত বছরের ৫ এপ্রিল টাঙ্গাইল সদর থানায় বড় মনিরের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল।
৩০ হাজার টাকায় কারিগরির সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান!
বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেটসহ বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টা থেকে রাজধানীর আগারগাঁও এবং পীরেরবাগে যৌথ অভিযান পরিচালনা করে ডিবি। অভিযানে বিপুল পরিমাণ জাল সার্টিফিকেট ও সার্টিফিকেট তৈরির সরঞ্জামসহ শামসুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানে নেতৃত্ব দেন গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান।
তিনি বলেন, শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরেই ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকায় কারিগারি শিক্ষাবোর্ডের সনদ বিক্রি করে আসছিলেন। প্রতিষ্ঠানটির সার্ভার তার নিয়ন্ত্রণে থাকায় অনলাইনেও এসব সার্টিফিকেটের অস্বিত্ব পাওয়া যায়।
উপপুলিশ কমিশনার মশিউর রহমান আরও বলেন, শামসুজ্জামান শিক্ষাবোর্ড থেকে সনদ ছাপানোর অর্জিনাল পর্যন্ত কাগজ চুরি করেছেন। পরে ওইসব কাগজে সনদ ছাপিয়ে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থীর কাছে বিক্রি করা হতো। এ ঘটনায় আরও কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা জানতে তদন্ত চলছে।
ফোনে ‘পার্টটাইম চাকরি’ দেওয়ার নামে ভয়াবহ প্রতারণা
‘হ্যালো স্যার, আমি স্ন্যাপটেক ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি থেকে বলছি। আমরা আপনাকে ঘরে বসেই পার্টটাইম চাকরির অফার করছি। যার মাধ্যমে আপনি দৈনিক পনেরশ থেকে দুই হাজার টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি কি কাজটি করতে আগ্রহী? যদি আগ্রহী হন তাহলে আমরা আপনাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত হোয়াটসঅ্যাপে পাঠাচ্ছি।’ আরটিভির একজন সাংবাদিককে ফোন করে অপরপ্রান্ত থেকে কেউ একজন নারীকণ্ঠে ইংরেজিতে কথাগুলো বলছিলেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার এমন ফোনকল পেয়েছিলেন ওই সাংবাদিক, তবে আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু এবার বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানের জন্য তিনি তার আগ্রহের কথা জানান। এরপরই বেরিয়ে আসে অনলাইনে ভয়াবহ প্রতারণার নতুন কৌশল।
আরটিভির ওই সাংবাদিকের নাম সজিব খান। ফোনকলে তিনি কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করার পর ফোনের অপরপ্রান্ত থেকে জানতে চাওয়া হয়, ‘আপনাকে যে নম্বরে ফোন করেছি, তাতে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট খোলা আছে কি না।’ জবাবে ‘হ্যা’ সূচক শব্দ শোনার পর ‘ঠিক আছে আপনাকে বিস্তারিত পাঠাচ্ছি’ বলে ফোন কেটে দেন নারীকণ্ঠের ওই ব্যক্তি। এই পর্যন্ত ইংরেজিতেই কথাবার্তায় চলছিল। এবার হোয়াটসঅ্যাপ খুললে দেখা যায়, অপরিচিত আরেকটি নম্বর থেকে বাংলায় ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে, ‘আমি স্ন্যাপটেক ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানি থেকে আফরোজা সুলতানা বলছি। আমাদের দলের একজন সদস্য আপনার আগ্রহের কথা আমাকে জানিয়েছে। আমরা মূলত ইউটিউবের মাধ্যমে বিভিন্ন কোম্পানির প্রচার বা প্রসার বাড়াতে সাহায্য করে থাকি। আপনার কাজ হলো। ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করা। এর মাধ্যমে আপনি দৈনিক ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা আয় করতে পারবেন।’
এরপর ওই সাংবাদিকের নাম, বয়স, পেশা, বিকাশ নম্বর এবং মোবাইল নম্বর জানতে চাওয়া হয়। তিনি চালাকি করে মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে বাকিসব ভুয়া তথ্য দেন (ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার জন্য)। এরপর প্রথম ধাপে তাকে তিনটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে স্ক্রিনশট পাঠাতে বললে তিনি তা করেন। পরে সঙ্গে সঙ্গে বিকাশে তিন শ টাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর দ্বিতীয় ধাপে একটি টেলিগ্রাম গ্রুপের লিংক দিয়ে সেখানে যুক্ত হতে বললে তিনি তা করেন। এরপর ওই টেলিগ্রাম চ্যানেলে গিয়ে দেখা যায় সেখানে আরও কয়েকশ সদস্য রয়েছেন। গ্রুপে বিভিন্ন টাস্ক দেওয়া হচ্ছে। টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হওয়ার পর প্রথম টাস্ক হিসেবে দুটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করতে বলা হয়। এরপর সেগুলো সাবস্ক্রাইব করে স্ক্রিনশট পাঠানোর পর আরও দুই শ টাকা ওই সাংবাদিকের বিকাশে আসে।
প্রথমে ৩০০ টাকা এবং পরের ধাপে ২০০ টাকা। এভাবে মোট ৫০০ টাকা পাঠানোর পরই বেরিয়ে আসে চক্রটির আসল রূপ। পরবর্তী টাস্ক হিসেবে এবার তারা তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগের অফার করেন। যেই অংক প্যাকেজভেদে ১৬০০ টাকা থেকে শুরু করে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। আর বিনিয়োগ করলেই ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে সেই টাকা নির্দিষ্ট হারে সুদসহ ফেরত পাওয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। যেমন: ১৬০০ টাকা বিনিয়োগ করলে পাওয়া যাবে ২৪০০ টাকা। আর ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৮০০ টাকা বিনিয়োগ করলে দেওয়া হবে ৮ লাখ ৩৮ হাজার ২৪০ টাকা।
টেলিগ্রাম গ্রুপটিতে বিনিয়োগের এই টাস্ক দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই দেখা যায়, গ্রুপে থাকা বিভিন্ন আইডি থেকে একের পর এক বিনিয়োগের টাকা জমা করার স্ক্রিনশট দেওয়া হচ্ছে। চক্রটির বিকাশ নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাঠানোর স্ক্রিনশট গ্রুপে দেখা যায়। তবে স্ক্রিনশটগুলো যাচাই-বাছাই করে আরটিভির ওই সাংবাদিকের কাছে ভুয়া মনে হয়েছে। তারপরও তিনি চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে আরও জানার জন্য ১ লাখ টাকা বিনিয়োগের মিথ্যা অফার দেন। কিন্তু তারা প্রথম ধাপে ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ না করে কম টাকা বিনিয়োগের অফার দেন।
এ বিষয়ে আরটিভির সাংবাদিক সজিব খান বলেন, তাদের যখন আমি ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবো বলে জানাই। তখন তারা আমাকে প্রথমে কম অর্থ বিনিয়োগ করতে বলে। কিন্তু আমি তাদের জানাই আমি এক লাখ টাকাই বিনিয়োগ করবো। কিন্তু তারা আমাকে জানায় নতুন সদস্যরা ১৬০০ টাকার বেশি বিনিয়োগ করতে পারবে না। পরে আমি তাদের বলি আমার টাকা আমি বিনিয়োগ করব তাতে আপনাদের সমস্যা কী? এ নিয়ে কথা চালাচালির এক পর্যায়ে তারা আমাকে ব্লক করে দেয়।
তিনি বলেন, প্রথম থেকেই আমার ধারণা ছিল, তারা প্রতারণা করছে। চক্রটির কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এবং পরবর্তীতে এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে আমি তাদের সঙ্গে নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছি। ১ লাখ টাকা বিনিয়োগ করার মিথ্যা অফার দিয়ে চক্রটি কোন পর্যন্ত যেতে পারে এবং তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু তারা আমাকে কম টাকা বিনিয়োগ করে আমার বিশ্বাস অর্জনের চেষ্টা করছিল। এটি তাদের একটি কৌশল। আর আমি তো তাদের কোনো টাকা দেব না। ফলে আমি এমনিতেই তথ্য বের করার জন্য কথা-চালাচালি করছিলাম। এরপর বিনিয়োগ না করায় একপর্যায়ে তারা আমাকে গ্রুপ থেকে ব্লক করে দেয়।
এদিকে গত কয়েকমাস ধরে আরও অনেকেই এমন ফোন পেয়েছেন বলে জানা গেছে। কখনও স্ন্যাপটেক ডিজিটাল মার্কেটিং, কখনও আর্চ ডিজিটাল মার্কেটিং কোম্পানির পরিচয়ে এসব ফোনকল পাচ্ছেন তারা। প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন নম্বর থেকে ফোন আসছে এবং ইংরেজিতে ঘরে বসে ‘পার্টটাইম চাকরি’র লোভনীয় অফার দেওয়া হচ্ছে।
সাভারের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলামের কাছেও বেশ কয়েকবার এমন ফোন এসেছিল। তিনি বলেন, কয়েকটি ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করার পর আমাকে বিনিয়োগ করতে বলা হয়। এর জন্য আমাকে দুইদিন সময় দিয়েছিল। কিন্তু আমি তাদেরকে টাকা পাঠাইনি। দুইদিন পরে আমাকে গ্রুপ থেকে বের করে দিয়েছে।
জানা গেছে, চক্রগুলো সাধারণত প্রথমে অল্প পরিমাণ টাকা দিয়ে বিশ্বাস স্থাপন করে। এরপর তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ করলে অতিরিক্ত সুদসহ অর্থ ফেরত দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়। অনেক ক্ষেত্রে শুরুর দিকে বিনিয়োগ করলে অর্থ ফেরতও পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতারকদের মূল উদ্দেশ্য হলো বড় অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া।
ইন্টারপোলের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ ধরনের প্রতারণাকে বলা হয় ‘পিগ বুচারিং ফ্রড’। এটি এক ধরনের ‘ইনভেস্টমেন্ট ফ্রড’ বা বিনিয়োগ প্রতারণা।
এদিকে পুলিশ বলছে, আকর্ষণীয় বেতনে ঘরে বসে পার্টটাইম বা ফুলটাইম চাকরির প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ১০-১২ লাখ টাকাও হারিয়েছেন এই ধরনের অভিযোগ তারা নিয়মিত পেয়ে থাকেন। বিদেশি একটি চক্র মূলত এ ধরনের অপকর্ম করছে। তাদের সঙ্গে কিছুও বাংলাদেশিও জড়িত। এ ধরনের অপরাধে জড়িত থাকার দায়ে ইতোমধ্যেই কয়েকজন চীনা ও বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) উত্তরের সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের সহকারী কমিশনার (এডিসি) জুনায়েদ আলম সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, এটা ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম যা মূলত বিদেশিদের দ্বারা পরিচালিত। তারা টাকা সংগ্রহের জন্য বাংলাদেশিদেরও ব্যবহার করে। এসব প্রতারক চক্রকে ধরতে আমরা প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছি। কিন্তু যাদেরকে ধরছি তারা মূলত সহযোগী।
তিনি বলেন, এ ধরনের চক্রের কবলে পড়ে খোয়ানো টাকা উদ্ধার করা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। কারণ ভিক্টিমদেরও অনেক সময় ভিক্টিমাইজ করা হয়। ধরেন আপনাকে তারা টার্গেট করল, বলল যে তাদের কাছে রেজিস্ট্রেশন করলে ৩০০ টাকা পাবেন। যে নম্বর থেকে টাকা আসে দেখা যায় সেটিও আরেকজন ভিক্টিমের। যিনি ওই টাকা ইনভেস্ট করেছেন। এটা খুবই জটিল চক্র। এখানে কয়েক স্তরে অর্থ লেনদেন হয়। এর ফলে অপরাধীকে ধরা না যায়।