• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

চোখের সামনে লোকটা মরল, মানবতা কোথায়?

মোস্তফা ইমরান রাজু, মালয়েশিয়া

  ১৩ মে ২০১৭, ১৯:৪৪

শুক্রবার দুপুর দুইটা, মালয়েশিয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন ঘেষা প্রবাসী রেস্টুরেন্টের মেঝেতে পড়ে ছটফট করছে পঞ্চাশোর্ধ এক ব্যক্তি। আশপাশে থাকা অর্ধশতাধিক মানুষ সে দৃশ্য দেখেছে কিন্তু সহযোগিতার হাত বাড়ায়নি কেউ। প্রায় আধা ঘণ্টা পর মৃত্যু নিশ্চিত হলে দৃশ্য দেখতে থাকা মানুষগুলো যে যার কাজে ব্যস্ত হয়ে যায়। এ ঘটনায় বিষ্মিত ও স্তম্ভিত বিবেকবান মানুষেরা। ঝড় উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও। তারা বলছেন, এই যদি হয় চিত্র তাহলে মানবতা কোথায়? বিকাল ৩টায় এ প্রতিবেদক যখন পৌঁছেছেন তখন মৃত্যু নিশ্চিত হয়েছে আনু মিয়ার। একটি বেষ্টনির মধ্যে মেঝেতে লুটিয়ে আছে তার মরদেহ। কাপড় দিয়ে শরীর ঢাকা। তখনও তাকে ঘিরে রেখেছে জনা ৩০ বাংলাদেশি। সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কয়েকজন নিরাপত্তাকর্মী। হাইকমিশনের কর্মকর্তারা দফায় দফায় মরদেহ দেখতে আসছেন।

এ প্রতিবেদকের সঙ্গে কথোপকথনে এক কর্মকর্তা আপসোসের সুরে বললেন, ‘কোথায় আজ আমাদের মানবতা! কেউ একজন এগিয়ে আসলে হয়তো লোকটাকে মরতে হতো না।’

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে এ নিয়ে উঠেছে আলোচনার ঝড়। সোহাগ নামে এক যুবক লিখেছেন, ‘অবহেলিত বাঙালি। তামাশা দেখে, কিন্তু হাসপাতালে নেয় না। তাও আবার মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের ভেতর। এইমাত্র বাংলাদেশ অ্যাম্বাসিতে এম.ডি. আনু মিয়া ট্র্যাভেল পাস নিতে এসে অ্যাম্বাসির ভেতর স্ট্রোক করে মারা গেছে, ২০০ মানুষের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। স্ট্রোক এর ৪০ মিনিট পর সবাই যখন মৃত্যু নিশ্চিত দেখলো তখন মেডিক্যাল টিম, রিপোর্টারদের কল করা হলো--- আফসোস আমাদের বিবেকের।’

মৃত আনু মিয়ার পরিচয় নিয়ে নতুন জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তার পকেটে ইউএন (ইউনাইটেড ন্যাশান) কার্ড পাওয়া গেছে যা তাকে মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করে।

অপরদিকে তার ভোটার আইডি কার্ড এবং জন্মনিবন্ধন বলছে তিনি বাংলাদেশি। টেকনাফে তার বাড়ি। এখন অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় থাকা আনু মিয়াকে নিয়ে বিভ্রান্তিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন। বাংলাদেশি নিশ্চিত না হলে তাকে দেশে পাঠানো সম্ভব নয় বলছেন দেশটিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের লেবার কাউন্সিলর সায়েদুল ইসলাম। এ নিয়ে তদন্ত শেষে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানান তিনি।

দীর্ঘদিন মালয়েশিয়া প্রবাসী হামিদ বিন মোহাম্মদ আলি বলছেন, হয়তো আনু মিয়া বৈধতার সুবিধা নিতে ইউএন কার্ড নিয়েছেন। তবে তার দেশ বাংলাদেশ এ কারণেই তিনি বাংলাদেশ হাইকমিশনে ট্র্যাভেল পারমিট নিতে এসেছিল। মৃত্যুর পরও তাই আনু মিয়াকে ঝুলতে হচ্ছে মানবতার কাঠগড়ায়। হাসপাতালের মর্গে হিমশিতল ঘরে ঠাঁই হয়েছে তার। শেষপর্যন্ত তাকে কোথায় পাঠানো হবে? মিয়ানমার নাকি বাংলাদেশে? সে প্রশ্ন জনমনে। তার থেকেও বড় প্রশ্ন কোথায় আজ মানবতা? মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটফট করতে থাকা মানুষের পাশেও আমরা দাঁড়াতে সংকোচ বোধ করি! হোক সে মিয়ানমার কিংবা বাংলাদেশি। আমরা ভুলে গেছি সবার উপরে মানুষ সত্য তার উপরে নাই।

সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • অপরাধ এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh