• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

পুলিশ পরিচয়ে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে গাড়িতে তুলে ছিনতাই

আরটিভি নিউজ

  ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৪৭
ছবি : সংগৃহীত

প্রাইভেটকার নিয়ে বাসস্ট্যান্ডসহ জনবহুল এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে তোলেন গাড়িতে। কিছুক্ষণ পরেই প্রকাশ পায় চালক ও সহযাত্রীদের আসল চেহারা। তারা মূলত ছিনতাইকারী। নির্মম নির্যাতন করে আদায় করা হয় মোটা অংকের টাকা।

পুলিশ বলছে, শুধু রাতে নয়, দিনের বেলায়ও ছিনতাই করেন তারা। তাদের মূল বিচরণক্ষেত্র ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে। এ রকম একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

প্রযুক্তি এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফরিদপুরের ভাঙ্গার একটি এটিএম বুথ থেকে গত বছরের ২৩ নভেম্বর কার্ড ব্যবহার করে টাকা তুলছেন যে ব্যক্তি এই কার্ডের প্রকৃত মালিক তিনি নন। একজনকে অপহরণ করে তার সঙ্গে থাকা এটিএম কার্ড দিয়ে টাকা তুলছেন তিনি। একই বছরের জুলাই মাসের ২০ তারিখে আরেকটি এটিএম বুথের সিসি ক্যামেরার ফুটেজেও টাকা তুলতে দেখা যাচ্ছে এই একই ব্যক্তিকে। এখানেও এই একই ঘটনা। বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা ব্যক্তির নাম আফজাল। তিনি মূলত একটি ছিনতাইকারী চক্রের প্রধান।

রাসেল আহমেদ গত ২৩ জানুয়ারি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে আফজাল বাহিনীর হাতে ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছিলেন। ঢাকায় আসার জন্য তিনি দাঁড়িয়েছিলেন শ্রীনগরের ষোলঘর ইউনিয়নের একটি এলাকায়। একটি প্রাইভেটকার এসে থামে তার সামনে। ভাড়া মিটিয়ে তিনি উঠে পড়েন গাড়িতে। পরের ঘটনা শোনা যাক তার মুখেই।

সেই রাসেল বলেন, তারা পুলিশ পরিচয় দিয়ে আমার হাত-পা বেঁধে ফেলেন। পকেট থেকে ম্যানিব্যাগ, মোবাইল ও হাত থেকে ঘড়ি নিয়ে নেন। আমাকে বেধড়ক মেরেছে। কথা বলারও সুযোগ দেয়নি। আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে তারা বলেন যে, আপনার স্বামীকে রিসোর্ট থেকে মেয়েসহ ধরা হয়েছে। তাকে মারধর করা হচ্ছে। এই ধরনের উল্টাপাল্টা কথা বলে তারা বলেন যে তারা পুলিশের লোক। তারা আমাকে সেভ করেছেন। আমাকে সোপর্দ করার কথা বলে আমার স্ত্রীকে এক লাখ টাকা নিয়ে আসতে বলেন।

এই মহাসড়কে রাসেলের মতো ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছেন আরও একাধিক ব্যক্তি। এক ভুক্তভোগী বলেন, আমার কাছ থেকে মোবাইল, টাকা নিয়ে নেয় ছিনতাইকারীরা। সেইসঙ্গে এটিএম কার্ড, বিকাশ ও নগদের পাসওয়ার্ড নিয়ে নেন তারা।

থানা পুলিশের কাছে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে চালু হওয়ার পর ঠিক কি পরিমাণ ছিনতাই এবং ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে এই এক্সপ্রেসওয়েতে তার কোনো সঠিক পরিসংখ্যান নেই। কারণ অনেকেই যারা ভুক্তভোগী অর্থাৎ ছিনতাই কিংবা ডাকাতির শিকার হয়েছেন তারা থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি কিংবা মামলা করেননি। তবে যেসব ঘটনায় মামলা কিংবা সাধারণ ডায়েরি হয়েছে সেগুলো তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ পেয়েছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। একাধিক ডাকাত চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে, তাদেরকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের পর তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও একই কাণ্ড ঘটাচ্ছে।

পুলিশ প্রযুক্তি এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে শনাক্ত করে আফজাল বাহিনীকে। মূলহোতা আফজালসহ গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনজনকে। পুলিশ বলছে, ১১ মামলার আসামি আফজালের দলে আছেন একাধিক সদস্য। প্রতিদিন তিন থেকে চারজনকে নিয়ে তিনি বের হন ছিনতাইয়ের উদ্দেশে।

কেরাণীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহাব উদ্দিন কবির গণমাধ্যমে বলেন, কবে কাজ করবে, কীভাবে করবে- আফজাল এসব পরিকল্পনাগুলো করতেন। তিনি পালাক্রামে একেকদিন ৪ থেকে ৫ জনকে নিয়ে নিয়ে কাজটা করতেন। আফজালের কাছ থেকে এই হাইওয়ে রোডে এ ধরনেরই আরও কয়েকটি গ্রুপের তথ্য পেয়েছি।

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে, রাজধানীর তিনশো ফিট, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জসহ যেসব সড়কে বিরতিহীনভাবে যানবাহন চলাচল করে সাধারণত সেসব এলাকায় তাদের মূল বিচরণক্ষেত্র।

এ বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা শাহাব উদ্দিন কবির আরও বলেন, বাসস্ট্যান্ডসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে খুব চতুরভাবে নিজেরাও যাত্রী সেজে চক্রটির সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তিকে প্রলুব্ধ করতেন। সাধারণত যাত্রীরা মনে করেন যে বাসে করে গেলে বিভিন্ন জায়গায় থেমে থেমে গেলে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেরি হবে। প্রাইভেটকারে করে গেলে দ্রত পৌঁছে যাওয়া সম্ভব হবে। সামান্য একটু সময় বাঁচাতে গিয়ে তারা বিপদে পড়ে যান।

পুলিশ বলছে, একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বেশ কয়েকটি মামলার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এতে পুলিশের মতে ছিনতাইকারীদের হাত থেকে বাঁচতে দরকার যাত্রী সাধারণের সচেতনতা।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘আমাকে মেরে ফেলেন ভাই’
যে কারণে পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
যে কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে হামলা
রাজধানীতে পুলিশ ক্যাম্পে আগুন
X
Fresh