• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ভালোবাসা দৌড়ের উপর

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, ১৮:১৬

সময়টা ছিল ২০০৭ সাল। মফস্বল থেকে স্কুলের পাঠ চুকিয়ে ঢাকায় একটা প্রাইভেট কলেজে ভর্তি হয়েছি। ঢাকায় নতুন, তাই ঠাই নিতে হয়েছিল কলেজ হোস্টেলে। কলেজে ক্লাস করতাম, অবসর সময়ে হোস্টেলে গল্পের বই আর লুকিয়ে যে মোবাইল ফোনটা ব্যবহার করতাম সেটাতে এফএম রেডিও শুনে সময় কাটতো।

গল্পের বই বলতে তখন তিন গোয়েন্দা পড়ার নেশাটা ছিল চরমে। তিন গোয়েন্দার ১ থেকে ১০২ ভলিউম পর্যন্ত সংগ্রহে ছিল আর নতুন বই বের হওয়ার সাথে সাথে কিনে পড়া শুরু করতাম। আমার ভালোবাসার গল্পটা শুরু এই তিন গোয়েন্দা বই এর মাধ্যমেই। তখন তিন গোয়েন্দায় চিঠি পাঠানো যেত। সেবা প্রকাশনীর ঠিকানায় চিঠি পাঠালে যার লেখাটা ভালো হতো নতুন ভলিউমের পেছনে সেটা ছাপানো হতো নাম-ফোন নম্বরসহ।

একদিন আমিও চিঠি লিখলাম কিন্তু ছদ্মনামে এবং সেই চিঠিটা ছাপানো হলো ফোন নম্বরসহ তিন গোয়েন্দার ভলিউম ১০৩ এ। একদিন বিকেলে আনমনে বই পড়ছি হঠাৎ মোবাইলে একটা এসএমএস আসলো ‘তুমি আমার বন্ধু হবে?, জেরিন’! সেই থেকে শুরু এসএমএস চালাচালি তারপর একটু একটু ফোনে কথা এবং সব শেষে প্রেম।

মনে আছে ২০০৭ সালের আগস্টের ৩ তারিখ রাতে জেরিন আমাকে প্রপোজ করেছিল। যদিও তখন পর্যন্ত কেউ কাউকে দেখি নাই। ওহ! আরেকটা কথা বলে নিই এই ৩ সংখ্যাটা আমাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। সেটা কীভাবে পুরু গল্পটা পড়লেই বুঝতে পারবেন। যাইহোক, আগস্টের ৩ তারিখ থেকেই আমাদের প্রেমের শুরু। ও আমাকে মজা করে স্পাইডার ড্রাকুলা বলে ডাকতো আর আমি ভ্যাম্পেয়ার বলে ডাকতাম। কত রাত লুকিয়ে লুকিয়ে ফোনে কথা বলে পার করেছি তার ইয়ত্তা নেই। প্রথম প্রেম! প্রথম ভালোলাগা বলে কথা। তখন ওর কোনো মোবাইল ফোন ছিল না তার আম্মুর ফোন দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে কথা বলতো। সেই সময়ে ক্লাস নাইনের একটা মেয়ের মোবাইল ফোন না থাকাটাই স্বাভাবিক ছিল। কিছু মজার সংকেত ছিল একটা মিসড কল মানে এখন এসএমএস চালাচালি হবে, দুইটা মিসড কল মানে সে আমাকে মিস করছে আর তিনটা মিসড কল মানে এখন ফোনে কথা বলা যাবে।

এভাবেই চুপিচুপি আমাদের প্রেম চলতে লাগলো কেউ কাউকে না দেখেই। কিন্তু অবুঝ মন দুটো একে ওপরকে না দেখে কী থাকতে পারে। একদিন ঠিক হলো আমরা দেখা করবো ২৩শে নভেম্বর। প্রেম শুরুর প্রায় ৩ মাস পর! কী গিফট দেয়া যায় বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করলাম ৩৩টা প্রাণ ললিপপ (কারণ ওর ললিপপ খুউব পছন্দের ছিল), ৩টা চকলেট, ৩টা লাল গোলাপ আর একটা ভ্যালেন্টাইন শো পিস গিফট করবো। দেখা করার আগের রাতে এক ফোঁটাও ঘুমুতে পারিনি উত্তেজনায়। জীবনের প্রথম প্রেম যাকে কোনোদিন দেখিনি তার সাথেই দেখা করতে যাচ্ছি। সাত-পাঁচ ভাবতে ভাবতেই কখন যে সকাল হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। কথা ছিল ওর স্কুলের পাশে প্যারামাউন্ট নামে একটা দোকান আছে তার পাশে বটগাছের নিচে দাঁড়িয়ে ধাকবো। ও স্কুল ছুটির পরে ১টার সময় আসবে। জেরিনই আমাকে খুঁজে বের করবে। আমি থাকবো আমার কলেজের ড্রেস পড়ে, কারণ সোল্ডার ব্যাচে আমার কলেজের নাম আছে যা দেখে ও চিনে ফেলবে আমাকে। আর ওকে চেনার একমাত্র উপায় হলো চোখে চশমা। সকাল বেলা কলেজের নাম করে বের হলাম তারপর কলেজ ফাকি দিয়ে সেই উত্তরা থেকে রওনা দিলাম মতিঝিলের উদ্দেশে। সময়মতো দাঁড়িয়ে অপেক্ষায় করছিলাম আর বুকের ভেতরটা ঢিব ঢিব করছিল।

হঠাৎ লক্ষ্য করলাম ওদের স্কুল ছুটি হয়েছে কিন্তু চারপাশে তাকিয়ে মাথা ঘুরছিল কারণ সব মেয়েই সাদা স্কুল ড্রেসে আশপাশ দিয়ে যাচ্ছিল। কোনটা যে আমার জেরিন বুঝে উঠতে পারছিলাম না। হঠাৎ পেছন থেকে একটা মেয়ে বলে উঠলো ‘আপনি স্পাইডার ড্রাকুলা?’ আমি বললাম হ্যাঁ তুমি ভ্যাম্পেয়ার? বললো না এই যে আপনার ভ্যাম্পেয়ার বলে সরে দাঁড়ালো আর তার পেছন থেকে একটা মেয়ে আমার সামনে আসলো! আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলাম চশমা পড়া কিউট একটা মেয়ে মুচকি হাসছে! কতক্ষণ তাকিয়েছিলাম জানি না জ্ঞান ফিরলো ওর ধমক খেয়ে- ‘এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবা নাকি সামনে হাঁটবা? স্কুলের স্যারেরা দেখে ফেলতে পারে চলো সামনে যাই।’ সেদিনই প্রথম ওকে হাত ধরে রাস্তা পার করে দিয়েছিলাম। মেয়েটা একা রাস্তা পার হতে পারে না! কী কিউট নাহ!

দুজন অনেকক্ষণ রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটলাম। ওর জন্য যে গিফটগুলো এনেছিলাম তা দিলাম। তখন জানতে প্রথম পারলাম যে মেয়েটা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল সেটা তার ফ্রেন্ড হৃদি, আমাকে বোকা বানানোর প্ল্যান ছিল ওদের কিন্তু আমাকে দেখে এক্সাইটমেন্টে আর প্ল্যান কাজে লাগাতে পারেনি। সেদিন আধা ঘণ্টার মতো দুজনে একসাথে হাত ধরে হেঁটেছিলাম। সে দিনের অনুভূতিটা এখনও মনে শিহরণ জাগায়। সেইদিন থেকে প্রেমটা আরও গাড় হতে শুরু হলো। দিন যায় মাস যায় প্রেম বাড়তেই থাকলো। কত পাগলামি! কত খুনসুটি!! স্কুল পালিয়ে প্রেম। রিকশায় করে বেইলি রোড চষে বেড়ানো। আহা দিনগুলি! দেখতে দেখতে কখন যে ৪টা বছর পার হয়ে গেলো টেরই পেলাম না। ও স্কুল থেকে কলেজে উঠেছে আর আমি কলেজ থেকে ভার্সিটিতে।

এর মাঝে কিছু স্মরণীয় ঘটনা না বললেই নয়। ওর সাথে পরিচয় হবার পর তার প্রথম বার্থডে ছিল ১৬তম জন্মদিন। প্রথম বার্থডে স্পেশাল করতে ১৬টা একেক সাইজের বার্থডে কার্ড একদম ছোট থেকে বড় গিফট দিয়েছিলাম। যার মানে ছিল ওর ১৫টা বার্থডে তে তো আমি ছিলাম না তাই আগের ১৫টা আর এখন ১টা সর্বমোট ১৬টা বার্থডে কার্ড দিয়ে উইশ করা। অনেকদিন ধরে টাকা জমিয়ে বিভিন্ন শপ থেকে একটা একটা করে খুঁজে বিভিন্ন সাইজের কার্ড কিনে মেলাতে হয়েছিল।

আরেক দিনের ঘটনা... হঠাৎ দেখতে মন চাইলো আমার গুলতিকে। ও আচ্ছা বলা হয় নাই, আমি জেরিনকে আদর করে গুলতি ডাকতাম আর সে আমাকে গুলত বলে ডাকতো। তো যেই ভাবা সেই কাজ, দুইটা বন্ধুকে নিয়ে রওনা হয়ে গেলাম ওর বাসার উদ্দেশে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। ফোনে কথা হয়েছে আমি বাড়ির প্রাচীরের ওপর উঠে বসবো আর সে বারান্দায় দাঁড়িয়ে কথা বলবে কারণ ওরা নিচ তলায় থাকতো। প্রাচীর আর বারান্দা কাছাকাছি। দুই বন্ধু সঞ্জয় আর সাকিবের ঘাড়ে পা দিয়ে কোনোমতে উঠলাম প্রাচীরের ওপর আর নিচে ওদের দুইটারে দাঁড় করালাম পাহাড়া দিতে।

বন্ধুদয় আমাকে পাহাড়া না দিয়ে দূরে গিয়ে সিগারেট টানছে। আর আমি প্রাচীরে বসে চুটিয়ে প্রেম করছি। ওদিকে জেরিনের ছোট ভাই জিনিসটা দেখতে পেয়ে ওর আব্বুকে বলে দিছে যে- তার বোন কার সাথে যেন কথা বলছে। হঠাৎ শুনি কে যেন নিচে থেকে ডাকছে তাকিয়ে দেখি ওর বাপ লাঠি হাতে। দেখেই বুকটা কেপে উঠলো। কোনো কিছু না ভেবেই লাফ দিয়ে মাটিতে পরে দে দৌড়। আমার দৌড় দেখে দূরে দাঁড়ানো সঞ্জয় আর সাকিব দৌড়াতে থাকলো।

এভাবেই প্রেম, ভালোবাসা, হাসি, কান্না, আবেগ চলছিল গুলত আর গুলতির দিনগুলি। হঠাৎ একদিন এসে থমকে দাঁড়ায় সবকিছু। সময়টা ছিল ২০১২ সাল!

❤ Ridwan Yasir

* BiskClub-ভালোবাসার গল্পসল্প থেকে বাছাই করা পাঠকদের গল্প নিয়ে rtvonline-এ ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিয়মিত প্রকাশ হচ্ছে।

আরও পড়ুন:

সি/

মন্তব্য করুন

daraz
  • চলুন ভালোবাসার গল্প শুনি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বোল্টকে নিমেষেই পরাজিত করবেন গেইল!
প্রেমিকার ১৯ দিন পর প্রেমিকের আত্মহত্যা
আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের গল্প এবার স্টার সিনেপ্লেক্সে!
প্রেমিকাকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রেমিক গ্রেপ্তার
X
Fresh