• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বাতিস্তুতার ৫১

স্পোর্টস ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৩:৫৪
গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা

রাজসিক ভঙ্গির সঙ্গে তীক্ষ্ম শিকারির দৃষ্টি। সোনালী কেশর নিয়ে রাজার ভঙ্গিতে যখন দৌড় দেন প্রতিপক্ষের সাধ্য নেই ঠেকানোর। নৃশংস, ক্ষিপ্র ভঙ্গিতে লক্ষ্যে পৌঁছে উদযাপনও করেন গর্জনের মতোই। ৯০ এর দশকে ফুটবলের মাঠের সিংহের কথা নিশ্চই মনে আছে। গোল করার ক্ষমতার কারণে নামের সঙ্গে মিলিয়ে তার উপাধী দেয়া হয় ‘বাতিগোল’। অনেকেই ‘দ্য লায়ন কিং’ অথবা ‘অ্যাঞ্জেল’ হিসেবেও ডেকেছেন তাকে। বলছি গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতার কথা। আজ তার ৫১তম জন্মদিন।

১৯৬৯ সালে আর্জেন্টিনার ১ ফেব্রুয়ারি সান্তা ফে প্রদেশে জন্ম নেন। বয়সের তুলনায় লম্বা হওয়ার কারণে ছোট থেকেই বাস্কেটবল খেলতেন। যদিও ১৯৭৮ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় দল বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হলে ফুটবলে আগ্রহী হন। বিশেষ করে কিংবদন্তি স্ট্রাইকার মারিও কেমপেসের কৌশল তাকে মুগ্ধ করেন।

স্থানীয় কয়েকটি ক্লাবে খেলার পর ১৯৮৭ নেওয়েলস ওল্ড বয়েসে যোগ দেন। সিনিয়র পর্যায়ে ক্লাবটিতে ১৯৮৮-৮৯ মৌসুম কাটিয়ে নজর কাড়েন। পরের মৌসুমেই জায়গা করে নেন আর্জেন্টাইন লীগে তৎকালীন সেরা দল রিভার প্লেটে। সেখানে এক মৌসুম কাটিয়ে চলে যান প্রতিদ্বন্দ্বী দল বোকা জুনিয়র্সে।

সাল ১৯৯১। এই বছরই প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে সুযোগ আসে বাতিস্তুতার। চিলিতে অনুষ্ঠিত কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হবার পাশাপাশি সেরা গোল দাতাও হলেন। সঙ্গে ইতালিয়ান দল ফিওরেন্টিনাতেও ডাক পেলেন। এক বছর পর কনফেডারেশন কাপের শিরোপাও তুলেন। সঙ্গে সবচেয়ে বেশি গোল দাতার খেতাবও। ১৯৯৩ সালের কোপার ফাইনালে মেক্সিকোর বিপক্ষে গোল করে দলকে শিরোপা জেতান তিনি।

১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপ শুরুর আগে উড়তে থাকা আর্জেন্টিনা হুট করেই মাটিতে নেমে যায়। ডোপ টেস্টে পজেটিভ হলে দলের সবচেয়ে বড় তারকা আগের ডিয়েগো ম্যারাডোনার বিশ্বকাপ যাত্রা শেষ হয়ে যায়। সুবিধা করতে পারেনি ১৯৮৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। শেষ ষোল থেকে ছিটকে পড়তে হয়। ওই আসরে হ্যাটট্রিকসহ চার গোল করেন বাতিস্তুতা।

এদিকে সিরি আ’তে ক্যারিয়ার শুরুর পর বার বার ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন হবার চেষ্টায় ছিলেন। যদিও দিনের পর দিন নিজের সেরাটা দিয়েও দলগত ভাবে ফিওরেন্টিনা সুবিধা করতে পারছিল না।

১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচগুলো না খেলেও মূল পর্বে দেখা যায় দ্য লায়ন কিংকে। জ্যামাইকার বিপক্ষে নেমেই হ্যাটট্রিক। ইতিহাসের চতুর্থ খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে দুটি হ্যাটট্রিকের মালিক হন বাতিস্তুতা। এবার কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাড়ি যেতে হয় আলবেসিলেস্তেদের।

দীর্ঘ ৯ বছর পর ফ্লোরেন্স শহরের দলটিকে বিদায় জানান। তার আগে দলটির হয়ে ২৬৯ ম্যাচে ১৬৭ গোল করেন। ২০০০ সালে ফিওরেন্টিনা থেকে পাড়ি জমান এএস রোমায়। ফ্রান্সিসকো টট্টি, কাফুদের মতো তারকাদের সঙ্গে সুযোগ আসে প্রথমবারের মতো সিরি আ’ ও উয়েফা কাপ জেতার।

ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেলেও হাল ছাড়েননি। মৌসুমে বাতিস্তুতার ২০ গোলের সুবাদে ১৯৮৩ সালের পর প্রথমবার সিরি আ’র চ্যাম্পিয়ন হতে সক্ষম হয় রোমা। লিগ ম্যাচে চির পরিচিত দল ফিওরেন্টিনার বিপক্ষে মুখোমুখি হতে হয় আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকারকে। ২০০২ সালের ২৬ নভেম্বর ৮৩ তম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল উপহার দেন রোমাকে। প্রিয় দলের বিপক্ষে ৩০ গজ দূর থেকে দেয়া ওই গোলের পর কোনও উদযাপন করতে দেখা যায়নি। ম্যাচ শুরুর আগে ও পরে সাবেক দলের সমর্থকদের স্যালুট দিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে মাঠ ছাড়েন।

২০০২ বিশ্বকাপে নামার আগেই ঘোষণা দেন আসর শেষ হলেই আর্জেন্টিনাকে বিদায় জানাবেন। শিরোপা জেতার মতো দলও গঠন করেছিলেন কোচ মার্সেলো বেইলসা। যদিও ১৯৬২ সালের পর প্রথমবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ যায় দক্ষিণ আমেরিকার দলটি। এই আসরেও একটি গোল করেন গ্যাব্রিয়েল। জাতীয় দলের জার্সি তুলে রাখার সিদ্ধান্তও নেন তিনি।

টানা তিন মৌসুম ইতালির রাজধানীর দলটিতে কাটিয়ে ৬৩ ম্যাচে গোল করেন ৩০টি। ২০০৩ সালে এক মৌসুমের জন্য ধারে যোগ দেন ইন্টার মিলানে। ২০০৫ সালে কাতারের দল আল আরাবিতে এসে ক্যারিয়ার শেষ করেন।

সিনিয়র পর্যায়ে ৪৩০ ম্যাচে ২৪৪ গোল রয়েছে তার নামের পাশে। ২০০২ সালে জাতীয় দলকে বিদায় জানানোর আগে ৭৭ ম্যাচে ৫৪ গোল করেন। অর্থাৎ আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ গোল দাতা হয়েই সিদ্ধান্ত নেন অবসরের। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালে এই রেকর্ড ভাঙতে সক্ষম হন লিওনেল মেসি। ২০০৪ সালে ফিফার ১০০জন জীবন্ত কিংবদন্তির কাতারে ছিল তার নাম।

মাত্র ১৬ বছর বয়সে ইরিনা ফার্নান্দাজকে বিয়ে করেন। তাদের ঘরে চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। বর্তমানে আর্জেন্টিনায় কন্সট্রাকশনের ব্যবসায় ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এই তারকা।

ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh