• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যে শহর ‘ঈশ্বর’ মেনে ছিল ম্যারাডোনাকে

  ২৬ নভেম্বর ২০২০, ১১:৪৭
১৯৮৪ সালে নাপলিতে পৌঁছান ম্যারাডোনা

১৯৮৪ সালে ম্যারাডোনা যখন নাপোলিতে যোগ দিলেন তাকে বরণ করতে ৭৫ হাজার দর্শক উপস্থিত হয়েছিল স্তাডিও স্যান পাওলোতে। তৎকালীন ক্রীড়া লেখক ডেভিড গোল্ডব্ল্যাট বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে নেপলসবাসীর ত্রাতা চলে এসেছেন।’ স্থানীয় একটি সংবাদ পত্র প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছিল, ‘মেয়র, বাসস্থান, স্কুল, বাস, চাকরি, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা কোনও কিছুই দরকার নেই। কারণ আমাদের আছে ডিয়েগো ম্যারাডোনা।’

আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা বার্সেলোনা ছেড়ে নেপোলিতে যোগ দেন ৬.৯ মিলিয়ন পাউন্ডে। যা ছিল তৎকালীন বিশ্ব রেকর্ড। ম্যারাডোনা যখন দলটির জার্সি গায়ে জড়ালেন তখনও পর্যন্ত ইতালির দক্ষিণাঞ্চলের কোনও দলই ট্রফি ছুঁয়ে দেখতে পারেনি। সিরি আ’তে সব সময়ই দাপট দেখিয়ে আসছিল মধ্যঅঞ্চলে থাকা এসি মিলান, জুভেন্টাস, ইন্টার মিলান ও এএস রোমার মতো দলগুলো।

দলটির হয়ে মাঠে নামার পর থেকে ক্যারিয়ারেও বড় পরিবর্তন আসে ডিয়েগোর। জাতীয় দলের পিকটাইম বলতে সেটাই ছিল তার। কয়েকদিনের মধ্যেই নাপোলির অধিনায়কও বনে জান তিনি। এই দলের হয়ে খেলার সময় আর্জেন্টিনার জার্সিতে বিশ্বকাপও জিতে নিয়েছিলেন। ফুটবল ঈশ্বরের খেতাবটাও পেয়েছিলেন এখান থেকেই।

ম্যারাডোনা যোগ দেয়ার আগের মৌসুমে লিগে ১২তম স্থানে ছিল দলটি। প্রথম মৌসুমে উঠে আসে নবম স্থানে। ম্যারাডোনার মাঠে নামার দ্বিতীয় মৌসুমে তৃতীয় স্থান অর্জন করে তারা। ১৯৮৬/৮৭ মৌসুমে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার শীর্ষস্থান অর্জন করে নেপলসের ক্লাবটি। সেইবার কোপা ইতালিয়ার শিরোপাও দখল করে নেয় তারা।

অবিশ্বাস্য অর্জনের পর সমর্থকরা শহরজুড়ে সপ্তাহব্যাপী উৎসব পালন করে। রাস্তার ভবনগুলো শোভা পেয়েছিল ম্যারাডোনার মুর‌্যাল। ঘরে ঘরে জন্ম নেয়া সন্তানদের নাম করণও করা হতো প্রিয় ফুটবলারের সঙ্গে মিল রেখে।

এটা শুধু মাঠের জয়ই ছিল না। ইতালিতে তখন অর্থনৈতিক স্নায়ু যুদ্ধও চলছিল। শিরোপা লাভের পর পালটে গিয়েছিল নেপালসের চেহারাও।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর টানা দুই মৌসুম দুর্দান্ত খেলেও রানার্স-আপ হতে হয় ম্যারাডোনা নেতৃত্বাধীন দলটিকে। তবে ১৯৮৯-৯০ মৌসুমে আবারও শিরোপা লাভ করে ক্লাবটি। এই দলের জার্সিতেই ১৯৮৮-৮৯ মৌসুমে উয়েফা কাপ আর ১৯৯০ সালে সুপার কোপা ইটালিয়ানাও জিতেছিলেন ডিয়েগো।

মাত্র ১৫ বছর বয়সে আর্জেন্টিনো জুনিয়র্সের জার্সিতে শুরু হয় ম্যারাডোনার পেশাদার ক্যারিয়ার। এরপর বোকা জুনিয়র্স হয়ে চলে যান বার্সেলোনায়। ক্লাব ক্যারিয়ারে যা বেশির ভাগ অর্জনই ছিল নেপলসের দলটির হয়ে। দীর্ঘ সাত বছর এই দলটির হয়ে খেলে ১৯৯১ সালে যোগ দেন স্প্যানিশ দল সেভিয়াতে। এরপর নিওয়েল’স ওল্ড বয়েজ ও বোকার হয়ে শেষ করেন ক্যারিয়ার।

বুধবার যখন ম্যারডোনার মৃত্যুর সংবাদ সামনে আসে নেপলসের আকাশে নেমে আসে শোকের ছায়া। শ্রদ্ধা জানাতে শহরের চার্চগুলোতে বাজানো হয় ঘণ্টা। রাস্তায় গাড়িগুলো থমকে দাঁড়ায়। মুখে মাস্ক পরে শহরবাসীকে পালন করতে দেখা যায় নীরবতা।

কয়েক দশকের মধ্যে এটাই হয়তো শহরটির জন্য সবচেয়ে বাজে সংবাদ ছিল। শহরের একটি স্থানে ক্লাবের পক্ষ থেকে আগেই তৈরি ছিল ম্যারাডোনার মুর‌্যাল। সেখানে ফুল নিয়ে হাজির হতে দেখা যায় অনেক ভক্তকে।জ্বালানো হয় মোমবাতি।

লেখক ডেভিড গোল্ডব্ল্যাট অনুমান করে ম্যারাডোনাকে বলেছিলেন ‘শহরের ত্রাতা’। দশক তিনেক আগে ঠিক তেমনই বল দিয়ে সবুজ গালিচায় ডিয়েগো আর্মন্দো ম্যারাডোনার আঁকা চিত্র আজীবন খোদাই করা থাকবে নেপেলবাসী তথা ফুটবল প্রেমীদের মনে।

ওয়াই

মন্তব্য করুন

daraz
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ম্যারাডোনা ও পেলের মধ্যে কে সেরা, জানালেন ফিফা সভাপতি
মৃত্যুর তিন বছর পর কর ফাঁকির মামলায় মুক্তি পেলেন ম্যারাডোনা
‘ম্যারাডোনা অ্যাওয়ার্ড’ জিতলেন রোনালদো
X
Fresh