বিষধর সাপ দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি
সাপ দেখলে কেউ ভয়ে চিৎকার করে পালিয়ে যান, কেউবা মারার জন্যে খুঁজতে থাকেন লাঠি। সেখানে সব ভয়কে জয় করে রাজু নামের এক ব্যক্তির প্রিয় প্রাণী হয়ে উঠেছে সাপ। কোনোরকম ভয়ভীতি ছাড়াই অনবরত সাপের সঙ্গে হেসে-খেলে সময় পার করেন দিন। মানুষের হাতে ধরা পড়া বিপদগ্রস্ত সাপগুলো উদ্ধারের পর অবমুক্ত করেন বনে।
এলাকায় বিষধর সাপ দেখা গেলে খবর দেওয়া হয় রাজুকে। রাসেলস ভাইপার, শঙ্খিনী, খৈয়া গোখরা, পদ্ম গোখরার মতো বিষধর সাপ রাজুর কাছে কিছুই না। বন্ধুর মতো হাতে নিয়ে করছেন খেলা। তার নিত্যদিনের সঙ্গী এখন বিভিন্ন প্রজাতির সাপ।
যেখানেই সাপের খবর পান, সেখানেই হাজির রাজু। কখনো জালে আটকানো সাপ, কখনো মানুষের বাসস্থানে ঢুকে যাওয়া সাপকে বিপদমুক্ত করেন এই তরুণ। পাশাপাশি এ বিষয়ে সবাইকে করেন সচেতন। এতে সব সময় তিনি প্রশংসিত হন এমন নয়, মাঝ মাঝে শুনতে হয় কটু কথাও।
গ্রামে কৃষিনির্ভর পরিবারে বেড়ে ওঠেন রাজু। বিল এলাকা হওয়ায় সাপের আনাগোনা দেখেছেন। সাপের প্রতি তার ভালোবাসার গল্পটা ছোটবেলা থেকে। যখন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়েন তখন একদিন দেখছিলেন সাপুড়ে খেলা। তার গলায় সাপুড়ে পেঁচিয়ে দিয়েছিলেন দুটি সাপ। কিন্তু সাপগুলো তাকে দংশন করেনি। সেই থেকেই ভয় ভেঙে যায় তার। পরবর্তী সময়ে শিখে নেন সাপ ধরার কৌশল। বই পড়ে চেষ্টা করেন সাপের চরিত্র বোঝার। সেই থেকে এ পর্যন্ত বিষহীন ও বিষধর মিলিয়ে প্রায় আড়াই শতাধিক সাপকে উদ্ধার করে বাঁচিয়েছেন রাজু। বর্তমানে তিনি স্নেক রেসকিউ টিম বাংলাদেশের সভাপতি ।
পড়ালেখা শেষে ময়মনসিংহের ভালুকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন রাজু। কর্মজীবনের শত ব্যস্ততার মধ্যেও বিনা পারিশ্রমিকে সাপ রেসকিউ করছেন ।
সাপের প্রতি ভালোবাসা থেকে সাপকে অবমুক্ত করার এ উদ্যোগকে স্বাগত জানান ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক নজরুল ইসলাম।
প্রকৃতিতে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাপের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা । তাই সাপকে ভয় না পেয়ে একটু সচেতন থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন এ প্রাণিকে। এমনটাই প্রত্যাশা রাজুদের মতো জীববৈচিত্র্য প্রেমীদের।
তথ্য-ছবি: মোজাম্মেল খোকন
মন্তব্য করুন