মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর বক্তব্যে বিস্মিত সোহেল তাজ
ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উদযাপন উপলক্ষে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের দেওয়া বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী তানজিম আহমেদ সোহেল তাজ।
শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া সোহেল তাজের স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথগ্রহণ করে) উপলক্ষে একটি সরকারি প্রজ্ঞাপনে মাননীয় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বক্তব্য পড়ে স্তম্ভিত ও বিস্মিত হলাম।
তিনি (মন্ত্রী) এক অংশে বলেছেন, বিশ্বজনমত পক্ষে ছিল বলেই মাত্র ৯ মাসেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং ২৬ মার্চের প্রত্যক্ষ ঘোষণার পর তারই নির্দেশে ১০ এপ্রিল সরকার গঠন হয় এবং ১৭ এপ্রিল শপথ হয় এই ঐতিহাসিক মুজিবনগর সরকারের।
এই বক্তব্যে বেশ কিছু অসঙ্গতি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে আর আমরা যদি ইতিহাসের পাতা উল্টাই তাহলে আমরা পাই ভিন্ন চিত্র।
১৯৭২ সালের ১৩ ডিসেম্বর সাংবাদিকদের কাছে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ নিজে ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন কীভাবে এই সরকার গঠনের চিন্তা তার মাথায় আসে?
তিনি বলেন, পালিয়ে যাওয়ার পথে এ দেশের মানুষের স্বাধীনতা লাভের যে চেতনার উন্মেষ দেখে গিয়েছিলাম সেটাই আমাকে আমার ভবিষ্যৎ সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে অনিবার্য সুযোগ দিয়েছিল। জীবন নগরের কাছে সীমান্তবর্তী টুঙ্গি নামক স্থানে একটি ব্রিজের তলায় ক্লান্ত দেহ এলিয়ে আমি সেদিন সাড়ে সাত কোটি বাঙালির স্বার্থে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম তা হলো- ‘একটি স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পরিচালনার জন্য কাজ শুরু করা।’
প্রসঙ্গত, প্রশ্ন উঠতে পারে যে মোজাম্মেল সাহেবের এই বক্তব্য সঠিক হলে ১৯৭১ সালে একদল যুব নেতা কেনো এই সরকারের বিরোধিতা করেছিল।
তাছাড়া তিনি কি বলতে চাচ্ছেন (বিশ্বজনমত পক্ষে ছিলো বলেই মাত্র ৯ মাসেই এই দেশ স্বাধীন হয়েছিল) যে এই রক্তক্ষয়ী ৯ মাস কারও কোনো অবদান ছিল না? ৩০ লাখ শহীদসহ হাজার হাজার মুক্তিযোদ্ধার জীবনের তাহলে কোনো মূল্য নেই? পশ্চিমা বিশ্ব আর সোভিয়েত রাশিয়ার মধ্যে বিদ্যমান স্নায়ু যুদ্ধের কোনো প্রভাব পড়েনি? ভারত আর সোভিয়েত রাশিয়ার শান্তি চুক্তির কোনো তাৎপর্য ছিল না? মার্কিন কংগ্রেস এবং সাধারণ মার্কিন নাগরিকদের সমর্থন কে আদায় করলো? তাহলে স্বাধীন বাংলা বেতারের কোনো ভূমিকা ছিল না? আমাদের পক্ষে বিশ্বব্যাপী জনমত সৃষ্টি করতে তাহলে আমাদের বীর কূটনীতিকদের কোনো অবদান নেই? ১ কোটি শরণার্থীদের ভরণ পোষণ তাহলে এই সরকারের করতে হয় নাই? মুক্তিবাহিনী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ এবং অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে প্রস্তুত করতে হয় নাই?
আমি এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি কারণ এখানে অনেক কিছু বলা হয়েছে যা আপত্তিকর, মনগড়া এবং ভিত্তিহীন। এই বক্তব্যের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি এবং একই সঙ্গে ইতিহাস আড়াল করার চিত্র ফুটে উঠেছে।’
মন্তব্য করুন