রাজবাড়ীর ৩ উপজেলায় আ.লীগের প্রতিপক্ষ আ.লীগ
রাজবাড়ীর তিন উপজেলা পরিষদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন্দ্রীয়ভাবে কোনও কঠোর নির্দেশনা না থাকায় চাঙ্গাভাব বিরাজ করছে তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীদের মাঝে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক বরাদ্দ করা হয়েছে। আর প্রতীক পাওয়ার তারা চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ।
প্রচারণায় এখন বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অন্যান্য দলের তৃণমূল কর্মীরা যোগ দেয়ায় তিন উপজেলার ভোটের মাঠে প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ হয়ে উঠেছে।
ওই সব বিদ্রোহী প্রার্থীরা জানিয়েছেন, নির্বাচন কমিশন চাচ্ছে এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচন হবে উৎসব মুখোর। তাছাড়া বিএনপির প্রার্থীরা নেই এ নির্বাচনে। যে কারণে এ নির্বাচনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মূলত প্রার্থী হয়েছে আওয়ামী লীগ থেকেই। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসেবে অংশ নিচ্ছেন।
তাই এ নির্বাচনে যেই বিজয়ী হোক না কেন, আওয়ামী লীগের নেতারাই বিজয়ী হচ্ছেন। ফলে তারা দলীয় প্রার্থীকে ছাড় দেয়াতো দূরের কথা, নির্বাচন থেকে এক চুলও নড়বেন না। বরং দল থেকে মনোনীত প্রার্থীকে পরাজিত করে নিজেরদের যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যস্ত।
জানা গেছে, তৃতীয় ধাপে রাজবাড়ী জেলার সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা ও বালিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যেই এই চারটি উপজেলায় ৮ জন চেয়ারম্যান প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তারা এখন ভোটের মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এর মধ্যে গোয়ালন্দ উপজেলায় জাপার প্রার্থী তার মনোনয়নপত্র তুলে নেয়ায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
তবে সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও রাজবাড়ী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ক্রীড়াবিদ শফিকুল ইসলাম শফি’র বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক এসএম নওয়াব আলী এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস।
পাংশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজের বিপরীতে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান অধ্যাপক ফরিদ হাসান ওদুদ মণ্ডল রয়েছেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মো. আবুল কালাম আজাদ বিপরীতে মাঠে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও রাজবাড়ী-২ আসনের এমপি মো. জিল্লুল হাকিমের চাচাতো ভাই মো. এহসানুল হাকিম সাধন।
এছাড়া বালিয়াকান্দি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (প্রতীক আম) মো. আশরাফ মোল্লাও প্রার্থী হয়েছেন।
পাংশা উপজেলায় আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী সাবেক অধ্যক্ষ একেএম শফিকুল মোর্শেদ আরুজ আরটিভি অনলাইনকে জানান, তার এলাকায় ইতোমধ্যে নির্বাচনী আমেজের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি যাচ্ছেন এখন ভোটারদের কাছে। বিজয়ের ব্যাপারে পুরোপুরি আশাবাদী তিনি।
তবে বিদ্রোহী প্রার্থী ও পাংশা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান ফরিদ হাসান ওদুদ মণ্ডল জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে দলীয় কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে না বলে জানিয়েছেন। ফলে বিদ্রোহী প্রার্থীদের এবার দলীয় কোনও শৃঙ্খলের মধ্যে পড়তে হচ্ছে না। তাই নির্বাচন থেকে সড়ে তিনি যাবেন না। বিগত পাঁচ বছর সফলভাবে পাংশা উপজেলার দক্ষ উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে ১০টি ইউনিয়নে কাজ করায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে তার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। তিনি এবার আনারস মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটের মাঠে ব্যাপক গণজোয়ার সৃষ্টি করেছেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন।
বালিয়াকান্দি উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মো. এহসানুল হাকিম জানান, আগামী ২৪ মার্চ হবে তার উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। মাঠে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তাই বিপুল ভোটে তিনি বিজয়ী হবেন।
সদর উপজেলার দুই বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী এসএম নওয়াব আলী এবং অ্যাডভোকেট ইমদাদুল হক বিশ্বাস জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হবার লক্ষ্য নিয়েই তারা এগুচ্ছেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার দিন থেকেই তারা যাচ্ছেন সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ভোটারদের কাছে। ভোটাররাও নিরাশ করছেন না, দিচ্ছেন তাদের ভোট দেবার প্রতিশ্রুতি।
এসএম নওয়াব আলী জানান, একাদশ সংসদ নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন বোর্ডে গিয়েছিলেন, তখন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীক পাওয়ার আশায় সংসদ নির্বাচন করেন নাই। তবে তিনি এবার সদর উপজেলায় বিজয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
এসএস
মন্তব্য করুন