• ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঈদ ঘিরে জমজমাট তৃণমূলের রাজনীতি, কেন্দ্রীয় নেতারা এলাকায়

আরটিভি নিউজ

  ০৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৫:৪৬
ঈদ ঘিরে জমজমাট তৃণমূলের রাজনীতি
ফাইল ছবি

মাসখানেক বাদেই উপজেলা নির্বাচন। ফলে ঈদের পরপরই শুরু হচ্ছে নির্বাচনী ডামাডোল। ঈদকে উপলক্ষ্য করে এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা ছুটছেন এলাকায়। পছন্দের প্রার্থীদেরকে সমর্থন জানাতে রাজধানী ছেড়ে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরাও। পাশাপাশি ঝিমিয়ে পড়া তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙা করতে নিজ নিজ এলাকায় যাচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। সব মিলিয়ে দেশের বড় দুই রাজনৈতিক দলের হেভিওয়েট নেতারা এখন তৃণমূলমুখী, যার ফলে দেশব্যাপী জমে উঠেছে ঈদ রাজনীতি।

ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে এলাকায় ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন স্থানীয় নেতারা। ঈদের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মোলাকাত করছেন জনসাধারণের সঙ্গে। আর ‘প্রভাব-প্রতিপত্তি’ ধরে রাখার জন্য তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গ দিতে নির্বাচনী এলাকায় ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের বড় বড় নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপনের পাশাপাশি গণসংযোগ ও মতবিনিময়ের কাজটাও সেরে নেবেন তারা। এলাকার দুস্থদের মধ্যে জাকাত ও ফিতরা বিতরণ করছেন সবাই। ঈদকার্ড ও এসএমএস পাঠানোর পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া, ব্যানার-পোস্টারের মাধ্যমে গণসংযোগ করছেন উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী ও তাদের সমর্থনকারী নেতারা। আবার ‘ঈদ বকশিশ’ বিলাচ্ছেন নির্বাচনের অনেক প্রার্থী। নেতাকর্মীর পাশাপাশি সাধারণ ভোটারদের জন্য ঈদের দিন ভোজের আয়োজনও করছেন অনেকে।

অন্যদিকে তৃণমূলে নিজেদের নেতাকর্মীদের চাঙা করতে ঈদের লম্বা ছুটির সুযোগটা লুফে নিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও। এলাকায় গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন নিজ নেতাকর্মী ও তাদের পরিবারের। এবার উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে নিজ নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন করার কথা জানিয়েছেন অন্য রাজনৈতিক দলের অধিকাংশ নেতাও।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, রমজান মাসজুড়েই মানুষের পাশে ছিলেন তারা। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশে ইফতার পার্টি না করে অসহায়, দুস্থ ও গরিব মানুষের মধ্যে ইফতার ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন। সেই সঙ্গে ঈদ উপহারসামগ্রীও বিতরণ করা হয়েছে।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস যেতেই স্থানীয় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ এই নির্বাচনকে ঘিরে আবার ব্যস্ত হয়ে উঠেছে তৃণমূল। সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ জয়ের পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান ছিল তৃণমূল নেতাদের। আর এবার এই তৃণমূল নেতাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সংসদ নির্বাচনে জয় লাভ করা বড় নেতাদের সামনে সুযোগ হয়ে এসেছে ঈদুল ফিতর। বড় নেতারাও হারাতে চাচ্ছেন না এ সুযোগ। এবারের ঈদে নিজ নির্বাচনী এলাকায় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপিই। ঈদের টানা ছুটিতে এলাকায় গণসংযোগ ও জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে পেছন থেকে কাজ করবেন তারা।

বিধি অনুযায়ী, নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ প্রচারণায় নামতে পারবেন না মন্ত্রী-এমপিরা। পাশাপাশি প্রার্থী ঘোষণাসহ কারো পক্ষে সমর্থন জানিয়ে প্রভাব বিস্তার ও হস্তক্ষেপ না করার কঠোর নির্দেশনা আছে তাদের প্রতি। অবশ্য তথ্য আছে, স্বজন ও ঘনিষ্ঠরা উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় অনেক মন্ত্রী-এমপি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই নিজ প্রার্থীর পক্ষে ভেতরে ভেতরে প্রচারণা চালাবেন ঈদের দিনগুলোতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য নেতাদের মধ্যে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ঈদ উপযাপন করবেন পৈত্রিক বাড়ি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায়। শিক্ষামন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনও ঈদ কাটাবেন চট্টগ্রামে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ঈদ উদযাপন করবেন কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন ঈদে থাকবেন নরসিংদীর মনোহরদীতে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক থাকবেন গাজীপুরের কালিয়াকৈরে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রহমানের ঈদ কাটবে ফরিদপুরের মধুখালীতে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ঈদ করবেন ঢাকার কেরানীগঞ্জে। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ঈদে থাকবেন দিনাজপুরের বিরলে।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন নেত্রকোনায়, ড. আব্দুর রাজ্জাক টাঙ্গাইলে, মাহবুব-উল-আলম হানিফ কুষ্টিয়ায়, বি এম মোজাম্মেল হক শরীয়তপুরে, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন জয়পুরহাটে, মির্জা আজম জামালপুরে এবং অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন পটুয়াখালীতে এবারের ঈদ কাটাবেন।

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারও ঈদ করবেন ঢাকায় তার সরকারি বাসভবনে। প্রতিবারের মতো ঈদের দিন আওয়ামী লীগসহ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, বিদেশি কূটনীতিক, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করার কথা রয়েছে তার।

এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও ঈদ করবেন ঢাকায়। তবে নোয়াখালীতে নিজ নির্বাচনী এলাকার নেতাকর্মীর খোঁজখবর রাখছেন তিনি। সেইসঙ্গে দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক-মুখপাত্র আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাড়ি যাচ্ছেন না এবারের ঈদে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও পাটমন্ত্রী অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেছেন, ঈদ উৎসবটা সবার। মন্ত্রী-এমপি ও নেতারা যারা মানুষের জন্য রাজনীতি করেন, তারা চেষ্টা করেন উৎসবের আনন্দটা জনগণের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে। এবারের ঈদেও তার ব্যতিক্রম হবে না।

এদিকে বিএনপি নেতারা বলছেন, বিগত আড়াই মাসের সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর তৃণমূলকে নিয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করতে চান তারা। ঈদের দিনগুলোতে নেতাকর্মীদের আবারও চাঙা করতে কাজ করছেন নেতারা। ঈদ আয়োজনের মধ্যেই দেওয়া হবে দলের নির্দেশনা।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার নিয়ে ইতোমধ্যে তৃণমূলে ছুটেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। কারাগারে আটক কয়েক শতাধিক নেতাকর্মীর খোঁজ নিতে ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পাজামা-পাঞ্জাবি ও শাড়ি উপহার দিতে টিম গঠন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সারাদেশে অসহায়-দুস্থদের জন্য বস্ত্র ও খাবার বিতরণ কার্যক্রমও পালন করছেন দলটির নেতারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিজের গুলশানের বাসভবন ফিরোজাতেই ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। সেখানে তার সঙ্গে গিয়ে দেখা করবেন পরিবারের সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতারা। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান পরিবার ও স্থানীয় নেতাকর্মী নিয়ে ঈদ উদযাপন করবেন লন্ডনে। সেখানে খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী ও দুই মেয়েও ঈদ পালন করবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ঈদে কাটাবেন ঢাকায়। তবে ঈদের দিন নিজ এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরে আসতে পারেন তিনি। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে ঢাকায় আরও থাকবেন ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। এ ছাড়া সালাহউদ্দিন আহমেদ ভারত এবং চিকিৎসার জন্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু দেশের বাইরে ঈদ করবেন। সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভীও ঢাকায় ঈদ করবেন।

নিজ এলাকার মানুষের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান ও বরকত উল্লাহ বুলু।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঈদ ঘিরে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা সেতুবন্ধ তৈরি হয়। এর মাধ্যমে দলের নেতাকর্মী ছাড়াও সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো যায়, আবার জনমতও সৃষ্টি করা সম্ভব। বিএনপি সেটাই করবে।

এদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও গত রোববার থেকে সাত দিনের সফরে অবস্থান করছেন রংপুরে।

মন্তব্য করুন

daraz
  • রাজনীতি এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
নবগঠিত ঈদগাঁও উপজেলার পাঁচ ইউপিতে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন 
ঈদযাত্রায় বেশি মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়
৩০ বছর বয়সে ১৪ নারীর স্বামী সাঈদ
কক্সবাজারে ঈদ স্পেশাল ট্রেন লাইনচ্যুত
X
Fresh