দুনিয়ার ক্রেতা এক হও
![পলাশ আহসান](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/03/23/image-266192-1711193513.jpg)
এবছরও রোজার আগের আলোচিত পণ্য তরমুজ। একইভাবে গণমাধ্যমে দেখছি ঢাকার ৮০০ টাকার তরমুজে আসলে কৃষক কত পাচ্ছেন। গতবারের মত এবারও আমরা অবাক হচ্ছি ক্রেতা আর উৎপাদকের বঞ্চনার চিত্র দেখে। আমার অবশ্য অবাক হওয়ার সুযোগ কম ৷ কারণ পেশার সুবাদে আমাকে মানুষের নানা বঞ্চনার সঙ্গে সব সময় থাকতে হয়। তবু হচ্ছি। কারণ গোটা বিষয়টি আর তরমুজে আটেকে নেই। বলতে পারি আমাদের বাজার পরিস্থিতি এখানে এসে আটকে গেছে। এখন এটাই নিয়ম। তাই বিষয়টি যেন কেউ নিয়ম না বলে, অন্তত অনিয়ম বলে। যে কারণে আসলে অবাক হতে হয়।
সম্প্রতি গণমাধ্যমে তরমুজ নিয়ে নানা খবরা খবরা আসছে। তরমুজের আড়তে ভোক্তার অভিযান । কর্মকর্তারা দাড়িয়ে থেকে ন্যায্যমূল্যে তরমুজ বিক্রি করাচ্ছেন। কোথাও ন্যায্যমূল্য তরমুজ বিক্রির নির্দেশ দেয়ার পর বিক্রেতা বিক্রি বন্ধ করে দিচ্ছেন। কোথা্ও ভোক্তার লোকজন চলে যা্ওয়ার পরপরই আবার আগের দামে বিক্রি করছেন। সব মিলিয়ে তরমুজ নিয়ে টানা হেচড়া চলছেই।
তরমুজ ঘিরে একটি তাদের ব্যবসায়ী গ্রুপ তাদের অসততা সবার সামনে নিয়ে আসছে। হাজার চেষ্টা করেও তাদের প্রতিরোধ করা যাচ্ছে। আসলে আমাদের এই মুহূর্তের বাজারে তরমুজ কোন একক পণ্য নয়। আমরা বলতে পারি আমাদের যেকোন পণ্যের প্রতীক। এভাবেই অসৎ ব্যবসায়ীরা প্রকাশ্য হচ্ছে। আর সাধারণ মানুষ দিনের পর দিন অবাক হয়েই যাচ্ছে।
আবারও ফিরি তরমুজের কাছে, আমি নিজেও তরমুজের খবর নিয়েছি। একজন কৃষক একশ’ তরমুজ বিক্রি করেন, সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করতে পারেন। আবার সর্বনিন্ম ৫ হাজার টাকা শ'তেও বিক্রি করেন। সেই তরমুজ ঘাটে ঘাটে চাঁদা দিয়ে ডাকাতের হামলা এড়িয়ে আসে ঢাকায়। আড়তে সব সাইজের তরমুজ বেচার পর গড়ে প্রতিটি ফলের বিক্রি দাম দাঁড়ায় এক থেকে দেড়শ টাকায়।
আড়তদারের কাছ থেকে ব্যবসায়ীও গড়ে ১ থেকে ১৫০ টাকায় বড় তরমুজ কেনেন। শ’ হিসাবে কিনে তিনি এবার বিক্রি করছেন ৮০ থেকে থেকে ৯০ টাকা কেজিতে। এতে দেখা চোখেই প্রতিটি তরমুজে, খুচরা ব্যবসায়ী এক থেকে চার'শ টাকা লাভ করেন। অর্থনীতিবিদ কিম্বা বাজার বিশ্লেষকরা এটাকে হয়তো সুন্দর করে বলবেন মুনাফা। কিন্তু আম জনতার কাতার থেকে বলা হবে প্রকাশ্যে চুরি। দিন শেষে এই চুরিটাই সত্যি
অনেক ভাবলাম আসলেই তো তাই। যেখানে যাই সেখানে প্রশ্ন ওঠে। এই পণ্যের কী এই দর হওয়া উচিত ছিল? যে সার্ভিস নিতে যাই, প্রশ্ন ওঠে এত দাম কেন? এমন কি রিকশা ভাড়াও বদলে যায় প্রতি মাসে। শুধু আয় বাড়তে চায় না নিয়মিত চাকরিজীবীর। সুতরাং প্রত্যেককে বাড়তি আয়ের চিন্তা করতে হয়। তাই এদের কেউ অতিরিক্ত সময় কাজ করতে চান। আবার কেউ তরমুজ ওয়ালার মত কৌশলী হন। কেউ কেউ নামতে নামতে চুরিতে নেমে পড়েন।
যদি ঘুরিয়ে বলি, তাহলে বলতে হবে, প্রত্যেকে নিজে ঠকছেন, পাশাপাশি অন্যকেও ঠকাচ্ছেন। আমি মনে করি এর মূল কারণ বাজার ব্যবস্থা। ব্যবস্থা না বলে অব্যবস্থা বলাই ভাল। পাঠক আপনি চাইলে আরেক ধাপ এগিয়ে বলতে পারেন, আমার দেশে আজ অস্থিরতা নামে যে লতার বাড় বাড়ন্ত, তার বীজ বপন করা হয়েছে বাজারে। যত বিরোধ, ক্ষমতা দখল, আধিপত্য বিস্তার যাই বলেন, এর উৎস কিন্ত বাজার। মূলত এটা ক্রয় ক্ষমতা বাড়ানোর অস্থির প্রতিযোগিতা।
বাজার বলতে আমি আক্ষরিক অর্থেই বাজার বুঝিয়েছি। এখানে পেঁয়াজও যেমন পণ্য, রড সিমেন্টের সেতুও পণ্য। আমি টিকেট জালিয়াতি বলতে যা বুঝি, তরমুজ ওয়ালার কেজিতে তরমুজ বিক্রিকেও তাই বুঝি। বাস বা লঞ্চের টিকেটে ঈদের বাড়তি দাম নেয়া, কারণ ছাড়াই পেঁয়াজ বা তেলের দাম বাড়াও আমার কাছে এক সূতোয় গাঁথা। স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে যে যুদ্ধ এবং দুর্নীতি তাও আমার মনে হয় এই অস্থির বাজারের অংশ।
ধীরে ধীরে আমাদের বেশি চাওয়া চাওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আর এদের চাওয়ার ধরণ হচ্ছে "কত কম পরিশ্রম করে কত বেশি পাওয়া যায়"। কৌশলে ধার না ধেরে গায়ের জোরেই সব কিছু নিজের দখলে নিতে চায়। যেকারণে আমরা বলতেই পারি যে এখন পুঁজিবাদী গায়ের জোরের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে চৌর্যবৃত্তি। তার চেয়ে বড় কথা সবার বাজার একই। চোর চুরির টাকা নিয়ে যে বাজারে ঢুকছে সাধারণ মানুষও সেই বাজারে যাচ্ছেন। তাই কেনার প্রতিযোগিতায় পড়ে অনেকেই চৌর্যবৃত্তিতে উৎসাহিত হচ্ছেন।
আবারো মাথায় ভিড় করে হাজারো প্রশ্ন, কী হবে আমাদের? কী হবে এই অস্থিরতার সমাধান? আমাদের বাজার থেকে যেভাবে মানুষ শোষণ শুরু হয়েছে তাতে কীভাবে মানুষ বাঁচানো যাবে? যারা এই প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে না বা প্রতিযোগিতা করবে না তারা কী দেশ ছাড়বে? নিশ্চয়ই এসব প্রশ্নের ইতিবাচক সমাধান চাই আমরা। তাহলে এই অবস্থায় বাজারে কঠোর নিয়ন্ত্রণ ছাড়া কোন পথ দেখি না। নিয়ন্ত্রণ বলতে আমি বুঝি চৌর্যবৃত্তি একেবারে বন্ধ।
বন্ধ শব্দটির সঙ্গে জোর করার সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ জোর খাটিয়ে মানুষের পকেট কাটা বন্ধ করতে হবে। তাহলে যারা কাজটি করবে তাদের হাতে থাকতে হবে, পকেটকাটা দের চেয়ে বেশি জোর। এত জোর আসলে রাষ্ট্র ছাড়া কেউ দিতে পারে না। অর্থাৎ যারা বাজার নিয়ন্ত্রণ করবে, তাদের হাতে শক্তি থাকতে হবে। শুধু শক্তি নয়, থাকতে হবে তথ্য এবং গবেষণা। যে কারণে তাদের থাকতে হবে বাজারের সঙ্গেই। কারণ তাদের ভেতর থেকে জানতে হবে প্রকৃত উৎপাদন খরচ, পরিবহন খরচ এবং বাজারজাত খরচ।
সুতরাং বোঝাই যায়, কাজটি সহজ নয়। চাইলেই একটা একটা নিয়ন্ত্রিত বাজার ব্যবস্থা আকাশ থেকে পড়বে না। কিন্তু এবছর বাজাররের কিছু শুভ উদ্যোগ দেখে আমি কিছু আশার আলো দেখতে পাই। যেমন আমরা দেখলাম কিছু ব্যবসায়ী কম লাভে পণ্য বিক্রি করে প্রচুর বেচাকেনা করছেন। বলা যায় এই উদ্যোগগুলো বার বার ঠকে যাওয়া মানুষের পক্ষে নেয়া হয়েছে এবং পরিস্কার সাফল্যও পাওয়া গেছে। আসলে এই ঠকে যাওয়া মানুষদের একত্রিত হওয়া দরকার।
ধরা যাক কোন একটি বিশেষ সময় উপলক্ষে কোন একটি পণ্যের দাম বেড়ে গেলো। সবাই মিলে বেশি বেশি ওই পণ্য কিনতে চেয়ে এর চাহিদাও বাড়িয়ে দেয়া হলো। আমাদের মুখস্ত অনুশীলন অনুযায়ী, বেশি চাহিদার কারণে তাৎক্ষনিকভাবে ওই পণ্যে দাম হয়ে যায় আকাশ ছোঁয়া। কিন্তু আমরা যারা বার ঠকি এবং অবাক হই তারা যদি ওই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন পণ্যটি আপতত না কেনার সিদ্ধান্ত নেয় তাহলে কী হয়? প্রচলিত অর্থনীতি কী বলে? দুঃখজনক হচ্ছে বঞ্চিত মানুষেরা কখনো একত্রিত হয় না। অথচ বাজার শোষনের বিরুদ্ধে ক্রেতাদের একত্রিত হওয়ার চেয়ে তাৎক্ষণিক কার্যকর আর কোন সিদ্ধান্ত আছে বলে আমার মনে হয় না।
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
মন্তব্য করুন
হঠাৎ বড়লোক দেশের আপদ
![হঠাৎ বড়লোক দেশের আপদ](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/28/image-280237-1719551345.jpg)
লাকীর বেদবাক্যে অন্ধ বিশ্বাসীরা সাংবাদিকদের বিতর্কিত করতে বড়ই উৎসাহী
![লাকীর বেদবাক্যে অন্ধ বিশ্বাসীরা সাংবাদিকদের বিতর্কিত করতে বড়ই উৎসাহী](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/30/image-280600-1719760658.jpg)
আজকের জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ!
![আজকের জঙ্গিমুক্ত বাংলাদেশ!](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/30/image-280619-1719768085.jpg)
নিজেরা হাতে হাতে অস্ত্র রাখে, অথচ আমাদের মানবাধিকার শেখায় যুক্তরাষ্ট্র
![নিজেরা হাতে হাতে অস্ত্র রাখে, অথচ আমাদের মানবাধিকার শেখায় যুক্তরাষ্ট্র](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/01/image-280751-1719840434.jpg)
মানুষের সীমাহীন লোভ ও শাসকদের উদাসীনতার কারণে ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে
![মানুষের সীমাহীন লোভ ও শাসকদের উদাসীনতার কারণে ঘুষ-দুর্নীতি বাড়ছে](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/04/image-281143-1720095985.jpg)
লুটপাট আর টাকা পাচারে এগিয়ে কারা?
![লুটপাট আর টাকা পাচারে এগিয়ে কারা?](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/07/image-281486-1720290433.jpg)
আম নিয়ে কষ্টগাঁথা
![আম নিয়ে কষ্টগাঁথা](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/13/image-282483-1720885425.jpg)