ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ৯ ঘণ্টা পর অবরোধ তুলে নিলো জাবি শিক্ষার্থীরা
সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১০ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত প্রায় নয় ঘণ্টা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে ১২টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরিফ সোহেল।
আরিফ সোহেল বলেন, আদালত ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখেছে। তবে এখানে কিছু আইনি দুর্বলতা থাকার সুযোগ রয়েছে। আমরা কোটা নিয়ে স্থায়ী সমাধান চাই। সব গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় আনতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা বারবার টালবাহানা দেখতে চাই না। আন্দোলন করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করতে চাই না। আমরা দেশের সুনাগরিক হতে চাই। আমরা চাই, এই আন্দোলনের মধ্য দিয়েই সরকারি চাকরিতে বৈষম্যহীন কোটা ব্যবস্থা চলে আসুক, যেটা বার বার পরিবর্তনের দরকার হবে না। আমাদের দাবি হচ্ছে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সকল গ্রেডে বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা বাতিল করে সকল পক্ষের জন্য মোট ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। তাই কোটা সংস্কারের বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
এদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। তার প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবীর শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে কোটা সংস্কারের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে জানিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব বলেন, আমরা সব গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা প্রথার স্থায়ী সংস্কার চাই। কোটা সংস্কারের বিষয়ে নির্বাহী বিভাগ থেকে সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবো। যদি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে এমন কোনো রায় আসে তাহলে আমরা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে ঢাকার সাথে সমগ্র বাংলাদেশের যোগাযোগ বন্ধ করে দেবো।
এদিকে অবরোধ চলাকালে পথনাটক ‘একটি নন-ফিকশন’ মঞ্চস্থ করেছে শিক্ষার্থীরা। বুধবার দুপুর পৌনে দুইটার দিকে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (টিএসসি) প্রযোজনায় নাটকটি মঞ্চস্থ হয়। নাটকে কোটা সংস্কার আন্দোলন ও সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ প্রতীকী চিত্রে উপস্থাপন করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য সচিব ও জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের (টিএসসি) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল ইসলাম মেঘ বলেন, যেকোনো সাংস্কৃতিক ও অধিকার আদায়ের আন্দোলনে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। ধারাবাহিকতায় এবারের কোটার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে যে আন্দোলন তাতেও অংশগ্রহণ করছে থিয়েটার কর্মীরা। আন্দোলনকে সাংস্কৃতিকভাবে চাঙা করতে ‘একটি নন-ফিকশন’ শীর্ষক পথনাটকের ১১৪তম প্রযোজনা করেছি আমরা। আমাদের এ অবস্থান বহাল থাকবে।
আন্দোলনের আরেক সংগঠক এবং ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের শিক্ষার্থী তানজিম আহমেদ বলেন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে পরিচিত। আজকে পুনরায় তার প্রমাণ হল। আমাদের এক দফা দাবি আদায়ে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা প্রশংসনীয়। ছাত্র জনতার অধিকার আদায়ে আমরা পিছপা হবো না।
এদিকে সকাল দশটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত প্রায় নয় ঘণ্টার অবরোধের কারণে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের উভয় পাশে যানবাহনের দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। তবে রোগী বহনকারী গাড়ি ও জরুরি সেবার গাড়ি ছেড়ে দিতে দেখা গেছে।
মন্তব্য করুন