• ঢাকা শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

আড়াই হাজার বছরের পুরনো বাণিজ্যকেন্দ্রের সন্ধান

কুবি প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১২ মে ২০২৪, ০৩:২৩
শনিবার (১১ মে) রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটির মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকদের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল। ছবি : সংগৃহীত

বরেন্দ্রভূমির প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের প্রবেশদ্বার ও বসতির সন্ধান পেয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকরা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমোস্তাপুর উপজেলার প্রশাসনিক কেন্দ্র রোহনপুরে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্ন সামগ্রীর উপর ভিত্তি করে এ দাবি করছেন তারা।

শনিবার (১১ মে) গবেষণালব্ধ ফলাফল রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটির মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়টি উপস্থাপন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষকদের নেতৃত্বাধীন গবেষক দল।

গবেষণা দলটির সদস্যরা হলেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সোহরাব উদ্দীন, সহকারী অধ্যাপক ড. মাহমুদুল হাসান খান, সহকারী অধ্যাপক মো. নিয়ামুল হুদা, সহকারী অধ্যাপক শারমিন রেজোয়ানা, সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ এবং সান্তা মারিয়াম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারহানা নাজনীন ও রোহনপুর গ্রামের ঐতিহ্য সংগ্রাহক মাহির ইয়াসির।

গবেষণালব্ধ ফলাফল উপস্থাপনের সময় তারা ওই স্থান থেকে প্রাপ্ত হাজার বছরের পুরোনো ছাপাঙ্কিত রৌপ্যমুদ্রা, ছাঁচে ঢালা তাম্রমুদ্রা, উত্তরাঞ্চলীয় কালো চকচকে মসৃণ মৃৎপাত্র, স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন বিভিন্ন প্রত্নবস্তু প্রদর্শন করেন।

মূলত এসব প্রত্নসামগ্রীর বেশির ভাগই পাওয়া গেছে মুদ্রা ও প্রত্নবস্তু সংগ্রাহক মাহির ইয়াসিরের সংগ্রহশালা থেকে।

গবেষক দলের দাবি, রোহনপুর অঞ্চলে প্রত্ন অনুসন্ধানে প্রাপ্ত বিভিন্ন প্রত্নবস্তু ও এ অঞ্চলের বাস্তুবস্তু বিশ্লেষণ, বসতি বিন্যাস বিশ্লেষণ, স্থাপত্য বিদ্যার ‘টেকসই অঞ্চল পরিকল্পনার’ আলোকে স্থানিক বিশ্লেষণ, অতীত পানি ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ, এর উপরিভাগের ভূত্বক, মাটির ধরণ, বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পানির উৎস পর্যবেক্ষণ, ১৯৬০ এর দশকের স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

গবেষকরা বলছেন, প্রাচীন সময়ে রহনপুর ছিল উঁচু বরেন্দ্র এলাকার প্রবেশপথ। রহনপুর অঞ্চলটি পুনর্ভবা ও মহানন্দা নদীর মাঝখানে এবং গঙ্গা ও পদ্মা নদীর মিলনস্থলে অবস্থিত হওয়ায় বাংলা অঞ্চলে প্রথম দিককার বসতি এলাকার মধ্যে এই অঞ্চল ছিল অন্যতম। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর, সাপাহার ও পোরশা উপজেলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও গোমস্তাপুর, রাজশাহীর তানোর ও গোদাগাড়ী এলাকায়ও একই সময় বসতি গড়ে উঠেছিল। বসতির পাশাপাশি সেখানে পানি সংরক্ষণাগার ও খাল তৈরির প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকেরা।

বরেন্দ্রভূমি হিসেবে চিহ্নিত ওই এলাকার একাংশ পড়েছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ অংশে। পুণ্ড্র রাজ্য ছিল রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া, দিনাজপুর, পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম দিনাজপুর এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ কানিংহামের মতে, ওই এলাকায় প্রাচীন স্থায়ী বসতির নিদর্শন ছিল।

বরেন্দ্র এলাকার পূর্বদিকে প্রাচীন পুণ্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়ের অবস্থান। রহনপুরের সঙ্গে মহাস্থানগড়ের জল যোগাযোগ ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, একসময় পদ্মা নদী বর্তমান মহানন্দা ও তিস্তা হয়ে বয়ে যেত। বরেন্দ্র ভূমি আরও উঁচু হয়ে যাওয়ায় পদ্মা সেখান থেকে সরে যায়। পূর্ব ও মধ্য ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের কেন্দ্রস্থল হিসেবে বর্তমান রহনপুর ব্যবহৃত হতো বাণিজ্য ও প্রশাসনিক কেন্দ্র হিসেবে। উত্তরাঞ্চলের প্রবেশপথ হিসেবে ওই এলাকাটি ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

এ ব্যাপারে গবেষণা দলের প্রধান মোহাম্মদ সোহরাব উদ্দিন বলেন, রহনপুরের ওই এলাকায় দুই থেকে আড়াই হাজার বছর আগে আদি ঐতিহাসিক কালপর্বে অর্থাৎ খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের বিভিন্ন স্বল্প মূল্যবান পাথরের পুঁতি, ধাতব নিদর্শন, মাটি ও পাথরের মূর্তি, বিভিন্ন আকৃতির পাথরের বাটখারাসহ প্রাচীন বিভিন্ন প্রত্নবস্তুর উপর ভিত্তি করে বাণিজ্যকেন্দ্র ছিল বলে আমরা বেশ কিছু প্রমাণ পেয়েছি। ভবিষ্যতে রোহনপুরে পরিকল্পিত খনন চালালে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা পাওয়া যাবে বলে আমরা মনে করছি।

বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক এবং গবেষক মো. মোশাররফ হোসেন বলেন, স্থানীয় একজন শিক্ষক সেখানে সম্প্রতি বেলে লাল পাথরের একটি মূর্তি খুঁজে পেয়েছেন, যা খ্রিষ্টপূর্ব সময়ের। আজ গবেষণালব্ধ ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বলা যায় রোহনপুর দুই থেকে আড়াই হাজার বছরের পুরোনো। তাই রোহনপুরে প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে প্রত্ন নিদর্শনগুলো দ্রুতই সংরক্ষণ করতে হবে।

মন্তব্য করুন

  • শিক্ষা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
‘আমার খুব কষ্ট হলো এবং চোখে পানি চলে এলো’