• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

যুক্তরাষ্ট্রে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও কালচারাল নাইট’ উদযাপিত

কামরুজ্জামান হেলাল, যুক্তরাষ্ট্র

  ০৮ মার্চ ২০১৯, ১৫:৫৭

আমেরিকার নিউ মেক্সিকো স্টেটের ফ্ল্যাগশিপ ইউনিভার্সিটি হচ্ছে ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো (ইউএনএম)।

নিউ মেক্সিকোর সবথেকে বড় শহর আলবুকার্কিতে অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়য়ে বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকের সংখ্যা নেহাত মন্দ নয়। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক এবং অন্যান্য বাংলাদেশি পরিবার মিলিয়ে প্রায় ১৫০ জনের একটি বাঙালি কমিউনিটি। বাংলাদেশ স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন অব ইউনিভার্সিটি অব নিউ মেক্সিকো (বিএসএইউএনএম) এখানকার বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের নিজেদের সংগঠন। সংগঠনটির প্রেসিডেন্ট প্রতিবছর ছাত্রছাত্রীদের মধ্য থেকেই একজন নির্বাচিত হন, উপদেষ্টা কমিটিটিতে বাংলাদেশি শিক্ষক এবং অন্যান্য ছাত্রছাত্রীরা অংশ নিয়ে থাকেন। বিএসএইউএনএম এর নানাবিধ কার্যের মধ্যে বাঙালি কমিউনিটির পক্ষ হতে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা অন্যতম।

প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ উদযাপন, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উৎযাপন, বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন, নতুন ছাত্রছাত্রীদের স্বাগতম জানানো, বিশ্ববিদ্যালয়য়ের নিয়মিত কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ইত্যাদি ছাড়াও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন এই সংগঠনটি নিষ্ঠার সাথে পালন করে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরেও বিএসএইউএনএম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক রাতের আয়োজন সফলভাবে সম্পন্ন করে। গত ২ মার্চ অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ২০১৯ সালের ‘ইন্টারন্যাশনাল মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ ডে অ্যান্ড বাংলাদেশি কালচারাল নাইট’। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি, মাতৃভাষার জন্য জাতীয় বীরদের আত্মত্যাগ এবং নতুন প্রজন্মের সামনে নিজের দেশকে উপস্থাপন করা এই অনুষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্য।

সারাদিনের ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষা আর ব্যক্তিগত কাজের চাপে যেখানে দম ফেলার সুযোগ নেই তারই মাঝে একদল উচ্ছল প্রাণ ছাত্রছাত্রীর অক্লান্ত পরিশ্রম আর স্বদিচ্ছার দারুণ প্রদর্শনী ছিল পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই। অনুষ্ঠানটি সফল করার জন্য ওদের যে কী আন্তরিক প্রচেষ্টা সেটি একটি ছোট্ট উদাহরণ দিলেই বুঝবেন- ইউএনএম এর এক প্রাক্তন ছাত্রের প্রায় এক হাজার ৬০০ মাইল পাড়ি দিয়ে অনুষ্ঠানের আগের রাত্রে আলবুকার্কিতে পৌঁছানো। কতটা আন্তরিক আর নিবেদিত প্রাণ হলে শুধু দেশীয় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সফল করতে কেউ এতটা ত্যাগ স্বীকার করে! সপ্তাহান্তের ছুটির দিনগুলোতে রাত জেগে অনুশীলন, পূর্বের থেকে আরও ভাল করার প্রত্যয়, বাংলাদেশি সংস্কৃতিকে প্রবাসী ও পরদেশীদের সামনে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার প্রচেষ্টা এসব কিছুই ওদের অনুষ্ঠানকে মোহনীয় করে তুলেছিল। মার্চের ২ তারিখে বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ছিল মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচি। প্রথমে বাংলাদেশকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরার জন্য চিত্র-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এরপর অমর একুশের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ এই প্রভাতফেরী কোরাস সঙ্গীতের মাধ্যমে মূল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। একে একে মঞ্চে উপস্থিত হয়ে কবিতা, গান, নাচ, নাটক, কমেডি শো, বাচ্চাদের বর্ণমালার গান আর ফ্যাশন শো- এর ঝলমলে পরিবেশনায় দর্শক সারিকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখে বিএসএইউএনএম এর সদস্যরা।

একেকটি পরিবেশনা শেষ হবার পর দর্শক সারি থেকে উঠে আসা মুহুর্মুহু করতালি আর উচ্ছ্বাস ধ্বনি তারই সাক্ষ্য দিচ্ছিল। দর্শক সারিতে স্থানীয় বাংলাদেশি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের ছাত্র শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশুদের জন্য ছিল স্মারক টি-শার্ট আর সনদ প্রদানের অনুষ্ঠান। বাংলা শেখার কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সুযোগ না পাওয়া এই বাচ্চাগুলো এরকম দেশীয় সাংস্কৃতিক আবহাওয়ার সহাচার্য পেয়ে নিজের মাতৃভাষা বেশ ভালোভাবে রপ্ত করে নিতে শিখলো। ‘এ ফর অ্যাপল’ এর বদলে ওরা যখন সুর মিলিয়ে খান আতাউর রহমান খান এর বিখ্যাত বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণের ছড়া গাইছিল ওদের বাবা-মায়ের পাশাপাশি অন্যান্য বাঙালিদেরও হৃদয় আদ্র হয়ে উঠেছিল। আয়োজকদের এই বিশেষ আয়োজন আলাদা করে ধন্যবাদ পাবার যোগ্য।

বাংলাদেশের আধুনিক, লোকজ, নজরুল এবং রবীন্দ্র সংগীতের একক, দ্বৈত ও দলগত পরিবেশনা ছিল। নাচের ক্ষেত্রেও এই ধারাটি অক্ষুণ্ণ ছিল। এবারের ফ্যাশন শোয়ের মূল থিম ছিল বাংলাদেশ উদযাপিত হওয়া বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসব। ঈদ, পূজা, বর্ষবরণ, আদিবাসী দিবস, বিভিন্ন ঋতু বরণের উৎসব, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস সব কিছুই সুন্দর ও বর্ণিল করে উপস্থাপন করা হয়েছিল। ফ্যাশন শোটি সবার ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছাড়াও বিএসএইউএনএম এর পাবলিকেশনের পক্ষ থেকে ম্যাগাজিন ‘বর্ণমালা’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ম্যাগাজিনের সদস্য ও এর সাথে সম্পৃক্ত স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটির সবাই প্রতি বছরের ন্যায় এবারেও বর্ণমালার মাধ্যমে নিজদের রচিত সাহিত্য এবং বাংলাদেশ সম্পর্কে বিভিন্ন পরিচিতিমূলক প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। এ বছর বর্ণমালার নবম সংস্করণ প্রকাশিত হল। বর্ণমালার নবম সংস্করণটি চকবাজারের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে নিহত, আহত এবং ক্ষতিগ্রস্ত সকলের প্রতি সম্মান জানিয়ে উৎসর্গ করা হয়েছে।

মঞ্চে পরিবেশনাকারী এবং মঞ্চের পেছনে কাজ করা সবাইকে বিশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মাধ্যমে বিএসএইউএনএম এর বর্তমান প্রেসিডেন্ট মহিউদ্দীন আহমাদ তার সমাপনী বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান শেষে আগত অতিথি ও দর্শকদের সম্মানে বিএসএইউএনএম এর পক্ষ থেকে একটি প্রীতিভোজের আয়োজন করা হয়।

বিএসএইউএনএম এর পক্ষ থেকে আয়োজিত এই ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও বাংলাদেশ নাইট’ যে এই পরদেশেও নিজের দেশের সংস্কৃতিকে দিন দিন সফলভাবে পরিচিত ও জনপ্রিয় করে তুলছে সেটা আগত বিদেশী অতিথি ও দর্শকের মধ্যে বাসন্তী রঙা শাড়ি আর খোঁপায় গোঁজা ফুল এবং পাঞ্জাবির সাড়ম্বর উপস্থিতিতেই বেশ উপলব্ধি করা গেল। সুদূর প্রবাসে বাংলাদেশকে তুলে ধরার বিএসএইউএনএম এর এই আন্তরিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকুক আর সফল হোক- স্থানীয় প্রতিটি বাঙালির এটিই চাওয়া।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
গাজা ইস্যুতে পদত্যাগ করলেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের উচিত অংশীদার হওয়া, শত্রু নয়: শি জিনপিং
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বহিষ্কার
ভারতীয় তিন কোম্পানির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
X
Fresh