• ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সমুদ্রের রোমাঞ্চকর গল্প বলেন তারা, শোনান গান

আরটিভি নিউজ

  ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ২২:৪৫
ফাইল ছবি

নিঃসীম সমুদ্রে ভেসে চলা নাবিকদের জীবন সমুদ্রের মতোই বৈচিত্রময়। বিশাল বিশাল ফণা তোলা সব ঢেউ। মাঝসমুদ্রে থাকা জাহাজের গায়ে মুহুর্মুহু আছড়ে পড়ে একেকটা ঢেউ। মুহূর্তেই বাষ্পের মতো ওপরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে সমুদ্রের নোনা পানি। ভয়ংকর গর্জনে সমুদ্র তার খ্যাপাটে ভাবের জানান দেয়। এই গর্জনে গায়ে কাটা দেয়। কখনো আবার সমুদ্র থাকে শান্ত। পাটি বিছানো নীল সমুদ্রের দিগন্তরেখায় হেসে ওঠে রংধনু। সমুদ্রের এমন সব বৈচিত্র্যপূর্ণ রূপ মানুষের সামনে তুলে ধরেন দুই নাবিক আবদুল্লাহিল মারুফ ও মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকার।

সেইল উইথ মারুফ :
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘সেইল উইথ মারুফ’ নামে পরিচিত আব্দুল্লাহিল মারুফ। পেশায় একজন নাবিক। সমুদ্রগামী জাহাজে বসে অবসরে তিনি ভ্লগ করেন। ভ্লগিংয়ের মাধ্যমে এই তরুণ তুলে ধরেন সমুদ্র, সমুদ্রযাত্রা, সমুদ্রচারী জীবনের নানা দিক। দারুণ গানও করেন মারুফ। জাহাজে বসে তার করা গানে মুগ্ধ হন নেটিজেনরা। তার গান, ভ্লগ লাখো দর্শক দেখেন। তারা তাকে প্রশংসায় ভাসান।

মারুফের শৈশব-কৈশোর কেটেছে জন্মস্থান রাজশাহীতে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে তিনি ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও যোগাযোগ প্রকৌশল বিভাগে। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে থেকে সেই যাত্রা আর দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। এরপর ভর্তি হন দেশের একটি বেসরকারি মেরিটাইম ইনস্টিটিউটে। সেখান থেকে সামুদ্রিক প্রকৌশলবিদ্যার প্রাথমিক দীক্ষা নিয়ে যোগ দেন জাহাজের শিক্ষানবিশ কর্মী হিসাবে। পরবর্তী সময়ে ইংল্যান্ডের লিভারপুল জন মুর্স বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্জন করেন উচ্চতর প্রফেশনাল ডিগ্রি। বর্তমানে তিনি হংকং ভিত্তিক একটি কোম্পানির তেলবাহী জাহাজের সেকেন্ড অফিসার হিসাবে কর্মরত আছেন।

নাবিক হিসেবে এখন পর্যন্ত ২৫টির বেশি দেশে গেছেন মারুফ। সমুদ্রযাত্রা করেছেন প্রায় ৪০টি। ২০২১ সালের আগস্টে চীন থেকে ভেনেজুয়েলা যাওয়ার পথে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে বড় ঝড়ের কবলে পড়েছিল মারুফের জাহাজ। কী মনে করে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সমুদ্রের ভিডিও ধারণ করেন তিনি। নিজের ফেসবুক পেজে ভিডিওটি প্রকাশ করেন। হাজারো মানুষ ভিডিওটি দেখেন।

তারা ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানান। অনেকে সমুদ্রযাত্রার নানা গল্প জানার আগ্রহ দেখান। এই ঘটনার পরই সমুদ্রযাত্রা নিয়ে ভ্লগ করার ভাবনা মাথায় আসে মারুফের। তিনি বলেন, ‘আমার ভ্লগিংয়ের উদ্দেশ্য হলো, সমুদ্রযাত্রার অজানা দিকগুলো বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে খুব সাধারণভাবে তুলে ধরা।’

‘সেইল উইথ মারুফ’ নামের ফেসবুক পেজে এখন পর্যন্ত ৪০টির মতো ভিডিও আপলোড করেছেন এই নাবিক। এসব ভিডিওতে সমুদ্র, ঝড়ঝঞ্ঝা, ঢেউ, সমুদ্রযাত্রা, বন্দর, জাহাজের অভ্যন্তরীণ নানা কারিগরি বিষয়, জাহাজ পরিচালনা, নাবিকদের কাজ, খাওয়াদাওয়াসহ হরেক কৌতূহলোদ্দীপক বিবরণ রয়েছে।

মারুফ বলেন, শখের বশেই তার প্রফেশনাল জীবনকে নিয়ে কনটেন্ট তৈরি করা। সাধারণ মানুষের পক্ষে সামুদ্রিক জাহাজের অভ্যন্তরীণ ক্রিয়াকৌশল সম্পর্কে জানা সম্ভব হয় না। তাই এমন কনটেন্টের আগ্রহ বেশি।

অবসরে আরেকটা কাজ করেন মারুফ। তিনি জাহাজে বসে হাতে তুলে নেন ইউকেলেলে। দরদভরা কণ্ঠে তোলেন সুর। গেয়ে ওঠেন, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘আহারে জীবন’, ‘পথের ক্লান্তি ভুলে স্নেহভরা কোলে তব’, ‘দিন যায়, কথা থাকে’, ‘ওকি একবার আসিয়া সোনার চান্দ মোর যাও দেখিয়া রে’, ‘কি নামে ডেকে বলব তোমাকে’, ‘প্রেমে পড়া বারণ’, ‘যদি হিমালয় হয়ে’ এমন সব গান।

হিন্দি গানেও সমান পারদর্শী তিনি। মারুফ অধিকাংশ গান জাহাজের ব্রিজে বসে করেন। সেখান থেকে সহজেই সমুদ্র দেখা যায়। তার গান সমুদ্রের সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

ছোটবেলা থেকেই গানের প্রতি ভীষণ ভালোবাসা মারুফের। তবে গানের প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষা তার নেই। শুনে শুনে গান রপ্ত করেছেন তিনি। মারুফ বলেন, পরিবার থেকে বহু দূরে, সমুদ্রচারী জীবনের নানা বাঁকে গানই আমাকে উজ্জীবিত রাখে।

হৃদয় দ্য সেইলর :
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকারের পরিচয় ‘হৃদয় দ্য সেইলর’। সমুদ্রজীবনের নানা বিষয় নিয়ে ভিডিও তৈরি করেন এই নাবিক। হৃদয় কাজ করছেন জাহাজের ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে। জাহাজে আসার আগে স্যোশাল মিডিয়ায় টেক ভিডিও কনটেন্ট বানানোর নেশা ছিলো হৃদয়ের। নীল সমুদ্রের স্নিগ্ধ জলে এসেও সে নেশা আর কাটেনি। এখন ভিডিও বানান জাহাজের নাবিক জীবন নিয়ে। নাবিকরা কীভাবে ঘুমান, ইঞ্জিন রুম-ব্রিজে কী কাজ চলে, জাহাজে কেউ মারা গেলে কী করা হয়, জলদস্যু এলে কী করা হয় —এমন সব চমকপ্রদ ঘটনা তার কনটেন্টের বিষয়বস্তু। যা সাধারণ মানুষের কাছে খুবই আগ্রহের।

ফেসবুক আর টিকটকে হৃদয়ের অনুসারীর সংখ্যা সাত লাখের অধিক। ইউটিউব চ্যানেল যেমন (৭ মার্চ পর্যন্ত) ১৩৮টি ভিডিও তুলেছি। আমার এই চ্যানেলে যুক্ত আছেন ১ লাখ ৭১ হাজার সাবস্ক্রাইবার। আর ভিডিওগুলো দেখা হয়েছে ১ কোটি ৮৮ লাখের বেশিবার। দর্শকরা কমেন্ট বক্সে জানতে চান জাহাজের অভ্যন্তরীণ খুঁটিনাটি নানা বিষয়ে। হৃদয় চেষ্টা করেন সেগুলোকে পরিবর্তী ভিডিওতে যুক্ত করার।

মোহাম্মদ রেদওয়ান বলেন, বেশ কয়েক বছর হলো ইউটিউবে আমার আনাগোনা। তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আগ্রহ থাকায় এটা নিয়ে ভিডিও বানাতাম। সেগুলো শেয়ারও করতাম। কিন্তু সেটি ছিল অনিয়মিত। তবে কাজটা করতে আমার আনন্দই লাগে। সেই আনন্দই এবার নতুন মাত্রা পায়। ইউটিউবে আমার চ্যানেল ‘হৃদয় দ্য সেইলর’-এ আপলোড করতে থাকি। এখন ‘হৃদয় দ্য সেইলর’ নামেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে পেজ ও চ্যানেল আছে। একই ভিডিও সব মাধ্যমেই শেয়ার করি।

মোহাম্মদ রেদওয়ান সরকারের জন্ম, বেড়ে উঠা কুড়িগ্রামে। কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোন হৃদয়। এরপর উচ্চশিক্ষার ভর্তিযুদ্ধে বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেলেও আগ্রহের জায়গা থেকে ভর্তি হন বাংলাদেশ মেরিন একাডেমিতে। এরপর একাডেমিক এবং শিক্ষানবিস পর্ব শেষ করে ২০২২ সালে জাহাজের পেশাদার জগতে ঢুকে পড়েন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
যেদিন থেকে সমুদ্রে মাছ ধরা নিষিদ্ধ
চুনাপাথর নিয়ে ২৩ নাবিকসহ দেশের পথে এমভি আবদুল্লাহ
নতুন গন্তব্যে এমভি আবদুল্লাহ, ২৩ নাবিকের দেশে ফেরা নিয়ে নতুন তথ্য
কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকের মৃত্যু 
X
Fresh