• ঢাকা রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ইন্টেরিয়র ডিজাইন কী এবং কেন জরুরি

স্থপতি মো. মোকসেদুর রাহমান রিপন

  ১৬ মার্চ ২০২৪, ১৬:৪৪
ছবি : আরটিভি নিউজ

ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের মধ্যে অনেক বড় একটা পার্থক্য রয়েছে, যা আমরা সাধারণ চোখে কখনোই ভেবে দেখি না। বেইলি রোড দুর্ঘটনার পর অনেকেই বলছেন, ইন্টেরিয়র ডিজাইনের জন্য আগুনের ভয়াবহতা অনেক অনেক গুণ বেড়েছে। কথা ঠিক যে, অপ্রয়োজনীয় অনেক জিনিস আছে, যেগুলো থাকার কারণে একটা জায়গায় আগুন লেগে গেলে তীব্রতা অনেক বেড়ে যেতে পারে। যেখানে দাহ্য পদার্থ যত বেশি থাকবে, সেখানে আগুন দ্রুত ছড়াবে এটাই স্বাভাবিক। কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা নানারকম আলোচনা-সমালোচনা করে থাকি, কিন্তু খুবই দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, আমরা একটু চিন্তা না করে কোনো বিষয়ে কিছু একটা বলে ফেলার কারণে সমাজে এর অনেক বড় ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। তেমনই একটা ক্ষতিকর প্রভাব হলো ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে, ইন্টেরিয়র ডেকোরেশনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা।

ইন্টেরিয়র ডিজাইন কী?
খুব সহজে এবং সংক্ষেপে যদি বুঝতে চাই তাহলে, কোনো একটা আবদ্ধ স্থানকে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ভাগ করে নেওয়া অর্থাৎ আপনার কাছে একটি নির্দিষ্ট আবদ্ধ স্থান রয়েছে এখন এই আবদ্ধ স্থানটির কোথায় আপনি কোন কাজের জন্য ব্যবহার করবেন, তা নির্ধারণ করা। স্থাপত্যের ভাষায় বললে, কোনো স্থাপনার অভ্যন্তরীণ স্থানকে প্রয়োজনীয় কাজের জন্য উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত করা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের কাজ।

প্রথমত, এই কাজে অনেকগুলো বিষয় নিশ্চিত করতে হয়, যেমন- যথাসম্ভব পর্যাপ্ত বাহিরের আলো–বাতাসের ব্যবস্থা রাখা, প্রতিটা মানুষ যেন আরামে বসে কাজ করতে পারে, কাজের স্থানে যেন চলাচলের সুব্যবস্থা থাকে, কাজের ধরন অনুযায়ী পর্যাপ্ত আসবাবপত্র রাখার ব্যবস্থা থাকা, এমনভাবে আসনগুলোকে স্থাপন করা যেন, প্রত্যেকে প্রত্যেকের কাছে তাদের কাজের গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারে। আবার প্রয়োজন অনুযায়ী কয়েকজন একসাথে বসে কাজ করতে পারে। কোনো একটা দুর্ঘটনা ঘটলে যেন সবাই খুব দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যেতে পারে ইত্যাদি আরও অনেকগুলো বিষয়ের দিকে খেয়াল রেখে একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বা ইন্টেরিয়র স্থপতি কাজ করে থাকেন।

দ্বিতীয়ত, ডিজাইনের জন্য ব্যবহৃত উপকরণ নির্ধারণ করা, এটা একটা চ্যালেঞ্জিং কাজ। ক্লায়েন্টের সামর্থ্য, পছন্দ, ব্যবহারকারীর ওপর প্রভাব ইত্যাদি নানান বিষয় মাথায় রেখে ডিজাইনের উপকরণ বাছাই করতে হয়। উপকরণের গঠন, রং, আলোর প্রতিফলন, ঠান্ডা-গরম এমনকি ব্যবহারকারীর মানসিক নানান দিক ও চিন্তা করতে হয়। অর্থাৎ সামগ্রিকভাবে ইন্টেরিয়র ডিজাইন সম্পূর্ণরুপে একটি সৃষ্টিশীল বা সৃজনশীল কাজ।

ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন কী?
একটি আবদ্ধ স্থানকে যখন কাজের ধরন অনুযায়ী ভাগ করা হয়, তখন ওই ভাগ করা একেকটি অংশকে আমরা আমাদের পছন্দমতো উপকরণ দিয়ে অলংকৃত করি। মূলত এই অলংকরণ করাটাই হলো ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন। এই কাজে খুব একটা সৃষ্টিশীলতার তেমন কিছু নেই। ব্যবহারকারীর রুচির ওপর বেশির ভাগ নির্ভর করে।

কেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং ডেকোরেশনের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি

ইন্টেরিয়র ডিজাইন একজন ব্যবহারকারীকে তার স্থানটিকে উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য পর্যাপ্ত দিকনির্দেশনা দিবে যা একজন ব্যবহারকারীর খুবই প্রয়োজন। একটি আবদ্ধ স্থানকে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারেন একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বা ইন্টেরিয়র স্থপতি। আমাদের দেশে এই বিষয়টি খুব বেশি দিন আগে থেকে তেমন পরিচিত নয়। আবার নিয়ম-কানুন না মেনে অনেক কিছুই আমরা করে ফেলতে পারি বলে কোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের গুরুত্বকে তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে যাই যা বেশির ভাগ সময়ে বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ইন্টেরিয়র ডিজাইন এবং ডেকোরেশনের মধ্যে পার্থক্য না বোঝার কারণে আজকে একটা সুন্দর শিল্পকে আমরা ধ্বংশ করে ফেলতে যাচ্ছি।

ইন্টেরিয়র ডিজাইনের নামে শুধুমাত্র কিছু গৎবাধা ডেকোরেশন করে চালিয়ে দেওয়া কোনোভাবেই কাম্য নয় বলে আমি মনে করি। আমদের দেশের বেশির ভাগ মানুষই সচেতন নয় আর এই অসচেতনতার সুযোগ নিচ্ছে একদল লোভী, সুবিধাভোগী মানুষ। তারা কিছু না জেনেই অতি মুনাফার আশায় মানুষের ক্ষতি করে আসছে। একটি ইন্টেরিয়র ডিজাইন করার জন্য একজন মানুষকে অনেক পড়াশোনা করতে হয়, তাকে অনেক বেশি সৃজনশীল হতে হয়, তার মধ্যে আত্মবিশ্বাস থাকতে হয় এবং ভালো মন-মানসিকতার অধিকারী হতে হয়, তারপর একজন মানুষ একটি ভালো কাজ উপহার দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বেইলি রোড ট্রাজেডির ফলে অনেকেই না বুঝে ইন্টেরিয়র ডিজাইনকে অনেকাংশে দায়ী করছেন।

আসলে দেখতে হবে যে, এই ট্রাজেডির জন্য কে দায়ী, ইন্টেরিয়র ডিজাইন নাকি ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন? আমাদের কিছু ভুল ধারণার কারণে একটা সুন্দর শিল্পকে যেন ধ্বংস করে না ফেলি! আমাদের মনে রাখতে হবে যে, একজন ইন্টেরিয়র ডিজাইনার বা ইন্টেরিয়র স্থপতি পারেন একটি আবদ্ধ স্থানকে ব্যবহারকারীর প্রয়োজন অনুসারে সর্বোচ্চ ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তুলতে। বর্তমানে আমাদের দেশে অনেকেই খুব ভালো ভালো কাজ করছেন। আমরা অনেকেই জানিনা যে, আন্তর্জান্তিক পরিমণ্ডলে আমাদের দেশের স্থপতিদের করা ইন্টেরিয়র ডিজাইনের প্রজেক্ট পুরস্কার পাচ্ছে এবং সমাদৃত হচ্ছে।

অনেকগুলো প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা এই ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ওপর বিভিন্ন মেয়াদে কোর্স করাচ্ছেন এমনকি প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে অনার্স (ব্যাচেলর ডিগ্রি) কোর্স ও করানো হচ্ছে। তাই আমরা জেনে-বুঝে ও শুনে একজন ডিজাইনারের পটভূমি যাচাই করে তবেই তাকে বা তার প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে ইন্টেরিয়র ডিজাইন করাব। এখন সময় এসেছে এই শিল্পকে নিয়ে গর্ব করার।

স্থপতি মো. মোকসেদুর রাহমান রিপন
সাবেক শিক্ষক, শান্ত মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh