বাংলাদেশে ভারত-বিরোধী প্রচারের নেপথ্যে কি?
![বিপ্লব কুমার পাল](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/03/07/image-264048-1709807506.jpg)
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘ইন্ডিয়া আউট’ নামে ভারত বিরোধী এক ধরনের প্রচারণা চলছে। সেখানে ভারতীয় পণ্যসহ দেশটিকে 'বয়কট' নিয়ে করা বিভিন্ন ধরনের ক্যাম্পেইন চলছে। যারা এসব প্রচারণা চালাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই সরকারবিরোধী হিসেবে পরিচিত। এর সঙ্গে কয়েকটি ছোটখাটো রাজনৈতিক দলও যুক্ত রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশিরভাগ পোস্টদাতা বলছেন, ‘বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে ভারত অযাচিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছে। এই কারণে তারা ভারতীয় পণ্য বয়কটেরও ডাক দিচ্ছেন।’
এখন প্রশ্ন হলো- দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কোন দেশ কী কী পদক্ষেপ নিয়েছিল? যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও ভারতের অবস্থান কেমন ছিল? আর কেনই বা শুধু ভারত-বিরোধী প্রচারণা চলছে? চীন ও রাশিয়া বর্তমান সরকারকে প্রকাশ্যে সমর্থন দিয়েছিল। এই দুই দেশের ব্যাপারে নীরবতা কেন?
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বেশি তৎপর ছিল আমেরিকা। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপির পক্ষে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালিয়েছিলন পিটার হাস। সরকারকে চাপে রাখতে নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। শুধু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একা না, তার মিত্রদেরকেও বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রকম তৎপরতায় সামিল করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই তৎপতারার বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল রাশিয়া। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কথা বলা হলেও আড়ালে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো।’ বাংলাদেশ সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীনও। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেছিলেন, ‘সংবিধান ও আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে নির্বাচন চায় চীন। বাংলাদেশের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। তাই নির্বাচন নিয়ে বাইরের কোনো দেশের হস্তক্ষেপ আমরা চাই না।’ বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বলেছিল, বাংলাদেশের নির্বাচন কিভাবে হবে সেটি দেশটির জনগণই ঠিক করবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এক দিকে প্রকাশ্যে বিরোধীতা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। আর প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীন সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীন, রাশিয়া এবং ভারত। অথচ গত ৭ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারকে সমর্থন করার দায়ে ‘ইন্ডিয়া আউট’প্রচারণা চলছে। স্বভাবতই প্রশ্ন ওঠেছে, শুধু ভারত বিরোধী কেন? ‘চীন আউট‘এবং রাশিয়া আউট’প্রচারণা চলছে না কেন? তারাও তো প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন দিয়েছিল।
বাংলাদেশে ভারত বিরোধী এই অবস্থান নতুন নয়। মূলত ধর্মীয় কারণে ভারত বিরোধী এবং পাকিস্তান প্রেমী মানুষের সংখ্যা বাংলাদেশে অনেক। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা রাখার কারণেও তারা ভারতকে পছন্দ করে না। আবার চীন মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষে থাকলেও এ বিষয়ে তাদের কোনও ক্ষোভ দেখা যায় না। ভারত বিরোধীতা বাংলাদেশে ট্রাম কার্ড হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত পদ্ধতি।
ভারত বিরোধী এই রাজনীতি তীব্র হয় ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে হত্যার পর থেকে। জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এরশাদ বা তার পরবর্তী সময়েও ভারত বিরোধীতা চলে এসেছে। নব্বই দশকে রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতা কার্ডটি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। সেই সময় ভোট আসলেই প্রচার চালানো হতো- ‘ভারতের বিভিন্ন স্থানে নৌকা টাঙানো রয়েছে’, ‘শেখ হাসিনা ক্ষমতায় গেলে ঢাকা হবে দিল্লি’ কিংবা ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে মসজিদে আযানের পরিবর্তে উলুধ্বনী শোনা যাবে’। এ ধরনের অপপ্রচারের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে এক ধরনের ভারত বিরোধিতা এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী বীজবপণ করার চেষ্টা করা হয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর বিএনপিকে ভারত ইস্যুতে সরব হয়েছিল। আর ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দুই দেশের চুক্তি সম্পাদনের প্রতিবাদে মাঠে নেমেছিল বিএনপি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে টানা ১৫ বছর আন্দোলন করে জনসমর্থন না পেয়ে ‘ভারত বিরোধী’সেই পুরোনা কার্ড ব্যবহার করছে বিএনপি। দলটির নেতাদের কথাতেও তাই ফুটে উঠেছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘ভারত সরকারের ক্ষমতার জোরে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগ এখন একটি ভারতীয় পণ্যে পরিণত হয়েছে। ভারত বাংলাদেশের জনগণ ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে বাকশালী শাসনের পক্ষে সহযোগিতা করছে। সরকারও এ সুযোগে দেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্য বানিয়েছে।’ আর বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পুনরুজ্জীবন স্পষ্টতই বাধাগ্রস্ত করছে ভারত সরকার। তারা তাদের পছন্দের বাইরে যেতে পারছে না।’
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের সংবিধানকে সমর্থন করায় ভারতের ওপর এতো রাগ বিএনপির। কিন্তু একই কারণে চীন বা রাশিয়ার বিষয়ে কিছু বলছে না তারা। চীন বা রাশিয়ার পণ্য বয়কট নিয়ে মুখে রা নেই বিএনপি নেতাদের। তারা জানেন বিরোধীতার ক্ষেত্রে ধর্ম একটা বড় হাতিয়ার। পাকিস্তানকে এখনও বাংলাদেশের যত মানুষ বন্ধু ভাবে, তার মূল কারণ ধর্ম। একাত্তরে পাকিস্তানিদের গণহত্যা তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ।
রাজনীতির মাঠে ধর্মকে হাতিয়ার হিসেবে বারবার বেছে নিয়েছে বিএনপি। এবারের নির্বাচন ঠেকাতে না পেরে আবারও ভারত বিরোধী মনোভাব কাজে লাগাতে চাইছে দলটি। যাকে ‘প্রেসার ডিপ্লোমেসি’ বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, প্রকাশ্যে ভারতের কঠোর সমালোচনা করে বিএনপি একটি বার্তা দিতে চাইছে যে, আওয়ামী লীগই বাংলাদেশে শেষ কথা নয়। যার ফলে ভারত তার নিজের স্বার্থের জন্যই যেন বিএনপির সঙ্গে সমঝোতা করে- এটাই তাদের কৌশল।
লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
মন্তব্য করুন
টানা ৮ দিন অতি ভারী বর্ষণের আভাস, ৩ নম্বর সংকেত
![টানা ৮ দিন অতি ভারী বর্ষণের আভাস, ৩ নম্বর সংকেত](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/28/image-280283-1719573392.jpg)
ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সুসংবাদ
![ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের জন্য সুসংবাদ](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/28/image-280294-1719577868.jpg)
‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
![‘শরীফার গল্প’ বাদ দেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/06/28/image-280306-1719583836.jpg)
দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস
![দুঃসংবাদ দিলো আবহাওয়া অফিস](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/01/image-280762-1719845427.jpg)
এসএসসিতে বাদ যাচ্ছে জিপিএ, আসছে লেটার গ্রেড
![এসএসসিতে বাদ যাচ্ছে জিপিএ, আসছে লেটার গ্রেড](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/02/image-280823-1719904925.jpg)
এক মিনিট চার্জেই ১ ঘণ্টা চলবে যে ফোন
![এক মিনিট চার্জেই ১ ঘণ্টা চলবে যে ফোন](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/02/image-280851-1719915298.jpg)
বৃষ্টি কবে কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস
![বৃষ্টি কবে কমবে, জানাল আবহাওয়া অফিস](https://www.rtvonline.com/assets/news_photos/2024/07/02/image-280894-1719930504.jpg)