• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘ফারাক’ বইটি হতে পারে জীবন রক্ষার হাতিয়ার

আরটিভি নিউজ

  ০৪ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৯
ছবি : আরটিভি

কানাডার টরেন্টো শহরের স্থানীয় একটি হোটেলে প্রবাসী লেখক মোস্তফা আকন্দ ও নেসার আহমেদ প্রণীত ফারাক গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করেছেন অন্টারিওর প্রভিন্সিয়াল পার্লামেন্টের বিরোধীদলীয় উপনেতা বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এমপিপি ডলি বেগম।

শনিবার (২ মার্চ) আলোচনা অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও কানাডা প্রবাসী আসমা আহমেদ।

ডলি বেগম তার বক্তৃতায় বলেন, টরেন্টোতে বাংলাদেশীদের মধ্যে প্যারিন্টং একটি জটিল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ফারাক’ বইটির লেখকদের আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তারা কমিউনিটির জন্য নীরবে কাজ করে যাচ্ছেন। টরেন্টোতে বাঙালী যুবকদের আত্মহত্যা বিষয়ে তারা গবেষণা করেছেন কয়েক বছর আগে। খুব ভালো কাজ ছিলে সেটা।

তিনি আরও জানান, সম্পূর্ণ বাংলায় লিখিত ফারাক বইটি টরেন্টো বাঙালী কমিউনিটির প্যারেন্টসদের প্যারেন্টিং সমস্যা সমাধানে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কমিউনিটির সবাইকে বইটি পড়া উচিত।

ফারাক গ্রন্থটির ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশের জনপ্রিয় দৈনিক প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও টরেন্টো ভিত্তিক অনলাইন পত্রিকা নতুন দেশের সম্পাদক শওগাত আলী সাগর বলেন, ফারাক গ্রন্থটি লেখকদ্বয়ের প্যারেন্টিং বিষয়ের ওপর লিখিত একটি গবেষণামূলক গ্রন্থ যেখানে আমাদের প্যারেন্টিং এর চ্যালেঞ্জগুলোকে গল্পের ঢংয়ে সন্নিবেশিত করা হয়েছে। গল্পগুলো সুখপাঠ্য। পড়তে পড়তে মনে হবে আমি এই শহরেরই কোন গল্পের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছি আর মানসিক স্বাস্থ্য ও প্যারেন্টিং বিষয়ে শিখছি। এই শিক্ষণটা আমাদের ও আমাদের সন্তানদের মধ্যকার দূরত্ব কমাতে সাহায্য করবে।

টরেন্টো প্রবাসী কবি, গল্পকার ও টরেন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের স্পেশাল নিডস্ শিশুদের শিক্ষিকা সঙ্গীতা ইয়াসমিন বইটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, শুধু সন্তান জন্ম দিলেই বাবা-মা হওয়া যায়না। বাবা-মা হতে গেলেও কিছু দক্ষতা ও প্রশিক্ষণ থাকা দরকার হয়। ‘ফারাক’ অনেকটা গবেষণা-ধর্মী তথ্য সম্বলিত এবং বাস্তব ঘটনার প্রতিচ্ছবি নিয়ে রচিত গ্রন্থ। সেসব ঘটনা বিশ্লেষণ করলেই আমাদের মত হাজারো বাবা-মা অন্তত নিজেদেরকে প্রশ্ন করতে শিখবেন। এই গ্রন্থ পাঠে যদি নিজে থেকেই আমরা কিছু শিক্ষণ নিতে পারি সেটা আমাদের সবার জন্য মঙ্গল। না-ও যদি পারি, তবুও আমরা আমাদের মুদিত চক্ষুকে মুক্ত করতে পারি! সুস্থ থাক জগতের সব সন্তান। সুখি হোক পরিবার। ঘুচে যাক সব দূরত্ব! যেখানে আছে 'ফারাক'।

টরেন্টোর আইনজীবী ব্যারিস্টার জাকির হোসেন বলেন, কোন বই যে এভাবে লেখা যায়, আমি কখনো দেখিনি। বইটি প্যারেন্টিং এর ওপর লিখিত বই। কিন্তু লেখকদ্বয় গল্প বলেছেন আর প্যারেন্টিং শিখিয়েছেন। শেষে প্যারেন্টিংয়ের ওপর একাডেমিক আলোচনাও করেছেন। বইটি পড়া শুরু করলে আপনি শেষ না করে ছাড়তে পারবেন না। কমিউনিটির মানুষদের বইটি পড়া উচিৎ।

টরেন্টোর চিকিৎসক নিলান্জনা দত্ত বলেন, মোস্তফা আকন্দর লেখা আমার খুবই ভালো লাগে। তিনি আমাদের সমাজের সমস্যাগুলোকে এমন সুন্দরভাবে তার লেখা গল্পে তুলে ধরেন যে, মনেই হয়না এটা কোন তথ্যবহুল আলোচনা। আর বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদের প্রফেশনাল লেবেল অনেক উঁচু। ফারাক বইটি সবাইকে পড়ার আহবান করছি।

অন্টারিওর গুয়েলফ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডক্টর মাহতাব শাওন বলেন, ফারাক নামটাই একটা সার্থক নাম। আপনারা বইটি পড়লেই বুঝতে পারবেন যে কেন এই নামটি রাখা হয়েছে? বইটির পটভূমি আমার জানা। যে গবেষণা লেখকদ্বয়কে বই লিখতে উৎসাহ যুগিয়েছে সেই গবেষণাটির সঙ্গে আমার সম্পৃক্ততা ছিল। কয়েক বছর আগের টরেন্টোর বাঙালী তরুণদের আত্মহত্যার কাড়ন অনুসন্ধানের গবেষণার মুল ফলাফল ছিল মা-বাবার সাথে সন্তানের যোগাযোগের অভাব’ বা প্যারেন্টিং ইস্যু। এ বিষয়টি কখনো আমাদের কমিউনিটিতে এড্রেস করা হয়নি। তিনি সবাইকে বইটির অষ্টম অধ্যায়টি ভালোভাবে পড়ার অনুরোধ করেন।

সমাজসেবা মূলক কাজের উদ্যোক্তা ড্যানিয়েল হাকিম সবাইকে ফারাক বইটি পড়তে অনুরোধ করে বলেন, সময় পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের প্যারেন্টিং স্টাইল চেঞ্জ হয়নি। বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে সম্পর্ক এর ফারাক তৈরিতে এটাই ভূমিকা রাখছে। বইটা আমাদের মধ্যে বিদ্যমান সেই দূরত্ব পুরনে সহায়তা করতে পারে।

প্রথম আলোর প্রাক্তন সাংবাদিক ও কানাডা প্রবাসী লেখক সুব্রত নন্দী বলেন, আমরা আগে জানতামই না যে প্যারেন্টিং বলে একটি বিষয় আছে। যাদের ক্ষতি হয়ে গেছে তাদেরতো গেছেই। আর আমাদের যাদের এখনো সুযোগ আছে, তারা যদি গুড প্যারেন্টিং করতে পারি তাহলে আমাদের বাচ্চাদের ক্ষতি হবেনা। আমি মনে করি, সবাইকে বাচ্চাদেরকে সময় দিতে হবে। আমাদেরকে চাপিয়ে দেয়ার মানসিকতা পরিহার করতে হবে।

টরেন্টোর বিশিষ্ট সমাজকর্মী মোস্তফা কামাল বলেন, বাবা মা হিসেবে আমাদের চিন্তার জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। তারা যেভাবে চায় সে মোতাবেক সহায়তা করতে হবে। তাহলেই দূরত্ব কমবে।

টরেন্টো ভিত্তিক অলাভজন দাতব্য সংস্থা বেঙ্গলী ইনফরমশেন এন্ড এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসের (বিআইইএস) নির্বাহী পরিচালক ইমাম উদ্দিন বলেন, ‘ফারাক’ বইটিতে যে বিষয়গুলো তুলে আনা হয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যত টাকা পয়সার মালিকই হয়না কেন, বাচ্চারা যদি ঠিকমত বেড়ে না ওঠে তাহলে সব সম্পদ অর্জন বৃথা হয়ে যাবে। নিজের সন্তানদেরকে লালনপালন করতে গিয়ে তিনি কী কী চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছেন, এবং তা তিনি কীভাবে মোকাবেলা করেছেন- তার বিবরণ তুলে ধরেন।

সমাজকর্মী বদিউজ্জামান মুকুল বলেন, ‘এলিফ্যান্ট ইন দ্য রুম’ এখন আমাদের ঘরের মধ্যে হাতি। এটাকে আর গুরুত্বহীনভাবার অবকাশ নেই। সন্তানরা বাবা-মাকে হত্যা করছে। কেন? একটু ভাবুন। যেভাবে সন্তান লালন-পালন করছেন ঠিক আছে তো ? আপনি বাচ্চাদের নিয়ে সমস্যায় থাকলে ‘ফারাক’ বইটি আপনাকে সহায়তা করতে পারে। কারণ বইটির গল্পগুলো খুবই বাস্তব এবং আমার প্রফেশনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

টরেন্টোর নারী উদ্যোক্তা সাবিনা শারমিন বলেন, ‘ফারাক’ হতে পারে কারো কারো জন্য জীবন রক্ষার হাতিয়ার। আপনি আপনার ঘরের মধ্যে কোন দানবকে বড় করে তুলছেন নাতো? ঢাকার ঔশি মেয়েটি কেন তার বাবামাকে হত্যা করল? মুল কারণ প্যারেন্টিং। তার বাবা-মা তাকে কীভাবে মানুষ করেছেন। তাকে কতটুকু সময় দিয়েছেন? তা নিয়ে কী আমরা ভেবেছি? ফারাক কেন সৃষ্টি হল? অনেক প্রশ্ন। নিজেকে প্রশ্ন করুন।

টরেন্টো ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের শিক্ষক ডঃ ফখরুদ্দীন, লেবানিজ-আমেরিকান কবি ও দার্শনিক কাহলিল জিবরানের একটি কবিতার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, তোমাদের সন্তানেরা তোমাদের নয়। তারা সময়ের সন্তান। তারা তোমাদের মাধ্যমে পৃথিবীতে এসেছে। তোমরা তোমাদের সন্তানদের নিজের সম্পত্তি মনে করিও না। অর্থাৎ সন্তান হলেই যে সব কিছু তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে হবে তাদের মতামতের কোন দাম দেয়া যাবেনা-এটা ঠিক নয়। তারা ছোট হতে পারে কিন্তু তারাও সব বোঝে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অন্টারিওর নিবন্ধিত সমাজকল্যাণ কর্মী ও উপন্যাসিক জাকারিয়া মুইনুদ্দিন বলেন, আমাদের বাঁচতে হলে জানতে হবে, অনুশীলন করতে হবে। মেন্টাল হেলথ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্যারেন্টিং আমাদের শিখতে হবে। ফারাক প্যারেন্টিং শিখতে সহায়তা করবে নিশ্চয়ই।

বইটির সহ-লেখক নেসার আহমেদ উপস্থিত অতিথিদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘ফারাক’ বইটি সময়োপযোগী বই। বইটি গল্প সমৃদ্ধ হলেও সবগুলো গল্পই সত্য ঘটনার ওপর ভিত্তি করে লেখা। সময়ের সাথে সাথে আমাদের নিজেদের প্যারেন্টিং স্টাইলে পরিবর্তন আনতেই হবে। বইটি আমাদের সেই পরিবর্তন আনতে সহায়কের ভূমিকা পালন করবে।

মোস্তফা আকন্দ বইটির ওপর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, আমরা সবাই আমাদের বাচ্চাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ চাই। কিন্তু নতুন দেশ নতুন সময়ের চাহিদারে সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নিজেরা নিজেদের পরিবর্তন করতে ইস্ততঃবোধ করি। ফলে আমাদের সাথে আমাদের সন্তানদের ফারাক তৈরি হয়। নতুন দেশের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির সাথে নিজেদের খাপ খাওয়াতে না পারলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। বিদেশী সংস্কৃতি ও আমাদের সংস্কৃতির চাপে আমাদের বাচ্চারা স্যান্ডউইচ বেবি হিসেবে বেড়ে উঠবে অথবা হারিয়ে যাবে। আমাদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে আমরা কী করবো।কারণ বাচ্চাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। বইটি বাবা-মায়েদের পয়েন্টিং চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সহায়ক হবে সন্দেহ নেই।

আলোচনা অনুষ্ঠানে আরো মতামত ব্যক্ত করেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টর এডভোকেট ও কানাডা প্রবাসী আক্তার মোসাম্মাৎ, ক্যানবাংলা টেলিভিশনের কর্নধর ড, মো. হুমায়ন কবির চৌধুরী, পিল ডিসট্রিক্ট স্কুল বোর্ডের সিনিয়র শিক্ষক এমডি হাসান তারিক, বিশিষ্ট নারী উদ্যোক্তা সেলিমা আহমেদ, আবাসন ব্যবসায়ী নাসিমা পারভীন ও মেফিল্ড হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্রী মেহরীন মুস্তারীসহ অনেক।

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
কানাডায় জাঁকজমকভাবে শেষ হলো ‘অঞ্জন দত্ত’ নাইট
ব্যারিস্টার খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি
প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে আইনজীবীদের প্রতি সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা
‘নাসিরকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন পরীমণি’
X
Fresh