• ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ইমাম হোসাইন (রা.) দুই দফা বৈঠক করেন ইয়াজিদের সেনাপতির সঙ্গে

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, ১৩:০২

৬১ হিজরির ৮ মহররম কারবালায় ইমাম হোসাইনের (রা.) শিবিরে পানির সংকট দেখা দেয়। আগের দিন মানবতার শত্রু ইয়াজিদ বাহিনী ফোরাতের পানি নিষিদ্ধ করে ইমাম শিবিরের জন্য।

কারবালার মরুময় ও উষ্ণ আবহাওয়ায় হজরত ইমাম হোসাইন (রা.) এবং তাঁর সঙ্গীরা তীব্র তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

ইমাম মাটি খোঁড়ার জন্য কোদাল জাতীয় একটি বস্তু এনে নিজ শিবিরের তাবুগুলো থেকে ১৯ কদম পেছনে যান। মাটি খুঁড়তে থাকলে স্বচ্ছ ও সুপেয় পানি বের হয়ে আসে। ফলে সবাই পানি পান করেন এবং মশক ভরে পানি নিয়ে যান নিজ নিজ তাবুতে। এরপরই পানি অদৃশ্য হয়ে যায় এবং পানির কোনো চিহ্নও আর দেখা যায়নি। এ ঘটনার খবর পৌঁছে যায় ওবায়দুল্লাহ ইবনে জিয়াদের কাছে। সে ওমর সাদের কাছে এক কর্মচারী পাঠায় একটি বার্তাসহ।

“আমি খবর পেলাম হোসাইন কুয়া খনন করে পানি সংগ্রহ করেছে। এই চিঠি তোমার কাছে পৌঁছার সঙ্গে সঙ্গেই আগের চেয়েও বেশি সতর্ক হয়ে যাবে যাতে ওরা পানির নাগাল না পায়। হোসাইন ও তার সঙ্গীদের ব্যাপারে কঠিনভাবে তৎপর থাকবে।”ওমর ইবনে সাদ ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করে।

এ ছাড়াও এই দিনে ইমামের সঙ্গী ইয়াজিদ বিন হুছাইন হামেদানি (রা.) ওমর সাদের সঙ্গে কথা বলার জন্য ইমামের অনুমতি নেন। তিনি তাঁকে অনুমতি দিলেন। হামেদানি (রা.) কোনো সালাম দেয়া ছাড়াই ওমর সাদের কাছে উপস্থিত হন।

ওমর সাদ বলেন, কেন আমায় সালাম করলে না? আমি কি মুসলমান নই?

হামেদানি (রা.) জবাবে বলেন, তুমি যদি নিজেকে মুসলমান মনে কর তাহলে কেন নবী(স.)’র পরিবারের সঙ্গে শত্রুতা করছ এবং তাঁদেরকে হত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছ ও ফোরাতের পানি তাঁদের জন্য নিষিদ্ধ করেছ। অথচ এ অঞ্চলের পশু-পাখীর জন্যও তা নিষিদ্ধ নয়?

ওমর ইবনে সাদ মাথা নিচু করে বলল, আমি জানি যে নবী(সা.)’র পরিবারকে কষ্ট দেয়া হারাম। কিন্তু আমি এখন এমন এক স্পর্শকাতর অবস্থায় আছি যে কি করব বুঝতে পারছি না। আমি কি রেই শহরের (আধুনিক তেহরানের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত) শাসনভার যার জন্য আমি অধীর আগ্রহী তা ত্যাগ করব নাকি আমার হাত হোসাইনের রক্তে রঞ্জিত করব? অথচ আমি জানি যে এর শাস্তি হচ্ছে জাহান্নাম। হে হামেদানি! রেই শহরের শাসনভার আমার নয়নের আলো! আমি তা ছাড়তে পারব বলে মনে হয় না।

হামেদানি (রা.) ফিরে এসে ঘটনা বললেন ইমামের কাছে, ওমর ইবনে সাদ রেই শহরের শাসনভার পাওয়ার লোভে আপনাকে হত্যা করতে প্রস্তুত হয়েছে।

ইমাম তাঁর এক সঙ্গীকে সাদের কাছে পাঠান। রাতের বেলায় উভয়ের সেনা অবস্থানের মধ্যবর্তী স্থানে বৈঠকের প্রস্তাবে রাজি হয় সাদ। ইমাম হোসাইন (রা.) বিশ জন সঙ্গী নিয়ে আসেন এবং সাদও বিশ জন সঙ্গী নিয়ে আসেন। ইমাম তাঁর সৎ ভাই হজরত আবুল ফজল আব্বাস (রা.) ও পুত্র হজরত আলী আকবর (রা.) ছাড়া অন্য সবাইকে তাবুতে ফিরে যেতে বলেন। সাদও তার পুত্র হাফস ও এক চাকর ছাড়া অন্য সবাইকে চলে যেতে বলেন।

এই সাক্ষাতে ইমাম যতবারই সাদকে বলছিলেন, ‘তুমি কি আমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাও?’-সাদ ততবারই অজুহাত বা ওজর দেখায়। যেমন, একবার সে বলছিল, আমি ভয় পাচ্ছি (ইয়াজিদ সরকার বা তার গভর্নর) আমার ঘর ধ্বংস করে দেবে!

ইমাম বললেন, আমি তোমার ঘর তৈরি করে দেব।

আরেকবার সে বলে, আমি ভয় পাচ্ছি আমার সব মালামাল ও সম্পদ নিয়ে যাবে (ইয়াজিদ সরকার)!

আমি তোমার কাছে যা আছে তার চাইতেও উত্তম সম্পদ তোমাকে দেব যা আমার কাছে হিজাজে (মক্কা) আছে।

(সাদ বলে) কুফায় আমার পরিবার ইবনে জিয়াদের ক্রোধের শিকার হতে পারে। তাদেরকে হত্যা করা হতে পারে বলে আমি ভয় পাচ্ছি।

ইমাম হোসাইন (রা.) বুঝতে পারলেন যে সাদ তার সিদ্ধান্ত বদলাবে না, অর্থাৎ ইমামের সঙ্গে যুদ্ধ করবেই। এ অবস্থায় তিনি নিজ স্থান থেকে উঠে দাঁড়ানোর সময় বললেন, তোমার কী হল? আল্লাহ শয্যার মধ্যেই তোমার জীবন নেবেন এবং কিয়ামতের দিন তোমায় ক্ষমা করবেন না। আল্লাহর শপথ! আমি জানি যে ইরাকের গম তুমি খেতে পারবে না।

এই ঘটনার পর ওমর সাদ ইবনে জিয়াদের কাছে এক চিঠি পাঠায়। চিঠিতে সে লিখেছিল, হোসাইনকে ছেড়ে দেয়া হোক। কারণ, তিনি নিজেই বলেছেন হিজাজে চলে যেতে চান। অথবা অন্য কোনো দেশে চলে যেতে চান। ইবনে জিয়াদ তার সঙ্গীদের সামনে এই চিঠি পড়ে। এইসব প্রস্তাব শুনে শিমার বিন জিল জৈশান ফুঁসে উঠে। ইবনে জিয়াদ ওমর ইবনে সাদের প্রস্তাব মেনে নিতে চাইলেও শিমারের চাপের মুখে বেঁকে বসে। উল্লেখ্য, শিমারও সেনাপতিত্ব বা রেই শহরের কর্তৃত্ব পাওয়ার জন্য লালায়িত ছিল এবং এক্ষেত্রে সাদ ছিল তার প্রতিদ্বন্দ্বী।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh