জীবন থেকে নেওয়া
এ বছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশে অবস্থানকালে ভাবলাম, জাতীয় পরিচয়পত্রটা করিয়ে নিই। কারণ, প্রশাসনিক বিভিন্ন কার্যক্রমে দেখলাম পাসপোর্টের চেয়ে জাতীয় পরিচয়পত্রেরই গ্রহণযোগ্যতা বেশি। তবে আবেদনপত্র ও প্রমাণাদিসহ পুরো ব্যাপারটাই একটু সময়সাপেক্ষ। আধুনিক ও মানসম্মত একটা পরিচয়পত্র তৈরির যে প্রক্রিয়া, তা দেখেও ভালো লাগল। কিন্তু সমস্যা হলো, যারা এ দায়িত্বে আছেন, তাদের নানান গাফলতি ও দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। সময় নষ্ট না করে কোনো ক্ষমতাবান বন্ধু বা আত্মীয়ের সাহায্য নিতেও মন সায় দিলো না। সবার মতো নিয়মমাফিক কাজটি করতে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় লাইনে দাঁড়াতে হলো।
অনুভব করলাম, আমার মতো বহু মানুষ একই রকম ভোগান্তির মধ্যে ধৈর্যসহ অপেক্ষা করছেন। তাদের সঙ্গে কথা বলারও সুযোগ হলো। ব্যক্তিগত ও পারিবারিক নানান কথায় বুঝতে পারলাম, কত সমস্যায় জর্জরিত এই জীবন! বিভিন্নভাবে ছুটে চলেছেন সবাই যার যার সমস্যা সমাধানের আশায়। জীবনে আর্থিক, পারিবারিক, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সমস্যার যেন শেষ নেই।
আমরা যারা বিদেশে থাকি, তারা সবাই কতই না ঝামেলামুক্ত! বিদেশে থাকার সুবাধে দেশেও আমরা অনেকেই এই সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করি। সুযোগ হয় না কখনও দেশের মানুষের সার্বিক সমস্যা দেখার, নিজেকে সম্পৃক্ত করে তা অনুভব করার। আমরা শুধু নিজের সঙ্গে দেশে আপনজনদের স্বার্থ ও সমস্যা সমাধানটাকেই মুখ্য বলে বিবেচনা করি। এটাই যেন নিয়ম। আর আমরা তথাকথিত সামাজিক দায়িত্ব পালনে যারা কাজ করি, তারা তা মেনে নিয়েছি।
লাইনে দাঁড়ানো একজনের কথায় ঘোর কাটল। জীবনযুদ্ধে অতিষ্ঠ এক বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তি আক্ষেপের সঙ্গে বলে উঠলেন, ‘যারা আমাদের এই অবস্থা ও ভোগান্তির জন্য দায়ী, তাদের বিচার মানুষের আদালতে না হলেও মৃত্যুর পর আল্লাহর দরবারে নিশ্চয় হবে, তবে তা হবে দুর্নীতিমুক্ত।’ আমার আকাঙ্ক্ষার বাইরের এই অভিজ্ঞতা ছিল এক অপ্রত্যাশিত জীবনালেখ্য।
লেখক পরিচিতি :
প্রবাসী লেখক কাজী এনায়েত উল্লাহর জন্ম ১৯৫৮ সালের ৮ নভেম্বর। ঢাকার বনানী চেয়ারম্যান বাড়ির সন্তান ১৯৭৮ সাল থেকে ফ্রান্সে বসবাস করছেন। প্যারিসের সর্বোন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে উচ্চশিক্ষা লাভ করার পর ব্যবসায় আত্মনিয়োগ করেন এবং যথাক্রমে রেস্টুরেন্ট, রিয়াল স্টেট, ট্রাভেল ব্যবসাসহ পারফিউম ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন। ব্যবসায়িক সাফল্যের সঙ্গে ফ্রান্সে নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত কাজী এনায়েত উল্লাহ ইউরোপের সর্ববৃহৎ সামাজিক সংগঠন আয়েবা’র প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব।
২০১৬ সালে নভেম্বর মাসে তার উদ্যোগে সংগঠিত হয় মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ফার্স্ট বাংলাদেশ গ্লোবাল সামিট। বিশ্ব প্রবাসী ৬০০ বাংলাদেশি এই মহাসম্মেলনে যোগদান করেন এবং সংগঠিত হয় ওয়ার্ল্ড বাংলাদেশ অর্গানাইজেশন। কাজী এনায়েত উল্লাহ নির্বাচিত হন সংগঠনের প্রথম প্রতিষ্ঠাতা প্রেসিডেন্ট। বিশ্বব্যাপী প্রবাসীদের মধ্যে সংযোগের মাধ্যমে এক শক্তিশালী কমিউনিটি গঠনের লক্ষে তিনি ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকাসহ এশিয়ার সমস্ত বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
মন্তব্য করুন