• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তাক্‌ওয়া অর্জনের মাস রমজান

আরটিভি অনলাইন ডেস্ক

  ০৬ জুন ২০১৭, ১২:৩৯

মহানবী (সা.) বলেছেন, হে মানুষেরা! তোমাদের মধ্যে কেউ যদি কোনো মুমিনের জন্য ইফতারের আয়োজন করে তাহলে আল্লাহ তাকে একজন গোলামকে মুক্ত করার সওয়াব দান করবেন এবং তার অতীতের সব গোনাহ মাফ করবেন।

তখন সাহাবিরা প্রশ্ন করলেন, কিন্তু আমাদের মধ্যে সবাই অন্যদেরকে ইফতার দেয়ার সামর্থ্য রাখেন না। বিশ্বনবী (সা.) বললেন, তোমরা নিজেদেরকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা কর, যদিও তা সম্ভব হয় একটি মাত্র খুরমার অর্ধেক অংশ কিংবা তাও যদি না থাকে তাহলে সামান্য পানি দিয়ে অন্য রোজাদারকে ইফতারে দাও।

খুতবায়ে শাবানিয়্যা নামের ওই ভাষণে মহানবী (সা.) আরও বলেছেন, 'হে মানুষেরা! যে কেউ এই মাসে সৎ আচরণের চর্চা করবে তথা নিজেকে সুন্দর আচরণকারী হিসেবে গড়ে তুলবে সে পুলসিরাত পার হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করবে সেই বিশেষ দিনটিতে তথা কিয়ামতের দিন যেদিন পা-গুলো পিছলে যেতে চাইবে। যে কেউ এই মাসে তার অধীনস্থ কর্মীদের কাজের বোঝা কমিয়ে দেবে আল্লাহ পরকালে তার হিসাব-নিকাশ সহজ করবেন এবং যে কেউ এই মাসে অন্যকে বিরক্ত করবে না মহান আল্লাহ তাকে কিয়ামত বা বিচার-দিবসের দিন নিজের ক্রোধ হতে নিরাপদ রাখবেন।

রাসূলুল্লাহ (স.) আরো বলেন, কোন ব্যক্তি রমজান মাসে কোনো ইয়াতিমকে সম্মান করবে ও তার সঙ্গে দয়ার্দ্র আচরণ করবে মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়ার দৃষ্টি দেবেন। যে এই মাসে নিজের আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে ভালো আচরণ করবে, মহান আল্লাহও বিচার-দিবসে তার প্রতি দয়া করবেন, আর যে এই মাসে আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে খারাপ আচরণ করবে আল্লাহও তাকে নিজ রহমত থেকে দূরে রাখবেন।

বিশ্বনবী (সা.) রমজান প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, 'যে রমজান মাসে নির্দেশিত বা নির্দিষ্ট ইবাদতগুলো করবে আল্লাহ তাকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন। যে এই মাসে ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত বা দায়িত্বগুলো পালন করবে তাকে অন্য মাসে ওই একই কাজের পুরস্কারের চেয়ে সাতগুণ বেশি পুরস্কার দেয়া হবে। যে রমজান মাসে আমার ওপর সালাওয়াত বা দরুদ পাঠাবে আল্লাহ বিচার দিবসে তার ভালো কাজের পাল্লা ভারী করে দেবেন, অথচ অন্যদের পাল্লা হাল্কা থাকবে।

যে এই মাসে পবিত্র কুরআনের মাত্র এক আয়াত তিলাওয়াত করবে আল্লাহ তাকে এর বিনিময়ে এত সওয়াব দেবেন যে তা অন্য মাসে পুরো কুরআন তিলাওয়াতের সমান হবে।

হে মানুষেরা! বেহেশতের দরজাগুলো এই মাসে তোমাদের জন্য খোলা থাকবে। আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য বন্ধ হয়ে না যায়। রমজান মাসে দোযখের দরজাগুলো বন্ধ রয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তা তোমার জন্য কখনও খুলে না যায়। এই মাসে শয়তানগুলোকে হাতকড়া পরিয়ে বন্দী রাখা হয়েছে, আল্লাহর কাছে এমনভাবে প্রার্থনা কর যাতে তারা তোমাদের ওপর কর্তৃত্ব করতে না পারে।

বিশ্বনবী (সা)’র ভাষণের এ পর্যায়ে আমীরুল মুমিনিন হযরত আলী (রা.)বললেন, আমি প্রশ্ন করলাম, হে আল্লাহর রাসূল (সা.), এই মাসে সবচেয়ে ভালো কাজ কী?

তিনি জবাবে বললেন, হে আবুল হাসান, এই মাসে সবচেয়ে ভালো কাজ হল আল্লাহ যা যা নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে দূরে থাকা।

আমরা মহানবী (সা)’র এই উপদেশের প্রেক্ষাপটে স্মরণ করতে পারি যে রোজার উদ্দেশ্য হল সংযম সাধনার মাধ্যমে খোদাপ্রেম বা খোদাভীতি অর্জন। আর সবচেয়ে ভালো সংযম হল নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকা।

নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকার একটি ভালো উপায় হল আল্লাহর প্রেম ও আল্লাহর ধ্যানে মশগুল থাকা। আর আল্লাহর প্রেমে মশগুল থাকার সবচেয়ে ভালো উপায় হল নিজেকে সবচেয়ে বড় পাপী মনে করে আল্লাহর সামনে দাসানুদাসের মতো বিনীত হয়ে থাকা। নবী-রাসুল ও ইমামরা শ্রেষ্ঠ বান্দাহ হওয়া সত্ত্বেও আমিত্ব, অহংবোধ বা অহংকারকে বিলুপ্ত করার জন্য আল্লাহর দরবারে নিজেদেরকে সবচয়ে বড় অপরাধী বলে ভাবতেন। আর এ কারণেই তারা আল্লাহর ভয়ে কাঁপতেন এবং আল্লাহর ভয়ে সাপের দংশনের শিকার মানুষের মতই যন্ত্রণায় আহাজারি করতেন।

নিষিদ্ধ কাজগুলো থেকে দূরে থাকার জন্য বেশি বেশি ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন জরুরি এবং এ জন্য ব্যাপক সাধনায় মশগুল হতে হবে। ব্যাপক মাত্রায় কুরআন ও হাদিস চর্চার মাধ্যমে একজন সত্য-সন্ধানী ও খোদা-প্রেমিক হতে ইচ্ছুক মুসলমান বুঝতে পারেন যে তাকে কত গভীর ও সূক্ষ্ম বহু বিষয় সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে হবে শয়তানের তৈরি-করা পাপের লোভনীয় অসংখ্যা প্ররোচনা ও ফাঁদগুলো থেকে মুক্ত থাকার জন্য!

মহান আল্লাহ আমাদেরকে কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা ও হৃদয়-পরিবর্তনকারী হাদিস সম্পর্কে জানার তৌফিক এবং সে অনুযায়ী জীবনকে গড়ার বা সংশোধনে তৌফিক দিন।

এমকে

মন্তব্য করুন

daraz
  • অন্যান্য এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh