আহা, আজ কী আনন্দ অপার, শুভ শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার
আহা, আজ কী আনন্দ অপার
শুভ শুভ জন্মদিন দেশরত্ন শেখ হাসিনার
জয় জয় জয় জয় বাংলার
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বপ্নবাহু তাঁর
বাঙালির জন্য রাষ্ট্র দিয়েছেন শেখ মুজিব। আর রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর ভিত গড়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।
২৮ সেপ্টেম্বর, ১৯৪৭ সাল। এদিন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে জ্যেষ্ঠ।
১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হয়। দেশ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি বিদেশি মদদপুষ্ট ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুর বিরূদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্র শুরু করে। ফলস্বরূপ ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে যান।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দীর্ঘ নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে ১৯৮১ সালের ১৭ মে মৃত্যুভয়কে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্বদেশে ফিরে আসেন। তাকেও অসংখ্য বার হত্যার চেষ্টা করা হয়। তবে প্রতিবারই তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা আমাদের আশার বাতিঘর। আস্থার ঠিকানা। বেঁচে থাকার অবলম্বন। সম্প্রীতির ধারক ও বাহক। পথ চলার অনন্ত প্রেরণা। তিনি বাংলার মানুষকে আপন করে ভালোবেসে মুক্তির মিছিলে ছিলেন আশৈশব। তাকে যেন আমরা বাংলার ষড়ঋতুতে খুঁজে পাই। তার স্নেহ, মায়া-মমতার পরশে দুঃখী মানুষ খুঁজে পায় শান্তির ঠিকানা। তেমনি আবার তার অদম্য সাহস আর সংগ্রামী চেতনায় জেগে উঠে মুক্তিকামী মানুষ।
শেখ হাসিনা ১৯৯৬-২০০১ সালে প্রথমবার, ২০০৯-২০১৩ সালে দ্বিতীয়বার, ২০১৪-২০১৮ সালে তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের পর ৭ জানুয়ারি ২০১৯ সালে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করে রাষ্ট্র পরিচালনা করে যাচ্ছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড নিক্ষেপ করা হয়। শেখ হাসিনা কোনোরকমে বেঁচে গেলেও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ নৃশংসভাবে নিহত হন ২৪ জন। আর আহত হন শত শত কর্মী। সামনের কণ্টকাকীর্ণ বন্ধুর পথ আছে জেনেও তিনি পিতার আর্দশের রাজনীতি থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখেননি। দেশ ও দেশের মানুষের উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করে চলেছেন এখনও। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কল্যাণকর রাষ্ট্রগঠনের প্রবক্তা। রাষ্ট্র পরিচালনায় রয়েছে তার প্রজ্ঞাময় দূরদৃষ্টি।
এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, ধর্মনিরপেক্ষতা, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্থনৈতিক মুক্তি, শিক্ষা, সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, নারীশিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়ন, নারী উদ্যোক্তা তৈরি, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ, বেকারত্ব দূরীকরণ, বাল্যবিবাহ রোধ, গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসা সেবা, সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারী ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন, সাধারণ মানুষের জীবনমান পরিবর্তন, তরুণদের দক্ষ মানবসম্পদে পরিণত করা, টেক্সই উন্নয়নে আইসিটির ব্যবহার, সম্প্রীতি-সদ্ভাব, পরিবেশ রক্ষা, তৃণমূল পর্যায়ে তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহার, লিঙ্গসমতা, দুর্নীতি দমন, রপ্তানিমুখি শিল্পাঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে অর্থনৈতিক সূচক বৃদ্ধিসহ নানামুখি উন্নয়ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পরিশ্রমের ফসল। ইতোমধ্যে তার গৃহীত নানামুখি প্রকল্পের সুফল আমরা পাচ্ছি। এভাবে তিনি বাংলাদেশকে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্থান করে নেয়। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে বিশ্বদরবারে মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ। তার সুদূর প্রসারী রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর দূরদর্শিতায় দুর্বারগতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তার জন্যই বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।
রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশেষ অবদানের জন্যে তিনি লাভ করেন অনেক বিদেশি সম্মাননা।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি। তার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশের গৌরবময় পথ চলা শুরু, যা এখনও চলমান। যেমন- সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দ ৯৫,৫৭৪ কোটি টাকা, খাদ্য উৎপাদন ৪২১ লাখ মেট্রিক টন, অতি দারিদ্র্যের হার ১০.৫%, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪৫ বিলিয়ন ডলার, রেমিটেন্স আয় ২২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ২০,০০০ (প্রস্তাবিত), রপ্তানি আয় ৩৫১৮ মিলিয়ন ডলার, গড় আয়ু ৭২.৬ বছর, মাথাপিছু আয় ২২২৭ মার্কিন ডলার, দারিদ্র্যের হার ২০.৫%, মাথাপিছু বিদ্যুৎ উৎপাদন ৫১২ কিলোওয়াট/ঘণ্টা, কৃষি ভর্তুকি প্রদান ৯,৫০০ কোটি টাকা, বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২৫,২২৭ মেগাওয়াট, মোট বিদ্যুৎ কেন্দ্র ১৪৯টি এবং বিদ্যুৎ সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠী ৯৯%।
বঙ্গবন্ধু বলতেন, “এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে না পায়। এ স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি বাংলার মা-বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি এদেশের মানুষ-যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।”
বঙ্গবন্ধুর এই স্বপ্ন বাস্তবায়ন তথা সোনার বাংলা বিনির্মাণে শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। মানবতার মা হিসেবে তিনি মুজিববর্ষে সারাদেশে ভূমি ও গৃহহীন পরিবারকে পাকা বাড়ি নির্মাণ এবং রোহিঙ্গাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব ইতিহাসে নজির সৃষ্টি করেছেন। করোনাকালীন সময়ে তিনি মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস ও শক্তি যোগানোর পাশাপাশি ভ্যাকসিন, খাদ্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে সহায়তা করেছেন। এ ধরনের মহান মানবিক উদ্যোগ বিশ্বে খুব কমই চোখে পড়ে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুদূরপ্রসারী চিন্তায় বাংলাদেশে আমূল পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। তার নেতৃত্বেই আকাশ এবং সমুদ্র বিজয় হয়েছে। শহর ও গ্রামের রাস্তার ব্যাপক উন্নয়ন দৃশ্যমান। বাণিজ্যিক রাজধানী বন্দর নগরী চট্টগ্রামেও নির্মিত হচ্ছে ফ্লাইওভার। চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বহুলেন বিশিষ্ট টানেল নির্মিত হচ্ছে তার নির্দেশনায়। এই টানেল নির্মাণ শেষ হলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পূর্বপ্রান্তে গড়ে উঠবে পর্যটন শহর।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ এখন শেষ পর্যায়ে। রাজধানীতে নির্মিত মেট্রোরেল, পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর এবং রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের পথে।
মহামারি করোনাকালীন সময়েও শেখ হাসিনা সামনে থেকে প্রশংসনীয় সফল ও দৃঢ়চেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। এ সময়ে মানুষের জীবন-জীবিকার চাকা সচল রাখতে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। করোনার প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকেই দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্বে টিকা প্রস্ততে সক্ষম দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধান ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর মতো তিনিও সাদাসিধে মোহহীন জীবনযাপন করে দেশের উন্নয়নে অবিরত কাজ করে যাচ্ছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও পিতার মতো দেশ গড়ার কাজে সর্বশক্তি নিয়োগ করে নিজেকে উৎসর্গ করেন। প্রধানমন্ত্রীর এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়ন, মানবিকতা, উদারতা, অসাম্প্রদায়িকতা, ত্যাগের আদর্শ ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞাদীপ্ত চিন্তাধারা আজ বিশ্ব দরবারে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সবশেষে কবির ভাষায় বলি-
আলোক ছড়ায় আলোকিত জন
উন্নত শির কর্মে
তোমার অবদান কতই মহান
অনুভব করি মর্মে।
রাকিবুজ্জামান আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ লালমনিরহাট জেলা।
এমএন
মন্তব্য করুন