গরমে স্বস্তি ও সতেজ দেবে শসা-লেবুর পানীয়
প্রচণ্ড গরমে সবাই বিরক্ত। এই গরমে আপনাকে স্বস্তি দিতে পারে শসা-লেবুর ঠাণ্ডা পানীয়। যা কিনা শরীর ঠান্ডা ও সতেজ রাখবে। এটা বানানো খুব সহজ। দেখুন কীভাবে শসা-লেবু পানীয় তৈরি করবেন-
উপকরণ : টুকরা করে কাটা শসা, পুদিনা পাতা কয়েকটি, ২ কাপ স্প্রাইট, লেবুর রস ১ টেবিল চামচ, লবণ ১ চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি : শসা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। ছেঁকে রস সংগ্রহ করুন। একটি গভীর পাত্রে লেবুর রস, শসার রস, লবণ, স্প্রাইট, পুদিনা পাতা কুচি একসঙ্গে মেশান। গ্লাসে ঢেলে বরফের কুচি মিশিয়ে পরিবেশন করুন ঠাণ্ডা শসা-লেবুর পানীয়।
এসআর/
মন্তব্য করুন
গরমে প্রশান্তি দেবে আম-পাবদার ঝোল
কয়েক দিনের তীব্র তাপপ্রবাহে জনজীবন নাজেহাল হয়ে পড়েছে। গরমের অস্বস্তিতে কোনকিছুই ভালো লাগে না। খাওয়া, ঘুম কোনকিছুতেই নেই শান্তি। এ দুর্বিসহ গরমে চুলার কাছেও বেশিক্ষণ থাকা যাচ্ছে না। তাই ঝটপট রান্না করা যায় এরকম রেসিপির খোঁজ করছেন। তাহলে তৈরি করতে পারেন আম পাবদা। এখন বাজারে গেলেই দেখা মিলবে কাঁচা আমের। পাবদা আর আমের মেলবন্ধনে জমে যাবে দুপুরের ভোজ। খুব সামান্য উপকরণ দিয়েই তৈরি করে নিন জিভে জল আনা এই পদ। রইল রেসিপি।
উপকরণ:
পাবদা মাছ ৫টি
পোস্ত বাটা ২ টেবিল চামচ
কাঁচা মরিচ বাটা ১ টেবিল চামচ
সরিষা বাটা ২ টেবিল চামচ
রসুন বাটা আধ চা চামচ
কাঁচা আম ১টি
সরিষার তেল ১ কাপ
লবণ স্বাদমতো
কালোজিরা ১ চা চামচ
হলুদ গুঁড়ো ১ চা চামচ
প্রণালী:
লবণ, হলুদ মাখিয়ে সরিষার তেলে পাবদা মাছগুলো হালকা করে ভেজে নিন। সেই তেলেই কালো জিরা দিন। ফোড়নের মধ্যে রসুন বাটা দিয়ে ভেজে নিন। এ বার সরিষা বাটা, পোস্ত ও কাঁচা মরিচ বাটা আর সামন্য হলুদ দিয়ে কষিয়ে নিন। মশলা থেকে তেল বেরোতে শুরু করলে কাঁচা আম বাটা ও লবণ দিতে হবে। গ্রেভি ফুটে উঠলে মাছ দেওয়ার পালা। মিনিট পাঁচেক কম আঁচে ঢাকনা দিয়ে রান্না করে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে আম পাবদা। গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন ভিন্ন স্বাদের মাছের এই পদটি।
গরমে প্রশান্তি দেবে তেঁতুল গুড়ের শরবত
দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে জনজীবন। এই গরমে যে কোনো ঠান্ডা পানীয় মুহূর্তেই স্বস্তি দিতে পারে। তবে বাজারচলতি বিভিন্ন পানীয় শরীরের জন্য ভালো নাও হতে পারে। তাই এ সময স্বস্তি পেতে ভরসা রাখতে পারেন এক গ্লাস তেঁতুল গুড়ের শরবতে।
তৈরীর উপকরণ
তেঁতুলের ক্বাথ ১ কাপ, খেজুরের গুড় স্বাদমতো, টালা জিরা সিকি চা–চামচ, শুকনা মরিচগুঁড়া স্বাদমতো, বিট লবণ স্বাদমতো, পানি ৩ কাপ ও বরফের টুকরা।
তৈরীর প্রণালী
খেজুরের গুড় ১ কাপ পানিতে জ্বাল দিয়ে গলিয়ে মোটামুটি ঠান্ডা করে নিতে হবে। তেঁতুলের ক্বাথ, টালা জিরা, শুকনা মরিচগুঁড়া ও বিট লবণ দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে ছেঁকে নিতে হবে। তারপর তার সঙ্গে পরিমাণমতো পানি ও বরফ মিশিয়ে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করতে হবে।
প্রাণ জুড়াতে পান্তা, সঙ্গে থাকুক ২ পদ
পান্তা ভাত অনেকের কাছেই প্রিয় একটি খাবার। বিশেষ করে গরমের মৌসুমে পান্তা ভাত খেতে অনেকেই পছন্দ করেন। গ্রামবাংলায় এটি নিত্যদিনের খাবার। সকালে পেট ভরে পান্তা ভাত খেয়ে চড়া রোদে কৃষকরা মাঠে কাজ করতে যান। তবে বর্তমানের উত্তাপ্ত তাপপ্রবাহ থেকে কিছুটা শান্তি পেতে অনেকেই পান্তা ভাতেই ভরসা খুঁজে নিয়েছেন। হরেক রকমের ভর্তা, মাছ ভাজাসহ গরমে শরীর ঠান্ডা রাখতে আপনিও পান্তা ভাত খেতে পারেন প্রতিদিন। সঙ্গে রাখতে পারেন মজাদার কয়েক পদের ভর্তা। পান্তার সঙ্গে ‘মজার’ ২টি ভর্তার রেসিপি জেনে নিন।
রইল রেসিপি-
রসুনের ভর্তা: পান্তা ভাতের সঙ্গে রসুন ভর্তা ঝাঁঝালো স্বাদ দেয়। মজাদার এই ভর্তাটি বানাতে কড়াইয়ে অল্প সরিষার তেল দিয়ে ১০০ গ্রাম রসুনের কোয়া ভালো করে ভেজে নিন। রসুন নরম হলে নামিয়ে নিন। এবার কড়াইয়ে আরও একটু তেল দিন। ২-৩টি শুকনো মরিচ ভেজে তুলে রাখুন। সেই তেলেই কালোজিরা ফোড়ন দিয়ে পেঁয়াজ কুচি লাল করে ভেজে নিন। এবার একটি বাটিতে লবণ আর শুকনো মরিচ ভালো করে মাখিয়ে নিন। এর সঙ্গে ভাজা পেঁয়াজ, রসুন আর সরিষার তেল দিয়ে মাখুন। একটু লেবুর রস ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে আরও একটু মাখিয়ে নিন। তৈরি হয়ে গেল রসুন ভর্তা।
ডাল-চিংড়ি ভর্তা: চিংড়ি মাছ সবারই পছন্দ। পান্তার সঙ্গে চিংড়ির মাছের পদ রান্না করে খেতে ভালোই লাগে। তবে আরও জমে উঠবে চিংড়ি সঙ্গে ডাল দিয়ে ভর্তা বানিয়ে খেলে। মুসুর ডাল ধুয়ে সামান্য হলুদ ও কয়েক ফোঁটা সরিষার তেল দিয়ে সেদ্ধ করে নেবেন। সেদ্ধর পর ডাল আধভাঙ্গা অবস্থায় থাকবে। এবার চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন। লবণ ও মরিচ মাখিয়ে কড়াইয়ের তেলে চিংড়ি মাছগুলো ভেজে নিন। লাল হয়ে গেলে তুলে নিন। এই ভাজা মাছের সঙ্গে শুকনো মরিচ, পেঁয়াজ কুচি আর রসুনের কোয়া ভাজা মিশিয়ে বেটে নিন। এবার ডাল-চিংড়ি মাছের এই মিশ্রণটি শুকনো কড়াইয়ে অল্প তেলে একটু নাড়াচাড়া করে এর সঙ্গে কাঁচা মরিচ কুচি, ধনেপাতা কুচি আর লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ব্যস, তৈরি হয়ে যাবে ডাল-চিংড়ির মজাদার ভর্তা। পান্তার সঙ্গে পরিবেশন করুন।
গরমে আরাম দেবে লাউয়ের হালুয়া
তীব্র তাপপ্রবাহে পুরছে সারাদেশ। তীব্র গরমের তাপপ্রবাহে সুস্থ থাকতে গেলে গ্রীষ্মকালীন খাবারই ভরসা। প্রচুর পরিমাণে পানি খাওয়ার পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও সবজি গরমের হাত থেকে শরীরকে বাঁচাতে পারে। এ ক্ষেত্রে লাউ হতে পারে একটি আদর্শ সবজি।
আর বাঙালি বাড়িতে লাউ থাকবে না তাতো আর হয় না। এই গরমে প্রতিদিনই লাউ-ডাল রান্না হয়েই থাকে। তবে একঘেয়েমি কাটাতে লাউ দিয়ে বানাতে পারেন হালুয়া।
তৈরি করবেন যেভাবে-
প্রথমে লাউয়ের খোসা ছাড়িয়ে ভালো করে ধুয়ে মিহি করে গ্রেট করে নিন। কোরানো লাউকুচি কড়াইতে দিয়ে একটু নেড়েচেড়ে ঢাকা দিয়ে রাখুন পাঁচ মিনিট। লাউয়ের পানি বেরিয়ে গেলে শুকনো লাউয়ের মধ্যে চিনি আর খোয়া ক্ষীর ঢেলে দিন। একটু শুকনো হয়ে এলে ঘি দিন। নামানোর আগে পুরো মিশ্রণের ওপরে এলাচ গুঁড়ো ছড়িয়ে দিন। কাজু-কিশমিশ দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন লাউয়ের হালুয়া।
বাঙ্গি দিয়ে তৈরি করুন মজাদার কুলফি
বাঙ্গি স্বাস্থ্যকর একটি ফল। কাঁচা বাঙ্গি সবজি হিসেবে রান্না করে খাওয়া যায়। বাঙ্গিতে আমিষ, ফ্যাটি অ্যাসিড ও খনিজ লবণ আছে। দেশের প্রায় সব এলাকায় গ্রীষ্মকালে বাঙ্গি জন্মে। বাঙ্গিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফলিক অ্যাসিড যা রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও বাঙ্গিতে প্রচুর ক্যালরি রয়েছে। এতে খাদ্য উপাদান হিসেবে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে আছে।
পুষ্টিবিদরা বলেন, পুষ্টিগুণে ভরপুর ফল বাঙ্গি। গরমে বাঙ্গি স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এটি সালাদ বা শরবত হিসেবে রাখা যায়। বাঙ্গিতে প্রচুর পরিমাণ ভিটমিন-বি থাকে, যা মাথার চুল পড়া বন্ধ এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। গরমকালে বাঙ্গি অনেকগুলো রোগ থেকে সুরক্ষা দিয়ে থাকে। সূর্যের তাপে চামড়া পুড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। গরমের কারণে হওয়া হিটস্ট্রক, উচ্চ রক্তচাপ, পানিশূন্যতা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে ফলটি।
বাঙ্গি এমন একটা ফল যার স্বাদ টক, বা মিষ্টি কোনটাই না। অনেকটা পানসে। এই গরমে বাঙ্গি উপকারী ফল। তাই এই ফল দিয়ে ভিন্ন কিছু বানিয়ে দিতে পারেন কুলফি। কুলফি খেতে প্রায় সবাই পছন্দ করে। জেনে নিন বাঙ্গি দিয়ে কুলফি বানানোর রেসিপি।
যা যা লাগবে-
২ কাপ বাঙ্গি, ৪ কাপ ঘন দুধ, দেড় কাপ কনডেনসড মিল্ক, ১ কাপ পেস্তাবাদাম, জাফরান আধা চা-চামচ, ২ টেবিল চামচ পেস্তাকুচি, ২ টেবিল চামচ চিনি
বানাবেন যেভাবে-
পেস্তাকুচি ছাড়া সব উপকরণ একসঙ্গে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। ব্লেন্ড হয়ে এলে মিশ্রণটি চুলায় জ্বাল দিন। ঘন হয়ে এলে চুলা থেকে নামিয়ে ঠান্ডা করুন। তারপর পেস্তাকুচি মিশিয়ে কুলফি ডাইসে ঢেলে ডিপ ফ্রিজে রেখে দিন। জমে গেলে কুলফি ডাইস থেকে বের করে পরিবেশন করুন বাঙ্গি কুলফি।
শেষপাতে থাকুক তরমুজের চাটনি
গ্রীষ্মের তাপদাহে চারদিক উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ঘর থেকে বের হলেই হাঁসফাঁস অবস্থা হচ্ছে সবার। এ গরমে একটু প্রশান্তি পেতে সবাই ঝুঁকছে গ্রীষ্মকালীন ফলের দিকে। তবে বাজারে এখনও পাকা আম, লিচুর দেখা না পাওয়া গেলেও কিন্তু তরমুজের কোনো কমতি নেই। এই তরমুজ গরমে স্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। শরীরকে হাইড্রেটেড ও শীতল রাখতে সাহায্য করে তরমুজ। তার ওপর এই ফলের গুণ অনেক। তরমুজের মধ্যে ভরপুর পরিমাণে ভিটামিন এ, সি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন এবং প্রোটিনের মতো প্রয়োজনীয় পুষ্টি রয়েছে। তাছাড়া এই ফল ডায়েটরি ফাইবারে পরিপূর্ণ। কিন্তু তরমুজের খোসা খেয়ে দেখছেন কখনও। তরমুজের মতোই তরমুজের খোসাও স্বাস্থ্যকর। আপনি এই তরমুজের খোসা দিয়ে সুস্বাদু চাটনি বানিয়ে নিতে পারেন।
বাঙালির শেষপাতে একটু চাটনি না হলে খাবারটা কেমন যেন অরিপূর্ণ থেকে যায়। চাটনি যেন খাবারের তৃপ্তির কাজ করে। চাটনি শুধু মুখরোচক নয়, চাটনির নানা উপকারিতাও আছে। ভোজনের পর তার রেশ কাটাতে ভূড়িভোজের শেষপাতে এই পদের জুড়ি মেলা ভার। তাহলে আর দেরি কেনো, তরমুজের খোসার চাটনি তৈরি করে পরিবারের সবাইকে চমকে দিন। জেনে নিন রেসিপি।
তরমুজের চাটনি তৈরির সহজ রেসিপি
উপকরণ: ৩ চামচ তেল, ১টা শুকনো মরিচ, ১ চামচ সরিষার তেল, ১ চামচ মৌরি, ১ চামচ জিরা, ১ চা চামচ আদা কুচি, ১ চামচ কাশ্মীরি লাল মরিচ, ২ কাপ তরমুজের খোসা, লবণ স্বাদ অনুযায়ী, ১/২ চামচ বিট লবণ, ২ চামচ সাদা ভিনিগার আর ১/২ কাপ চিনি।
পদ্ধতি: প্রথমে তরমুজের খোসার সবুজ অংশ ছাড়িয়ে ফেলে দিন। তারপর টুকরো টুকরো করে কেটে নিন তরমুজের খোসা। এরপর ব্লেন্ডারে দিয়ে তরমুজের খোসার মসৃণ পেস্ট বানিয়ে নিন। এবার কড়াই গরম করে তেল দিন। এবার এতে শুকনো মরিচ, আস্ত সরিষা, মৌরি ও জিরা ফোড়ন দিন। আপনি চাইলে এতে পাঁচ ফোড়ন, কালো জিরা ফোড়নও দিতে পারেন। এবার এতে আদা বাটা দিয়ে দিন। আদা দেওয়ার পর একটু নেড়ে দিন। তারপর আঁচ বন্ধ করে দিন। তারপর এতে কাশ্মীরি লাল মরিচ দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। আঁচ বসিয়ে এই কাজটি করলে মরিচ পুড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরপর এতে তরমুজের খোসার পেস্টটা ঢেলে দিন। এবার আবার আঁচ জ্বালিয়ে নিন। কম আঁচে রেখে মিশ্রণটি নাড়তে থাকুন।
মিশ্রণটি ফুটতে থাকলে এবার এতে স্বাদমতো লবণ মিশিয়ে দিন। এবার এতে অল্প বিট লবণ দিন। ১০ মিনিট ধরে মিশ্রণটি আঁচে রেখে নাড়তে থাকুন। এরপর এতে ভিনিগার মিশিয়ে দিন। ভিনিগার মেশালে তরমুজের এই চাটনি ২ সপ্তাহ পর্যন্ত তাজা থাকবে। এবার এতে চিনি মিশিয়ে দিন। আপনি যদি মিষ্টি চাটনি খেতে না পছন্দ করেন, তাহলে চিনি দেওয়ার দরকার নেই। চাটনি আঁচে রেখে নাড়তে থাকুন। দেখবেন পানি শুকিয়ে গেছে। তখন নামিয়ে নিন এই চাটনি। চাটনি ঠান্ডা করে এয়ার টাইট কৌটোতে ভরে রাখুন তরমুজের খোসার চাটনি।