বজ্রপাতের সময় সুরক্ষা থাকতে যা জানা দরকার
ক’দিন ধরেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি হচ্ছে। সঙ্গে শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাতও হচ্ছে। এদিকে গত কয়েক বছর ধরেই বজ্রপাতে অনেক মানুষের প্রাণহানি হচ্ছে। ঝড়-বৃষ্টির এই সময়ে সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়াও বজ্রপাতের সময় করণীয় কী, সেসব বিষয়ে সবার জানতে হবে। তবেই নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। এবার তাহলে বজ্রপাতের সময় করণীয় কী তা জেনে নেয়া যাক-
- বজ্রপাত ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
- প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন
- খোলাস্থানে অনেকে একসঙ্গে থাকাকালীন সময়ে বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে সরে যান।
- বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকের মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।
- খোলা জায়গায় কোনও বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে ৪ মিটার দূরে থাকতে হবে।
- ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচে খুঁটি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
- কোনও বাড়িতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা না থাকলে সবাই এককক্ষে না থেকে আলাদা কক্ষে যান। ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
- গাড়ির মধ্যে থাকলে ধাতব অংশ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন।
- ধাতব হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করবেন না।
- বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি থাকবেন না। জানালা বন্ধ রাখুন এবং ঘরের ভেতর থাকুন।
সূত্র : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স
এসআর/
মন্তব্য করুন
যে ৬ খাবারেই কমবে কোলেস্টেরল থেকে ডায়াবেটিস
মানুষের খাদ্যাভ্যাসের কারণে এবং অলস জীবনযাপনে শরীরে কোলেস্টেরল ডায়াবেটিস বেড়ে যায়। কিছু রোগ রয়েছে কোলেস্টেরলের জন্য দায়ী, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি। তাই এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিতে হবে। ফাইবার পানির সঙ্গে দ্রবীভূত হয়ে যায় এবং জেল আকারে গঠিত হয়। এটি হজম প্রক্রিয়া উন্নত করে। পাশাপাশি ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে।
জেনে নিন ফাইবারযুক্ত খাবারের নাম-
এক কাপ ওটসের মধ্যে ১.৯ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। ওটস হলো বিটা-গ্লুটেনের সমৃদ্ধ উৎস, যা এক প্রকার দ্রবনীয় ফাইবার। এটি উচ্চ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে ভালো রাখে।
মুগ, ছোলা, মুসুর থেকে শুরু করে কাবুলি ছোলা, রাজমার মতো ডালেও ফাইবার রয়েছে। এক রাজমা ডালের মধ্যে ১৩৩ গ্রাম ফাইবার রয়েছে। রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে ডাল। তার সঙ্গে উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎস হলো ডাল।
ফাইবারের ঘাটতি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ায়। ফ্ল্যাক্স সিডের মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। পাশাপাশি শারীরিক প্রদাহ কমায় এবং পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা বজায় রাখে। ১ চামচ ফ্ল্যাক্স সিডের মধ্যে ০.৬ থেকে ১.২ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।
ফ্ল্যাক্স সিডের মতো চিয়া সিডেও সলিউবল ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। এই বীজ শারীরিক প্রদাহ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ১ চামচ চিয়া সিডের মধ্যে ২৪ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।
আপেল ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস। আপেলে থাকা ফাইবারকে পেকটিন বলা হয়, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। একটি মাঝারি সাইজের আপেলে ১ গ্রাম ফাইবার রয়েছে।
গাজর, ব্রকোলি, কড়াইশুঁটি, পালংশাকের মতো শাকসবজিতে ভরপুর পরিমাণে ফাইবার পেয়ে যাবেন। হজম স্বাস্থ্যকে ভালো রাখতে এবং কোলেস্টেরল ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে শাকসবজি খান বেশি করে।
ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে যা যা করবেন
সারা মাস রোজার পর ঈদুল ফিতর পরিবারের সঙ্গে উদযাপন করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরেন সবাই। জীবনের শৈশব, কৈশোর যেখানে কেটেছে, সেই আপনজনদের সঙ্গেই ঈদ উদযাপনের জন্য ছুটে যায়। তখন ফাঁকা পড়ে থাকে বাসা। তাই বাড়ি যাওয়ার আগে কিছু কাজ গুছিয়ে নিলেই ঈদের ছুটি কাটাতে পারবেন নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে। কারণ, আপনি যে বাসায় থাকেন সে বাসার নিরাপত্তার দিকটাও খেয়াল রাখতে হবে। এই নিরাপত্তা ঈদযাত্রার প্রস্তুতিপর্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
জেনে নিন, ঈদযাত্রায় যাওয়ার আগে বাসার নিরাপত্তায় আপনার কী কী করে যেতে হবে-
কাজের একটি তালিকা করুন: সবার আগে একটি তালিকা তৈরি করুন। কার জন্য কী নিতে চান, ব্যাগে কী নিতে হবে, কোন কাজগুলো আগে সারতে হবে, ঈদে কোথায় কোথায় যেতে চান, সবকিছু একটি নোটে লিখে নিন। এখন সব স্মার্টফোনেই নোট করার সুবিধা থাকে। সেটি ব্যবহার করতে পারেন। এতে আপনার কাজগুলো করা সহজ হবে। কোনোকিছু ভুলে গেলেও তালিকা দেখে মনে করে নেওয়া যাবে।
ব্যাগ গুছিয়ে নিন : বাড়িতে যাওয়ার আগে সময় করে ব্যাগ গুছিয়ে রাখুন। নয়তো শেষ মুহূর্তে এসে গোছাতে গেলে তাড়াহুড়োয় অনেক কিছুই ভুলে ফেলে যেতে পারেন। অতিরিক্ত জিনিসপত্র টানবেন না। যতটুকু দরকার, ততটুকুই নিন। ফোনের চার্জার, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও কাগজপত্র ইত্যাদি গুছিয়ে সঙ্গে রাখুন। প্রয়োজনের সময় যেন হাতের কাছেই পাওয়া যায়।
গ্যাসের চুলা বন্ধ করুন : অনেক সময় রান্না শেষে চুলা বন্ধ করার কথা আমরা ভুলে যাই। অথবা বন্ধ করলেও সেটি ভালোভাবে বন্ধ হয় না। তাই বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে আরেকবার ভালোভাবে দেখে নিন। কারণ কোনো কারণে গ্যাস লিক হলে বদ্ধ করে বিস্ফোরণের সম্ভাবনা থাকে। তাই সম্ভাব্য বিপদ এড়াতে সতর্ক থাকুন।
পানির কল বন্ধ করুন : অনেক সময় কল চালু রাখা অবস্থায় পানি চলে গেলে পরে আর বন্ধ করতে মনে থাকে না। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে পানি চলে এলে তা অপচয়ের ভয় থাকে, যদি বাড়িতে কেউ না থাকে। তাই সবগুলো পানির কল ভালোভাবে বন্ধ করুন। এতে আপনি বাসায় না থাকলেও পানির অপচয় হবে না।
সুইচ বন্ধ রাখুন : বাড়ির ইলেকট্রিক বাতি, ফ্যান, কম্পিউটার, মাইক্রোওয়েভ ওভেন, ওয়াশিং মেশিন ইত্যাদির সুইচ বন্ধ করে বের হবেন। সবগুলো প্লাগ খুলে রাখার চেষ্টা করবেন। যদি ফ্রিজ খালি থাকে তবে সেটিও পরিষ্কার করে বন্ধ করে রেখে যান। আর যদি খালি না থাকে তবে চালু অবস্থায়ই রাখতে হবে, নয়তো ভেতরে থাকা খাবার নষ্ট হবে।
ঘরের একটি ছবি তুলে নিন : সবকিছু শেষে বাড়ির সবগুলো কক্ষের একটি করে ছবি তুলে নিন। এতে কোনো ধরনের অসঙ্গতি থাকলে তা চোখে পড়বে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাই সতর্কতার অংশ হিসেবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ছবি তুলে রাখুন।
ঘর ভালোভাবে তালাবদ্ধ করুন : শুধু বাড়ির প্রধান দরজায়ই নয়, সবগুলো দরজা ও জানালায় ভালোভাবে লক করুন। লক করা হলে আরেকটার টেনে দেখবেন ভালোভাবে লক হয়েছে কি না। সবগুলো তালার চাবি সঙ্গে রাখুন। খেয়াল রাখবেন যেন বেড়াতে গিয়ে চাবি হারিয়ে না যায়। নয়তো ফিরে এসে বিপদে পড়তে হতে পারেন।
পথের খাবার : একেবারে খালি পেটে ভ্রমণ করবেন না। আবার খুব ভরা পেটেও নয়। খেয়ে ভ্রমণের সময় তেল-মসলাযুক্ত না খেয়ে হালকা খাবার খান। পথে খাওয়ার জন্য (ইফতার বা সেহরি) রাস্তার খোলা খাবার কিনে না খেয়ে সঙ্গে রাখুন পানি, ফল ও হালকা বিস্কুট বা ক্র্যাকার্স।
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে করণীয়
দেশের অনেক জায়গায় বইছে তাপপ্রবাহ। হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অফিস। হঠাৎ তাপমাত্রার উর্ধ্বগতির এমন পরিস্থিতিতে হিট স্ট্রোক হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটি প্রতিরোধে কী কী করা উচিত, তা ফেসবুকে ভেরিফায়েড পেজে এক পোস্টে জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিডিআরবি।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্য, হিট স্ট্রোকের সর্বোচ্চ ঝুঁকি আছে শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, শ্রমজীবী ব্যক্তি (যেমন- রিকশাচালক, কৃষক, নির্মাণশ্রমিক), অতিরিক্ত ওজন থাকা ব্যক্তি, শারীরিকভাবে অসুস্থ, বিশেষত হৃদরোগ বা উচ্চরক্তচাপ থাকা ব্যক্তির।
চিকিৎসকেরা বলেন, হিট স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে শরীর হাইড্রেট রাখার কোনো বিকল্প নেই। তাপমাত্রা বেশি হলে ঢিলেঢালা এবং হালকা রঙের পোশাক পরে ঘরের বাইরে যেতে হবে। সূর্যের আলো থেকে চোখকে রক্ষা করতে সানগ্লাস ব্যবহার করার। রোদে থাকতে হলে প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
করণীয়:
হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে কিছু করণীয় জানিয়েছে আইসিডিডিআরবি, জেনে নিন করণীয়গুলো।
দিনের বেলায় যথাসম্ভব বাইরে বের হওয়া থেকে বিরত থাকুন, রোদ এড়িয়ে চলুন।
বাইরে বের হলে ছাতা, টুপি বা ক্যাপ বা কাপড় দিয়ে মাথা যথাসম্ভব ঢেকে রাখুন।
হালকা রঙের, ঢিলেঢালা এবং সম্ভব হলে সুতির জামা পরুন।
প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করুন।
সহজে হজম হয় এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং বাসি, খোলা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
দিনের বেলায় একটানা শারীরিক পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকুন।
সম্ভব হলে একাধিকবার পানির ঝাপটা নিন বা গোসল করুন।
প্রস্রাবের রঙের দিকে নজর রাখুন। তা হলুদ বা গাঢ় হলে অবশ্যই পানি পানের পরিমাণ বাড়ান।
ঘরের পরিবেশ যেন অতিরিক্ত গরম বা ভ্যাপসা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
বেশি অসুস্থ বোধ করলে দ্রুত নিকটস্থ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
গরমে হিট অফিসারের পরামর্শ
রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ। প্রচণ্ড গরমে জনজীবন হাঁসফাঁস। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। প্রখর রোদে পথঘাট সব কিছুই উত্তপ্ত। কোথাও কোথাও সড়কের পিচ গলতে শুরু করেছে। গরমের কারণে বাড়ছে হিটস্ট্রোকের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি। ডায়রিয়াতেও আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে। এরইমধ্যে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
পরিস্থিতি যখন এমন, তখন স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, কী করছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের চিফ হিট অফিসার বুশরা আফরিন?
তিনি জানিয়েছেন, দায়িত্ব পেয়ে বসে নেই তিনি। চেষ্টা করে যাচ্ছেন কেন ঢাকায় তাপমাত্রা বাড়ছে তা খুঁজে বের করার। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আরও কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেটার চেষ্টা করছেন।
তীব্র দাবদাহ মোকাবিলায় বুশরা জানান, এই অবস্থা থেকে সবাইকে বাঁচানোর জন্য তারা নিয়মিত ‘হিট অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্পেইন’ চালাচ্ছেন। তার মতে, ঢাকা এবং আশপাশের এলাকায় তাপমাত্রা কমাতে আরও বেশি গাছ লাগানো জরুরি।
তিনি বলেন, আমাদের এখানে রাস্তার ধারে ২ লাখ গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়। শুধু গাছ লাগালেই হবে না, সেগুলোর উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণও করতে হবে। নগরে বনায়ন করা খুব জরুরি। এখানে যে ফাঁকা এবং পরিত্যক্ত জায়গাগুলো আছে সেখানে সবুজায়ন করার দিকেও আমরা নজর দিয়েছি। আমাদের এখানে আরও অনেক পার্ক এবং সবুজে ঘেরা জায়গা দরকার। তাতে তাপমাত্রা যেমন কমবে, তেমনই পাখিসহ নানা প্রাণীও ফিরে আসবে।
ব্যক্তি উদ্যোগেও নগরবাসীকে পরিস্থিতি মোকাবিলার আহ্বান জানিয়েছেন চিফ হিট অফিসার। বুশরা বলেন, তীব্র দাবদাহে আমরা নিজেরা যদি সচেতন থাকি। আমরা যদি বাসা থেকে বের হওয়ার আগে আমাদের ব্যাগে পানির বোতল, টুপি, ফ্যান, ছাতার মতো জিনিসপত্র সঙ্গে রাখি, তাহলে অনেকটাই নিরাপত্তা পেতে পারি।