• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

২০১৯ সালে মানবিক বিপর্যয় ঝুঁকিতে ১০ দেশ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, আরটিভি অনলাইন

  ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮, ১৯:১০
এই তালিকায় শীর্ষে আছে ইয়েমেন। ছবি: আল জাজিরা

যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ ও অন্যান্য দুর্যোগের কারণে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের মানুষ আগামী বছর (২০১৯ সাল) বিপর্যয় ঝুঁকিতে পড়বে। তাদের জন্য আরও কঠিন হবে এবছরটি। আগামী বছর সারাবিশ্বে মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকবে এমন ১০টি দেশের তালিকা তৈরি করেছে ‘দি ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি’(আইআরসি)।

এই তালিকায় আছে যথাক্রমে ইয়েমেন, গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো, দক্ষিণ সুদান, আফগানিস্তান, ভেনেজুয়েলা, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সিরিয়া, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া ও সোমালিয়া।

শুক্রবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। এতে বলা হয়েছে, মনুষ্যসৃষ্ট এবং প্রাকৃতিক উভয় কারণেই এই মানবিক বিপর্যয় দেখা দেবে। মনুষ্য সৃষ্ট কারণের মধ্যে আছে সশস্ত্র যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক ধস। আর প্রাকৃতিক কারণের মধ্যে আছে অনাবৃষ্টি, বন্যা ও অন্যান্য জলবায়ু সংক্রান্ত দুর্ঘটনা।

অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক স্থানচ্যুতির ভিত্তিতেই এই তালিকা তৈরি করেছে আইআরসি। সারাবিশ্বে নিজেদের ঘরবাড়ি ছাড়া প্রায় ৪০ মিলিয়ন মানুষের মধ্যে অর্ধেকই এই ১০টি দেশের। মানবিক বিপর্যয়ের ঝুঁকিতে থাকা এই দেশগুলোর ২২ লাখ মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো এই ১০টি দেশের কমপক্ষে ১৩ মিলিয়ন মানুষ শরণার্থী হিসেবে জীবনযাপন করছে, যা সারাবিশ্বের মোট শরণার্থীর ৬৫ শতাংশ। এদিকে অতিরিক্ত তিন মিলিয়ন মানুষ ভেনেজুয়েলা থেকে পালিয়েছে।

জাতিসংঘের মতে, ২০১৯ সালে বিশ্বের ৪২টি দেশের প্রায় ১৩২ মিলিয়ন মানুষের সুরক্ষা ও মানবিক সাহায্যের প্রয়োজন পড়বে।

এই তালিকার শীর্ষে আছে ইয়েমেন। দীর্ঘদিন ধরে দেশটির রাজধানী সানা এবং বেশকিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়া হুতি বিদ্রোহীদেরকে দমন করতে প্রেসিডেন্ট আবদ-রাব্বু মনসুর হাদি সরকারকে সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করে আসছে সৌদি-ইউএই জোট। চলতি বছরে জাতিসংঘ জানায় দেশটিতে বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের শিকার ২৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষের মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। এর মধ্যে দেশটিতে মহামারী আকার ধারণ করে কলেরা, যাতে আক্রান্ত হয় এক মিলিয়নেরও বেশি মানুষ।

গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গোতে দীর্ঘদিন ধরে চলমান যুদ্ধে দেশটির বেশির অঞ্চলেই অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। দেশটির ১৩ মিলিয়নের বেশি মানুষ খাদ্য সঙ্কটের কবলে পড়ে। জাতিসংঘের মতে, ২০১৭ সালে দেশটির চার দশমিক পাঁচ মিলিয়ন মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। বর্তমানে এই সংখ্যা আরও বেশি। এছাড়া দেশটিতে ইবোলা আক্রান্ত হয়।

দক্ষিণ সুদান ২০১১ সালে স্বাধীনতা লাভ করে কিন্তু দুই বছরের মধ্যেই দেশটিতে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এতে প্রায় ১০ হাজার লোক মারা যায়। পরবর্তীতে শান্তিচুক্তির ফলে সংঘাতের মাত্রা কমলেও দেশের অভ্যন্তরেই এক দশমিক ৯৬ মিলিয়ন মানুষ ঘরবাড়ি ছাড়া হয়। এছাড়া দুই দশমিক ৪৭ মিলিয়ন শরণার্থী এবং ছয় দশমিক এক মিলিয়ন মানুষ খাদ্য সঙ্কটের কবলে পড়ে।

আফগানিস্তানে ২০০১ সাল থেকে আগ্রাসন চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। আমেরিকান সৈন্যদের বিরুদ্ধে ধুকতে ধুকতে লড়তে থাকা তালিবান বেশ ভালো অবস্থানে চলে আসে ২০১৪ সালে। এই সংঘাতের পাশাপাশি দীর্ঘস্থায়ী খরা দেশটি জনগণকে ঘরবাড়ি ছাড়া ও খাদ্য সঙ্কটের মুখোমুখি করেছে।

ভেনেজুয়েলায় অর্থনৈতিক ধসের কারণে কমপক্ষে তিন মিলিয়ন মানুষ তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য খাবার জোগাড় করতে না পারায় দেশ ছেড়েছে। এছাড়া দেশটিতে অপরাধ ও সহিংসতা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটেছে।

মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো ২০১৩ সালে দেশটির সরকারের পতন ঘটানোর পর থেকে কোনও প্রেসিডেন্ট তার মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। পরিস্থিতি দিনদিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে আলোচনার টেবিলে বসানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে কিন্তু তাতে কোনোভাবেই লাভবান হচ্ছে না দেশটির জনগণ। প্রায় পাঁচ লাখ ৫০ হাজার মানুষ খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে।

সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের উত্থানের পর থেকেই শুরু হয়েছে সশস্ত্র সংঘাত। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশটির প্রায় ছয় দশমিক দুই মিলিয়ন নাগরিক দেশেই ঘরছাড়া হয়েছে। এছাড়া পাঁচ দশমিক ছয় মিলিয়ন মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে বসবাস করছেন।

নাইজেরিয়ায় চলতি বছরে একাধিকবার বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং দেশটির পানি ও খনিজ সম্পদ নিয়ে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বেড়েই চলেছে। এর ফলে দুই মিলিয়নেরও বেশি নাইজেরিয়ান দেশেই ঘরছাড়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় দুই লাখ ৩০ হাজার মানুষ প্রতিবেশী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় গ্রহণ করেছে।

ইথিওপিয়া ২০১৮ সালে অভ্যন্তরীণ স্থানচ্যুতিতে রেকর্ড করেছে। দেশটিতে চলমান সহিংসতার মধ্যে প্রায় এক দশমিক চার মিলিয়ন মানুষ তাদের ঘরবাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছে। গত এপ্রিলে নতুন প্রধানমন্ত্রী আবিই আহমেদ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে আঞ্চলিক রাজনীতিক এবং উপজাতীয় গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বাড়ায় সার্বিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে যায়।

অপরদিকে সোমালিয়াতে প্রায় দশ বছর ধরেই চলছে সংঘর্ষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি অস্থিতিশীলতা ও অনিরাপত্তার কারণে দুই দশমিক ছয় মিলিয়ন সোমালি দেশের মধ্যেই ঘরবাড়ি ছাড়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় আট লাখ ৭০ হাজার মানুষ বিভিন্ন দেশে শরণার্থী হিসেবে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

কে/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • আন্তর্জাতিক এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান শিকার এশিয়া: জাতিসংঘ
ইরাক থেকে সিরিয়ায় মার্কিন ঘাঁটিতে রকেট হামলা
মালয়েশিয়ায় শোষণের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশি শ্রমিকরা
জাতিসংঘে ফিলিস্তিনের সদস্যপদ আটকে দিল যুক্তরাষ্ট্র
X
Fresh