• ঢাকা শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হত্যার জেরে পুরুষশূন্য গ্রাম, চলছে লুটপাটের মহোৎসব

নড়াইল প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২২ জুলাই ২০২০, ১১:০৪
নড়াইল হত্যা মামলা
ছবি সংগৃহীত

প্রতিপক্ষের হামলায় তিন হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নড়াইলের একটি গ্রামে চলছে হামলা, ভাংচুর-লুটপাটের মহোৎসব। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যা পরবর্তী ভাংচুর-লুটপাট, নারী নির্যাতন এ যেন নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ রকম একটি গ্রামের নাম ‘গন্ডব’। প্রায় দশ বছর ধরে এখানকার দুটি গ্রাম্য দলের সংঘাত আর হানাহানি চলছে। ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর আর লুটপাট হচ্ছে অসহায় মানুষের সহায় সম্বল। প্রতিপক্ষের হামলা ও মামলার ভয়ে পুরুষরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে। ফলে গ্রামটি রয়েছে পুরুষশূন্য। এছাড়াও সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে এলাকার কোমলমতি শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। সরেজমিনে গতকাল মঙ্গলবার সকালে লোহাগড়ার দাঙ্গা কবলিত কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব গ্রামে ঘুরে ভয়ঙ্কর এসব চিত্র চোখে পড়ে।

পুরুষশূন্য গন্ডব গ্রামের একটু সামনে এগোলেই ওহিদুল ইসলামের বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, কেউ নেই। বসত ঘরের দরজা-জানালা ও বেড়া ভাঙা। শূন্য পড়ে আছে গোয়ালঘর। মুঠোফোনে কথা হয় তার স্ত্রী রহিমা খাতুনের (২৫) সঙ্গে।

তিনি জানালেন, গেল ১০জুন মারামারি হবার পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রতিপক্ষের অন্তত ৬০-৭০ জন লোক দেশীয় অস্ত্র রামদা, সড়কি ছ্যান’দা নিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে তাকে বেধড়ক মারপিট করে সোনা আর টাকা-পয়সা, মূল্যবান আসবাবপত্রসহ গোয়ালে থাকা তিনটি গর্ভবতী গাভীসহ মোট সাতটি গরু ও ১১টি ছাগল লুট করে নিয়ে যায়। প্রতিটি গাভীর দাম দুই লাখ টাকা। সব কিছু ফেলে প্রথম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া দুটি সন্তান মুগ্ধ ও স্নিগ্ধকে নিয়ে প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন মনিরামপুরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে।

একই রকম ঘটনা ঘটেছে পাশের আজাদ বিশ্বাসসহ প্রায় শতাধিক বাড়িতে। এসব বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর-লুটপাট করা হয়েছে। ঘরের জানালা-দরজা ও ঘরের চালের টিন খুলে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। আজাদের স্ত্রী পারুল বেগম (৩৮) ফোনে জানান, হামলার ভয়ে তিল তিল করে গড়া সংসার ফেলে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে তিনটি সন্তান নিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন নড়াইল সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। তিনি খোঁজ-খবর নিয়ে জেনেছেন তার চারটি গরু ও ছয়টি ছাগলসহ বাড়ির সব কিছুই লুট করে নিয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, গ্রাম থেকে প্রায় শতাধিক টিউবয়েল, সেচের স্যালো মেশিন ও সেচ মোটর লুট করে পাইপের মধ্যে ইট-পাথরের টুকরা ফেলে নষ্ট করে রেখেছে।

এই কোন্দলের কারণে গন্ডব-চালিঘাট গ্রামের অন্তত ২০-৩০ জন এসএসসি ও এইচএসসি পরিক্ষার্থী তাদের পড়া-লেখা বন্ধ করে মামলা-হামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার কেউ কেউ মামলায় জেল-হাজতে রয়েছেন। অনেক কষ্টে পালিয়ে বেড়ানো কয়েকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, এরা সবাই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী, কয়েকজন আবার সামনে এইচএসসি দিবে। এদের মধ্যে গণ্ডব গ্রামের বুলবুল কাজীর ছেলে নয়ন কাজী ও আজাদ বিশ্বাসের ছেলে আজিম বিশ্বাস, তারা লোহাগড়া সরকারী কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। লোহাগড়া কলেজের এইচএসসি পরিক্ষার্থী চালিঘাট গ্রামের রউফ মোল্যার ছেলে বাবু মোল্যা জেল-হাজতে রয়েছেন। একদিকে প্রতিপক্ষের হামলা, অন্যদিকে মামলার ভয়। গত ১২ ও ১৪ জুন হওয়া পৃথক তিনটি মামলায় অজ্ঞাতসহ একটি বা, দুটিতে তাদের নাম রয়েছে বলে তারা জেনেছেন। অপর দিকে লোহাগড়া সরকারি পাইলট স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থী জাকিয়া সুলতানা, মরিচপাশা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইতি খানম, রসো খানমসহ অনেকের অন্য সবার মতো তাদেরও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেবার কথা থাকলেও সম্ভ্রম হারাবার ভয়ে লোখাপড়া ও টিউটর বাদ দিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে। এই মেধাবী শিক্ষার্থীরা সেখানে ঘুমিয়ে দিন-রাত পার করছেন। প্রতিনিয়ত হামলা, লুটপাট-ভাংচুর আর হুমকির ভয়ে সে বাড়ি ছেড়ে অন্য জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে অনেকে মামলা হবার কারণে পুলিশের ভয়ে বাইরে বের হতেও পারছে না।

ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এ ব্যাপারে লোহাগড়া থানার ওসি সৈয়দ আশিকুর রহমান লুটপাটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, গত কয়েক দিন পুলিশ শুধু রাতে প্রহরা দেয়। বড় গ্রাম, পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে দুই একটি বাড়িতে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের গন্ডব-চালিঘাট গ্রামে আধিপত্য বিস্তর নিয়ে প্রায় দশ বছর ধরে নড়াইল জেলা পরিষদ কমিশনার শেখ সুলতান মাহমুদ বিপ্লব পক্ষীয় লোকজনের সঙ্গে কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমানের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এর জের ধরে গত ১০ জুন দুপুরে গ্রাম্য দাঙ্গায় (কাইজে) গন্ডব গ্রামের মোকতার মোল্যা, হাবিল মোল্যা ও চালিঘাট গ্রামের রফিক শেখ খুন হয়। এ ঘটনায় ১৭২ জনকে আসামি করে লোহাগড়া থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। অনেকে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন। সে হিসাবে ১৫৬ জনের মধ্যে ১৪৫ জন আসামি থানা ও আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
স্ত্রীর ওপর অভিমানে দুবাই প্রবাসীর আত্মহত্যা
শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে শিক্ষিকাকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ
নড়াইলে বজ্রপাতে কৃষকের মৃত্যু
সীমান্ত হত্যা নিয়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের উদ্বেগ
X
Fresh