• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

তেল মিলের অন্তরালে অবৈধ সিগারেট কারখানা

আরটিভি নিউজ

  ০৫ জুলাই ২০২০, ২২:৩৯
Illegal cigarette factory behind the oil mill
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ না করায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের জরিমানা করেন

কিশোরগঞ্জ জেলায় খুব বড় শিল্প কারখানা না থাকলেও মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্প কারখানার জন্য এ জেলার বেশ খ্যাতি রয়েছে। এই জেলার কুলিয়ারচর উপজেলায় রয়েছে বাংলাদেশের প্রথম বাদাম তেলের মিল। তবে এই মিল বেশ কিছুদিন বন্ধ থাকায় সবার অগোচরে উৎপাদন হতো অবৈধ সিগারেট।

হেরিটেজ টোব্যাকো নামে একটি কোম্পানি এই তেলের মিলে সবার অগোচরে উৎপাদন করে যাচ্ছে নিম্নমানের অবৈধ সিগারেট। যে সিগারেট কিশোরগঞ্জ থেকে সারা দেশে বাজারজাত করা হচ্ছে।

জানা যায়, সরকারি মালিকানাধীন এ বাদাম তেলের কারখানাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর মো. রফিকুল ইসলাম নামে একজন এটি সরকার থেকে লীজ নেন। এখন এই কারখানায় কি ধরনের কার্যক্রম চলে তা জানেন না এলাকাবাসী।

কুলিয়ারচর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. জিল্লুর রহমান জানান ‘সব সময় এখানকার গেট বন্ধ থাকায় ভিতরে কি হয় তা কেউ জানে না। কাউকে এখানে ঢুকতে দেয়া হয় না।’

তবে বেশ কয়েক বছর আগে এখানে গোপনে বসানো হয়েছে সিগারেট তৈরির মেশিন। কয়েক বছর ধরেই এখানে দিনে রাতে শত শত শ্রমিক কাজ করে। এমনকি সারাদেশে যখন কোভিড-১৯ এর কারণে লকডাউন তখনও এখানে শত শত শ্রমিকের সমাগম দেখা গেছে।

বিশেষভাবে সংরক্ষিত এই এলাকাটিতে সাধারণ মানুষের প্রবেশাধিকার নেই। বিভিন্ন উপায়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে হেরিটেজ কোম্পানি এই মিলে সিগারেট উৎপাদন করে যাচ্ছে। সিগারেট উৎপাদনের সময় কাঁচামালের গন্ধে কারখানার আশেপাশে থাকাই যায় না। বিশেষ করে কারখানার পাশেই রয়েছে বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। কারখানা চলাকালীন স্কুলে ক্লাস করা সম্ভব হচ্ছে না শিক্ষার্থীদের।

এবিষয়ে বেগম নূরুন্নাহার পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক জানান, ‘স্কুল চলাকালীন সময়ে তামাকের তীব্র গন্ধে স্কুলে টিকে থাকা অনেক কষ্টকর।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি গুরুত্বপূর্ণ অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের পাশেই কোনো রকম বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই এখানে চলছে তামাকজাত দ্রব্যের উৎপাদন। নিয়ম অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদনের জন্য পরিবেশ ছাড়পত্রসহ ১৯টি লাইসেন্স প্রয়োজন হলেও কোনো রকম আইন ও পরিবেশের তোয়াক্কা না করেই এখানে উৎপাদন করা হচ্ছে অবৈধ সিগারেট। যার ফলে একদিকে যেমন সরকার বড় অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর তামাকমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন ব্যাহত হচ্ছে।

পরিবেশ ছাড়পত্রসহ অন্যান্য লাইসেন্স সম্পর্কে জানতে কারখানায় গেলে দারোয়ান ভেতরে ঢুকতে দেননি। মালিকের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে বলেন তার কাছে কোনো কিছুই নেই। কিভাবে যোগাযোগ করা যাবে জানতে চাইলে জানান, ‘আমি কিছুই জানিনা, কথা বলা আমার জন্য নিষেধ।’

এদিকে, গত ডিসেম্বরে র‌্যাবের একটি অভিযানে বিপুল পরিমাণ অবৈধ সিগারেট ও নকল ব্যান্ডরোল উদ্ধার করা হয়েছিলো। তারপর কয়েকদিন উৎপাদন বন্ধ রাখে প্রতিষ্ঠানটি। এরপর আবার অবৈধ সিগারেট উৎপাদন শুরু হয়।

এছাড়াও লকডাউন চলাকালে গত ২৭ এপ্রিল উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রুবাইয়াত ফেরদৌসীর নেতৃত্বে র‌্যাবের একটি দল এখানে অভিযান পরিচালনা করে পাঁচজনকে দণ্ড প্রদান করেন এবং ফ্যাক্টরিটি বন্ধ করে দেন।
তিনি জানান, লকডাউন চলা অবস্থায় স্বাস্থ্যবিধি না মেনে জনসমাগম করায় ১৮৬০ দণ্ডবিধির ২৬৯ ধারায় জরিমানা করা হয় হেরিটেজ টোব্যাকোকে। আর কারখানার বৈধতার প্রশ্নে তিনি জানান ‘বিষয়টি আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে অবহিত করেছি। তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন।’

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান ‘আমরা এডিশনাল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট এর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি করেছি। তারা প্রতিবেদন জমা দিলে সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

প্রশাসন বারবার অভিযান পরিচালনা করার পরও কিভাবে অবৈধ প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকে তা নিয়ে এলাকাবাসী সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া কারখানার তীব্র গন্ধে দূষিত হচ্ছে আশপাশের পরিবেশ।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
৪৬তম বিসিএসের প্রিলির জন্য ১০৬ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ
অভিযানের খবরে ভবনের সব রেস্টুরেন্ট বন্ধ, কেয়ারি ক্রিসেন্ট সিলগালা
লোহাগড়ায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান
নির্বাচন পেছানোর এখতিয়ার কমিশনের নেই : সিইসি
X
Fresh