• ঢাকা শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

মাশরাফি যেন আদর্শ উদাহরণ

আরটিভি অনলাইন রিপোর্ট

  ১৮ এপ্রিল ২০২০, ১৬:৪১
মাশরাফি যেন আদর্শ উদাহরণ
নড়াইলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের খোঁজে মাশরাফি

নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নানাবিধ সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছেন। যা ইতোমধ্যে দেশব্যাপী প্রশংসিত ও অনুকরণীয় উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

এসকল কার্যক্রমের সবচেয়ে চমকপ্রদ বিষয় হলো, সকলকে নিয়ে করোনা মোকাবেলা। যেখানে নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ নেতৃবৃন্দ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ বিভিন্ন ঊর্ধ্বতন পদে কর্মরত নড়াইলের সন্তানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সকলকে ঐক্যবদ্ধ করে তিনি করোনার এই যুদ্ধকে মোকাবেলা করছেন দক্ষ হাতে।

বিপদের দিন হলেও আত্মার বন্ধনে সকলকে একত্রিত করে নড়াইলের প্রতি দায়িত্ববোধ থেকে তিনি সকলকে নিয়ে কাজ করছেন,সাহস যুগিয়ে চলছেন সাধারণ মানুষকে।

সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবে চিকিৎসক, সেবিকা ও সাংবাদিকদের জন্য ৬৪০ টি পিপিই সিভিল সার্জনের মাধ্যমে পৌঁছে দিয়েছেন।

প্রত্যন্ত অঞ্চলে পল্লী চিকিৎসকদেরও পিপিই দিয়েছে মাশরাফির প্রতিষ্ঠা করা ‘নড়াইল-এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন’। এছাড়া মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজারসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ নিয়মিত সরবরাহ করছেন।

ইতোমধ্যে করোনা মোকাবেলায় নড়াইল জেলার হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায় প্রয়োজনীয় উপকরণের চাহিদা পত্র পাঠিয়েছেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে। এছাড়া,জরুরি ভিত্তিতে আইসোলেশন ইউনিট নির্মাণে কাজ চলছে নড়াইল সদর হাসপাতালে।

ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী মাশরাফির প্রশংসা করতে ভোলেননি। বলেছেন, ভালো হচ্ছে। কাজ চালিয়ে যাও।

করোনা মোকাবেলা ও ত্রাণসামগ্রী প্রদানের লক্ষ্যে সরকার প্রদত্ত ফরম্যাটে কমিটি করতে হবে, তবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন প্রয়োজনীয়তার নিরিখে প্রয়োজনীয়তার বাড়াতে পারবেন। সেই কমিটির কাজে গতিশীলতা ও স্বচ্ছতা আনয়নে মাশরাফি প্রস্তাব দিয়েছেন ইউনিয়ন ভিত্তিক কমিটিতে থাকবেন বর্তমান চেয়ারম্যানের পাশাপাশি প্রতিদ্বন্দ্বী/সাবেক চেয়ারম্যান, তেমনি রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কমিটিতে আরো থাকবেন স্থানীয় ইমাম, পুরোহিতসহ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মেধাবী শিক্ষার্থীরা। এ যেন সকলকে একসুতোয় গেঁথে যুদ্ধজয়ের একটি দারুণ কৌশল।

মাশরাফি বিন এক সুতোয় নোটবুকে ‘ত্রাণ’ শব্দটি নেই। তিনি ত্রাণের পরিবর্তে উপহার শব্দ ব্যবহার করেন। এখন সরকারের পক্ষ থেকেও ত্রাণের পরিবর্তে উপহার সামগ্রী ব্যবহারের প্রচলন হয়েছে।

সরকারিভাবে উপহার সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে দলীয় নেতৃবৃন্দের হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ২,৫০০-এর মতো পরিবারকে ইতোমধ্যে উপহার সামগ্রী দিয়েছেন।

এছাড়া অনানুষ্ঠানিক ভাবে নড়াইল এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে যে পরিবারে খাবার নেই, খোঁজ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবীরা বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন।

সর্বসাকুল্যে এভাবে তিনি নিজ অর্থায়নে ৬০০০ মানুষকে খাবার বিতরণ করেছেন,যা করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

এছাড়াও তিনি প্রত্যেক মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য খাবার ও নগদ অর্থ প্রদান চলমান রেখেছেন। মাশরাফির আহ্বানে নড়াইলের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিত্তবান মানুষেরা বিভিন্নভাবে মানুষকে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এসেছেন।

নড়াইল সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট অচিন চক্রবর্তী মাশরাফির পক্ষ থেকে সদরের ৮টি ইউনিয়নে উপহার সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর উপহার, সরকারি ত্রাণের তালিকা প্রস্তুতি ও বিতরণে শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নির্দেশ দিয়েছেন জেলা পুলিশকে। যার পরিপ্রেক্ষিতে নড়াইলের পুলিশ সুপার জসীমউদ্দিনের নেতৃত্বে পুলিশ সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। ইতোমধ্যে চোরাকারবারির অপরাধে ৩ জনকে আটক করে জেল ও জরিমানা করেছে বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

দলীয় পরিচয়ের মাধ্যমে অপরাধকে আড়াল না করতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনা বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে জেলা আওয়ামী লীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজামউদ্দিন খান নীলু সার্বক্ষণিক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার পাশে থেকে তাকে উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন অভিভাবকের মতো।

নড়াইল পৌর মেয়র, শ্রমিক নেতা মোঃ জাহাঙ্গীর বিশ্বাস শুরু থেকেই মাশরাফির সবকাজে সবার আগে এগিয়ে আসেন, দাঁড়িয়ে থেকে তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেন।

নড়াইল জেলা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সার্বক্ষণিক মাশরাফিকে সহযোগিতা করছেন লোহাগড়া উপজেলা চেয়ারম্যান শিকদার আব্দুল হান্নান রুনু, উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মুন্সী আলাউদ্দিন,সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মসিয়ূর রহমানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

করোনার প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত অর্থায়নে নড়াইল-২ আসনের ইউনিয়নে ইউনিয়নে ব্লিচিং পাউডার যুক্ত জীবাণুনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন।

সংসদ সদস্যের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি নানাবিধ ব্যতিক্রমী কার্যক্রম হাতে নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে চলেছে নড়াইল-এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশন।

তন্মধ্যে সবচেয়ে সাড়া জাগানো ও দুর্দিনে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ডা. দ্বীপ বিশ্বাস সুদীপ, ডা. স্মৃতিকথা সরকার, ডা. আলিমুজ্জামান সেতু, ডা. সুব্রত নাগ ও ডা. রায়ান উদ্দিন খানের মাধ্যমে নড়াইল-এক্সপ্রেস ফাউন্ডেশনের ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম ২হাজার রোগীকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে ৭৩৫ জনকে স্বাস্থ্যসেবা ও প্রয়োজনীয় ঔষধ প্রদান করেছে।

৫ এপ্রিল থেকে শুরু হয়ে নড়াইল-২ আসনের ২০ টি ইউনিয়নের ১৭ টিতে এই সেবা দেওয়া হয়েছে। প্রথম ধাপ শেষ হলে আবার এই টিম যাবে পূর্বের ইউনিয়নসমূহে।

"ডাক্তারের কাছে রোগী নয়,রোগীর কাছে ডাক্তার"-এই স্লোগানে এই ভ্রাম্যমাণ সেবা দিচ্ছে ক্যাপ্টেনের ফাউন্ডেশন। এছাড়া ফাউন্ডেশনের ২টি এ্যাম্বুলেন্স আছে যা হাসপাতালে বিনামূল্যে রোগী পরিবহনের কাজ করে যাচ্ছে ।

প্রধানমন্ত্রীর ভিডিও কনফারেন্সে যশোরের একজন নারী জনপ্রতিনিধি তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলেই বসলেন, নড়াইলের মতো জীবাণুনাশক কক্ষ আমরা যশোরে চাই।

বাষ্পাকার স্প্রে ছিটানো এই ডিসইনফেক্টর চেম্বার ইতোমধ্যে চালু হয়েছে নড়াইল সদর হাসপাতালে, আরো চালু হচ্ছে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পুলিশ লাইনস নড়াইলে।

আধুনিক এই প্রযুক্তির অভিনব ব্যবহারে উপকৃত হচ্ছেন চিকিৎসক, সেবিকা,রোগীসহ হাসপাতালে আগত সকলেই। এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা ব্যতিরেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দ্রুত সময়ের মধ্যে নড়াইলের সম্মানিত চিকিৎসকদের জন্য একটি আধুনিক ব্যবস্থাও চালু করতে যাচ্ছেন।

এমন ক্রান্তিকালে বাদ পড়েননি নড়াইলে ১৪৪ জন কারা বন্দীও। তাদের স্বাস্থ্য সু-রক্ষার্থে দেয়া হয়েছে পরিষ্কার করা যায় এমন মাস্ক, হ্যান্ডওয়াশ, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস।

‘অপরাধী হলেও তো তারা মানুষ।তাই মানুষ হিসেবে এই দুঃসময়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে এসেছি।’

দেশব্যাপী করোনা আক্রান্ত ছড়িয়ে পড়ায়, নড়াইলে কোন রোগী শনাক্ত হওয়ার আগেই নড়াইল জেলার ২৫ টি প্রবেশ মুখে পুলিশ ও স্বেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে টহল বসানোর ব্যবস্থা করেন তিনি।

এরপরও নড়াইলে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে লোহাগড়া পৌর এলাকার পার-ছাতড়া এলাকায়। এমন খবরে চারিদিকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে মুহূর্তের মধ্যে পাশ্ববর্তী ৪ গ্রাম সম্পূর্ণ লক-ডাউন করে লোহাগড়া উপজেলা প্রশাসন।

মুঠোফোনে আক্রান্ত যুবকের সঙ্গে কথা বলে তার বাড়িতে ১৫দিনের খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করেন। আক্রান্তের পরিবারের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় এ ব্যপারেও নিশ্চয়তা দেন।

টিসিবি'র পণ্য বিতরণে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে পুলিশ সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাধ্যমে নিয়মিত নজরদারি রাখছেন তিনি।

চিকিৎসকদের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগের জন্য হোয়াটসঅ্যাপে গ্রুপ খুলে সেখানে তাদের খোঁজখবর নিচ্ছেন, সাহস যুগিয়ে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছেন।

দুই দিনের সফরে মোটরসাইকেলে গ্রামে গ্রামে অসহায় মানুষদের খোঁজ নিয়েছেন, খাবার পৌঁছে দিয়েছেন। মাশরাফির এতসব উদ্যোগ খুশি সেখানকার নানা মহলের ব্যক্তিরাও। যেমনটা আরটিভি অনলাইনকে বলছিলেন জেলা প্রশাসক আঞ্জুমান আরা।

‘আমাদের নড়াইল জেলা সম্পূর্ণ ভাবে লক-ডাউন করে রাখা হয়েছে। জেলার সব প্রবেশ পথ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এই কাজে সহযোগিতা করছেন এলাকার স্বেচ্ছাসেবক ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। জেলাকে এই অবস্থায় আনতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।’

এমআর/

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
করোনায় আরও একজনের মৃত্যু
আরও ৩৫ জনের করোনা শনাক্ত
করোনায় প্রাণ গেলো আরও ১ জনের, শনাক্ত ৪৯
আরও ৪৬ জনের শারীরে করোনা
X
Fresh