নদী ভাঙন প্রকল্পের ১৭ কোটি টাকা লোপাট
নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গৃহীত প্রকল্পটির কাজ শুরু হওয়ার পূর্বেই সংশ্লিষ্ট এলাকার নদীর তীরে জেগে উঠেছে বৃহৎ চর। চরের ওপরই প্রায় ১৭ কোটি টাকার শহর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি নামমাত্র বাস্তবায়নে চরম অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে বাঁধ নির্মাণের নামে সরকারি টাকা খরচ হচ্ছে যেমন তেমন করে। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
পাউবো ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কালিয়া পৌরসভার পশ্চিম কোল ঘেঁষে নবগঙ্গা নদী প্রবাহিত। পৌরসভার এক নম্বর ওয়ার্ডের নদীর তীরসংলগ্ন এলাকা বড় কালিয়া, নাওরা ও বৃহাচলা গ্রামে প্রায় দুই দশক আগে থেকে ভাঙন দেখা দেয়। পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পর্যায়ক্রমে ঠিকাদারের মাধ্যমে একের পর এক প্রকল্পের মাধ্যমে ভাঙন রোধে কাজ করেছেন। সেসব প্রকল্পে এলাকার সর্বস্তরের মানুষের আংশিক উপকার হয়েছে। কিন্তু ওই প্রকল্পে উত্তরের প্রবল ভাঙন রোধের কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি।
প্রাকৃতিকভাবে দুই বছর আগে নদীর তীরের পৌরসভার বড় কালিয়া, নাওরা ও বৃহাচলা গ্রামের ওই চরের ওপরই শহর রক্ষা বাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়নে নড়াইল পাউবো ২০১৮ সালের নয় সেপ্টেম্বরে দরপত্র চূড়ান্ত করে। এতে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। এ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন খুলনার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোং। এ প্রকল্পটি তিনটি অংশে ভাগ করা হয়। ওই ঠিকাদারের কাছ থেকে নড়াইলের ঠিকাদার লাভলু সরদার প্রকল্পের দক্ষিণ অংশ এবং খুলনার ঠিকাদার রনি বাকি দুটি অংশে সাব ঠিকাদার হিসেবে কাজ করছেন।
অভিযোগ, ভাঙনকবলিত এলাকায় চর জেগে ওঠায় ওই প্রকল্পটি এখন অপ্রয়োজনীয় ও অবাস্তব। কিন্তু সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান তিন মাস আগে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সবচেয়ে আজগুবি ব্যাপার হচ্ছে, ইতোমধ্যে জেগে ওঠা চরের ওপর সামান্য কিছু ব্লক ফেলেই নদী ভাঙন প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে ছয় কোটি ৩০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয়রা মনে করছেন, সামান্য কিছু কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় এটা অসম্ভব ব্যাপার। এখানকার কাজে পুকুরচুরি হয়েছে। ঠিকাদার ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের যোগসাজসে লুটপাট করেছে কাজটিতে। দুই বছর আগে থেকেই এখানে চর পড়া শুরু হয়। এরপরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জেনেশুনে সরকারি টাকা অপচয় তথা আত্মসাতের উদ্দেশে এমন কাগুজে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে! অর্থাৎ সরকারি প্রায় ১৭ কোটি টাকা ‘দরিয়াতেই ঢালা হচ্ছে’। প্রাকৃতিকভাবে জেগে ওঠা চরের ওপর নদী ভাঙন প্রকল্প নামেমাত্র বাস্তবায়নে এ খাতে বরাদ্দকৃত টাকার পুরোটাই লোপাট হচ্ছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, প্রকল্পটির নির্দিষ্ট স্থান নদী তীরবর্তী এলাকা জুড়ে বৃহৎ বালুচর দুই বছর আগে জেগে উঠেছে। জেগে ওঠা বৃহৎ চরের উপরই সামান্য কিছু ব্লক ফেলা হয়েছে। সেখানে বালুর বস্তা ফেলার কোনও নমুনা পাওয়া যায়নি। প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের কথা ও কাজের মধ্যে কোনও মিল খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দুর্নীতি দমন কমিশনকে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক অধিবাসী বলেন, এ কেমন নিয়ম? ওই প্রকল্পের নদীর পশ্চিম তীরসংলগ্ন বাবরা হাচলা ইউনিয়নের শুক্তগ্রাম বাজারসহ ফসলি জমি এবং এর দক্ষিণে কালিয়া পৌরসভার উথলি গ্রাম নবগঙ্গা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর রক্ষণাবেক্ষণ বা বাঁধ দেওয়ার কোনও উদ্যোগ নেই। অথচ দাপ্তরিক নিয়মনীতির কথা উল্লেখ করে জেগে ওঠা চরের ওপর অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প তড়িঘড়ি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তা ব্যক্তিরা অতি উৎসাহী।’
এ প্রসঙ্গে নড়াইল জেলা পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শাহানেওয়াজ তালুকদার বলেন, এ প্রকল্প বাতিল বা স্থানান্তরের কোনও সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তাদের মতামতের ভিত্তিতে ওই জেগে ওঠা অস্থায়ী চরে ড্রেজার মেশিন দিয়ে কেটে টেন্ডারকৃত প্রকল্পের চলমান কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে।
জেবি/পি
মন্তব্য করুন