• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

দৌলতদিয়ায় যৌনকর্মীর লাশ দাফন হলো ধর্মীয় রীতিতে

রাজবাড়ী প্রতিনিধি, আরটিভি অনলাইন

  ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৯:০৭
দৌলতদিয়া, যৌনকর্মীর লাশ, দাফন হলো ধর্মীয় রীতিতে
ছবি: সংগৃহিত

যৌনকর্মী। শব্দটি শুনলেই আপনার মনে এক ধরণের ঘৃণা তৈরি হতে পারে। তারপরও সমাজের এক শ্রেণির মানুষ তাদের থেকে নিয়মিত সেবা নেন। সব ঠিক আছে। শুধু মৃত্যুর পর ইসলাম ধর্ম মতে লাশ দাফন করতে গেলেই গোলমাল। তাই এতদিন যৌনকর্মীদের মৃত্যুর পর নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া কিংবা মাটি চাপা দেওয়া হতো। কিন্তু কোনও অসঙ্গতিই অনাদিকাল ধরে চলতে পারে না, তাই পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে যৌনকর্মীদের জীবনেও।

তাই প্রথমবারের মতো গত রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) দৌলতদিয়া পতিতালয়ের যৌনকর্মী হামিদা বেগমের মৃত্যুর পর দীর্ঘদিনের প্রচলিত রীতি ভেঙে ধর্মীয় রীতি মেনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ হলেও সমাজে বিষয়টিকে অনৈতিক হিসেবেই দেখা হয়। এ কারণেই বিষয়টি এত গুরুত্বপূর্ণ।

আর এতে সহযোগিতা করেন গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুর রহমান।

জানা যায়, দেশের বৃহত্তম যৌন-পল্লী গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ায়। এখানে কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার যৌনকর্মী বসবাস করেন। এতদিন এখানে কারও মৃত্যু হলে প্রথমদিকে লাশের সঙ্গে পাথর বেধে পদ্মা নদীতে লাশ ডুবিয়ে দেয়া হতো। কয়েক বছর আগে তাদের জন্য পল্লীর পাশে কবরস্থান করা হয়। তবে মৃত ব্যক্তিকে সেখানে জানাযা-কাফন ছাড়াই দেয়া হতো মাটি চাপা।

বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর আদিমতম পেশা হলো পতিতাবৃত্তি। নিষ্ঠুর-নির্মম অসম্মানজনক এই পেশা আজও পৃথিবীতে টিকে আছে। নারীকে নানারকম ছলচাতুরী করে কিংবা ফাঁদে ফেলে পতিতাবৃত্তিতে নিয়ে আসা হয়। তবে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে সম্প্রতি বিভিন্ন অপরাধ ও জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করার বিরুদ্ধে পুলিশ কড়া নজরদারি করে যাচ্ছে।

এরই ধারাবাহিকতায় দৌলতদিয়া যৌনপল্লীতে মাদক, জোরপূর্বক দেহ ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রোববার বিকেলে পল্লীর বাসিন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের আয়োজন করা হয়। গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশের সহযোগিতায় যৌনকর্মীদের সংগঠন অবহেলিত নারী ঐক্য নামের একটি সংগঠন এ মতবিনিময়ের আয়োজন করেন।

এই মত বিনিময় চলাকালেই মৃত্যুর খবর আসে ৬৫ বছর বয়সী পল্লীর প্রবীণ বাসিন্দা হামিদা বেগমের। সেখানেই পল্লীর বাসিন্দারা নিহত হামিদা বেগমের জানাযাসহ দাফনের দাবি তোলেন।

এসময় গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানিয়ে নিহত ওই নারীর জানাযা, দাফন-কাফনের ব্যবস্থা করেন।

গত রোববার রাত ৯টায় অনুষ্ঠিত নিহত ওই নারীর জানাযায় ওসি ছাড়াও অংশগ্রহণ করেন দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান মন্ডল, স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীর প্রমুখ। জানাযার নামাজে ইমামতি করেন দৌলতদিয়া রেল মসজিদের ইমাম মৌলভী গোলাম মোস্তফা।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল জলিল ফকীর জানান, অতীতে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর বাসিন্দা কেউ মারা গেলে জানাযা করা হতো না। আসল কথা হলো কোনও হুজুর জানাযা নামাজ পড়াতে রাজিই হতেন না। তাই বাধ্য হয়ে মৃত ব্যক্তিকে মাটি চাপা দেয়া হতো। গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি সাহেব উদ্যোগ গ্রহণ করায় আজ এটা সম্ভব হয়েছে বলে জানান তিনি।

মৃত যৌনকর্মীর জানাযা সম্পর্কে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি আশিকুর রহমান জানান, এই জানাযার নামাজে ইমামতি করার জন্য হুজুর রাজি হচ্ছিলেন না। তার কাছে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নিয়ম জানতে চাইলে তিনি অনেকটা বাধ্য হয়েই রাজি হন। সফলভাবে এই কাজটি করতে পেরে তিনি অনেক আনন্দিত জানিয়ে বলেন, এরপর থেকে দৌলতদিয়া যৌনপল্লীর প্রতিটি বাসিন্দার জন্য জানাযা-দাফন নিশ্চিত করা হবে।

এজে

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
দৌলতদিয়ায় কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ, নেই ভোগান্তি
দৌলতদিয়া ঘাটে ঘরমুখো মানুষের চাপ কম
দৌলতদিয়া ঘাটে পন্টুন থেকে নদীতে পড়ে যুবকের মৃত্যু
৫ ঘণ্টা পর দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় ফেরি চলাচল স্বাভাবিক
X
Fresh