রাঙামাটিতে ছেলেধরা আতঙ্ক!
সম্প্রতি পদ্মা সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা প্রয়োজন বলে ব্যাপক গুজব ছড়ানো হয়েছে। গুজব ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে। এই গুজবের পর দেখা দিয়েছে ছেলেধরা আতঙ্ক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু পেইজ থেকে বিষয়টি ব্যাপক প্রচারও করা হচ্ছে। কেউ কেউ অতি উৎসাহী হয়ে এসব সংবাদ শেয়ার করেও প্রচার করছে। যার কারণে অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। পাড়া-মহল্লায়, চায়ের দোকানে কিংবা আড্ডাস্থলে বিষয়টি নিয়েও কথা উঠে। ওই পাড়া থেকে এতজন, এই পাড়া থেকে এতজন ছেলে-মেয়ে নিখোঁজ হয়েছে বা ছেলেধরা নিয়ে গেছে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোন এলাকা থেকে কার সন্তানকে নিয়ে গেছে সেই ব্যাপারে কেউ কোনও তথ্য দিতে পারেনি।
গত ১৬ জুলাই রাঙামাটি শহরের শহীদ আবদুল আলী অ্যাকাডেমি স্কুলসংলগ্ন এলাকা থেকে পারভেজ নামে ১০ বছরের বাকপ্রতিবন্ধী এক বালক নিখোঁজ হয়েছে। তার খোঁজে শহরে মাইকিংও করা হয়েছে।
এর আগে চার জুলাই শহরের কলেজ গেইট এলাকা থেকে দুই ছেলে কাপ্তাই গিয়ে নিখোঁজ হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। কলেজ গেইট এলাকার তপন মল্লিকের ছেলে দীপ্ত মল্লিক (১১) ও একই এলাকার চন্দন দাশের ছেলে শিমুল দাশ (১৬) কাপ্তাইয়ের বড়ইছড়িতে বেড়াতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছে। এ বিষয়ে গেল ১১ জুলাই কাপ্তাই থানায় সাধারণ জিডিও করেছে নিখোঁজদের অভিভাবকরা।
রাঙামাটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মিলন চাকমা ও শহীদ আবদুল আলী অ্যাকাডেমি স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলহাজ মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী জানান, বিষয়টি ফেসবুকে দেখেছি। অভিভাবকরাও এই বিষয় নিয়ে আমাদের কাছে কিছু বলেননি। এটি নিয়ে আমরা উদ্বিগ্নও নই; কারণ এটি গুজব।
তৈয়বিয়া আইডিয়াল স্কুলের অধ্যক্ষ আলহাজ মো. আখতার হোসেন চৌধুরী জানান, ছেলে ধরার বিষয়টা নানাভাবে আমার কানেও এসেছে। আসলে বিষয়টা নিয়ে দেখলাম অভিভাবকরা বেশ উদ্বিগ্ন। অভিভাবকরা শঙ্কা প্রকাশ করছেন। আগের তুলনায় স্কুলে অভিভাবকের উপস্থিতিও বেড়েছে। বিষয়টি শুনে স্কুলের পক্ষ থেকে আমরা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছি। টিফিন ছুটির সময় যাতে স্কুলের শিক্ষার্থীরা স্কুল গণ্ডির বাইরে যেতে না পারে সেজন্য একজনকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আর স্কুলের ছোট ছোট বাচ্চারা যাতে অভিভাবক ছাড়া স্কুলে না আসে এবং স্কুল ছুটির পরেও যেন অভিভাবক ছাড়া না যেতে পারে বিষয়টা নিশ্চিত করেছি।
মো. শফিউল আলম চৌধুরী জানান, ছেলে ধরার বিষয়টি আমার কাছে গুজবই মনে হয়। কারণ লোকজন বলে অমুক জায়গা থেকে এতজন তমুক জায়গা থেকে এতজন ধরে নিয়েছে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কেউ বলতে পারে না। ইদানিং অভিভাবকরা ফোন করে বলেন, স্যার আমার বাচ্চাটাকে একটু দেখবেন। আমরাও শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেছি। অপরিচিত কারও কিছু না খেতে। অপরিচিত কেউ ডাকলে না যেতে।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহিদুল ইসলাম রনি বলেন, এটি গুজব। ছেলেধরা নিয়ে গেছে এই ধরনের কোনও অভিযোগ পাইনি। তবে হারিয়ে যাওয়ার যে সমস্ত অভিযোগ আসে তা প্রেমঘটিত। প্রেমের কারণেই ছেলে-মেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পরে মামলা হলে পুলিশ উদ্ধারও করছে।
ছেলেধরা নিয়ে গেছে এরকম কোনও তথ্য তার কাছে নেই বলে জানান তিনি। অভিভাবকদের গুজবে কান না দেওয়ার অনুরোধ জানান ওসি।
জেবি
মন্তব্য করুন