• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাতিয়ায় এক যুগেও জাতীয়করণ হয়নি ৩৯ বিদ্যালয়

ইসমাইল হোসেন কিরন, হাতিয়া

  ০৫ এপ্রিল ২০১৯, ১০:২৯

গলার নেকলেস, হাতের আংটি, কানের দুল ও হালের গরু বিক্রি করে নিজের ও সংসার খরচের যোগান দিয়ে যাচ্ছি। স্বামী বেকার থাকায় দুই সন্তানের পড়ালেখার খরচ ও সংসার চালানোটা অসাধ্য হয়ে পড়েছে। নিয়ম মেনে বিদ্যালয় উপস্থিত থাকতে গিয়ে কখনও খেয়ে কখনও না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। তারপরও স্কুলটি জাতীয়করণ হয়নি। কথাগুলো বললেন, নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বয়ারচরের মোল্লা গ্রাম বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নারগিস বেগম। এই অবস্থা শুধু নারগিস বেগমের নয়, হাতিয়া উপজেলার ৩৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১৫৬ জন শিক্ষকের।

২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে সরকারি সকল নিয়ম মেনে চলার পরও জাতীয়করণ হয়নি হাতিয়ার চরাঞ্চলের ৩৯টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। এতে অর্থনৈতিক দুরবস্থার মধ্যে পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এসব বিদ্যালয়ের একশ ৫৬ জন শিক্ষক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি ২০১২ সালের আগে প্রতিষ্ঠিত দেশের সকল বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারিকরণের ঘোষণা দেন। তিন দফায় দেশের ২৬ হাজার একশত ৯৩টি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সরকারি হয়। রহস্যজনক কারণে বাদ পড়ে হাতিয়ার ৩৯টি বিদ্যালয়।

২০০৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত দরবেশ বাজার হাজি গ্রাম বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ২০১২ থেকে ২০১৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা দেয়। সাত বছরে ১৫৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১৫৫ জন উত্তীর্ণ হয়, ৯ জন সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পায়। এ বছর(২০১৯ খ্রিস্টাব্দে) শিক্ষার্থী আছে তিনশ’ ২৪ জন। বিদ্যালয়টির রয়েছে ১০০ হাত লম্বা ৪০ হাত চওড়া সুসজ্জিত পাকা ভবন। শিক্ষকরা প্রতি বছর উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে নতুন বই এনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিলি করেন, প্রশ্ন এনে পরীক্ষা নেন, শ্রেণিকক্ষে পাঠদান, পরীক্ষাগ্রহণ এবং নিয়মিত বিভিন্ন জাতীয় ও অন্যান্য দিবস পালন করেন। শিক্ষকরা বেতন পান না। বিদ্যালয়ের নামে সরকারি বরাদ্দ আসে না। শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পায় না।

প্রধানশিক্ষক মো. আইয়ুব আলী সোহাগ আরটিভি অনলাইনকে বলেন, অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেও আমার বিদ্যালয় ভালো চলছে। সহকারী শিক্ষক মনোয়ারা বেগম আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারি না হওয়ায় আমরা অনেক কষ্টে আছি।

চরাঞ্চলের বেশ কয়টি বিদ্যালয় পরিদর্শন করে দেখা যায়, পড়ালেখা ও ফলাফলের দিক থেকে সরকারি বিদ্যালয়গুলো থেকে পিছিয়ে নেই এসব বেসরকারি বিদ্যালয়গুলো। এসব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা লিডারশিপ ও কারিকুলাম প্রশিক্ষণ এবং প্রধান ও সহকারী শিক্ষকরা বিষয়ভিত্তিক, মার্কিং স্কিম ও অন্যান্য প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।শিক্ষকরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন, ভোটার তালিকাকরণ ও হালনাগাদকরণ এবং শিশুদেরকে টিকা খাওয়ানো ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন।

জয়বাজার বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক জাহের উদ্দিন আরটিভি অনলাইনকে বলেন, বিদ্যালয়টি ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়ায় শিক্ষকরা নিজ খরচে ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি তিনবার পুনর্নির্মাণ করেন।
কেন বিদ্যালয়গুলো সরকারি হচ্ছে না এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন দাস বলেন, যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ বিদ্যালয়গুলোর তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে পাঠানো হয়। সরকারি না হওয়ার কারণ জানিনা।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, জেলা ও উপজেলা কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে বিদ্যালয়গুলোর তালিকা যথাসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠানো হয়। বিদ্যালয়গুলো ভালোই চলছে। কেন সরকারি হচ্ছে না তা আমার জানা নেই।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঢাবি অধ্যাপকের পিএইচডি জালিয়াতি তদন্তে কমিটি
রাসুল (সা.) বজ্রপাতের সময় যে দোয়া পড়তেন
ছাত্রীদের যৌন হয়রানি: ঢাবির অধ্যাপককে অব্যাহতি
রাবির লিগ্যাল সেলের নতুন প্রশাসক ড. সাদিকুল ইসলাম 
X
Fresh