মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে
মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে এবং কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে কোটেশনের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার এই অনৈতিক কাজে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
হিসাব রক্ষকের নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন ওই হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। এর প্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ এবিএম মুজহারুল ইসলাম মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মো. মিনহাজ উদ্দিনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন।
১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের অধিক সময় ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সাক্ষী, জবানবন্দি এবং দপ্তরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ওই হিসাব রক্ষকের সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম এবং তার এই অনিয়মের পেছনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ কোটেশনের মাধ্যমে ৪২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ইউজার ফির ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকা, জেনারেটরের জ্বালানী তেল ক্রয়ের নামে ৪ লাখ, ৫৮ হাজার ১৯১ টাকা, হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতার নামে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাসা ভাড়ার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারি খাত থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি গত অর্থ বছরে ১০টি স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে হাসপাতালের জন্য নানা ধরণের জিনিষ ক্রয়ের নামে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে ৪২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন।
হাসপাতালের স্টোর কিপার মো. সাজিদ হাসান জানান, স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে ৪২ লাখ ৬,৫০০ টাকা মূল্যে ক্রয়কৃত দ্রব্যাদি স্টোরের স্টক লেজারে এন্ট্রি হয়নি। আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তাও উপরোক্ত মালামাল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাত ও উপখাতে স্থানীয় কোটশনের তুলনামূলক বিবরণীতে কোটেশন কমিটির সদস্য-সচিব ডাঃ মো. লুৎফর রহমানের স্বাক্ষর না থাকলেও জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে রক্ষিত অর্থ উত্তোলিত বিলে তার স্বাক্ষর পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, তিনি কোনও অনৈতিক কাজে সায় দিবেন না জেনেই হিসাব রক্ষক তার স্বাক্ষর জাল করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মো. লুৎফর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তিনি তার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি টাকা আত্মসাতের অপরাধে ওই হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন, যাতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এবং ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ রকম দুর্নীতি করার সাহস না পায়।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত গৃহীত হাসপাতালের ইউজার ফির সঙ্গে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত অর্থের মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকার অসঙ্গতি দেখা যায়। অর্থাৎ এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে তিনি পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বেতন বাবদ তিনি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ ওয়ার্ড মাস্টার মো: শাহজাহান মিয়া পরিচ্ছন্ন কর্মীর মজুরি বাবদ তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন মাত্র ৪ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এই খাতে তিনি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গেল বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানীর তেল খরচ বাবদ উত্তোলন করেছেন ৫ লাখ ২১ হাজার ৬৬৪ টাকা। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী ওই ৬ মাসের দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সাট-ডাউন প্রদান ও লোডশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল ৩৯ ঘণ্টা ৬ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় ২৫ লিটার ডিজেল ব্যবহার হলে মোট ডিজেল লাগে ৯৭৬.৫ লিটার। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ হলে ৬ মাসের ডিজেলের প্রকৃত খরচ হয় ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ, জেনারেটরের জ্বালানী তেল ক্রয়ের নামে তিনি আত্মসাৎ করেছেন ৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১ টাকা।
এছাড়া, তিন বছর পর পর রেস্ট অ্যান্ড রিক্রিয়েশন (শ্রান্তি ও বিনোদন) ভাতা পাওয়ার বিধান থাকলেও তিনি তা ভঙ্গ করে এক বছরের মধ্যে (১৬/১০/২০১৬ এবং ১২/১২/২০১৬) ১৮ হাজার করে মোট ৩৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সাতজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের নামে ২০১৫ সালের ১ জুলাই ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলের বকেয়া প্রাপ্য বেতনের অতিরিক্ত একমাসের বেতনের (প্রতিজনের ৪, ৮১৪ টাকা) ৩৩ হাজার ৬৯০ টাকা উত্তোলন করে তাদেরকে না দিয়ে তার পুরোটাই তিনি আত্মসাৎ করেন বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
শুধু তাই নয়, মাহমুদ ফুয়াদ বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর রেস্ট অ্যান্ড রিক্রিয়েশন (শ্রান্তি ও বিনোদন) ভাতা হিসেবে উত্তোলিত ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬২০ টাকার ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৬ হাজার ৫২৪ টাকা কর্তন করেছেন। অন্যান্য স্টাফদের কাছ থেকেও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের বিল থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা কর্তন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালের ৪ মার্চ থেকে তিনি হাসপাতালের ভেতরে সরকারী বাসায় বসবাস করছেন। তার মূল বেতনের (১৮,৮৬০) ৪০ শতাংশ হিসেবে প্রতি মাসে ৭ হাজার ৫৪৪ টাকা বাসা ভাড়া প্রদান করার বিধান থাকলেও তিনি বাসা ভাড়া প্রদান করছেন না। এমনকি তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিলও প্রদান করছেন না। অর্থাৎ এই খাতেও তার কাছে সরকারের পাওনা প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয় কোটেশনের সকল ধাপে (বিজ্ঞপ্তি, যাচাই-বাছাই বিবরণী, তুলনামূলক বিকরণী, বিল উত্তোলন) হিসাব রক্ষক একাই দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদন করেছেন। হাসপাতাল ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে রক্ষিত স্থানীয় কোটেশনের কাগজপত্রে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি স্থানীয় কোটেশনের সদস্য-সচিবের স্বাক্ষর জাল করেছেন যা সরকারী বিধি পরিপন্থী।
স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে কথিত ক্রয়কৃত মালামাল স্টোরে জমা নেই। ক্রয়কৃত মালামাল সার্ভে কমিটির মাধ্যমে স্টোরে তোলার কথা থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক বিধানটি উপেক্ষা করেছেন। ফলে আর্থিক কেলেঙ্কারি তরান্বিত হয়েছে।
এছাড়া মাহমুদ ফুয়াদের বিরুদ্ধে মাসের বেশীর ভাগ সময়ই হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক পূর্বের আদেশটি বাতিল না করে একাই ৩য় শ্রেণির বাসাটি ডরমেটরি ঘোষণা করে একই ব্যক্তির নামে পুনরায় সীট বরাদ্দ দেন এবং এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাসপাতালের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমান (কোড-৩৮৯৮০২) বাসা বরাদ্দ, স্থানীয় কোটেশন, জাল স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন, মালামাল স্টোরে তোলা, জেনারেটরের রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আবাসিক চিকিৎসককে আড়ালে রেখে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন যা সরকারি আর্থিক ক্ষতিকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহের সুষ্ঠু তদন্ত, দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান এবং আত্মসাৎকৃত সরকারের টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান অভিযোগকারী হাসপাতালের কর্মচারীরা।
হাসপাতালের কর্মচারীরা বলেন, দুই একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে গোটা বিভাগের বদনাম। তাই বিভাগের সুনাম ফিরিয়ে আনতে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার।
তবে যার বিরুদ্ধে এত অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, সেই হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ বলেন, এসব তদন্ত করে কিছুই করতে পারবে না। অতীতেও এই ধরণের অভিযোগের তদন্ত হয়েছিল। কিছু করতে পারেনি।
তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমান বলেন, কোনও অনিয়ম থাকলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন। তবে এইসব ব্যাপারে তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবী করেন তিনি।
অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তেমন কোনও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।
বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি তদন্ত রিপোর্টটি পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ ১৯৯৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সহকারী স্টোর কিপার হিসেবে ভোলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ২ এপ্রিল তিনি বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ক্যাশিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পান। যদিও এই ধরণের পদোন্নতি দেয়া ওই কমিটির এখতিয়ার বহির্ভূত। এরপর তাকে একই বছরের ১ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়।
২০১৬ সালের ১ জুন তাকে প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে পদায়ন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে সেখান থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে বদলী করা হয়। তিনি বর্তমানে এখানে হিসাব রক্ষকের দায়িত্বপালনের পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বও পালন করছেন।
এসএস
মন্তব্য করুন
নামাজ চলাকালে মসজিদে এসি বিস্ফোরণ
বরিশালের একটি মসজিদে নামাজ চলাকালে বিকট শব্দে এসি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) শহরের জামে এবায়দুল্লাহ মসজিদে জোহরের নামাজের সময় এ ঘটনা ঘটে।
মুসল্লিরা জানায়, দুপুর দেড়টার দিকে আমরা জোহরের নামাজে দাঁড়িয়ে তারা দোতলায় বিস্ফোরণের বিকট শব্দ পান। এ সময় পুরো মসজিদ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তারা ছুটে গিয়ে দেখেন মসজিদের ইমামের থাকার কক্ষের এসি বিস্ফোরণে আগুন লেগে গেছে। এরপর ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সামসুল আলম জানান, এসি বিস্ফোরণে মসজিদের আর কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঘটনার সাথে সাথে মসজিদের বিদ্যুতের লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।
এ বিষয়ে বরিশাল ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার রবিউল আল আমিন জানান, আমাদের চারটি ইউনিট আগুন যেয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আমাদের ধারণা, বেশি সময় চলায় গরম হয়ে এসির কমপ্রেসর বিস্ফোরণ হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।
নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখে ফেরার পথে প্রাণ গেল ৩ জনের
মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘড়িয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় ৩ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ৫ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাত ৯টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতদের মাগুরা সদর হাসপাতাল ও বাঘারপাড়ার একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন- নিরুপমা দে (৪৫), পুষ্প রানী দে (৪০) ও মধু শিকদার (৫০)। এদের মধ্যে নিরুপমা ও পুষ্প যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নারিকেলবাড়িয়া গ্রামের। মধুর বাড়ি মাগুরায়।
জানা গেছে, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে একটি সিএনজিযোগে মাগুরার চঞ্চল গোসাইয়ের আশ্রমে নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান দেখতে যান তারা। নামযজ্ঞ অনুষ্ঠান থেকে বাড়ি ফেরার পথে শালিখা উপজেলার ছয়ঘড়িয়া হাজাম বাড়ির মোড়ে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে একটি নসিমন সিএনজিকে ধাক্কা দিলে উল্টে যায়। এ সময় ঘটনাস্থলে নিহত হন নিরুপমা ও পুষ্প। গুরুতর আহত নিহত নিরুপমা দের স্বামী নিতাই দে ও সিএনজিচালক বাবলু হোসেন। তাদেরকে প্রথমে নারিকেলবাড়িয়ায় একটি ক্লিনিকে আনা হয়। অবস্থার অবনতি হলে তাদেরকে যশোরে রেফার করা হয়েছে।
মাগুরার শালিখা থানার ওসি (তদন্ত) মিলন কুমার ঘোষ জানান, সিএনজিতে ড্রাইভারসহ মোট ৯ জন যাত্রী ছিলেন।
সন্তান কোলে নারীর আত্মহত্যা, বাঁচাতে গিয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু
গাইবান্ধা সদরে ট্রেনে কাটা পড়ে এক কলেজছাত্রসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
সোমবার (১ এপ্রিল) দুপুরে গাইবান্ধা আদর্শ কলেজ-সংলগ্ন রেললাইনে এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন সাঘাটা উপজেলার ভরতখালী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে জোবায়ের মিয়া (১৮) এবং গাইবান্ধা সদরের মাঝিপাড়া এলাকার আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৩)।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পুলিশ জানায়, গৃহবধূ রাজিয়া বেগম দেড় বছরের শিশু সন্তান কোলে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দেন। এ সময় কলেজছাত্র জোবায়ের মিয়া তাদের বাঁচাতে গিয়ে ট্রেনের নিচে কাটা পড়েন। এতে ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান। এ ঘটনায় কোলে থাকা দেড় বছরের শিশু আবির হোসেন গুরুতর আহত হলে তাকে গাইবান্ধা জেনারেল হাসপাতালে নেন স্থানীয়রা।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা রেলওয়ে (জিআরপি) পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক ফারুক হোসেন।
তিনি জানান, ময়নাতদন্তের পর মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। এটি আত্মহত্যা না দুর্ঘটনা তা এ মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। এ ঘটনায় গাইবান্ধা জিআরপি থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হবে।
মাকে মারধর, ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে বাবার আত্মসমর্পণ
গাজীপুরের কালীগঞ্জে নিজের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন এক বাবা।
বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাতাব উদ্দিন।
ওসি বলেন, ঘাতক বাবা আব্দুর রশীদ বাগমার (৭৫) তার মাদকাসক্ত ছেলে কাউসার বাগমারকে (২৪) হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এ ঘটনায় ঘাতক বাবাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বুধবার ভোরে উপজেলার জামালপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত কাউসার মাদকাসক্ত ছিলেন। প্রায়ই মাদকের টাকার জন্য মা-বাবার সঙ্গে ঝগড়া করতেন। ভোরে কাউসারকে তার বাবা কুঠার দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
নিহতের মা মোসলেমা বেগম বলেন, আমার ছেলে মাদকাসক্ত ছিল। মাদকের টাকার জন্য প্রায়ই বাড়িতে ঝগড়া বিবাদ ও ভাঙচুর করতো। মাদকের টাকার জন্য জমি বিক্রি করতে তার বাবাকে প্রায়ই চাপ দিচ্ছিল। মঙ্গলবার রাতেও নেশার জন্য ২ কাঠা জমি বিক্রি করে টাকা দাবি করে। টাকা দিতে রাজি না হলে আমাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এ ঘটনায় তার বাবা ভোরে কাউসারকে ঘুমন্ত অবস্থায় কুঠার দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে।
ব্যাংক কর্মকর্তা অপহরণ : যত টাকা মুক্তিপণ দাবি
বান্দরবানে অপহৃত সোনালী ব্যাংক কর্মকর্তাকে মুক্তি দিতে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)।
বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) অপহৃত সোনালী ব্যাংক রুমা শাখার ব্যবস্থাপক নেজাম উদ্দিনের পরিবার গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নেজাম উদ্দিনের পরিবারের এক সদস্য বলেন, বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় নেজাম উদ্দিনের সঙ্গে তার স্ত্রী মাইছূরা ইসফাতের ফোনে যোগাযোগ হয়েছে। অপহরণকারীরা তার মুক্তির জন্য ১৫ লাখ টাকা দাবি করেছে। পরে পরিবার বিষয়টি সোনালী ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে নেজামকে উদ্ধারে সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে ব্যাংকের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
পরিবার ও ব্যাংকের পক্ষ থেকে মুক্তিপণ দাবির বিষয়টি প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। প্রশাসনও আশ্বস্ত করেছে যে, নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধারে তাদের সব ধরনের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
সোনালী ব্যাংকের ডিজিএম (বান্দরবান) মো. ওসমান গণি গণমাধ্যমকে বলেন, নেজাম উদ্দিনকে উদ্ধারে সব ধরনের প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন খুবই তৎপর। তবে মুক্তিপণ ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রাত ৯টার দিকে তারাবির নামাজ চলাকালে পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের একটি সশস্ত্র গ্রুপ বান্দরবানের রুমায় সোনালী ব্যাংকের শাখায় ঢুকে ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটে করে। এ সময় তারা ব্যাংকের আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের অস্ত্রও লুট করে। একই সঙ্গে মসজিদ থেকে ব্যাংকের ম্যানেজার নিজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরদিন বুধবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে থানচিতে মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে সোনালী ও কৃষি ব্যাংকের তিনটি শাখায় হামলা চালায় সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এরপর থেকে স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া তারা বাইরে বের হচ্ছেন না।
কুষ্টিয়ায় জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় নাফিস আহমেদ তুষার (২৮) নামে এক জাসদ ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।
শুক্রবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। এর আগে, সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় গোলাপনগর বাজারের পাশে একটি চায়ের দোকানে দুর্বৃত্তরা তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে।
নিহত নাফিস আহমেদ তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসীরা জানান, শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গোলাপনগর বাজারের পাশে একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন নাফিস আহমেদ তুষার। হঠাৎ ২০/২৫ জনের একটি সংঘবদ্ধ দল এসে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে চলে যায়। পরে স্থানীয়রা আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সেখান থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
নিহত তুষারের বাবা রবিউল ইসলাম রবি বলেন, তুষার ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ১৭ রোজায় সে ছুটিতে বাড়িতে এসেছিল।
ভেড়ামারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক রেজাউল করিম বলেন, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তুষারের দুই পায়ের রগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তা ছাড়া পিঠে একাধিক গভীর ক্ষতের চিহ্ন ছিল।
জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আলিম স্বপন বলেন, তুষার মোকারিমপুর ইউনিয়ন জাসদ ছাত্রলীগের সহসভাপতি। তার বাবা ইউনিয়ন জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক। পরিকল্পিত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করছি।
ভেড়ামারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। হত্যার সঙ্গে জড়িতদের ধরতে পুলিশের অভিযান চলছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে।
মেঘনায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে লঞ্চ বিকল
মুন্সীগঞ্জে মেঘনা নদীতে প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে বিকল হয়ে পড়েছে একটি লঞ্চ। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চটি বরিশালের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল।
সোমবার (৮ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১০টায় গজারিয়া উপজেলার ষোলআনি এলাকায় বিকল হলে লঞ্চটি নোঙর করা হয়।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন গজারিয়া নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ গোলাম মোস্তফা।
তিনি বলেন, বরিশালগামী আল-সাফিন সাত্তার খান-১ নামে লঞ্চটি প্রায় ৮০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার সদরঘাট থেকে সন্ধ্যায় ছেড়ে আসে। গজারিয়ায় এসে লঞ্চটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। তবে যাত্রীদের কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, আল-সাফিন কোম্পানির আরও একটি লঞ্চ ঢাকা থেকে রওনা হয়েছে। লঞ্চটি পৌঁছালে যাত্রীদের নিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে। ততক্ষণ পর্যন্ত যাত্রীদের নিরাপত্তা দেবো।