মানিকগঞ্জ জেলা হাসপাতালের হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে
মানিকগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালের হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিভিন্ন সময় ভুয়া বিল-ভাউচার তৈরি করে এবং কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে কোটেশনের মাধ্যমে এই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার এই অনৈতিক কাজে হাসপাতালটির তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমানের সংশ্লিষ্টতার প্রমাণও পাওয়া গেছে।
হিসাব রক্ষকের নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) বরাবর অভিযোগ দাখিল করেন ওই হাসপাতালের কয়েকজন কর্মচারী। এর প্রেক্ষিতে ২৮ অক্টোবর তৎকালীন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডাঃ এবিএম মুজহারুল ইসলাম মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ মো. মিনহাজ উদ্দিনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ করেন।
১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও দুই মাসের অধিক সময় ধরে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলের সাক্ষী, জবানবন্দি এবং দপ্তরের তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ওই হিসাব রক্ষকের সরকারি টাকা আত্মসাতসহ নানা অনিয়ম এবং তার এই অনিয়মের পেছনে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের ইন্ধনের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে জানান ওই তদন্তকারী কর্মকর্তা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ কোটেশনের মাধ্যমে ৪২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা, ইউজার ফির ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকা, জেনারেটরের জ্বালানী তেল ক্রয়ের নামে ৪ লাখ, ৫৮ হাজার ১৯১ টাকা, হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতার নামে ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা এবং বাসা ভাড়ার ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা সরকারি খাত থেকে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন।
তিনি গত অর্থ বছরে ১০টি স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে হাসপাতালের জন্য নানা ধরণের জিনিষ ক্রয়ের নামে কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর জাল করে ৪২ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকা উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন।
হাসপাতালের স্টোর কিপার মো. সাজিদ হাসান জানান, স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে ৪২ লাখ ৬,৫০০ টাকা মূল্যে ক্রয়কৃত দ্রব্যাদি স্টোরের স্টক লেজারে এন্ট্রি হয়নি। আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তাও উপরোক্ত মালামাল সম্পর্কে কিছুই জানেন না। বিভিন্ন অর্থনৈতিক খাত ও উপখাতে স্থানীয় কোটশনের তুলনামূলক বিবরণীতে কোটেশন কমিটির সদস্য-সচিব ডাঃ মো. লুৎফর রহমানের স্বাক্ষর না থাকলেও জেলা হিসাব রক্ষণ কার্যালয়ে রক্ষিত অর্থ উত্তোলিত বিলে তার স্বাক্ষর পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা ডাঃ লুৎফর রহমান বলেন, তিনি কোনও অনৈতিক কাজে সায় দিবেন না জেনেই হিসাব রক্ষক তার স্বাক্ষর জাল করেছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ডাঃ মো. লুৎফর রহমান বলেন, কর্তৃপক্ষ অনুমতি দিলে তিনি তার স্বাক্ষর জাল করে সরকারি টাকা আত্মসাতের অপরাধে ওই হিসাব রক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন, যাতে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয় এবং ভবিষ্যতে কেউ যাতে এ রকম দুর্নীতি করার সাহস না পায়।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত গৃহীত হাসপাতালের ইউজার ফির সঙ্গে সরকারি কোষাগারে জমাকৃত অর্থের মধ্যে ২ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪০ টাকার অসঙ্গতি দেখা যায়। অর্থাৎ এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে তিনি পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন।
গত বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত ৫ মাসে পরিচ্ছন্নতা কর্মী বেতন বাবদ তিনি ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। অথচ ওয়ার্ড মাস্টার মো: শাহজাহান মিয়া পরিচ্ছন্ন কর্মীর মজুরি বাবদ তার কাছ থেকে গ্রহণ করেছেন মাত্র ৪ হাজার ৫০০ টাকা। অর্থাৎ এই খাতে তিনি ১৭ লাখ ৯৫ হাজার ৫০০ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।
গেল বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে হাসপাতালের জেনারেটরের জ্বালানীর তেল খরচ বাবদ উত্তোলন করেছেন ৫ লাখ ২১ হাজার ৬৬৪ টাকা। অথচ পল্লী বিদ্যুৎ কার্যালয়ের হিসেব অনুযায়ী ওই ৬ মাসের দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট, রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য সাট-ডাউন প্রদান ও লোডশেডিং এর কারণে বিদ্যুৎ বন্ধ ছিল ৩৯ ঘণ্টা ৬ মিনিট। প্রতি ঘণ্টায় ২৫ লিটার ডিজেল ব্যবহার হলে মোট ডিজেল লাগে ৯৭৬.৫ লিটার। প্রতি লিটার ডিজেলের দাম ৬৫ হলে ৬ মাসের ডিজেলের প্রকৃত খরচ হয় ৬৩ হাজার ৪৭২ টাকা ৫০ পয়সা। অর্থাৎ, জেনারেটরের জ্বালানী তেল ক্রয়ের নামে তিনি আত্মসাৎ করেছেন ৪ লাখ ৫৮ হাজার ১৯১ টাকা।
এছাড়া, তিন বছর পর পর রেস্ট অ্যান্ড রিক্রিয়েশন (শ্রান্তি ও বিনোদন) ভাতা পাওয়ার বিধান থাকলেও তিনি তা ভঙ্গ করে এক বছরের মধ্যে (১৬/১০/২০১৬ এবং ১২/১২/২০১৬) ১৮ হাজার করে মোট ৩৬ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত থাকা অবস্থায় তিনি সাতজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের নামে ২০১৫ সালের ১ জুলাই ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেলের বকেয়া প্রাপ্য বেতনের অতিরিক্ত একমাসের বেতনের (প্রতিজনের ৪, ৮১৪ টাকা) ৩৩ হাজার ৬৯০ টাকা উত্তোলন করে তাদেরকে না দিয়ে তার পুরোটাই তিনি আত্মসাৎ করেন বলেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়।
শুধু তাই নয়, মাহমুদ ফুয়াদ বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালের ১৮ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর রেস্ট অ্যান্ড রিক্রিয়েশন (শ্রান্তি ও বিনোদন) ভাতা হিসেবে উত্তোলিত ৩ লাখ ৩২ হাজার ৬২০ টাকার ২০ শতাংশ অর্থাৎ ৬৬ হাজার ৫২৪ টাকা কর্তন করেছেন। অন্যান্য স্টাফদের কাছ থেকেও তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ধরণের বিল থেকে ১০ থেকে ২০ শতাংশ টাকা কর্তন করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
২০১৭ সালের ৪ মার্চ থেকে তিনি হাসপাতালের ভেতরে সরকারী বাসায় বসবাস করছেন। তার মূল বেতনের (১৮,৮৬০) ৪০ শতাংশ হিসেবে প্রতি মাসে ৭ হাজার ৫৪৪ টাকা বাসা ভাড়া প্রদান করার বিধান থাকলেও তিনি বাসা ভাড়া প্রদান করছেন না। এমনকি তিনি বিদ্যুৎ ও গ্যাসের বিলও প্রদান করছেন না। অর্থাৎ এই খাতেও তার কাছে সরকারের পাওনা প্রায় পৌনে দুই লাখ টাকা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, স্থানীয় কোটেশনের সকল ধাপে (বিজ্ঞপ্তি, যাচাই-বাছাই বিবরণী, তুলনামূলক বিকরণী, বিল উত্তোলন) হিসাব রক্ষক একাই দাপ্তরিক কার্যাবলী সম্পাদন করেছেন। হাসপাতাল ও জেলা হিসাব রক্ষণ অফিসে রক্ষিত স্থানীয় কোটেশনের কাগজপত্রে পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তিনি স্থানীয় কোটেশনের সদস্য-সচিবের স্বাক্ষর জাল করেছেন যা সরকারী বিধি পরিপন্থী।
স্থানীয় কোটেশনের মাধ্যমে কথিত ক্রয়কৃত মালামাল স্টোরে জমা নেই। ক্রয়কৃত মালামাল সার্ভে কমিটির মাধ্যমে স্টোরে তোলার কথা থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক বিধানটি উপেক্ষা করেছেন। ফলে আর্থিক কেলেঙ্কারি তরান্বিত হয়েছে।
এছাড়া মাহমুদ ফুয়াদের বিরুদ্ধে মাসের বেশীর ভাগ সময়ই হাসপাতালে অনুপস্থিত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অপরদিকে তত্ত্বাবধায়ক পূর্বের আদেশটি বাতিল না করে একাই ৩য় শ্রেণির বাসাটি ডরমেটরি ঘোষণা করে একই ব্যক্তির নামে পুনরায় সীট বরাদ্দ দেন এবং এতে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
হাসপাতালের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়ে তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমান (কোড-৩৮৯৮০২) বাসা বরাদ্দ, স্থানীয় কোটেশন, জাল স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন, মালামাল স্টোরে তোলা, জেনারেটরের রক্ষণাবেক্ষণ, হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আবাসিক চিকিৎসককে আড়ালে রেখে অভিযুক্ত ব্যক্তির পক্ষে সাফাই গেয়েছেন যা সরকারি আর্থিক ক্ষতিকে প্রভাবিত করেছে।
এদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগসমূহের সুষ্ঠু তদন্ত, দোষী ব্যক্তিকে শাস্তি প্রদান এবং আত্মসাৎকৃত সরকারের টাকা সরকারি কোষাগারে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানান অভিযোগকারী হাসপাতালের কর্মচারীরা।
হাসপাতালের কর্মচারীরা বলেন, দুই একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারণে গোটা বিভাগের বদনাম। তাই বিভাগের সুনাম ফিরিয়ে আনতে দোষী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া দরকার।
তবে যার বিরুদ্ধে এত অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ মিলেছে, সেই হিসাব রক্ষক সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ বলেন, এসব তদন্ত করে কিছুই করতে পারবে না। অতীতেও এই ধরণের অভিযোগের তদন্ত হয়েছিল। কিছু করতে পারেনি।
তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ মো. সাইফুর রহমান বলেন, কোনও অনিয়ম থাকলে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন। তবে এইসব ব্যাপারে তার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবী করেন তিনি।
অভিযোগ তদন্ত করে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার কথা থাকলেও কেন এতো বিলম্ব হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, তদন্তকালে তিনি সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে তেমন কোনও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণেই বিলম্ব হচ্ছে।
বর্তমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবুল কালাম আজাদ জানান, তিনি তদন্ত রিপোর্টটি পেয়েছেন। এ বিষয়ে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
উল্লেখ্য, অভিযুক্ত সৈয়দ মো. মাহমুদ ফুয়াদ ১৯৯৩ সালের ১২ ডিসেম্বর সহকারী স্টোর কিপার হিসেবে ভোলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে যোগদান করেন। এরপর ১৯৯৫ সালের ২ এপ্রিল তিনি বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে পিরোজপুর সদর হাসপাতালে ক্যাশিয়ার হিসেবে পদোন্নতি পান। যদিও এই ধরণের পদোন্নতি দেয়া ওই কমিটির এখতিয়ার বহির্ভূত। এরপর তাকে একই বছরের ১ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বদলী করা হয়।
২০১৬ সালের ১ জুন তাকে প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক পদে পদায়ন করা হয়। ২০১৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে সেখান থেকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে বদলী করা হয়। তিনি বর্তমানে এখানে হিসাব রক্ষকের দায়িত্বপালনের পাশাপাশি গত দুই বছর ধরে ক্যাশিয়ারের দায়িত্বও পালন করছেন।
এসএস
মন্তব্য করুন
বিয়ে করতে এসে পুলিশ হেফাজতে দুই কিশোরী
নাটোরের একডালা মডেল হাইস্কুলের এক ছাত্রীর সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পরিচয় হয় সিলেটের দশম শ্রেণির এক মাদ্রাসা ছাত্রীর। এরপর দুই ছাত্রীর পরিচয় প্রেমে পরিণত হয়। সাত মাস প্রেম করার পর ওই মাদ্রাসাছাত্রী নাটোরে স্কুল ছাত্রীর বাসায় চলে আসলে পুলিশ তাদেরকে হেফাজতে নেয়। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় সদর উপজেলার তেবাড়িয়া ইউনিয়নে এ চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।
সিলেট থেকে আসা মাদ্রাসা ছাত্রী জানান, ৭ মাস আগে তাদের ফেসবুকে পরিচয় হয়। এরপর ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। পরে তারা সমকামী বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। স্কুল ছাত্রী তাকে বিয়ে করার কথা বললে সে তাকে বিয়ে করতে আসে।
অপর ছাত্রী জানায়, বিয়ে করে একসঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
নাটোর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার বিকেলে তারা একে অপরকে বিয়ে করতে চাইলে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। স্থানীয়রা সন্ধ্যায় পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে আসে। অপ্রাপ্ত বয়স হওয়ায় তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় দেওয়া হবে।
‘বলার ছিলো অনেক কিছু’ লিখে এসএসসি পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
শরীয়তপুরের ডামুড্যায় নিজের ঘরে ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ফাঁস দিয়ে লামিসা জামান দিয়া নামে এক এসএসসি পরীক্ষার্থী আত্মহ্যা করেছেন।
শুক্রবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
আত্মহত্যার আগে লামিসা জামান দিয়া তার ব্যক্তিগত ফেসবুকের স্টোরিতে ‘বলার ছিলো অনেক কিছু, বলা হইলো না কিছু’ লিখে পোস্ট করেন।
লামিসা জামান দিয়া (১৭) দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের ইতালি প্রবাসী মনিরুজ্জামান বিপ্লব বেপারী ও লাকি বেগম দম্পত্তির মেয়ে।
তিনি সরকারি ডামুড্যা মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়ের মানবিক শাখা থেকে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, লামিসা জামান দিয়ার মা লাকি বেগম বাড়িতে ছিলেন না। গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নিজের রুমের দরজা বন্ধ করে দেন লামিয়া। অনেক সময় কেটে গেলেও দরজা না খুললে সন্দেহ হয় বাড়িতে থাকা অন্যদের। এরপর তার খালামনি ডাকাডাকি করলেও তিনি দরজা না খুললে প্রতিবেশীরা এসে দরজা ভেঙে দেখেন ভেন্টিলেটরের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে লামিসা জামান দিয়া ঝুলে রয়েছেন। পরে দ্রুত তাকে উদ্ধার করে ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক লামিসাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডামুড্যা থানার ওসি এমারত হোসেন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক ধারণায় মনে হয়েছে লামিসা আত্মহত্যা করেছেন। তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
নয়নাভিরাম পপি চাষ করে কৃষক গ্রেপ্তার
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ভুট্টাখেতের মাঝে লুকিয়ে নিষিদ্ধ পপি গাছ চাষ করায় কৃষক নুরুল খানকে (৪৫) গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের পুরান পয়লা নামক স্থান থেকে পপি গাছ জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তার কৃষক একই এলাকার জাবেদ খানের ছেলে।
জানা গেছে, এদিন সকালে ৯ হাজার ৮২০টি পপি গাছসহ নুরুল খানকে আটক করা হয়। এরপর তার ক্ষেত থেকে প্রায় ৩০ হাজার পপি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে অনেক গাছে ফুল ও ফল ধরেছিল।
স্থানীয়রা জানায়, আমরা আগে কখনও পপি চাষ করতে দেখিনি। পুলিশের মাধ্যমে জানতে পেরেছি এখানে আফিমের চাষ হচ্ছে। জানতে পারলাম এটা ভয়াবহ মাদক মাদক তৈরির উপকরণের গাছ। এ ধরনের ভয়াবহ মাদক যারা চাষ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিৎ।
জেলা ডিবি পুলিশের এসআই রিপন নাগ জানান, রোববার সকালে পপি গাছসহ কৃষক নূরুল ইসলামকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য আইনে দুটি মামলার প্রস্তুতি চলছে।
মানিকগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ইনচার্জ আবুল কালাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে পপি গাছসহ নুরুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে শিবালয় থানায় ১টি মামলা প্রক্রিয়াধীন। উদ্ধার করা আফিম গাছগুলো পরীক্ষার জন্য মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে পাঠানো হবে।
প্রসঙ্গত, দেখতে নয়নাভিরাম হলেও পপি চাষ বাংলাদেশের আইনে নিষিদ্ধ। কারণ এই ফুলের রস থেকেই তৈরি হয় আফিম, হেরোইন ও মরফিনের মতো ভয়ংকর সব মাদক।
গণিত পরীক্ষা খারাপ হওয়ায় পরীক্ষার্থীর আত্মহত্যা
চাঁপাইনবাবগঞ্জে চলমান এসএসসি পরীক্ষায় গণিত বিষয়ের পরীক্ষা আশানুরূপ ভালো না হওয়ায় এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।
সোমবার (২৬) সদর উপজেলার ঝিলিম ইউনিয়নের আমনুরা-সেতু পাড়ার নিজ বাড়ি থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
তাসভির মহিম (১৭) নামের ওই পরীক্ষার্থী ঝিলিম ইউনিয়নের ইব্রাহিম হকের ছেলে।
এলাকাবাসী জানান, তাসভির মহিম আমনুরা কশিম উদ্দিন মিয়া (কে এম) উচ্চবিদ্যালয় থেকে এবার এসএসএসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রুটিন অনুযায়ী তার গণিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু তার ভাষ্য পরীক্ষা আশানুরূপ ভালো হয়নি। এজন্য ওই রাতেই নিজ কক্ষে ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেন তাসভির।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি মিন্টু রহমান।
হলুদের অনুষ্ঠানে কনেকে প্রেমিকের চুমু, অতঃপর...
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় গায়ে-হলুদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথির সামনে কনেকে চুমু দেয়ায় ‘প্রেমিক’কে গণধোলাই শেষে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয়রা। আর এ ঘটনায় মেয়েটির বিয়ে ভেঙে গেছে।
এই ঘটনায় কনের মা বাদী হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় মামলা করলে পুলিশ ওই প্রেমিককে গ্রেপ্তার করে বরিশাল আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠিয়েছে।
মামলা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বাগধা ইউনিয়নের বাসিন্দা ওই কিশোরী স্কুলে পড়ার সময় পাশের উজিরপুর উপজেলার ছত্তার হাওলাদারের ছেলে জিহাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্কের পর জিহাদ হাওলাদার অন্যত্র বিয়ে করেন।
এদিকে স্থানীয় এক যুবকের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিয়ে ঠিক হয়। সে অনুযায়ী ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে কনের বাড়িতে গায়েহলুদ দিতে আসে বর পক্ষের লোকজন। এই হলুদ অনুষ্ঠান চলাকালে জিহাদ হাওলাদার ওই বাড়িতে এসে উপস্থিত লোকজনের সামনে ওই কিশোরীকে চুমু দেন। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয়রা প্রেমিক জিহাদকে ধরে মারধর করে রাতেই আগৈলঝাড়া থানা পুলিশে সোপর্দ করে। এই ঘটনার পর বরের বাবা ঘটনাস্থলে এসে বিয়ে ভেঙে দিয়ে স্বজনদের নিয়ে চলে যান।
কনের মা বলেন, আমার কোনো জায়গা জমি নেই। স্বামী একজন দিনমজুর ছিলেন। তার মৃত্যুর পর ৯ বছর ধরে অন্যের সাহায্যে এক ছেলে ও দুই মেয়েকে নিয়ে কষ্ট করে চলছি। এখন মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়ায় মহাবিপদে পড়েছি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও আগৈলঝাড়া থানার উপপরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অভিযুক্ত যুবক জিহাদকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর পর তাকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। আর বরপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ভেঙে যাওয়া বিয়ে পুনরায় আয়োজনের চেষ্টা করছি
চলন্ত ট্রেনে হার্ট অ্যাটাক, মেয়ের সামনে বাবার মৃত্যু
দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ থেকে মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে চলন্ত ট্রেনে হার্ট অ্যাটাকে আব্দুস সালাম (৬০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) চাটমোহর স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে তার মৃত্যু হয়।
আব্দুস সালাম বোচাগঞ্জ উপজেলার ৫ নম্বর ছাতইল ইউনিয়নের বাসিন্দা। পেশায় কৃষক ছিলেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মৃত আব্দুস সালামের ভাতিজি জামাই বোচাগঞ্জ উপজেলার মোহনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রমজান আলী।
তিনি জানান, তার একমাত্র মেয়ের জামাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় ৪-৫ মাস আগে মারা গেছেন। সেই মেয়েকে নিয়ে দাবিকৃত টাকা তোলার জন্য ট্রেনযোগে ঢাকা যাচ্ছিলেন। দুপুর আড়াইটার সময় চলন্ত ট্রেনে ঘুমের মধ্যে নাটোর স্টেশন থেকে চাটমোহর স্টেশনের মাঝখানে হৃদক্রিয়া বন্ধ (হার্ট অ্যাটাক) হয়ে তিনি মৃত্যুকরণ করেন।
তিনি আরও জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে রাত সাড়ে ১০টায় তার মরদেহ বোচাগঞ্জে নেওয়া হয়। এ সময় গ্রামে শোকের ছায়া নেমে আসে। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ২টার সময় তার নামাজের জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দিনাজপুর স্টেশন সুপার এ কে এম জিয়াউর রহমান বলেন, ঘটনা শুনেছি। ছুটিতে থাকার কারণে বিস্তারিত জানাতে পারেনি।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে মোবাইল ফ্ল্যাশলাইটের ফাঁদ
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের সাদা রঙের সলিড লাইনের পাশে প্রায় সময় ফ্ল্যাশলাইট জ্বলে থাকা মোবাইল ফোন পড়ে থাকতে দেখা যায়। সরলতায় কিংবা লোভে পড়ে গাড়ি থামালেই পড়তে হয় ডাকাতের খপ্পরে।
সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহাসড়কের মির্জাপুর এলাকার মা সিএনজি পাম্পের অপর পাশে সাংবাদিকদের নজরে আসে, রাস্তার পাশে ফ্ল্যাশলাইট জ্বলা অবস্থায় একটি মোবাইল ফোন পড়ে আছে। মোটরসাইকেলের গতি কমিয়ে দেখা যায় ডাকাত চক্রের ৩ সদস্য রাস্তার পাশে অবস্থান করছে। দুজন বসে আছে এবং একজন দাঁড়িয়ে। সাংবাদিকরা তৎক্ষণাৎ দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন এবং মির্জাপুর থানা পুলিশকে অবগত করেন। পরে দেওহাটা ব্রিজের সামনে থাকা টহল পুলিশের টিমকে সঙ্গে নিয়ে ফাঁদপাতা স্থানে যান সাংবাদিকরা। পরে থানা থেকে আরও একটি পুলিশের টিম দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে টের পেয়ে ডাকাত চক্রটি পালিয়ে যায়। আলামত হিসেবে রাস্তায় পড়ে থাকা মোবাইল ফোন পুলিশ উদ্ধার করেন। উদ্ধারের পর দেখা যায় মোবাইল ফোনের একটি ডেমু বানিয়ে রাখা হয়েছে। মোবাইল ব্যাককাভারের ভেতর প্লাস্টিকের ফোম এবং নষ্ট ফোনের ডিসপ্লের সঙ্গে রাবার দিয়ে গ্যাস ম্যাচের লাইট বেঁধে রাখা হয়েছে।
এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, রাত ১১টা থেকে ২টার মধ্যে পথিমধ্যে দুদিন পরপরেই ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এখানে প্রায় সময় এমনভাবে মোবাইলের কাভার লাইট জ্বালিয়ে রাখে যা দেখে মনে হবে এটি সত্যিকারের মোবাইল ফোন। গাড়ি থামালেই চালানো হয় ডাকাতি।
গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর কুমারজানী এলাকায় ডাকাত দলের সদস্যরা রাস্তায় বস্তা ফেলে ফাঁদ পেতে বসে থাকে। ফাঁদে পা দিলে ট্রাক ড্রাইভার নাজমুলের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা নাজমুলকে উদ্ধার করে কুমুদিনী হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যান।
এ ঘটনার পর ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতেই তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে মির্জাপুর থানার ফোর্স দ্রুত সময়ের মধ্যে উপজেলার দেওহাটা ব্রিজ ও ত্রিমোহন এলাকা থেকে ডাকাত দলের সদস্য নাদিম ও সাদ্দামকে গ্রেপ্তার করে।
ওই আসামিদের তথ্যমতে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে অপর ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে নাদিম ও সাদ্দাম ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন এবং অপর ৪ ডাকাত দলের সদস্যকে ৭ দিনের রিমান্ড চেয়ে সোমবার আদালতে পাঠানো হয়।
মির্জাপুর থানার অফিসার ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, মির্জাপুরে এমন ঘটনা প্রায় সময় ঘটে আসছিল। ইতোমধ্যে ডাকাত চক্রের ৬ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। এই চক্রের সঙ্গে যারা রয়েছে তারা মাদকাসক্তের সঙ্গে সম্পৃক্ত। আরও কয়েকজন এই চক্রের সদস্য রয়েছে যারা বিভিন্ন যায়গায় এমন ফাঁদ তৈরি করছে। মির্জাপুর থানা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।