• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

জলেভাসা স্কুলে চলে শিশু শিক্ষার হাতেখড়ি

অষ্টগ্রাম প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১৩:০০
জলেভাসা স্কুলে চলে শিশু শিক্ষার হাতেখড়ি
ছবি : সংগৃহীত

চারদিকে হাওরবেষ্টিত দুর্গম লোকালয় নিকলী উপজেলার ছাতিরচর গ্রাম। ভাঙন কবলিত এ গ্রামের পাশ দিয়ে বইয়ে চলা ঘোড়াউত্রা নদীর তীরে সাজানো গোছানো একাধিক নৌকা ও লঞ্চ। এসব লঞ্চে নেই কোনো যাত্রী, তাড়া নেই ছেড়ে যাওয়ার। দূর থেকে ভেসে আসে শিশুদের পাঠাদানের শব্দ। নৌকার ছাঁদে চলছে শিক্ষার্থীদের সমাবেশে ও জাতীয় সঙ্গীত। কাঠের সিঁড়ি মাড়িয়ে নৌকায় উঠতেই দেখা মিলে লাল-সবুজের পোশাকের সুবিধা বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা নিচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ‘পপি’ এর এই ভাসমান স্কুল প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৫ বছরে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেছে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী।

কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলার হাওরাঞ্চলের অবহেলিত ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়াতে গত ১৫ বছর ধরে ভাসমান স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা সুবিধা দিচ্ছে ‘পপি’।

উপজেলার ছাতিরচর ও সিংপুর গ্রাম সংলগ্ন ঘোড়াউত্রা নদীতে ৭টি লঞ্চ ও নৌকায় দেওয়া হচ্ছে শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি। বিনামূল্যে দেওয়া হয় বই, খাতা, কলম, পোশাকসহ সকল শিক্ষা উপকরণ এবং প্রতিদিন দুপুরে দেওয়া হয় টিফিন। এতে প্রাথমিক শিক্ষায় শিশুদের ‘ঝরে পড়া’ রোধে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ভাসমান এ স্কুল।

শিক্ষা সহায়ক উপকরণে সাজানো লঞ্চের ভেতরে সারি সারি বেঞ্চে বসে পাঠ নেয় শিশুরা। পড়াশোনার পাশাপাশি রয়েছে খেলাধুলা ও বিনোদন চর্চার ব্যবস্থা। সুপেয় পানি ও গরমে পাকা ব্যবহারের ব্যবস্থা।

শিশুর মানসিক ও শারীরিক বিকাশে স্কুলের ভেতরে রয়েছে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও চিকিৎসক। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ২৫ ধরনের ওষুধ বিতরণ করা হয় বিনামূল্যে।

চলতি শিক্ষাবর্ষে ৭টি ভাসমান স্কুলে প্রাক্ প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৩৩০ জন শিক্ষার্থী ও ৯ জন শিক্ষক রয়েছেন। একজন প্যারামেডিক চিকিৎসক, ১৪ জন মাঝি ও মাঝির সহকারী দায়িত্ব পালন করেন এসব নৌকার।

২০০৯ সালে ‘পপি’ ভাসমান স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র প্রকল্প চালু হয়। ইতিমধ্যে এ শিক্ষাতরী থেকে ১২০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা সেবা প্রদান করা হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক শিক্ষা কারিকুলামে এ ভাসমান স্কুলে প্রত্যেক শ্রেণিতে ৫০ জন শিক্ষার্থীকে প্রতিদিন পাঠদান করান দুজন শিক্ষক।

শুষ্ক মৌসুমে নদীর তীরে আর বর্ষায় ভাসমান পানিতে ভেসে থাকা এ শিক্ষাতরীতে পাঠদান চলে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত।

এ দিকে ‘পপি’ ভাসমান স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের চিকিৎসক ফুলমালা আক্তার বলেন, শিক্ষার্থীদের দৈনিক সমাবেশ, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় স্কুলের ছাঁদে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের জন্য নৌকায় রয়েছে স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা।

এছাড়াও ‘পপি’ ভাসমান স্কুল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য স্কুলের মতোই ভাসমান স্কুলে ব্যাপক আনন্দময় পরিবেশে শিক্ষার্থীরা মেধাবী ও মনোযোগী লেখাপড়ায়। ৬ বছর লেখাপড়া শেষ করে ‘পপি’র উদ্যোগে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য সহায়তা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, জলে ভাসা এ স্কুলের সুফল পেয়েছে অনেক হতদরিদ্র শিক্ষার্থী এখন দেশের বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চলের বিভিন্ন উপজেলায় শিক্ষাবান্ধব এ জলেভাসা ‘স্কুল ও স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র’ সংখ্যায় আরো বেশি করে চালুকরণের দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ট্রাকচাপায় শিশু শিক্ষার্থী নিহত
শিক্ষার্থীর চুল ছিঁড়লেন শিক্ষক, কাউকে না বলার জন্য দেন ৫ টাকা
X
Fresh