সবুজে ছেয়ে গেছে তিস্তারচর
তিস্তা নদী কৃষকের জন্য কখনো হয় অভিশাপ আবার কখনো হয় আশীর্বাদ। তিস্তার চরাঞ্চল বর্তমানে যেন আশীর্বাদে পরিণত হয়েছে। লালমনিরহাটের হাতীবান্ধার তিস্তার চরাঞ্চলে সবুজে ছেয়ে গেছে মাঠ। ভুট্টার ফুলে বাতাসে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। একমাত্র ডিজেল চালিত শ্যালো মেশিনে দিতে হয় সেচ, তবুও রয়েছে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা। ছাড়িয়ে যেতে পারে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা।
ভুট্টা চাষে সেচের পানিসহ খরচ কম লাগে উৎপাদন বেশি হয়। উঁচু-নিচু দোলা জমিতে লাগানো ভুট্টার সবুজ রঙের গাছগুলো দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভুট্টার ফলন বেশি হওয়াতে বর্তমানে চর অঞ্চলের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে ভুট্টা। প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছরে ভুট্টার চাষ অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের ৬টি ইউনিয়নে ১৮৯৭ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে ভুট্টা। ছাড়িয়ে যেতে পারে ভুট্টার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টার ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। ধানের চেয়ে খরচ কম করে দ্বিগুণ ভুট্টা উৎপাদন করা যায়। প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এতে চরাঞ্চলের কৃষকরা হচ্ছেন অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা স্বাবলম্বী। ভুট্টার চাষাবাদ যখন ছিলনা তখন খুব দরিদ্র অবস্থা ছিল। কৃষকরা আশা করছেন, এ বছর ভুট্টার ভাল ফলন হবে। ভুট্টা ঘরে তোলার সময় পর্যন্ত আবহাওয়া ও বাজার মূল্য ভাল থাকলে পরিবার পরিজনদের নিয়ে সুখে থাকতে পারবে তারা।
তিস্তার চরের কৃষকরা বলেন, প্রতি বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে ব্যয় হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। এতে আমরা অনেক লাভবান হয়েছি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারছি। ভুট্টার আবাদ যখন ছিলনা। তখন আমাদের খুব খারাপ অবস্থা ছিল।
পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুল আলম সাদাত বলেন, চরাঞ্চলে যেখানে তাকাবেন শুধু সবুজে ঘেরা দেখতে পাবেন। চরের লোক আজকে আবাদে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এলাকায় কোনো অভাব থাকবেনা। উচ্চ ফলনশীল হিসেবে যেভাবে ফলন পাই, এটাই আমাদের ভাগ্যও পরিবর্তন করে দিয়েছে।
ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান বলেন, বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো যদি এখানে সাইলো স্থাপন করে ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন করতো, তাহলে কৃষকরা আরও লাভবান হতো।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি অফিসার সুমন মিয়া বলেন, ভুট্টা এ এলাকার প্রধান ফসল রবি মৌসুমে। হাতীবান্ধা উপজেলায় এবার ভুট্টা উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার ২ শত ২০ হেক্টর জমিতে। এ এলাকার মানুষ ভুট্টার ওপর নির্ভরশীল।
মন্তব্য করুন