• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

ঈদযাত্রায় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের আতঙ্ক ঝুঁকিপূর্ণ ‘নলকা সেতু’

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ১৮ জুলাই ২০২১, ১২:৪৫
ঈদযাত্রায় উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের আতঙ্ক ঝুঁকিপূর্ণ ‘নলকা সেতু’
ঝুঁকিপূর্ণ ‘নলকা সেতু’

আর মাত্র তিনদিন পর ঈদুল আজহা। এরইমধ্যে নাড়ির টানে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলা এবং খুলনা বিভাগের বেশ কয়েকটি জেলার মানুষের ঘরে ফেরার অন্যতম রুট বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক। নানা সমস্যায় প্রতি বছরই এ মহাসড়কটি দুর্ভোগের কারণ হয়। এ বছর মহাসড়কটির আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতু।

রোববার (১৮ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলগামী যেকোনো যানবাহনকে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর ওপর উঠেই গতি কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এ কারণে সেতুর উভয়প্রান্তে সবসময়ই শত শত যানবাহন আটকে পড়ে থাকে। ৫-১০ মিনিট পর পরই দু-পাশে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। কখনো কখনো এ যানজট তীব্র হয়ে হাটিকুমরুল-বগুড়া, হাটিকুমরুল-পাবনা ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া মহাসড়কের বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তৃতরূপ নিচ্ছে। যানজট নিরসনে সেতুর উভয়প্রান্তে সবসময়ই মোতায়েন রয়েছে হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ।

এসএ পরিবহনের বাসচালক হায়দার আলী, হানিফ পরিবহনের চালক শামসুল হক, ট্রাকচালক সোলায়মান হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, এ মহাসড়কের নলকা সেতুটি যেন বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতুতে ওঠার আগেই গাড়ির গতি কমিয়ে দিতে হয় এবং ধীরগতিতে পার হতে হয়। সেতুর ওপর ২০-২৫ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালালে কেঁপে ওঠে। গত ১০ বছর ধরে এ সেতুর কারণে শত শত বার যানজটের কবলে পড়তে হচ্ছে। শুধু ঈদ নয়, যেকোনো সময় অতিরিক্ত গাড়ির চাপ থাকলেই এখানে যানজটের সৃষ্টি হয়।

ঢাকা থেকে হাটিকুমরুলে আসা নাবিল পরিবহনের যাত্রী এরশাদ, খলিলুজ্জামান, তাসমিনা বেগম ও জলি আরটিভি নিউজকে বলেন, প্রতি বছর দুটি ঈদে আমরা বাড়ি আসি। বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর থেকেই যানজটের কবলে পড়তে হয়। দীর্ঘদিন ধরে জরাজীর্ণ নলকা সেতুটি দেখছি। এটির কারণে যানজটের তীব্রতা আরও বেড়ে যায়। দুর্ভোগ পোহাতে হয় আমাদের। তবুও কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি পড়ে না। বার বার শুধু সেতুটি সংস্কার করা হলেও দুর্ভোগ কখনোই কাটেনি।

সলঙ্গা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আরিফ রহমান আরটিভি নিউজকে বলেন, এ সেতুটি স্থানীয়দের কাছেও আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেতুটিতে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় ২০-২২টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। সারা বছরই সেতুর উভয় পাশে গাড়ির চাপ ও মাঝে মধ্যে যানজট থাকে। তার থেকেও বড় ভয়, সেতুটি যেভাবে কাঁপে, কখন ভেঙে পড়ে যায়, এলাকাবাসী সব সময়ই এমন আতঙ্কে থাকে।

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগ কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৮ সালে সিরাজগঞ্জ-বগুড়া আঞ্চলিক সড়কের ফুলজোড় নদীর ওপর এ সেতুটি নির্মাণ করা হয়। এর ১০ বছর পর ১৯৯৮ সালে আঞ্চলিক এ সড়কটি মহাসড়কে পরিণত হলেও এ সেতুটির কোনো পরিবর্তন বা পরিবর্ধন করা হয়নি। ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন করার পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ২৪ জেলার যানবাহন চলাচল করছে এ সেতুটি দিয়েই।

পাঁচ বছর ধরে যেকোনো যানবাহন এ সেতুটির ওপর উঠলেই কাঁপতে থাকে। যে কারণে এখানে এসে গাড়ির গতি চার ভাগেরও নিচে নামিয়ে আনতে হয়। মাঝে মধ্যেই সেতুর সংস্কার করে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। কিন্তু সেটা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। গত প্রায় ১৫ দিন ধরে সেতুর ওপর কার্পেটিংয়ের কাজ করা হলেও এখনো জয়েনিং স্থানে রয়েছে খানা-খন্দ।

বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন আরটিভি নিউজকে বলেন, নলকা সেতু এ মহাসড়কে যানজট ও দুর্ভোগের অন্যতম কারণ। একেতো সেতুতে উঠলে কমগতিতে গাড়ি চলে, তার ওপর সব সময়ই সেতুর একটি লেন বন্ধ করে যানবাহন ছাড়া হয়। এছাড়া সেতুটির ওপর উঁচু-নিচু কার্পেটিংয়ের কারণেও যান চলাচলে সমস্যা সৃষ্টি হয়। এসব কারণেই উভয় পাশে বিপুল সংখ্যক যানবাহন জমা হতে থাকে। কখনো কখনো তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহজাহান আলী আরটিভি নিউজকে বলেন, ঈদ উপলক্ষে গত কয়েকদিন আগে সেতুটি সংস্কার করে সড়ক বিভাগ। তবুও খানা-খন্দ রয়েই গেছে। এ সেতুটি সঠিকভাবে মেরামত না হলে দুর্ভোগ কিছুতেই কমবে না। তবে ফোরলেনের কাজ সম্পন্ন হলে দুর্ভোগ কমে যাবে।’

সিরাজগঞ্জ সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জাহিদুর রহমান মিলু আরটিভি নিউজকে বলেন, নলকা সেতুটি নির্মাণকালে এক্সপানশন জয়েন্টে সমস্যা ছিল। ফলে দু-চারদিন যানবাহন চলাচল করার পর জয়েন্টগুলোর বিটুমিন কার্পেটিং উঠে যায় এবং উভয়পাশে উঁচু হয়। আবার উঁচু স্থানগুলো কেটে নতুন করে বিটুমিন কার্পেটিং করা হয়। প্রতিদিন গড়ে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে এ সেতু দিয়ে। এ কারণে সেতুর কার্পেটিং বিটুমিন দ্রুত উঠে যায়। আমরা ঈদ উপলক্ষে একবার মেরামত করেছি।

তিনি আরও বলেন, আমরা সেতুটি সবসময় পর্যবেক্ষণ করছি। এরইমধ্যে ফোরলেন মহাসড়কের কাজ শুরু হয়েছে এবং এ সেতুর পাশ দিয়ে আরেকটি সেতু নির্মাণ কাজও চলছে। আশা করি সেতুটির নির্মাণ সম্পন্ন হয়ে গেলে দুর্ভোগ কমে যাবে।

এমআই/পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তীব্র তাপদাহে রাসিকের জরুরি সভা, নানা উদ্যোগ গ্রহণ
রাজশাহীতে বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়
জানাজা শেষে ফেরার পথে সড়কে মা-ছেলের মৃত্যু 
তাপদাহে গলে গেছে সড়কের পিচ, আটকে যাচ্ছে জুতা
X
Fresh