• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সূর্যমুখী ফুলের রাজ্যে পর্যটকদের ভিড়

নরসিংদী সংবাদদাতা, আরটিভি নিউজ

  ২০ মার্চ ২০২১, ১৪:৪৯

ফুল ভালোবাসে না এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। আর তা যদি হয় শস্য খ্যাত সুন্দর হলুদ সূর্যমুখী তাহলে তো কথাই নেই। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে হলদে চাদরে মোড়া। যতদূর চোখ যায় সূর্যের দিকে মুখ করে হাসছে সূর্যমুখী। আর এমন মনোরম দৃশ্য দেখতে দর্শনার্থীরা প্রতিদিনই ভিড় করছেন।

নরসিংদীর সূর্যমুখী ফুলের রাজ্যে প্রতিনিয়তই এখানে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আসা হাজারো প্রকৃতি প্রেমী। মনোরম সুন্দর পরিবেশ, উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও শহরের নিকটবর্তী হওয়ায় এমন দৃশ্য দেখাকে হাতছাড়া করেত চাইছেন না প্রকৃতি প্রেমীরা। সেই সঙ্গে সেলফি, গ্রুপ ছবি তো আছেই। সবুজ মাঠের এই হলুদ রং ছবিতে এনে দিচ্ছে নতুন মাত্রা।

আরও পড়ুন...
কেন তরমুজের খোসা খাবেন, জানুন উপকারিতা

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাধুর্যে ঘেরা সূর্যমুখীর হলুদ আভায় ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। রূপের মাধুর্য বাড়াতে নরসিংদীর নাগরিয়াকান্দি এলাকার কামারগাঁওয়ে বর্ণিল হয়ে উঠেছে রঙের বর্ণচ্ছটায়। সূর্যমুখী ফুলের হলুদ রং ও তার ঘ্রাণ এনে দেয় আলাদা এক মাদকতা। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সেই নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকরা। প্রকৃতির স্পর্শ পেতে প্রতিনিয়ত এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত নরসিংদীর সূর্যমুখী ফুলের বাগান। এর মাধ্যমে প্রকৃতি ও চিন্তাচেতনার সাথে পর্যটকদের তৈরি হচ্ছে মেলবন্ধন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নরসিংদীতে এ বছর জেলার সদর, শিবপুর ও রায়পুরা উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ফুলের চাষ হয়েছে নরসিংদীর সদর উপজেলায়। অল্প খরচ বেশি লাভ হওয়ায় সূর্যমুখী ফুলের চাষে আগ্রহী হচ্ছেন এখানকার কৃষকরা।
রোগবালাই রোধে ও পরিপক্ব বীজ পেতে জমিতে নির্দিষ্ট পরিমাণে প্রয়োগ করতে হয় ইউরিয়া, টিএসপি, এমপি, জিপসাম, জিংক সালফেট, বরিক এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম সালফেট সার। সূর্যমুখী ফুলের বীজের রং কালো। প্রতিটি মাথায় বীজের সংখ্যা থাকে ৫০০-৬৫০টি। বীজ বপন থেকে পরিপক্ব হওয়া পর্যন্ত ৯০ থেকে ১১০ দিন লাগে ফসল সংগ্রহ করতে।

ঘুরতে আসা পর্যটক আরটিভি নিউজকে বলেন, সূর্যমুখী ফুল সূর্যের দিকেই মুখ ঘুরিয়ে থাকে। সন্তানদের এর কারণ ব্যাখ্যা করেছি এবং দেখিয়েছি। শহরের কোলাহল থেকে একটু প্রকৃতির ঘ্রাণ নিতেই পরিবারকে নিয়ে এখানে আসা।

ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা শিক্ষার্থী আশা চৌধুরী বলেন, বাসাবাড়িতে বিভিন্ন রকমের ফুলের বাগান করা যায়। কিন্তু সূর্যমুখী ফুলের বাগান করা খুব একটা হয়ে উঠে না। এছাড়া একসঙ্গে অনেকগুলো সূর্যমুখী ফুল দেখে মনটা ভরেও যায়।

আরও পড়ুন...
প্রখ্যাত আলেম মুহাম্মদ আলী সাবুনির মৃত্যুতে আজহারীর আবেগঘন স্ট্যাটাস

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি দেখে গাজীপুর ঘুরতে আসা অপর এক দম্পতি আরটিভি নিউজকে বলেন, ফেসবুকে দেখার পর আমাদের কাছে ভালো লাগে তাই পরিবারকে নিয়ে হলুদের রাজ্যে আসা। খোলামেলা পরিবেশ উপড়ে নীল আকাশের সাথে প্রকৃতির সাথে হলুদ মিলে একাকার এক নজরকাড়া দৃশ্য দেখতে পারলাম।

ইমরান হোসেন নামে আরেক দর্শনার্থী বলেন, কাজের ফাঁকে একটু বিনোদন নিতে সপরিবারে ফুলের রাজ্যে আসা। হলুদ রং মানুষকে সব সময়ই আকর্ষণ করে। কাজের ফাঁকে পরিবারকে সময় দেওয়া হয় না খুব একটা তাই হলুদের সাথে বিকেলটা পরিবারের সাথে কাটাতে পেরে অনেক ভালো লাগলো।

সূর্যমুখী ফুলের বাগান মালিক সাইদুর রহমান শিমুল আরটিভি নিউজকে বলেন, গত বছর ২ বিঘা জমিতে পরীক্ষামূলক সূর্যমুখী ফুলের চাষ করি। পরীক্ষামূলকভাবে সফল হওয়ায় এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। যা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দর্শনার্থী ভিড় করছেন।

নরসিংদী সদর উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আসাদুল্লাহ আরটিভি নিউজকে বলেন, সূর্যমুখী চাষের ফলে এখানে পিকনিক স্পটে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন প্রচুর পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। প্রকৃতি থেকে তারা আনন্দ লাভ করছে। সূর্যমুখী তেলে লিনোলিক নামক এসিড রয়েছে যা হৃদ রোগীদের জন্য অনেক উপকারী।

আরও পড়ুন...
আওয়ামী লীগ সরকারে আছে, কিন্তু রাজপথ ছাড়েনি : ওবায়দুল কাদের

নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক শোভন কুমার ধর বলেন, সূর্যমুখীর বৈজ্ঞানিক নাম হলো হেলিয়ান্থাস এ্যানুয়াস। সূর্যমুখীর ফুল অল্প পরিশ্রমে চাষ করা যায়। রোগবালাই খুব কম হয়। সূর্যমুখী বপনের ৬৫-৭০ পরে ফুলের বীজ পুষ্ট হওয়া শুরু হয়। ফসল কাটার সময় হলে গাছের পাতা হলুদ হয়ে এস এবং পুষ্পস্তবকসহ গাছের পাতা নুয়ে পড়ে। বীজগুলো কালো ও এবং দানাগুলো পুষ্ট এবং শক্ত হয়। বীজ থেকে তেল নিষ্কাশন করে গানিতে পাওয়া যায় ২৫% আর এক্সলার মেশিন ৩০ থেকে ৩৫% তেল নিষ্কাশন সম্ভব। গুণগত মান ও স্বাস্থ্যসম্মত তেল পাওয়ার লক্ষ্যেই নরসিংদীতে সূর্যমুখী চাষ করা হচ্ছে। এর বীজ ভবিষ্যতে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা যাবে।

ব্যাপক আবাদের মাধ্যমে সূর্যমুখী দেশের ভোজ্যতেলের ঘাটতি মেটাতে সক্ষম হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূর্যমুখী আবাদ বাড়ানোর জন্য কাজ করে যাচ্ছে। তবে নরসিংদীতে সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল প্রক্রিয়াকরণ জন্য একটি এক্সলার মেশিন স্থাপন করা গেলে এই ফুলের চাষ আগামীতে আরও বাড়বে। এতে করে সূর্যমুখী তেলের চাহিদা আরও বাড়বে এবং কৃষক লাভবান হবে।

আরও পড়ুন...
শ্রীলঙ্কায় দেড় ‍দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা

এসকে/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
X
Fresh