র্যাবের সাহায্যে ২৬ দিন পর মেয়ের লাশ পাচ্ছেন বাবা
বাবা ও স্বামীর পরিবারের দ্বন্দ্বের কারণে, আইনি জটিলতায় কক্সবাজার সদর হাসপাতালের হিমঘরে ২৬ দিন ধরে পড়েছিল চাকমা কিশোরী লাকিংমে চাকমার (১৫) মরদেহ। তবে অবশেষে ওই কিশোরীর মরদেহ পাচ্ছেন তার বাবা লালা অং চাকমা।
আজ সোমবার (৪ জানুয়ারি) আদালতের নির্দেশে মরদেহ নিতে হাসপাতালে আসেন লাকিংমের বাবা লালা অং চাকমা। কিন্তু হাসপাতাল মর্গ থেকে মরদেহ নিতে বাবাকে দিতে হবে ২৪ হাজার টাকা বিল। তবে এত টাকা দেয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পরও মেয়ের মরদেহ পাননি তিনি।
এরপরে দুপুরে মর্গের বিল দিতে সম্মত হয় এই ঘটনার তদন্ত সংস্থা র্যাব-১৫। এর ফলে মেয়ের মরদেহ নিতে আর বাধা নেই লালা অং চাকমার।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কিশোরী লাকিংমে চাকমার মরদেহ বাবার কাছে হস্তান্তর করা হবে।
লাকিংমের বাবা লালা অং চাকমা বলেন, এত টাকা দেয়ার সামর্থ্য নেই আমার। তাই মেয়ের মরদেহ নিতে পারছিলাম না। অবশেষে র্যাব এই টাকা দিতে রাজি হয়েছে। এখন মরদেহ গ্রহণের জন্য অপেক্ষায় আছি।
তিনি আরও বলেন, তাদের মেয়ে লাকিংমেকে অপহরণের পর জোর করে বিয়ে এবং পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তারা প্রিয় সন্তানের মরদেহ গ্রামে নিয়ে শেষকৃত্য করতে চান তিনি।
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সমুদ্র উপকূলীয় ইউনিয়ন বাহারছড়ার দক্ষিণ শিলখালী এলাকার চাকমা পল্লিতে বসতি লালা অং চাকমার। জীবিকা নির্বাহ করেন সমুদ্রে মাছ ধরে ও পাহাড়ে জুম চাষ করে। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় মেয়ে লাকিংমে চাকমা।
বাবা লালা অং চাকমার দাবি, ২০২০ সালের ৫ জানুয়ারি তার মেয়ে লাকিংমেকে স্থানীয় যুবক আতাউল্লাহর নেতৃত্বে কয়েকজন অপহরণ করে। এরপর জোর করে বিয়ে করে হত্যা করা হয়। এখন মেয়ে হত্যার বিচার চান তিনি।
অন্যদিকে স্বামী দাবিদার আতাউল্লাহর দাবি, অপহরণ নয়। স্বেচ্ছায় তারা বিয়ে করেছেন। বিয়ের আগে লাকিংমে ধর্মান্তরিত হন। তার বর্তমান নাম হালিমাতুল সাদিয়া।
আতাউল্লাহ বলেন, এত দিন তারা কুমিল্লায় ছিলেন। ছয় মাস আগে স্ত্রীসহ টেকনাফে আসেন। গত বছরের ৯ ডিসেম্বর বিউটি পার্লারে যাওয়া নিয়ে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে রুমে গিয়ে সাদিয়া বিষ পান করে। মারা যাওয়ার ১২ দিন আগে সাদিয়া একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিয়েছে।
র্যাব-১৫ এর অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহম্মেদ বলেন, মর্গের বিল ২৫ হাজার টাকার জন্য মেয়ের মরদেহ নিতে পারছিলেন না লালা অং চাকমা। খবর পেয়ে আমরা মর্গের বিল পরিশোধ করেছি। লাকিংমে চাকমার মরদেহ নিতে আর কোনও বাধা রইলো না।
আদালতের নির্দেশে র্যাব-১৫ রোববার আদালতে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দেয়। র্যাবের প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত রোববার লাকিংমের মরদেহ শেষ পর্যন্ত বাবার জিম্মায় দেয়ার নির্দেশ দেন। এর আগে কক্সবাজারের একটি আদালত নিহত কিশোরীর ধর্মান্তরকরণ এবং অপহরণের ঘটনা তদন্ত করতে দায়িত্ব দেন র্যাবকে।
জিএম/এসএস
মন্তব্য করুন