• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

টাঙ্গাইলে বন বিভাগের মামলায় আটকে আছে উন্নয়ন!

  ২৫ নভেম্বর ২০২০, ১৪:১৩
The dilapidated condition of the road
রাস্তার বেহাল দশা

বন বিভাগ ও এলজিইডি’র টানাপোড়নে উন্নয়ন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার প্রত্যন্ত পাহাড়ি বন অধ্যুষিত এলাকার কয়েক হাজার মানুষ। প্রায় পাঁচ বছর আগে শোলাকুঁড়ি থেকে টেলকি পর্যন্ত দশ কিলোমিটার সড়কের দুই কিলোমিটার অংশ পাকা করণের উদ্যোগ নেয় এলজিইডি। এক কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন করতে পারলেও সড়কটি নিজেদের দাবি করে আপত্তি তুলে মামলা দেয় বন বিভাগ। আর এতেই আটকে যায় সড়কটির নির্মাণ কাজ।

সম্প্রতি ওই এলাকা ঘুরে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গহীন অরণ্যের ভেতরে বসবাস করা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালীর বেঁচে থাকার সম্মিলিত প্রয়াস। যুগ যুগ ধরে বন আর পাহাড়কে ঘিরেই তাদের জীবন ও জীবিকা। টাঙ্গাইলের মধুপুরসহ ঘাটাইল, সখীপুর ও মির্জাপুরে অংশ বিশেষ নিয়ে মধুপুর গড়াঞ্চল অবস্থিত।

এই গড়াঞ্চলকে বলা হয় রাজধানী ঢাকার ফুসফুস। অথচ অবহেলিত এই গড়াঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। মধুপুর উপজেলার শোলাকুঁড়ি ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়ক হচ্ছে শোলাকুঁড়ি-টেলকি সড়ক।

এই সড়ক ব্যবহার করে গড়ের প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসরত মানুষ সহজেই ময়মনসিংহ ও জামালপুরের বিভিন্ন এলাকা এবং মধুপুর হয়ে টাঙ্গাইল ও ঢাকায় যেতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিনের দাবি থাকা সত্ত্বেও সড়কটি পাকা করণ না হওয়ায় অবহেলিত এই জনপদের মানুষের ভোগান্তির যেন শেষই হচ্ছে না।

অপরদিকে গড়াঞ্চলে চাষকৃত কলা, আনারস, হলুদসহ বিভিন্ন ফলস ও শাক-সবজি পরিবহণ করা চরম কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। অথচ মাত্র দশ কিলোমিটার সড়কের উন্নয়ন করা হলেই এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও বাঙালী অধ্যুষিত এলাকার খেটে খাওয়া এসব মানুষ।

মধুপুর উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার দাস জানান, পাহাড়ি এই জনপদের অবহেলিত মানুষের উন্নয়নের জন্য এলজিইডি কর্তৃপক্ষ ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে শোলাকুঁড়ি-টেলকি সড়কটি পাকা করণের সিদ্ধান্ত নেয়। দশ কিলোমিটার সড়কটির মধ্যে শোলাকুঁড়ি থেকে বেদুরিয়া পর্যন্ত দুই কিলোমিটার সড়ক পাকা করণের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। প্রায় ৫২ লাখ এক হাজার টাকায় কার্যাদেশ পায় মেসার্স উচ্ছ্বল কনস্ট্রাকশন। কিন্তু কাজ শুরুর পর বন বিভাগ সড়কটি তাদের দাবি করে মামলা দায়ের করে। এতে এক কিলোমিটার অংশ পাকা করণ হলেও সড়কের বাকি অংশটুকুর কাজ শেষ করতে পারেনি এলজিইডি। এরই মধ্যে পাকা করা অংশটুকুও ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

কাকড়াগুনি এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, সড়কটির বেহাল দশার কারণে কারখানায় কাঁচামাল আনতে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাঠাতে খুবই ঝামেলা পোহাতে হয়। বর্ষা মওসুমে এই কষ্ট আরও কয়েক গুন বেড়ে যায়। পরিবহন খরচ পড়ে অনেক বেশি। সড়কটি দ্রুত সংস্কার এবং সড়কের অবশিষ্টাংশ পাকা করণের দাবি জানান তিনি।

হরিণধরা এলাকার গেদা এবং অরণখোলা এলাকার হেলাল বলেন, আমরা খেটে খাওয়া মানুষ। ঘোঁড়ার গাড়ি দিয়ে মালামাল আনা-নেয়া করে থাকি। কিন্তু রাস্তাটি ভাঙাচোরা থাকার কারণে প্রায়ই গাড়ি উল্টে ভেঙে যায়। এতে অনেক সময় আমাদের জান-মাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

টাঙ্গাইল এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম আজম বলেন, জন-গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি দ্রুত সংস্কার ও বাকি অংশ পাকা করণ করা অতীব প্রয়োজন। কিন্তু মামলা থাকায় সেটা করা সম্ভব হচ্ছে না। বন বিভাগ মামলাটি তুলে নিয়ে অনাপত্তিপত্র দিলে সড়কটি দ্রুত উন্নয়ন করা সম্ভব।

টাঙ্গাইল বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ জহিরুল হক বলেন, যেহেতু সড়কটি বন বিভাগের অধীনে। তাই এই সড়কের বিষয়ে যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার কেবল বন বিভাগের। সড়কটি নিয়ে বর্তমানে একটি মামলা চলমান থাকায় কোন সিদ্ধান্ত দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তবে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলে জনস্বার্থে সড়কটি উন্নয়নের জন্য অবমুক্ত হতে পারে।

জিএম/জিএ

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
জিআই স্বীকৃতি পেল টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪ পণ্য 
টাঙ্গাইলে ব্যবসায়ীর ওপর হামলা-ছিনতাই, কিশোর গ্যাংকে ধরতে মরিয়া পুলিশ
পচা মাংস বিক্রি করায় ব্যবসায়ীকে জরিমানা
‘সংসদ সদস্য কোনো প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় যেতে পারবেন না’
X
Fresh