• ঢাকা বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
logo

বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পুরস্কার পেলেন তপু

সাজ্জাদ কাদির

  ০২ নভেম্বর ২০২০, ১৭:১৩
Tapu received the Bangabandhu National Youth Award
বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পুরস্কার নিচ্ছেন অমাস-এর নির্বাহী পরিচালক মো. ইকবাল হাসান তপু

গত ১ নভেম্বর যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় যুব দিবসে দেশের একজন শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে যুব সংগঠক কোটায় সারাদেশের মধ্য থেকে নেত্রকোণার অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থা (অমাস)-এর নির্বাহী পরিচালক মো. ইকবাল হাসান তপু বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পুরস্কারের দ্বিতীয় পুরস্কার লাভ করেন। ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল পুরস্কার হাতে তুলে দেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

মো. ইকবাল হাসান তপুর এ সাফল্য একদিনে বা হঠাৎ করে আসেনি। দীর্ঘ শ্রম ও মেধার ফসল এ পুরস্কার। ১৯৯৯ সালে তরুণ বয়সে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা অর্থনৈতিক ও মানবিক উন্নয়ন সংস্থা (অমাস) প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকে স্বপ্নের যাত্রা শুরু। বিগত বাইশ বছরে জাতিসংঘসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থার সাথে উন্নয়নের নানা ইস্যুতে কাজ করেছেন। অসংখ্য বেকার যুবক-যুবতীকে প্রশিক্ষণ ও ঋণ দিয়ে সফল আত্মকর্মী হিসেবে গড়ে তুলেছেন। যাদের মধ্যে আজকে অনেকে সাফল্যের শিখরে অবস্থান করছেন। একসময় খালি দুই হাত নিয়ে প্রশিক্ষণ নিতে আসা অনেকে এখন সফল শিল্প উদ্যোক্তার খাতায়ও নাম লিখিয়েছেন। তার নিকট প্রশিক্ষণ ও ঋণ নেওয়া কর্মীদের সাফল্যে তিনি অনেক বেশি গর্ব বোধ করেন। এই কাজগুলো করতে গিয়ে কখনও কখনও সমাজে নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন; তিরষ্কার জুটেছে কপালে। অনেকে হাসি ঠাট্টাও করেছে। কিন্তু তিনি ধৈর্য ধরে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে গেছেন। তাইতো আজকে তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ ও সফল যুব সংগঠক।

মো. ইকবাল হাসান তপু একটি জেলা শহরে বসবাস করেন। কিন্তু সেখানে বসেই তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাজের চিন্তা করেন। আর সেই লক্ষ্যেই ২০১৯ সালে নিজের কষ্টার্জিত জমিতে তার পিতার নামে ‘ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যে প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষা ও গবেষণার আলো ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। যেখানে আমাদের সমাজে তার মত যুব সংগঠকরা উৎপাদনমুখী লাভজনক (শিল্প প্রতিষ্ঠান, আধুনিক কৃষি খামার) প্রতিষ্ঠান গড়তে মরিয়া হয়ে ওঠেন সেখানে তিনি খানিকটা ব্যতিক্রমই বটে। অর্থ নয় বরং জ্ঞান, শিক্ষা ও গবেষণার আলো ছড়িয়ে দিতে চান তিনি। তার এ উদ্যোগটি প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তিনি যাতে সফলভাবে উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করতে পারেন সে লক্ষ্যে সরকার ও কল্যাণকামী বেসরকারি সংস্থাগুলোরও এগিয়ে আসা উচিত।

উন্নয়ন কর্মের পাশাপাশি লেখালেখি ও গবেষণা কর্মের সাথেও তিনি যুক্ত আছেন। তাঁর সম্পাদনায় এযাবৎ ৬টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে দুটি এবং ‘ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন কলেজ ও লোকসাহিত্য গবেষণা একাডেমি’র উদ্যোগে ৪টি। নিজ উদ্যোগে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- ‘ভাষা সংগ্রামে নেত্রকোণা’(২০০৮), ‘নেত্রকোণা: অতীত বর্তমান’(২০১৩)। একাডেমির উদ্যোগে প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’(২০২০), ‘বিচারপতি ওবায়দুল হাসান: ইতিহাসের পথ বেয়ে ঐতিহ্যময়’(২০২০), ‘মুহ. আবদুল হাননান খান: সময়ের সাহসী সন্তান’(২০২০), ‘উজ্জ্বল বিকাশ দত্ত: এক উজ্জ্বল আলোক শিখা’(২০২০)। কলকাতার অধ্যাপক মানিক সরকারের সাথে যৌথভাবে ২০১৯ সালে বেরিয়েছে কাব্যগ্রন্থ ‘হাসনাহেনা’। প্রকাশের অপেক্ষায় আছে- ‘ভাষা আন্দোলনে নেত্রকোণা: জাতীয় ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট’ ও ‘নেতাজীর ভিটে দর্শন’ শিরোনামে দুটি গ্রন্থ। এছাড়া একাডেমির পক্ষ থেকে দেশ বিদেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নিয়েও স্মারক গ্রন্থ প্রকাশের কাজ চলমান রয়েছে, যা পর্যায়ক্রমে প্রকাশিত হবে।

সম্প্রতি অর্জিত বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পুরস্কার ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তিনি তার কর্মের স্বীকৃতিও পেয়েছেন। ২০০১ সালে কমনওয়েলথ ইয়ুথ প্রোগ্রামে ভারতের চেন্নাইয়ে তিনি বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। ২০০৪ ও ২০২০ সালে তিনি নেত্রকোণা জেলার শ্রেষ্ঠ যুব সংগঠক হিসেবে জেলা প্রশাসন কর্তৃক সম্মাননা সনদ পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আরও অনেক স্বীকৃতি ও সম্মাননা পেয়েছেন।

মানব কল্যাণের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছেন একজন স্বপ্নবাজ যুব সংগঠক মো. ইকবাল হাসান তপু। তিনি স্বপ্ন দেখেন অন্ধকার দূর করে সমাজকে আলোর পথে নিয়ে যাওয়ার। তার সাথে কথা বলে জানা যায়, তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথ যে পুরোপুরি মসৃণ সেটি বলা যাবে না। কাজ করতে গিয়ে প্রতিনিয়ত হোঁচট খান আবার উঠেও দাঁড়ান। তিনি যাতে নির্বিঘ্ন আলো ছড়ানোর কাজগুলো করতে পারেন সে জন্য সমাজের সবাইকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। তাহলেই তিনি আরও সাফল্যের পথে এগিয়ে যাবেন এবং সমাজ আলোকিত হবে। কারণ একা একা কোন কাজই সফলভাবে এগিয়ে নেওয়া যায় না। এজন্যই প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মো. ইকবাল হাসান তপুর সামগ্রিক কর্ম বিশ্লেষণ করে আমার কাছে মনে হয়েছে দেশের প্রতিটি জেলায় এমন একজন করে যুব সংগঠকের প্রয়োজন। যিনি স্বপ্ন দেখতে জানেন এবং শত প্রতিকূলতা পেরিয়ে তা বাস্তবায়নও করতে জানেন। তাহলেই বাংলাদেশ পাল্টে যাবে।
পি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
মাঠে স্বামীকে খাবার দিতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাণ গেল স্ত্রীর
এক যুগ পর যেভাবে মাকে ফিরে পেলেন সন্তানেরা 
বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে রেড ক্রিসেন্টের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পর্ষদের শ্রদ্ধা
বঙ্গবন্ধু বৈষম্যের বিরুদ্ধে সর্বদা সোচ্চার ছিলেন: খাদ্যমন্ত্রী
X
Fresh