থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে বালক-বালিকার বিয়ে
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সালিশকারীদের সুপারিশে থানা থেকে ছাড়িয়ে এনে স্কুলছাত্র হৃদয় (১৮) ও এক কিশোরীকে বাল্য বিয়ে করানোর অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয় আবুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী হৃদয় খারুয়া ইউনিয়ন হালিউড়া গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে। নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় গতকাল রোববার রাত তিনটার দিকে বিয়ে পড়ান সালিশকারীরা।
স্থানীয়রা জানায়, গেলো বৃহস্পতিবার উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের লংগারপাড় বাজার এলাকা থেকে ৯ম শ্রেণিতে পড়ুযা এক ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভনে তুলে নিয়ে যায় হৃদয়। হৃদয় দুই দিন ওই স্কুল ছাত্রীকে নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে থাকার পর শনিবার বিকেলে ছাত্রীর বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায়। পরে স্কুলছাত্রী স্বজনদের কাছে ঘটনাটি খুলে বলার পর স্থানীয়রা কৌশলে হৃদয়কে লংগারপাড় বাজারে ডেকে আনে। এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেলে স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. জুলহাস মিয়া তাদের আটকে রেখে থানায় খবর দেয়। রাত ১১টার দিকে তাদের দুজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় নান্দাইল মডেল থানার পুলিশ।
এরপর স্থানীয় সালিশকারী রফিকুল ইসলাম রেনুসহ অন্যান্য সালিশকারীরা থানায় গিয়ে দুজনের বিয়ে দেয়ার শর্তে থানা থেকে ছাড়িয়ে আনে। থানা থেকে ছাড়িয়ে রাতেই নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় বিয়ে দেন সালিশকারীরা।
এ বিষয়ে স্কুল ছাত্রীর মামা আবদুল হাকিম জানান, মেয়েটি আমার বাড়িতে থেকে লেখাপড়া করে। বৃহস্পতিবার বিয়ের কথা বলে হৃদয় আমার ভাগ্নিকে তুলে নিয়ে যায়। পরে শনিবার বিকেলে আমার বাড়ির কাছে রেখে পালিয়ে যায় হৃদয়। ভাগ্নি আমাদের ঘটনাটি খুলে বললে ভাগ্নিকে দিয়ে কৌশলে হৃদয়কে লংগারপাড় বাজারে ডেকে আনা হয়। পরে বাজারের ব্যবসায়ী মো. জুলহাস মিয়া স্কুলছাত্রীর মুখ থেকে সবকিছু শোনার পরে হৃদয়কে তার ঘরে আটকে রেখে থানায় খবর দেন। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। থানা থেকে এনে রাতেই তিন লাখ টাকা কাবিন দিয়ে নান্দাইল পৌর বাজারের একটি সরকারি ভবনের নিচতলায় বিয়ে পড়ান সালিশকারীরা।
সালিশকারী রফিকুল ইসলাম জানান, দুই পরিবারের সম্মতিতে তাদের থানা থেকে ছাড়িয়ে আনা হয়েছে। তবে, তাদের বিয়ে হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
কিশোর-কিশোরীর বিয়ে হয়েছে স্বীকার করে আরেক সালিশকারী শেরপুর ইউনিয়নের নতুন চেয়ারম্যান মোজাম্মেল মিল্টন বলেন, লংগাড়পাড় বাজারে ওই ছেলেকে আটক করার খবর পেয়ে ইউনিয়ন পরিষদের দফাদার দিয়ে খোঁজ নিয়েছিলাম। তবে, আমি কাউকে থানা থেকে ছাড়ানোর জন্য বা বিয়ে পড়ানোর জন্য সুপারিশ করিনি।
নান্দাইল মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ বলেন, ওই দুইজনকে থানায় আনা হয়েছিল। পরে স্থানীয়দের সুপারিশে ছেড়ে দেই। তবে, তাদের বিয়ে হয়েছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
নান্দাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. এরশাদ উদ্দিন বলেন, থানা থেকে কাউকে ছাড়িয়ে নিয়ে বাল্য বিয়ে পড়ানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জেবি
মন্তব্য করুন