১৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে বাড়িতে তালা
নারায়ণগঞ্জে ১৩ ঘণ্টা পর জিম্মি দশা থেকে মুক্ত ১৭ পরিবার
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১৫ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে একটি বাড়ির ১৭ পরিবার ১৩ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে মুক্ত হয়েছে। জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাতে মিজমিজি মৌচাক হাজী বশির উদ্দিন মার্কেট এলাকায় জব্বার মিয়ার তিনতলা বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিনের সঙ্গে জমির সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ চলছে জব্বার মিয়ার। জব্বার মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তাটি সালাউদ্দিনের জায়গা বলে দাবি করছেন তারা। তাই এই রাস্তা ব্যবহার করতে হলে ১৫ লাখ টাকা দাবি করে সালাউদ্দিনের ছেলে সন্ত্রাসী মাসুম রানা। এ নিয়ে সামাজিকভাবে একাধিক সালিশ বৈঠক হয়েছে। সামাজিক সিদ্ধান্ত জব্বার মিয়া মানলেও সন্ত্রাসী মাসুম রানা মেনে নেয়নি। তাই সে কিছুদিন আগে জব্বার মিয়ার বাড়ির সামনের রাস্তায় কাঁটা তারের বেড়া দিয়ে পথ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি জানার পর স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা গিয়ে কাঁটা তারের বেড়া সরিয়ে দেয়।
জব্বার মিয়ার ছেলে রনি জানায়, এলাকার লোকজন কাঁটাতারের বেড়া খুলে দেয়ার পর মাসুম রানা ক্ষিপ্ত হয়ে গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বাড়ির দুই পাশে ইটের দেয়াল দিয়ে চলাচলের রাস্তা বন্ধ ও বাড়ির লোকজনকে ভিতরে রেখে প্রধান গেটে তালা লাগিয়ে দেয়। তাকে ১৫ লাখ টাকা না দিলে রাস্তা দিয়ে চলাচল বা ঘর থেকে বের হতে দিবে না বলে জানিয়ে দেয়। সারাদিন জিম্মি পরিবারগুলোকে কেউ খাবার পর্যন্ত দিতে পারেনি।
এ দিকে খবর পেয়ে রাত ৯টায় বিভিন্ন গণমাধ্যমকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাড়ির সকল সদস্যদের জিম্মি দশার বিষয়টি প্রথমে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি কামরুল ফারুককে জানালে তিনি পুলিশ পাঠাচ্ছেন বললেও দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত কোনো পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়নি। পরে জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করলে তিনি ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে গণমাধ্যমকর্মীদের আশ্বাস প্রদান করার আধাঘণ্টা পর সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) ইশতিয়াক আসফাক রাসেলের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে ১১টার দিকে প্রধান ফটকের তালা ভেঙ্গে ভাড়াটিয়াসহ ১৭টি পরিবারকে জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করেন। এ ঘটনায় সন্ত্রাসী মাসুম রানাকে প্রধান ও অজ্ঞাত ৬-৭ জনকে আসামি করে রাতেই থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন বাড়ির মালিক জব্বার মিয়ার মেয়ে বর্ণা আক্তার।
এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন ও তার ছেলে মাসুম রানার সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে নাম প্রকাশ না করে সালাউদ্দিন পরিবারের দুইজন মহিলা জানায়, জমির বিরোধ নিস্পত্তি করার জন্য ৭ দিনের সময় নিয়েও রফাদফা না করায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই ফরিদ উদ্দিনের নির্দেশে রাস্তায় দেয়াল করা হয়েছে। আর বাড়ির গেইটে তাদের পরিবারের কেউ তালা লাগায়নি।
তবে এসআই ফরিদ উদ্দিন বলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন প্রায় এক সপ্তাহ আগে ৯৯৯ নম্বরে খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে জব্বার মিয়ার বাড়ির দুইপাশের রাস্তায় ইটের দেয়াল দেখতে পাই। তখন আমি দেয়াল ভেঙে রাস্তা উন্মুক্ত করে দুইপক্ষকে পরামর্শ দেই সীমানা সংক্রান্ত বিরোধ স্থানীয়দের নিয়ে অথবা আদালতে গিয়ে সমাধান করতে। কেউ যেন কারো রাস্তা বন্ধ না করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক লোকজন জানায়, আওয়ামী লীগ নেতা সালাউদ্দিন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি এ কে এম শামীম ওসমানের মামাশ্বশুর শিল্পপতি মোঃ জালালউদ্দিনের খালাত ভাই। এমপি শামীম ওসমানের দূরসম্পর্কের আত্মীয় হওয়ায় তার ছেলেরা এলাকায় ত্রাসের রাজস্ব কায়েম করেছে। এর আগেও কয়েকটি বাড়িতে তালা লাগিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায় করেছে। তাদের ভয়ে একটি বাড়ির মালিক রাতের আঁধারে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গেছে। এর আগেও বহু বাড়ির রাস্তা বন্ধ করে চাঁদা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে মাসুম রানার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কামরুল ফারুক ও ওসি (তদন্ত) দুজনই জমি সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানালেও আর কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।
পি
মন্তব্য করুন