• ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
logo

সাভারে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী হত্যা: এখনো গ্রেপ্তার হয়নি কোনও আসামি

সাভার প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০, ২২:০৯
সাভারে ১০ম শ্রেণির ছাত্রী হত্যা: এখনো গ্রেপ্তার হয়নি কোনও আসামি  
আসামি মিজানুর রহমান চৌধুরী

সাভারে প্রেমের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ভাইয়ের কাছ থেকে বোনকে ছিনিয়ে নিয়ে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে নিহত ১০ শ্রেণির ছাত্রী নিলা রায়ের (১৪) অভিযুক্ত হত্যাকারী কিশোর গ্যাং এর সদস্য বখাটে মিজানুর রহমান চৌধুরীকে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি সাভার মডেল থানা পুলিশ।

আজ মঙ্গলবার (২২ সেপ্টেম্বর ) সকাল থেকেই সিআইডি পুলিশ ওই এলাকায় অবস্থান নিয়ে হত্যার স্থান ও এর পাশ থেকে বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছেন। বিষয়টিকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে পুলিশের পাশাপাশি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ছায়া তদন্তে নেমেছে সিআইডি।

এদিকে এ ঘটনার পর নিহত স্কুলছাত্রীর বাবা নারায়ন রায় বাদী হয়ে সাভার মডেল থানায় একটি মামলা (নং-৩৮) দায়ের করার পরও পুলিশ অভিযুক্ত কিশোর গ্যাং সদস্য মিজানুরসহ মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দসহ স্থানীয়রা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলে উৎসুক সাধারণ জনগণ ভিড় করায় আলামত নষ্টেরও আশঙ্কা করছেন তারা।

সরেজমিনে হত্যার ঘটনাস্থল ও আশপাশের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভার পৌর এলাকার কাজী মোকমাপাড়া এলাকাটিতে মাদকের জমজমাট বেচাকেনার পাশাপাশি বিভিন্ন খালি বাউন্ডারিতে নিয়মিত মাদক সেবন করে থাকে এলাকার উঠতি বয়সী কিশোর, যুবকসহ অনেকেই। আর এসব মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং সদস্যদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে ওই এলাকার কথিত আওয়ামী লীগ নেতা শিরুর ছেলে শাকিল ও সাকিব। শুধু তাই নয়, কথিত ওই আওয়ামী লীগ নেতা শিরু ও তার ছোট ভাই ৪ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সহিদুল ইসলামেরও রয়েছে মাদক সিন্ডিকেট। রাজনৈতিক ছত্রছায়ার অন্তরালে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে উঠতি বয়সী যুব ও কিশোরদের ব্যবহার করে তিনিও সাভার পৌর-এলাকার দক্ষিণ-পাড়া, মধ্যপাড়া ও সাভার মডেল থানার পার্শ্ববর্তী সাভার নামা বাজার এলাকায় কিশোর গ্যাং ও যুবদের ব্যবহার গড়েছেন মাদক সিন্ডিকেট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়া কথিত নেতা শিরুর ছেলে সাকিব এই এলাকার কিশোর গ্যাং সদস্যদের নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। তার সাথেই হত্যাকারী মিজানুরের সখ্যতা রয়েছে এবং তারা উভয়ে মিলে ওই এলাকার কিশোর গ্যাং এবং বিভিন্ন মাদক স্পট পরিচালনা করে থাকে। এখানে প্রতিদিনই জমজমাট মাদকের আসর বসে। পরিত্যক্ত বাউন্ডারি ও খোলা মাঠগুলো সন্ধ্যার পরই কিশোর গ্যাং সদস্যদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠে।

ঘটনাস্থলের পাশের বাড়ির অপর বাসিন্দা বলেন, গত তিন দিন আগেও কতগুলো ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে একই গলিতে গালিগালাজ করতে করতে দৌড়চ্ছিলও। এরপর গত শনিবার দিনের বেলায় কিশোর গ্যাং লিডার সাকিব একটি মেয়েকে রিকশা থেকে নামিয়ে ইচ্ছামতো গালিগালাজ ও মারধর করে। এসব বিষয়ে কেউ ওদের বাসায় বিচার দিতে গেলে উল্টো তাদেরকে মারধর করে তারিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া ওই গলিতে কেউ ঢুকলে তাদেরকে বকাঝকা করে তারিয়ে দেয়া হয়। ওদের যে বকা এবং কথা বলার ধরন তাদের উৎপাতে এলাকার মা-বোন কিংবা বয়স্ক কেউই রাস্তা দিয়ে হাটতে পারে না। এলাকায় কোন ঝালমুড়ি ওয়ালা, মাছ ওয়ালা ও সবজি ওয়ালা আসলে তাদেরকে মারধর করে চাঁদা আদায় করে কিশোর গ্যাং সদস্যরা। সাইফুল নামে একজন দোকানদার সাকিব ও মিজানুরের অত্যাচারে ব্যবসা ছেড়ে এলাকা থেকে চলে গেছে। প্রতিদিনই তার কাছ থেকে চাঁদা নিতো এবং টাকা না দিলেই মারধর করতো। সাকিবের ভাই শাকিলও গত তিন বছর আগে একটি হত্যার ঘটনা ঘটায় একই গলিতে।

নিহতের স্বজনদের দাবি বখাটে মিজানুর রহমান দীর্ঘদিন ধরে নিলাকে রাস্তাঘাটে বিরক্ত করাসহ প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। কিশোরী নীলা তার ভাই অলকের সঙ্গে রিকশায় করে হাসপাতাল থেকে ফিরছিলেন। পথে মিজান রিকশার গতিরোধ করেন। পরে নীলাকে টেনে হিঁচড়ে রিকশা থেকে নামিয়ে একটি টিনসেট ঘরের ভেতরে নিয়ে তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে হত্যার করে।

নীলার মা মুক্তি রায় বলেন, আমার মেয়ে বড় হয়ে ডাক্তার হতে চেয়েছেন সেই স্বপ্ন আর হতে দিলেন না মিজান। মিজানের মা-বাবাকে বারবার বলার পরও তারা কোনও ব্যবস্থা নেননি। উল্টো মিজানের মা তার মেয়েকে মিজানের সঙ্গে কথা বলতে ও ফেসবুকে চ্যাট করার পরামর্শ দিতেন। এ অবস্থায় মিজানের অত্যাচারে বছর-খানেক আগে তারা সাভারের বাসা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জের বালিরটেকে চলে গিয়েছিলেন। ছেলে ও মেয়ের পড়ালেখার জন্য কয়েক মাস পরে আবার তারা সাভার চলে আসেন। এর কিছুদিন পর থেকে মিজান আবার তার মেয়ের পিছু নেন। এরপরও ভয়ে তারা বিষয়টি পুলিশকে জানানো থেকে বিরত থাকেন।

মাদকের এসব স্পট নিয়ন্ত্রণ করছে সাগর, সুজব, পারভেজ, হানিফ, জয়, রাব্বি, সাকিব, শাকিল, যাবেরসহ আরও অনেকে। এসব স্পটে পাইকারি ও খুচরা মূল্যে মাদকদ্রব্য বিক্রি হয়। এমনকি ইয়াবা ট্যাবলেটও পাইকারি বিক্রি হচ্ছে।

জাগ্রত বিবেক ফাউন্ডেশন (জাবিফ) সভাপতি মনি মক্তা ইসলাম বলেন এখানে আগে একটি খুন হয়েছে, শুধু মাদকেই শেষ নয়, এখন মাদকের ছত্রছায়ায় সাভার হয়ে উঠেছে অপরাধীদের অভয়ারণ্য।

এদিকে সাভার উপজেলা বাক্ষণ সম্প্রদায়ের সাধারণ সম্পাদক মহাদেব চক্রবর্তী নিলা হত্যাকাণ্ডের ৪৮ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও কোন আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ সময় তিনি প্রশাসনকে দ্রুততম সময়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার এর দাবী জানান। অন্যথায় আন্দোলনে নামা হবে বলে তিনি জানান।

সাভার মডেল থানার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্টেলিজেন্স) নির্মল কুমার দাস বলেন, নিহতের মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনাস্থলের বিভিন্ন আলামত দেখে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হতে পারে মনে হওয়ায় ডিএনএ টেস্ট করতে বলা হয়েছে। ডিএনএ রিপোর্ট হাতে পেলেই জানা যাবে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল কিনা। এছাড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এনএম/এসএস

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টেকনাফে ১০ কৃষক অপহরণ মামলার আসামি গ্রেপ্তার
শাহজাদপুরে এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যা : প্রধান আসামি গ্রেপ্তার
সেনবাগে কলেজছাত্র শাওন হত্যা মামলার ৩ আসামি গ্রেপ্তার
১৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি ২২ বছর পর গ্রেপ্তার
X
Fresh