• ঢাকা শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

হাইল হাওরের অধিকাংশ সরকারি বিলই এখন ব্যক্তিগত মৎস্য খামার

চৌধুরী ভাস্কর হোম, মৌলভীবাজার, আরটিভি নিউজ

  ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২০, ১১:৩৬
In this way, fish farms have been created by occupying one bill after another of Hail Haor
এভাবেই হাইল হাওরের একের পর এক বিল দখল করে তৈরি করা হয়েছে মৎস্য খামার

ছোট-বড় ১৪৪টি বিলের সমন্বয়ে জীব-বৈচিত্রে ভরপুর দেশীয় মাছের অভয়াশ্রম হাইল হাওর। কালের পরিক্রমায় সেই বিলগুলো অনেকটা কমে গেছে। দেশের পূর্বাঞ্চল মৌলভীবাজার ও শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত দেশের সবচেয়ে বড় হাইল হাওর আজ বিপন্ন।

সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাব ও অতিলোভী কিছু মানুষের জন্য বিলগুলো ঘিরে গড়ে উঠেছে মৎস্য খামার। ফলে চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যাচ্ছে একের পর এক বিল ও দেশীয় প্রজাতির মাছ। শহরের ময়লা ও আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে জলের পরিবেশ। তাই হাজারও সমস্যায় জর্জরিত হাইল হাওরের অস্তিত্ব অদূর ভবিষ্যতে থাকবে কিনা তা নিয়ে উদ্বিগ্ন পরিবেশবিদরা। উৎকণ্ঠায় আছেন এই হাওরের ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীরা।
হাইল হাওরের চইড়া বিল দখল করে মৎস্য খামার করেছেন অনেকেই।

সরজমিনে গিয়ে কথা হয় হাওর পাড়ের বাসিন্দা পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার রুকাম মিয়া, জুয়েল মিয়া, আকাশ মিয়াসহ বেশ কয়েকজন জেলের সঙ্গে। তাদের কাছে চইড়া বিলের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, চইড়া বিল এখন আর নেই। সেখানে ফিসারি (হাইব্রিড মাছের খামার) হয়ে গেছে।

পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার বাসিন্দা তিন নম্বর শ্রীমঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আনার মিয়া আরটিভি নিউজকে জানান, লাভের আশায় সরকারকে রাজস্ব দিয়ে সমিতির নামে চইড়া বিল লিজ নিয়েছিলেন দুই বছর আগে। প্রথম দিকে বিলে আসতে পারেননি। কিছুদিন পর বিলে এসে তার চক্ষু চড়কগাছ হয়ে গেছে। চইড়া বিলের ৯০ ভাগ জমির ওপর বিশাল ফিসারি। তিনি বলেন, প্রতিবাদ করতে গেলে তার ওপর আসে হুমকি।
চইড়া বিলের মৎস্য খামারের পাড়ে বেশ বড় বড় গাছের চারা। বেশ কয়েকটি টং ঘর। এসেছে বিদ্যুৎও। নিমিষেই পরিবর্তন হয়ে গেছে চইড়া বিলের দৃশ্যপট। দুই বছর আগেও বর্ষায় এই চইড়া বিলের ভাসান পানিতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহন করতেন অসংখ্য জেলে।

এ সময় পশ্চিম ভাড়াউড়া এলাকার সুন্নত মিয়া নামে অপর এক মৎস্যজীবী আরটিভি নিউজকে জানান, অন্যায়ভাবে সরকারি জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ফিসারি করার কারণে হাওর সংকুচিত হয়েছে। এর ফলে এই বিলে থাকা দেশীয় মাছের বংশ শেষ হওয়ার পথে। এছাড়া বিলে পাওয়া যেত বিভিন্ন প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ। যা এখানকার কৃষককার গবাদি পশুর খাবার হিসেবে সংগ্রহ করতেন।

তিনি আরও জানান, শুধু চইড়া বিল নয় হাওরের অধিকাংশ বিলেই এখন মৎস্য খামার। এই খাস জমির কিছু অংশ সরকার ভূমিহীনদের দিয়েছেন। কিন্তু ভূমিহীন মানুষ সেখানে যেতে পারেনা। সুবিধাবাদীর দল ভূমিহীনদের কাগজ কৌশলে সংগ্রহ করে তাদের কাছ থেকে জমিগুলো নিয়ে নেয়। এর সঙ্গে খাস জমিগুলো তাদের দখলে নিয়ে মৎস্য খামার করে।

এ ব্যাপারে কথা হয় শ্রীমঙ্গল উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সহিদুর রহমান সিদ্দিকির সঙ্গে। তিনি আরটিভি নিউজকে জানান, হাইল হাওরের আয়তন ১৪ হাজার হেক্টর। এর মধ্যে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় পড়েছে ১০ হাজার হেক্টর। এর ভেতরে বিল রয়েছে ৫৯টি যার মধ্যে ২০ একরের নিচে ৩৯টি এবং ২০টি ২০ একরের ওপরে। যা থেকে উপজেলার মাছের চাহিদা পূরণ হয়ে থাকে।

তিনি আরও জানান, এই বিলগুলো হাওরের চারদিকে ছড়িয়ে রয়েছে। অনেকের ব্যক্তিগত জমির সঙ্গে খাস জমিও পড়েছে। ভূমি দখলদারদের জন্য এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিল সম্পূর্ণভাবে বিলীন হয়ে গেছে।
সহিদুর রহমান সিদ্দিকি জানান, এই হাওরের বিলে প্রায় শত প্রজাতির দেশীয় মাছ পাওয়া যেত। বর্তামানে প্রায় ৩০ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এই হাওরে এসে মিশেছে অর্ধশত ছড়া যা গোফলা নদীতে পড়েছে। অনেকে সেই ছড়াগুলোও দখল করে নিচ্ছে। এতে পানিপ্রবাহ পরিবর্তন হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছেন হাওরের বুরো চাষিরাও।

এ ব্যপারে মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ আরটিভি নিউজকে জানান, হাইল হাওরের মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় পড়েছে চার হাজার হেক্টর জলাভূমি। যার মধ্যে বিল রয়েছে ৫৫টি। এরই মধ্যে ১০ থেকে ১২ টির কোনও অস্তিত্ব নেই।

এ ব্যাপারে পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংগঠন বালিশিরা পাহাড় রক্ষা সোসাইটির চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন আহমদ আরটিভি নিউজকে জানান, ‘দেশীয় মাছ রক্ষা করি সমৃদ্ধ দেশ গড়ি’ প্রধানমন্ত্রীর এই স্লোগানকে বাস্তবায়ন করতে হলে আমাদের হাওর ও উন্মুক্ত জলাশয়কে রক্ষা করতে হবে। জলাভূমি দখল করে ফিসারি তৈরি করা প্রভাবশালীদের কঠোভাবে দমন করতে হবে।
একইসঙ্গে হাইল হাওরে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা শতভাগ বন্ধ করতে হবে। তা না হলে সামনে বড় রকমের বিপর্যয় ঘটবে।।

পরিবেশবিদ সিতেশ রঞ্জন দেব আরটিভি নিউজকে জানান, পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পেতে এখনই হাইল হাওরের বিলগুলো খনন করা প্রয়োজন। প্রত্যেকটি পাহাড়ি ছড়ার নিচের অংশ খনন করে গোফলা পর্যন্ত পানি চলাচলের পথ পরিষ্কার করতে হবে।

এ ব্যপারে হাইল হাওরে নিয়ে কাজ করা সিএনআর এস এর সাইট অফিসার মনিরুজ্জামান আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা হাইল হাওরে অনুসন্ধান করে ১৩১টি বিলের খোঁজ পেয়েছি। এর মধ্যে ১০১টি বিল ইজারার রেকর্ড রয়েছে। ৩০টি বিলের কোনও হদিস নেই। যেগুলো আছে সেগুলোরও অধিকাংশ দখলে। তিনি আরও জানান, বর্তামে হাইল হাওরের এমন অবস্থা গরু চড়ানোর জন্য একটু খালি জমি নেই।

তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম আরটিভি নিউজকে জানান, দখলদারদের উচ্ছেদ করে তা আবার বিলে রূপান্তরিত করা হবে। যারা সরকারি জমি দখল করবেন তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান আরটিভি নিউজকে জানান, তিনি এ জেলায় নতুন এসেছেন। তবে ইতোমধ্যেই তিনি অবগত হয়েছেন এটি একটি বৈচিত্রময় জেলা। যেখানে রয়েছে হাওর, পাহাড়, সমতল ভূমি, নদী ও প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। এ জেলার বৈশিষ্ট্যই হলো এর প্রাকৃতিক জীববৈচিত্র। আর এটি যদি নষ্ট হয়ে যায় তবে এ জেলা তার ঐতিহ্য হারাবে। তাই হাইল হাওরের ভরাট হওয়া বিলগুলো খননের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট বিভাগের নজরে আনবেন।

জেবি

মন্তব্য করুন

daraz
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে: সাইফুল আলম দীপু
ভোট জালিয়াতি, দুই হাতে টাকার বান্ডেলসহ ইউপি চেয়ারম্যান আটক
প্রথম ধাপে উপজেলায় ভোট পড়েছে ৩৬.১ শতাংশ
ঝিনাইদহ সদরে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন তৃতীয় লিঙ্গের বর্ষা 
X
Fresh