বেইলি রোডের ভবনটি নিয়ে দায়সারা রাজউক
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) একদিন পর অনেকটা দায়সারা বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। তারা বলছেন, রাজধানীর বেইলি রোডে যে ভবনে আগুন লেগেছিল সে ভবনে রেস্তোরাঁ করার অনুমোদন ছিল না।
শুক্রবার (১ মার্চ) ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে র্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
রাজউক যদি অনুমোদন না দিয়ে থাকে তাহলে তারা কেন এতদিন অভিযান চালায়নি। বন্ধ করে দেয়নি কেন ভবনটি। এমন প্রশ্ন ওঠে আসছে বিভিন্ন মহল থেকে।
র্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ভবনটিতে আটটি রেস্তোরাঁ, একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। ছিল মুঠোফোন ও ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম এবং পোশাক বিক্রির দোকানও।
রেস্তোরাঁ, শোরুম (বিক্রয়কেন্দ্র) বা অন্য কিছু করার জন্য রাজউকের অনুমোদন নেয়া হয়নি জানিয়ে সংস্থাটির নগর পরিকল্পনাবিদ ও বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) প্রকল্পের পরিচালক আশরাফুল ইসলাম বলেন, ভবনটির এক থেকে সাততলা পর্যন্ত বাণিজ্যিক অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। তবে তা শুধু অফিসকক্ষ হিসেবে ব্যবহারের জন্য।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনের নিচতলায় ‘স্যামসাং’ ও ‘গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার’ নামের দুটি ইলেকট্রনিকস সরঞ্জাম বিক্রির দোকান, ‘শেখলিক’ নামের একটি জুস বার (ফলের রস বিক্রির দোকান) ও ‘চুমুক’ নামের একটি চা-কফি বিক্রির দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ নামের একটি রেস্তোরাঁ, তৃতীয় তলায় ‘ইলিয়ন’ নামের একটি পোশাকের দোকান, চতুর্থ তলায় ‘খানাস’ ও ‘ফুকো’ নামের দুটি রেস্তোরাঁ, পঞ্চম তলায় ‘পিৎজা ইন’ নামের একটি রেস্তোরাঁ, ষষ্ঠ তলায় ‘জেসটি’ ও ‘স্ট্রিট ওভেন’ নামের দুটি রেস্তোরাঁ এবং ছাদের একাংশে ‘অ্যামব্রোসিয়া’ নামের একটি রেস্তোরাঁ ছিল।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বেইলি রোডে গিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ভবনটিতে কোনো অগ্নিনিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে ভবন কর্তৃপক্ষকে তিনবার চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে ভবনটির দ্বিতীয় তলায় আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। ভয়াবহ এই আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন অন্তত ২২ জন।
নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ৪০ জনের মরদেহ তাদের পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এর বাইরে তিনজনের পরিচয় শনাক্ত হতে ডিএনএ টেস্ট করা হচ্ছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) বিকেল ৫টায় এসব তথ্য জানান ঢাকা জেলা প্রশাসনের পিআইও আরিফুর রহমান।
তিনি বলেন, বেইলি রোডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ৬ জনের মরদেহ রয়েছে। তাদের মধ্যে ৩ জনের পরিচয় শনাক্ত হতে ডিএনএ টেস্টের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ ছাড়া বাকি ৩ জনের মরদেহ দাবি করা স্বজনরা ঢাকায় আসছেন। তাদের যাচাই-বাছাই করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ডে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি দুজনকে দেখতে গেছেন দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান।
তিনি বলেন, ঘটনার শুরু থেকেই দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এবং ঢাকা জেলা প্রশাসন সার্বিক কার্যক্রমে সহায়তা করছে। আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যত ধরনের চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন সবকিছু নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে আগুন লাগা ভবনটির কর্তৃপক্ষকে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন।
দুপুরে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ওই ভবনে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। মানুষের আসা-যাওয়ার জন্য কেবল একটি ছোট সিঁড়ি ছিল। ভবন কর্তৃপক্ষকে অগ্নিনিরাপত্তা সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
মন্তব্য করুন