পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পেলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস
পাঁচ হাজার টাকা মুচলেকায় জামিন পেয়েছেন গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের চেয়ারম্যান নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শ্রম আইনের ১০ নিয়ম লঙ্ঘন করা মামলায় আদালত তাকে এই জামিন দেন।
আজ রোববার ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতের বিচারক রহিবুল ইসলামের আদালত জামিন আবেদন করেন তিনি।
এর আগে ১৩ জানুয়ারি ড. ইউনূসসহ তার প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ কমিউনিকেশনস আরও তিনজনকে আদালতে হাজির হওয়ার জন্য এ সমন জারি করেন আদালত।
গত ৫ জানুয়ারি শ্রম আইনের ১০টি নিয়ম লঙ্ঘন করায় ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের শ্রম পরিদর্শক (সাধারণ) তরিকুল ইসলাম।
মামলার বিবাদীরা হলেন গ্রামীণ কমিউনিকেশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজনীন সুলতানা, পরিচালক আ. হাই খান ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (জিএম) গৌরি শংকর।
এমকে
মন্তব্য করুন
বর্ষবরণে শ্লীলতাহানি : ৯ বছরেও শেষ হয়নি বিচার
২০১৫ সালে বর্ষবরণ উৎসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় বেশ কয়েকজন নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আট লাঞ্ছনাকারীকে শনাক্ত করা হয়। তাদের ধরিয়ে দিতে এক লাখ টাকা করে পুরস্কার দেওয়ার কথা ঘোষণা করে পুলিশ।
এ ঘটনায় করা মামলায় সাত আসামিকে খুঁজে না পেয়ে পরের বছর কামাল নামে এক ব্যবসায়ীকে আসামি করে চার্জশিট দাখিল করে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। পরের বছরের জুন মাসে আসামি কামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন নির্ধারণ করেন আদালত। কিন্তু অভিযোগ গঠনের প্রায় ছয় বছর পরও ৩৪ জন সাক্ষীর মধ্যে ৯ জন আদালতে সাক্ষ্য দেন। সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও তারা সাক্ষ্য দিতে আদালতে আসছেন না। সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় আলোচিত মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম ঝুলে রয়েছে।
জানা গেছে, ঘটনার প্রায় দুই বছর পর কামাল নামে একজনকে আসামি করে চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেয় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। মামলাটিতে ৯ জনের সাক্ষী নেওয়ার পর সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত ঘোষণা করে রাষ্ট্রপক্ষ। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের যুক্তি উপস্থাপন শেষে মামলার রায় ঘোষণার জন্য ৩১ জানুয়ারি দিন ধার্য করেন আদালত। এ দিন রায় প্রস্তুত না হওয়ায় আদালত ১৩ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিন আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মামলাটি রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণ নেওয়ার জন্য আবেদন করেন। আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন মঞ্জুর করে আগামী ১৫ এপ্রিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণে নতুন দিন ধার্য করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আগামী পহেলা বৈশাখের আগে মামলাটি নিষ্পত্তি করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৯ ডিসেম্বর এ মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক দীপক কুমার দাস। প্রতিবেদনে আসামি খুঁজে না পাওয়ার কথা বলা হয়। তবে ওই প্রতিবেদন গ্রহণ না করে মামলাটি পুনরায় তদন্তের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার। ২০১৬ সালের ১৫ ডিসেম্বর পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক আব্দুর রাজ্জাক ব্যবসায়ী কামালকে একমাত্র আসামি করে চার্জশিট দাখিল করেন। ২০১৭ সালের ১৯ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, তদন্তে আট লাঞ্ছনাকারীর মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। অন্য সাতজনকে খুঁজে না পাওয়ায় তাদের চার্জশিটে নাম অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তাদের খুঁজে পাওয়া গেলে সম্পূরক চার্জশিট দেওয়া হবে। এ মামলায় ৩৪ জনকে সাক্ষী করা হয়।
বর্তমানে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এ মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম চলছে। এ মামলার একমাত্র আসামি কামাল জামিনে রয়েছেন।
এ বিষয়ে ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮ এর রাষ্ট্রপক্ষের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাংলা নববর্ষের উৎসবে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনায় করা মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণ সমাপ্ত করে রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করেছিলেন আদালত। তবে মামলাটির কিছু গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী বাদ পড়ায় আমরা রায় ঘোষণা থেকে উত্তোলন করে আবার সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আবেদন করি। আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটির পুনরায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ঠিক করেন।
তিনি আরও বলেন, মামলাটিতে কিছু পুলিশ সাক্ষী সাক্ষ্য দিতে আসেননি। তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারি করা হবে। তারা সাক্ষ্য দিলে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে। আশা করছি, দ্রুতসময়ের মধ্যে মামলাটির বিচারিক কার্যক্রম শেষ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল টিএসসিতে নারীদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটে। এসময় সেই নারীদের বাঁচাতে গেলে নিপীড়কদের আঘাতে হাত ভাঙে তৎকালীন ঢাবি ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি লিটন নন্দী। আহত হন ছাত্র ইউনিয়নের আরও দুই নেতা। পরে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা বারবার অভিযোগ করলেও পুলিশ প্রথমে স্বীকার করেনি। পরে ফুটেজ দেখে ঘটনার সত্যতা পায় পুলিশ।
বড় মেয়েকে নিয়ে গোপনে বাংলাদেশ ছাড়লেন সেই জাপানি মা
কাউকে কিছু না বলে গোপনে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছাড়লেন সেই জাপানি মা নাকানো এরিকো। গত ৯ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৩টায় তিনি বাংলাদেশ ছেড়ে জাপানে চলে যান। এমনটিই অভিযোগ জাপানি শিশুদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের।
দেশের একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বক্তব্যে শরীফ বলেন, আদালতের স্থিতাবস্থা থাকার পরও নাকানো এরিকো আদেশ অমান্য করেছেন। বড় মেয়ে জেসমিন মালিকাকে নিয়ে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে গেছেন।
জানা যায়, হাইকোর্ট গত ১৩ ফেব্রুয়ারি জাপানি শিশু জেসমিন মালিকা (বড়) ও তার ছোট বোন সোনিয়া তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকবে, এ মর্মে রায় দেন। একই সাথে বলেন, মেজ মেয়ে লাইলা লিনা তাদের বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফের কাছে থাকবে। তবে এই রায়ের ওপর আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত ৯ এপ্রিল স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন ১৫ এপ্রিল। কিন্তু তার আগেই ৯ এপ্রিল বিকেলে নাকানো এরিকো বড় মেয়েকে নিয়ে চুপিসারে চলে যান জাপানে।
‘আদেশ অমান্য করার’ এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার আবেদন করেছেন শিশুদের বাবা ইমরান শরীফ। তার সেই আবেদনের ওপর সোমবার (১৫ এপ্রিল) চেম্বার আদালতে শুনানি হয়। আদালত আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ২১ এপ্রিল দিন ধার্য করেছেন।
এ ব্যাপারে শিশুদের বাবা ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা স্বত্বেও বড় সন্তানকে নিয়ে নাকানো এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আমরা আদালত অবমাননার আবেদন করেছি।
এনটিআরসিএ / গণবিজ্ঞপ্তিতে ৩৫ ঊর্ধ্বদের আবেদনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ
সদ্য প্রকাশিত বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা-২০২০ এ ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে উত্তীর্ণ প্রার্থীদেরকে আবেদনের সুযোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আইনজীবী শাহীনুজ্জামান শাহীন আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আদালত একই সঙ্গে ২০২২ সালে জারিকৃত জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী বয়সসীমা আবেদনকারীদের অনুকূলে নির্ধারণ কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন।
এদিন সিনিয়র আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন।
প্রসঙ্গত, ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা-২০২০ উত্তীর্ণ বয়স ৩৫ বছরের ঊর্ধ্বে প্রার্থীদেরকে আবেদনের সুযোগ দিতে ২০০ জন প্রার্থী হাইকোর্টে রিট করেন।
‘নাসিরকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন পরীমণি’
ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে হত্যা করতে গ্লাস ছুড়ে মেরেছিলেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। এমনটাই জানিয়েছেন বোটক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন মাহমুদের আইনজীবী।
বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ বিষয়ে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এই কথা জানান তিনি।
আইনজীবী বলেন, ঘটনার দিন রাতে পরীমণি মদ্যপ ছিলেন। ফ্রিতে মদ না পেয়ে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে মারধর করেন নায়িকা পরীমণি। নাসিরকে মেরে ফেলতে ভাঙা গ্লাস ছুড়ে মেরেছিলেন পরীমণি।
এ বিষয়ে নাসির উদ্দিন বলেন, ধর্ষণচেষ্টার মামলা দিয়ে আমাকে বলির পাঠা বানানো হয়েছিল। মানুষ এখন জানবে আমি নিরপরাধ ছিলাম। হত্যাচেষ্টার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ভালো লাগত।
এদিন পরীমণির বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেছেন বাদীপক্ষ। আদালত প্রতিবেদন গ্রহণ করে এ বিষয়ে আদেশ পরে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
গত ১৮ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ঢাকা জেলার পিবিআই পরিদর্শক মো. মনির হোসেন অভিযোগের সত্যতা পেয়ে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে পরীমণিসহ জুনায়েদ বোগদাদী জিমিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে ফাতেমা তুজ জান্নাত বনির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ মেলেনি। বুধবার ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে তদন্ত প্রতিবেদনে পিবিআই বলছে, ২০২১ সালের ৮ জুন রাতে আসামি পরীমণি অসৎ উদ্দেশে বাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদকে ফাঁদে ফেলে সুসম্পর্ক সৃষ্টি করে ঢাকা বোট ক্লাবের নিয়ম উপেক্ষা করে ফ্রিতে তিন লিটারের ব্লু লেবেল মদ পার্সেল নিতে না পেরে বাদীর প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে হুমকি প্রদান করেন।
পরীমণি ইচ্ছাপূর্বকভাবে বাদীর দিকে এসট্রে ছুড়ে মেরে তার ডান কানের ওপরে মাথায় আঘাত করে জখম করেন। এ ছাড়া আসামিদের ছোড়া ভাঙা গ্লাসের টুকরায় বাদীর বুকে লাল চিহ্নিত স্ক্র্যাচ মার্কযুক্ত জখম করে ও ক্লাবের বারের ভেতরে যত্রতত্র গ্লাস, কাচের বোতল এসট্রে ইত্যাদি ছুড়ে ফেলে তাণ্ডব করে। যার ফলে আসামি পরীমণির বিরুদ্ধে বাদীর আনা ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধ করেছে মর্মে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বারের ভেতরে তাণ্ডব করতে থাকলে সাক্ষী তুহিন সিদ্দিকীকে বাদী নাসির আসামিদের নিয়ে বার থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তখন আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমি তেড়ে এসে বাদী নাসির মাহমুদকে গালমন্দ করতে করতে এবং হুমকি প্রদর্শনপূর্বক ২/৩টা কিল-ঘুষি মারেন। এতে আসামি জুনায়েদ বোগদাদী জিমির বিরুদ্ধে বাদীর আনা অভিযোগ মতে ৩২৩/৫০৬ ধারার অপরাধের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
আসামি ফাতেমা তুজ জান্নাত বনি ঘটনার সময়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকলেও তার বিরুদ্ধে বাদীর আনা কোনো অভিযোগের সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
এর আগে, ২০২২ সালের ৬ জুলাই আদালতে মামলাটি করেন ঢাকার সাভারের বোট ক্লাবের পরিচালক নাসির উদ্দিন মাহমুদ। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে একই বছরের ১৮ জুলাই এ মামলাটি গ্রহণ করে আদালত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা অ্যালকোহলসেবী। সুযোগ বুঝে তারা বিভিন্ন দামি ক্লাবে ঢুকে অ্যালকোহল পান করেন এবং পার্সেল নিয়ে মূল্য পরিশোধ করেন না। পরীমণি তার পরিচিত পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে মিথ্যা মামলা করে হয়রানির ভয় দেখান।
২০২১ সালের ৯ জুন রাত ১২টার পর আসামিরা সাভারের বোট ক্লাবে ঢুকে দ্বিতীয়তলার ওয়াশরুম ব্যবহার করেন। পরে তারা ক্লাবের ভেতরে বসে অ্যালকোহল পান করেন। বাদী ও তার সহযোগী শাহ শহিদুল আলম রাত সোয়া ১টার দিকে যখন ক্লাব ত্যাগ করছিলেন, তখন পরীমণি উদ্দেশ্যমূলকভাবে বাদী নাসির উদ্দিনকে ডাক দেন এবং তাদের সঙ্গে কিছু সময় বসার অনুরোধ করেন।
একপর্যায়ে একটি ব্লু লেবেল অ্যালকোহলের বোতল বিনামূল্যে পার্সেল দেওয়ার জন্য বাদীকে চাপ দেন। বাদী এতে রাজি না হওয়ায় পরীমণি তাকে গালমন্দ করেন। বাদানুবাদের একপর্যায়ে পরীমণি বাদীর দিকে একটি সারভিং গ্লাস ছুড়ে মারেন এবং হাতে থাকা মোবাইল ফোনটিও ছুড়ে মারেন।
এতে নাসির উদ্দিন মাথায় এবং বুকে আঘাতপ্রাপ্ত হন। মামলায় আরও বলা হয়, পরীমণি ও তার সহযোগীরা নাসির উদ্দিনকে মারধর ও হত্যার হুমকি দিয়েছেন ও ভাঙচুর করেছেন। এই ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য পরীমণি সাভার থানায় বাদীসহ দুজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা করেন।
মেয়েকে নিয়ে দেশত্যাগ, জাপানি মায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার শুনানি আজ
আদালতের আদেশ অমান্য করে বড় মেয়ে জেসমিন মালিকা শরীফকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেছেন জাপানি মা ডা. এরিকো নাকানো। এ নিয়ে এরিকোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশি বাবা ইমরান শরীফ। ওই আবেদনের ওপর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে আজ।
রোববার (২১ এপ্রিল) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে এ বিষয়ে শুনানি হবে।
এর আগে ইমরান শরীফের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৫ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ ও নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ২১ এপ্রিল দিন ধার্য করেন।
প্রসঙ্গত, ২০০৮ সালের ১১ জুলাই জাপানি আইনানুসারে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন জাপানি নাগরিক ডা. এরিকো নাকানো ও বাংলাদেশি আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান। বিয়ের পর টোকিওতে বসবাস শুরু করেন তারা। সেখানে তাদের ১২ বছরের সংসারে তিন সন্তানের জন্ম হয়। এরপর বনিবনা না হওয়ায় দুই মেয়েকে নিয়ে দেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে বাংলাদেশে এসে রিট করেন এরিকো। তখন সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টি পারিবারিক আদালতে নিষ্পত্তি করতে বলেন।
২০২৩ সালের ২৯ জানুয়ারি ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান শিশুদের জিম্মা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে রায় দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে পরদিন ইমরান শরীফ আপিল করেন জেলা জজ আদালতে। ১২ জুলাই জজ আদালতেও ইমরান শরীফের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তারপর তিনি হাইকোর্টে রিভিশন করেন। ১৩ ফেব্রুয়ারি সোমবার সে রিভিশন আংশিক মঞ্জুর করে রায় দেন হাইকোর্ট।
আদেশে উচ্চ আদালত বলেন, জেসমিন মালিকা শরীফের হেফাজত মায়ের পক্ষে নির্ধারণ করা হবে, তবে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি বিবেচনা করে কন্যা লায়লা লিনা শরীফের হেফাজত প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া পর্যন্ত বাবার কাছে থাকবে।
রায়টি সম্প্রতি প্রকাশ করার পর দুই পক্ষই (বাবা ও মা) পৃথক পৃথক দুটি আপিল আবেদন করেন। ইমরান শরীফ বড় মেয়েকে তার কাছে ফেরাতে চেয়ে এবং নাকানো এরিকো মেজো মেয়েকে তার কাছে নিতে চেয়ে লিভ টু আপিল আবেদন করেন।
এর মধ্যে ইমরানের আবেদনে একটি নিষেধাজ্ঞার আবেদন ছিল। যেখানে বলা হয়েছে, মেয়েকে যেন দেশের বাইরে না নেওয়া হয়। ওই আবেদনের ওপর ৯ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত শুনানির জন্য গত ১৫ এপ্রিল দিন ধার্য করে স্থিতাবস্থার আদেশ দেন। কিন্তু এর মধ্যেই বড় মেয়েকে নিয়ে মা নাকানো এরিকো জাপানে চলে গেছেন।
ইমরান শরীফের আইনজীবী ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম বলেন, সন্তানদের দেশের বাইরে যেতে আদালতের স্থিতাবস্থা ছিল। তা সত্ত্বেও বড় সন্তানকে নিয়ে এরিকো চলে গেছেন। এ কারণে আদালত অবমাননার আবেদন করা হয়েছে। আজ (২১ এপ্রিল) আদালত অবমাননার আবেদন ও লিভ টু আপিলের ওপর করা পৃথক দুটি আবেদনও শুনানি হবে।
তবে এরিকোর আইনজীবী মো. শিশির মনির জানান, গত ৯ এপ্রিল দুপুর ১টায় আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত স্থিতাবস্থার আদেশ দিয়েছেন। এ আদেশ হওয়ার পূর্বেই বেলা ১১টার দিকে ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে তারা দেশত্যাগ করেন। এছাড়া হাইকোর্টের রায়ের কোথাও বলা নেই যে, বাবা ও মা সন্তানদের নিয়ে দেশত্যাগ করতে পারবেন না।
বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট
সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সালাউদ্দিন রিগ্যান সোমবার (২২ এপ্রিল) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এ রিটটি দায়ের করেন।
বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এই রিটের শুনানি অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।
এরই মধ্যে রিটের একটি কপি হাতে পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। সেখানে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। রিটে দুদক চেয়ারম্যান ও সচিবসহ চারজনকে বিবাদী করা হয়েছে।
এর আগে বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অনুসন্ধানে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি দেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ ৩৪ বছর ৭ মাস চাকরি করে গত ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর অবসরে যান। অবসর গ্রহণের পর দেখা যায়, বেনজীর আহমেদ তার স্ত্রী ও কন্যাদের নামে অঢেল সম্পত্তি অর্জন করেছেন, যা তার আয়ের বিচারে অভাবনীয়।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ মার্চ দৈনিক কালের কণ্ঠে ‘ঢাকায় বেনজীরের জন্ম আলাদীনের চেরাগ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হলে নতুন করে আলোচনায় উঠে আসেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ও র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদে। প্রতিবেদনে বলা হয়, স্ত্রী জিশান মির্জা এবং দুই মেয়ে ফারহিন রিশতা বিনতে বেনজীর ও তাহসিন রাইসা বিনতে বেনজীরের নামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক।
ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বেনজীরের অঢেল সম্পদের মধ্যে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামে এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। এ ছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে তার বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি।
অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মতো হওয়ার কথা।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) চিঠি পাঠিয়ে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনও জানান, বেনজীর আহমেদ তার পদের অপব্যবহার করে তার আয়ের তুলনায় প্রতিবেদনে উল্লিখিত সম্পত্তিগুলো অধিগ্রহণ করেছেন বলে বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক এই মহাপরিদর্শক, তার স্ত্রী, বড় মেয়ে এবং ছোট মেয়ের নামে থাকা অঢেল সম্পদ কীভাবে অর্জিত হয়েছে, তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদককে অনুরোধ করেছেন তিনি।
সনদ বাণিজ্য : কারিগরি শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানের স্ত্রী কারাগারে
সনদ বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আলী আকবর খানের স্ত্রী শেহেলা পারভীনকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকালে শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল্লাহর আদালত এ আদেশ দেন।
মিরপুর মডেল থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার সাব-ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দিন জানান, এ থানার মামলায় দুই দিনের রিমান্ড শেষে এদিন সেহেলা পারভীনকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালবাগ গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক আমিরুল ইসলাম তাকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন। অন্যদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুর রহমান জামিন চেয়ে আবেদন করেন। আদালত আগামীকাল বুধবার জামিন শুনানির দিন ধার্য করে সেহেলা পারভীনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এর আগে গত ২১ এপ্রিল সেহেলা পারভীনের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট। ওইদিন আদালতে পুলিশের দেওয়া রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, এ মামলায় গ্রেপ্তার আসামি কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট এ কে এম শামসুজ্জামানকে পরিদর্শন শাখা থেকে কম্পিউটার সেলের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে পোস্টিংয়ের জন্য সাড়ে ৫ লাখ টাকা এবং পরবর্তীতে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে না মর্মে তিন লাখ টাকা সেহেলা পারভীনকে দিয়েছেন। এই মর্মে আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন এ কে এম শামসুজ্জামান।
পরবর্তীতে গত ২০ এপ্রিল (শনিবার) সেহেলা পারভীন জিজ্ঞাসাবাদে একে এম শামসুজ্জামানের নিকট থেকে ৩ লাখ টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন ও পোস্টিং সংক্রান্ত সাড়ে ৫ লাখ টাকার কথা কৌশলে এড়িয়ে যান। সেহেলা পারভীনের স্বামী মো. আলী আকবর খান কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হওয়ায় তার স্বামীর দ্বারা ইতোপূর্বে গ্রেপ্তারকৃত আসামি একে এম শামসুজ্জামানকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিন লাখ টাকা গ্রহণ করেছিল বলে স্বীকার করেন। সেহেলা পারভীনের সুযোগ-সুবিধার প্রতিশ্রুতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আসামি একে এম শামসুজ্জামান নির্ভয়ে জাল সার্টিফিকেট তৈরি করে দেশব্যাপী বিভিন্ন সার্টিফিকেট প্রত্যাশীদের কাছে বিক্রি করে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করেছে। মামলার ঘটনার সঙ্গে আসামি সেহেলা পারভীনের জড়িত থাকার বিষয়ে প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এর আগে একই মামলায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট শামসুজ্জামান, সাবেক কর্মচারী ও বর্তমানে শামসুজ্জামানের সনদ তৈরির নিজস্ব কারখানায় নিয়োজিত কম্পিউটারম্যান ফয়সাল হোসেন, গড়াই সার্ভে ইনস্টিটিউটের পরিচালক সানজিদা আক্তার ওরফে কলি, হিলফুল ফুজুল নামের কারিগরি প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপাল সরদার গোলাম মোস্তফা ও যাত্রাবাড়ীর ঢাকা পলিটেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পরিচালক মাকসুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের মধ্যে কয়েকজন বর্তমানে রিমান্ডে আছেন।
গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান (অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) জানান, গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের একাধিক দল ১ এপ্রিল ভোররাত থেকে নজরদারিতে রেখে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মিরপুরের দক্ষিণ ও মধ্য পীরেরবাগ এবং আগারগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট একেএম শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগী ফয়সাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের সময় কাছাকাছি দুটি বাসায় তাদের হেফাজত থেকে একাধিক কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রিন্টার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে চুরি করে নেওয়া হাজার হাজার অরিজিনাল সার্টিফিকেট এবং মার্কশিটের ব্লাঙ্ক কপি, তৈরি করা শতাধিক সনদ এবং ট্রান্সক্রিপ্ট, বায়োডাটা ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল উদ্ধার করা হয়েছে।
এসব কম্পিউটার, প্রিন্টার ও ল্যাপটপ দিয়ে গত কয়েক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি আসল সনদ, মার্কশিট বানিয়ে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে জানান ডিসি মশিউর রহমান।
এছাড়া সরকারি ওয়েবসাইট, সরকারি পাসওয়ার্ড ও অথরাইজেশন ব্যবহার করে ভুয়া লোকদের কাছে বিক্রি করা সনদগুলোকে বাংলাদেশ সরকারের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়েছে। ফলে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর যেকোনো দেশে বসে এই ওয়েবসাইটে গিয়ে রোল নম্বর, রেজিস্ট্রেশন নম্বরগুলোকে সার্চ করলে সার্টিফিকেটগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হবে।
ডিসি মশিউর রহমান জানান, একে এম শামসুজ্জামানের বাড়ি দিনাজপুরে। তিনি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সিস্টেম অ্যানালিস্ট হিসেবে যোগদান করেছেন ২০০৯ সালে। বর্তমানে তার পদ সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার বিভিন্ন থানার আনাচে-কানাচে অবস্থিত কারিগরি বিদ্যালয় ও মহাবিদ্যালয়গুলোতে পড়ালেখা করা হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর রেজিস্ট্রেশন, রোল নম্বর, সনদ ও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি, সেগুলোকে নির্দিষ্ট সার্ভারে আপলোড দেওয়া, ভেরিফিকেশন নিশ্চিত করা, কম্পিউটার সিস্টেম কোড সংরক্ষণ গোপনীয়তা বজায় রাখাসহ বাংলাদেশের কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সকল প্রকার ডিজিটালাইজেশন এবং কম্পিউটারাইজেশন মূল দায়িত্ব তার কাঁধে।
সিস্টেম অ্যানালিস্ট হওয়ার কারণে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতি বছর কত হাজার পরীক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে, কতজন ফরম ফিলআপ করে রোল নম্বর পেয়েছে, কতজন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি আবার কতজন কৃতকার্য ও অকৃতকার্য হয়েছে তার সব তথ্যই শামসুজ্জামানের কাছে থাকতো। এ বিশাল তথ্যভাণ্ডার, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের কর্তৃপক্ষ, সিস্টেম কোড ও পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে লাখ লাখ টাকার সনদ ও মার্কশিট বাণিজ্য করেছেন শামসুজ্জামান এবং তার সহযোগীরা।
ডিবির এ কর্মকর্তা আরও জানান, ২০১৭ সালেও মার্কশিট ও সনদ বিক্রির অভিযোগে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট প্রকৌশলী একে এম শামসুজ্জামানকে সাময়িকভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের মাধ্যমে আবার চাকরিতে পুনর্বহাল হয়ে তিনি এ পর্যন্ত পাঁচ হাজার সনদ-মার্কশিট বিক্রি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।