• ঢাকা শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারি ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১
logo

অতীত ভুলে সামনে তাকাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র  

আরটিভি নিউজ

  ১৬ মে ২০২৪, ১৮:০৮

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের দৌড়ঝাঁপ এবং নির্বাচনকেন্দ্রিক নতুন ভিসা নীতি স্মরণ করিয়ে দেওয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র চিঠি দুটি বেশ সমালোচিত হয়েছিল। দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল বেশ কয়েকটি দেশ। আর তাতে দুই দেশের মধ্যে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল বলে মনে করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এজন্য মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রীর এই সফর ছিল শুধুই সম্পর্ক উন্নয়নের এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার। আর তাই তিনি বলে গেছেন, আমরা সামনে তাকাতে চাই, পেছনে নয়।

গত মঙ্গলবার দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ডোনাল্ড লু। ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশ সফরে আসেন তিনি। দুইদিনের সফরের প্রথম দিনে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি। এরপর রাতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের বাসভবনে এক নৈশভোজে অংশ নেন। সুশীল সমাজের সঙ্গে বৈঠকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মানবাধিকার, শ্রম আইন এবং জলবায়ু বিষয়ে আলাপ করেন লু।

সালমান এফ রহমানের সঙ্গে নির্ধারিত আলাপের মার্কিন ব্যবসায়ীদের লভ্যাংশ ছাড়, র‍্যাবের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, ফিলিস্তিন ইস্যু , শ্রম আইন সংশোধন এবং সম্পর্ক উন্নয়ন নিয়ে কথা হয়েছে। সালমান এফ রহমান জানান, নির্বাচনের আগে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল, সে বিষয়ে আলোচনা তোলেননি মার্কিনিরা, আমরাও তুলিনি। তারা বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বাস পুনরায় স্থাপন করতে চান।

বুধবার ডোনাল্ড লু পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, পরিবেশমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গেও বৈঠক করেন লু। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু’র সঙ্গে অতীত নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আমরা ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছি, অতীতের কোনও বিষয় নিয়ে কথা হয় নাই।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ এবং আমেরিকার মধ্যে যে সম্পর্ক আছে, সেটাকে কীভাবে আরও এগিয়ে নিতে পারি, সেবিষয়ে আলোচনা হয়েছে। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই যে বিষয়গুলোতে আমাদের অবস্থান অভিন্ন, যেমন: জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর অভিঘাত মোকাবেলায় বাংলাদেশ এবং আমেরিকা আরও কীভাবে কাজ করতে পারে, সেটা নিয়ে আলাপ করেছি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ জানান, বৈঠকে অতীত নিয়ে কোনও কথা হয়নি। আমরা দু’জনই বলেছি যে, অতীতে কী ঘটেছে, সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না।

মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কথা না হলেও বৈঠকে র‍্যাবের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। তিনি জানান, র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার বিষয়টি যে দু’দেশের সম্পর্কের উপরে প্রভাব ফেলেছে, সেটা আমরা বলেছি। দু’দেশের সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে মার্কিন সরকার বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা ফিরিয়ে দিতে চায় বলেও জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

এদিকে বৃহস্পতিবার প্রেসক্লাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, বিএনপির সব আশার গুড়ে বালি ঢেলে দিয়েছেন লু। ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অথচ বিএনপির নেতারা কোন কিছুই দেখতে পায় না। কালকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঘুরে যাওয়ার পর তাদের (বিএনপি) মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছে। উনারা আশা করেছিল কী না কী বলে। অনেক চেষ্টাও করেছিল দেখা সাক্ষাত করার জন্য। কিন্তু তাদের আশার গুরে বালি দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্তা দিয়ে গেছে তারা সম্পর্ককে আরও গভীর করতে চায়, সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। এবং আমরাও সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ব্রিফিং করেন ডোনাল্ড লু। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে ঢাকার সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে ‘অনেক টেনশন’ তৈরি হয়েছিল উল্লেখ করে ডোনাল্ড লু বলেছেন, এসব সরিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সামনে তাকাতে চায়, পেছনে নয়।

ডোনাল্ড লু বলেন, বাংলাদেশ সফরে এসে গত দুই দিনে আমি দুই দেশের জনগণের মাঝে পুনরায় আস্থা স্থাপনের চেষ্টা করছি। আমরা জানি, গত বছর বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেক টেনশন ছিল। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন (বাংলাদেশে) অনুষ্ঠানে যথেষ্ট চেষ্টা করেছিলাম। এতে কিছু টেনশন তৈরি হয়েছিল। আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক।

পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গে ডোনাল্ড লু বলেন, আমাদের সম্পর্কের পথে অনেকগুলো কঠিন বিষয় রয়েছে, র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা, মানবাধিকার, শ্রম অধিকার ও ব্যবসার পরিবেশের উন্নয়ন। তাকে বলেছি কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হলে ইতিবাচক সহযোগিতার ওপর ভর করে এগিয়ে যেতে চাই।

দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের পাশাপাশি আরও কিছু কার্যক্রমে অংশনেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্র মন্ত্রী। বুধবার সকালে তিনি জলবায়ু নিয়ে কাজ করা সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ফেসবুক পোস্টে মার্কিন দূতাবাস বলছে, জলাভূমি ও বন সংরক্ষণের উদ্যোগকে সমর্থন করা থেকে শুরু করে ঐতিহ্যবাহী জ্ঞানের ব্যবহার এবং বায়ু দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করা তরুণ কর্মীদের ক্ষমতায়ন পর্যন্ত, যুক্তরাষ্ট্র জলবায়ু ও দূষণ সংকট মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাথে কাজ করার জন্য নিবেদিত। আজ নিবেদিতপ্রাণ সুশীল সমাজের নেতাদের সাথে আমাদের আলোচনায় অনুপ্রাণিত হয়েছি।

দুইদিনের সফর শেষে বৃহস্পতিবার ভোরে ঢাকা ত্যাগ করেন মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ভোর পৌনে ৪টার দিকে তাকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যায়।

সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ূন কবিরের মতে, যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। এটি স্পষ্ট। আমরা তাদের প্রত্যাশার সঙ্গে কতটুকু মিলিয়ে চলতে পারবো তার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যতের সম্পর্ক।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সংলাপ বুধবার
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বৈপরীত্যের সম্ভাবনা ক্ষীণ
বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র
যেভাবে দেখবেন বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সিরিজ