• ঢাকা মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১
logo

‘ব্যবস্থাপনার ত্রুটি সারালে ঈদযাত্রায় ভোগান্তি কমবে’

আরটিভি নিউজ

  ০৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৭:৫৮
ছবি : আরটিভি

ঈদযাত্রার শেষ দিনগুলোতে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ লাখ মানুষ ঢাকা ছাড়বে। এতো মানুষের চাপ মোকাবিলা করা কঠিন। তবে ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটিগুলো দূর করা গেলে ভোগান্তি অনেকটাই কমে আসবে। এজন্য ঈদযাত্রা নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর সক্রিয় থাকতে হবে। ঈদের আগে পরে যেন কোনোভাবেই মহাসড়কে থ্রি হুইলার বা অযান্ত্রিক যানবাহন উঠতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বিভিন্ন সেতু বা এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজাগুলোতে যেন ভোগান্তি না হয় তার কৌশল ঠিক করতে হবে। প্রয়োজনে ঈদের দু’একদিন আগে থেকে টোল ফ্রি করে দিতে হবে।

বুধবার (৩ এপ্রিল) রাতে আরটিভির বিশেষ আয়োজন ‘ঈদে ঘরে ফেরা’ অনুষ্ঠানে আলোচকরা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সৈয়দ আশিক রহমান।

অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে ছিলেন, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর, ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, গণপরিবহন ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান এবং বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঈদের আগে-পরে লম্বা ছুটি থাকার কারণে এবার অন্যান্যবারের চেয়ে বেশি মানুষ বাড়ি যাবে। ফলে ঈদের আগে ছুটি বাড়াতে বলেছিলাম, কিন্তু সরকার সেটি করেনি। তাই মানুষ ঈদের আগে মাত্র একদিন ছুটি পাচ্ছে। রাজধানী থেকে সড়ক, রেল ও লঞ্চসহ চারটি পথে একদিনে ২০ লাখের মতো মানুষ ঢাকা ছাড়তে পারে। অতিরিক্ত যাত্রীপরিবহন করা হলে হয়তো সর্বোচ্চ ত্রিশ লাখ হবে। কিন্তু আমরা আশঙ্কা করছি আগামী ১০ এপ্রিল একসঙ্গে ৪০ থেকে ৫০ লাখ লোক একসঙ্গে রাস্তায় নামবে। এদিকে হাইওয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, বাস-ট্রাকের ছাদে কাউকে যেতে দেওয়া হবে না। কিন্তু এতো লোক যখন রাস্তায় নামবে তখন কোনো ঘোষণাই কাজে আসবে না। এর অনিবার্যে পরিস্থিতি হিসেবে আমরা শতশত প্রাণহানি এবং ঈদযাত্রার পথে পথে ভোগান্তির আশঙ্কা করছি।

তিনি বলেন, এ ছাড়া সড়ক পরিবহনের নেতারা, হাইওয়ে পুলিশ এবং বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে এবার কঠোর ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আমরা দেখছি, প্রকাশ্যে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় যদি বন্ধ না হয়, তাহলে সাধারণ মানুষকে বাসের ছাদে, ফিটনেসবিহীন গাড়িতে, কাভার্ড ভ্যানে চড়ে বাড়ি যেতে হবে। এতে তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে।

সিনিয়র সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা বলেন, ঈদে প্রতিবছর অনেক মানুষ ঢাকার বাহিরে যায়। স্বাভাবিক কারণেই সবচেয়ে বড় চাপটা এসে পড়ে সড়কে। কারণ রেলে সবাইকে পরিবহন করতে পারবে না আবার সবাই বিমানে যেতেও পারবে না। আর নৌ পরিবহনকেও আমরা সম্পূর্ণ কাজে লাগাতে পারিনি। তাই মূল চাপটা সড়কে পড়ে আর বিভিন্ন জায়গায় যানজট সৃষ্টি হয়। শুধু কাঁচপুর থেকে সোনারগাঁও পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রাস্তায় দেখবেন কিরকম ভয়ঙ্কর অবস্থা তৈরি হয়। ইন্দোনেশিয়ায় ৯ কোটি মানুষ ঈদে বাড়ি যায়। একসময় তাদেরও সমস্যা হতো। কিন্তু তারা বেশকিছু কাজ করেছে। পর্যায়ক্রমে ছুটি দেওয়া, দরিদ্র মানুষকে ফ্রিতে পরিবহন করে। এমনকি নৌবাহিনী জাহাজ দিয়ে সহযোগিতা করে। বিআরটিএ বা বিআরটিসি এমনটি করতে পারে কি না? আমাদের সেক্টর করপোরেশনগুলোর বাসগুলো পড়ে থাকে। আমরা সেগুলো নামাতে পারি কি না। এই বাসগুলোর কন্ডিশন ভালো এবং চালকারও দক্ষ। এ ছাড়া প্রত্যেকবার বলা হয় সেতু, ফ্লাইওভার ও সড়ক টোল ফ্রি রাখতে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেন রাখা যায় না?

তিনি বলেন, সামগ্রিকভাবে নির্বিঘ্নে ঈদযাত্রার জন্য আমাদের একটা বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েই আমাদের ঈদের সময়টা পার করতে হয়। তবে শেষসময়ে না এসে ঈদযাত্রা নিয়ে আমাদের অনেক আগে থেকেই চিন্তা করতে হবে। আমাদের রেলকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে। আরও দ্রুতগতি সম্পন্ন রেল আনতে হবে।সড়কের আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

গণপরিবহন ও দুর্ঘটনা বিশেষজ্ঞ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মো. হাদিউজ্জামান বলেন, ঈদে আমাদের চাহিদার তুলনায় জোগান (পরিবহন) কম। আমরা হিসেব করে দেখেছি প্রতিদিন প্রায় ১০ লাখ বা ৩৫ শতাংশ মানুষের ঈদযাত্রার জন্য কোনো বিকল্পই থাকবে না। তারা বিভিন্নভাবে, ট্রেনের-বাসের ছাদে করে যেতে বাধ্য হবে। এসব মানুষের যাতায়াতের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা কী হবে, সেটি ভেবে দেখা দরকার। আমাদের সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত পরিবহন পুলে যেসব বাস রয়েছে, সেগুলো নিয়মিত মেরামত করা হয় এবং চালকরাও দক্ষ। এসব বাস নিয়ে যদি আমরা জোগান দেই এবং ঢাকা থেকে আনফিট গাড়িগুলো বের হতে না দিই, তাহলে সড়কে প্রতিবছর আমরা যে রক্তক্ষরণ ও যানজট দেখি তা অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

তিনি বলেন, প্রতিবছরই ঈদের আগে বলা হয়, লক্কড়-ঝক্কড় আনফিট গাড়ি মহাসড়কে নামতে দেওয়া হবে না। অথচ আনফিট গাড়িগুলো যে রাস্তায় নামানোর জন্য ঘষামাজা করে প্রস্তুত করা হচ্ছে সেখানে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। এ ছাড়া বলা হচ্ছে রুট পারমিটবিহীন গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। অথচ ইতোমধ্যে রুট পারমিটিবিহীন গাড়ি ঢাকা শহরে ঢুকে গেছে। তার মানে আমরা নীতি নিচ্ছি, কিন্তু পরবর্তী ব্যবস্থাপনাটা ঠিকভাবে করছি না। অন্যবার যে আমরা সরাসরি অবকাঠামোর উপর দোষ চাপাই এবার সেই সুযোগ নাই। কারণ আমাদের অনেকগুলো চারলেনের সড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে, ব্রিজ-কালভার্ট, সেতু হয়েছে। আমাদের নীতি ও ব্যবস্থাপনার বিষয়ে কঠোর ও তৎপর হতে হবে।

ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ঢাকা থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের ১১টি পথ রয়েছে। সেখান থেকে কয়েকটি পথ প্রধান। এগুলো হলো- গাবতলি, আব্দুল্লাহপুর এবং সায়েদাবাদ হয়ে পোস্তগোলা ব্রিজ ও সিলেট-চট্টগ্রামের দিকে। এসব জায়গায় আমরা ডিএমপির পক্ষ থেকে আমাদের চেষ্টা থাকবে যেন, সহজভাবে কোনো জ্যাম ছাড়াই গাড়িগুলো ঢাকা থেকে বের হতে পারে। এর জন্য অতীতের সমস্যাগুলো বিশ্লেষণ করে আমরা কিছু সমাধান বের করার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন জায়গায় কাজ চলছে। সবকিছু মাথায় রেখেই আমরা আমাদের পরিকল্পনা সাজিয়েছি যেন সব গাড়িকে আমরা সহজে ঢাকা থেকে বের হতে দিতে পারি। এ ছাড়া দুর্ঘটনা কমাতে লাইসেন্সবিহীন চালক, ফিটনেসবিহীন গাড়ি যেন চলতে না পারে সেই প্রচেষ্টা আমাদের থাকবে। পাশাপাশি কেউ যেন অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে না পারে, সেজন্য স্পিডমিটার নিয়ে হাইওয়ে পুলিশ মাঠে থাকবে। আমরা সবাই আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় এবং সচেতন রয়েছি।

অনুষ্ঠানে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীর বলেন, রেলপথে যাত্রা নিরাপদ করতে ইতোমধ্যে আমরা সব রুট পর্যবেক্ষণ করে যেখানেই সংস্কারের প্রয়োজন ছিল করেছি। আমাদের প্রতিটি ট্রেন যাত্রা শুরু করার দুই ঘণ্টা আগে ওই রুটের সিকিউরিটি চেক হবে। ট্রেন দুর্ঘটনা বা লাইনচ্যুত এড়ানোর জন্য আমরা সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। এ ছাড়া কেউ যেন ট্রেনের ছাদে না উঠে সেজন্য আমরা মাইকিং করছি। যেসব স্টেশনে এক্সেস কন্ট্রোল নেই, সেসব জায়গায় আমরা বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছি। যাত্রীরা ছাদে উঠলে যখন ওভারলোড হয়ে যায় তখন ট্রেনের শক এভজরবারগুলো ভেঙে যায় তখনই দুর্ঘটনা ঘটে। আমরা কখনই চাই না কেউ ট্রেনের ছাদে উঠুক।

তিনি বলেন, আমরা দশদিন আগে টিকিট বিক্রি করছি এ কারণেই যেন তাদের যাত্রা নির্বিঘ্ন হয়। ট্রেনের টিকিট না পেলেও যেন অন্য মাধ্যমে যেন বাড়ি যেতে পারে। কিন্তু যারা ঈদের একদিন আগে ছুটি পায়, সে তো ট্রেনের ছাদে চড়ার চেষ্টা করবেই। সে জন্য আমরা যাত্রীদের সচেতন করতে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, এ বছর আমাদের প্রস্তুতি অনেক ভালো। আমরা সারাদেশের মহাসড়কের ১৫৫টি যানজট স্পট চিহ্নিত করেছি। এসব স্পটে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে। তার সঙ্গে পুলিশও থাকবে। পাশাপাশি জেলা সেচ্ছাসেবকসহ পরিবহনের লোকজনও মাঠে থাকবে। এভাবেই কিন্তু গতবারও আমরা কাজ করে সফল হয়েছি। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে আশা করি এবারও আমরা সফল হবো, মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে। এজন্য আমি সবার সহযোগিতা চাই।

তিনি আরও বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমরা ১১টি সেতুতে ইলেক্ট্রনিক টোল কালেকশন (ইটিসি) চালু রেখেছি। ১০ শতাংশ ডিসকাউন্টও দিচ্ছি। তবে অনেকেই এটির সুবিধা নিচ্ছে না। আমাদের পরিকল্পনা এ বছর থেকেই মানুষকে ইটিসির সুবিধা নিতে বাধ্য করব। ইটিসি ছাড়া কোনো গাড়ি সেতু পার হতে পারবে না।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
ঈদযাত্রায় বেশি মৃত্যু মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায়
ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ৩২০ প্রাণ 
ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরল ৪০৭ প্রাণ
ঈদযাত্রায় ফিরতি ট্রেনে যাত্রীর চাপ
X
Fresh