• ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
logo

শেকলবন্দি দেশ : রেলের অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে যুবকের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ

মেসবাহ হাসান, আরটিভি

  ১৮ জুলাই ২০২২, ১৩:১৪

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা, টিকিট কালোবাজারি কিংবা টিকিট কাটতে গিয়ে যাত্রীদের ভোগান্তি নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিবাদ আবারও সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। মহিউদ্দিন রনি নামে ওই যুবক ১১ দিন ধরে রেলের অব্যবস্থাপনা নিরসনে ৬ দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করছে।

এই যুবকের প্রতিবাদী অবস্থান কৌতূহল বাড়িয়ে দিচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ দাঁড়িয়ে শুনছেন যুবকের কথা। কেউ কেউ মহিউদ্দিন রনির দাবির সঙ্গে সহমতও জানাচ্ছেন। এ যেন সবার ভেতরের কথা, দুর্ভোগ লাগবের কথা।

রনির অভিযোগ, গত ১৩ জুন রাজশাহী যেতে টিকিট কাটার চেষ্টা করেন তিনি। টিকিট না মিললেও তার অ্যাকাউন্ট থেকে কেটে নেওয়া হয় টাকা। এরপর বিভিন্ন জনের দ্বারস্থ হয়েও টিকিট কিংবা টাকার কোনো ফেরত না পেয়ে ঈদে বাড়িতে না গিয়ে ৭ জুলাই থেকে শুরু করেন কমলাপুর রেলস্টেশনে অবস্থান কর্মসূচি।

তিনি বলেন, অনলাইনে আমি চারটি টিকিট বুক করি। এরপর বিকাশ অ্যাপের পেমেন্ট অপশনে যাই। সেখানে আমার নম্বর দিই। একটা ভ্যারিফিকেশন কোড আসার পর দেখি, আমার অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। আমি অবাক হলাম এ জন্য যে, পিনকোড ছাড়া কীভাবে টাকা কেটে নিল! টিকিট বা ডকুমেন্টস কিছুই দেওয়া হয়নি। আমি শঙ্কায় পড়ে যাই। এরপর বিকাশের কল সেন্টারে ফোন দিই। তারা জানায়, সহজ ডটকমের সার্ভার থেকে টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে টিকিট না দিলে সহজ ডটকমে যোগাযোগের ব্যাপারে বলা হয়। আমি কমলাপুর রেলস্টেশনের দোতলায় সহজ ডটকমের অফিসে আসি। সেখানে গিয়ে আমার সমস্যার কথা বলি। নিউটন বিশ্বাস নামে একজন অপারেটর ছিলেন। তাকে জানাই, রাজশাহীতে টিকিট পাঠাতেই হবে। টিকিট দেওয়া যাবে কিনা। তিনি বলেন, এটা তাদের সিস্টেম ফল্ট। সিট ব্লকড হয়ে গেছে বলে টিকিট দেওয়া যাবে না। তাদের কিছুই করার নেই। এরপর ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন রনি। ১৪ এবং ১৫ জুন দুইবার অভিযোগ করেন তিনি।

এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কথা বলতে রাজি হননি। তবে রনির অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করছেন সহজ ডটকম কর্তৃপক্ষ। সহজ ডটকমের জনসংযোগ ব্যবস্থাপক ফারহাত আহমেদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি জানান, পাসওয়ার্ড ছাড়া যে ওনার টাকা কেটে নিয়েছে এটার তথ্য দিয়ে প্রথমে বিকাশকে অভিযোগ করতে হবে। এ ছাড়া টিকিট বিক্রয়ের যে প্রক্রিয়া আছে তার সঙ্গে তার (রনি) অভিযোগ মোটেও মানানসই না বলে জানান এই কর্মকর্তা।

এদিকে রেলের টিকিট না পাওয়া মহিউদ্দিন রনির অভিযোগের শুনানি বুধবার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকারের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী মো. হাসানুজ্জামান।

তিনি বলেন, সহজ ডটকম এবং রেল বিভাগের বিরুদ্ধে অনিয়মের বিষয়ে ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দিয়েছিলেন মহিউদ্দিন রনি। আগামী বুধবার (২০ জুলাই) শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। সেদিন সকাল ১০টার দিকে সহজ ডটকমের প্রতিনিধি এবং অভিযোগকারীকে অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় যদি রেল বিভাগের দায় থাকে তবে রেল বিভাগকেও ডাকা হবে বলে জানান এই ভোক্তা অধিকারের প্রধান কার্যালয়ের এই সহকারী। এ বিষয়ে মহিউদ্দিন রনির সঙ্গে কথা বললে তিনি হাইকোর্টে রিট করবেন বলে জানান।

মহিউদ্দিন রনির ছয় দফা দাবি হলো- ১. টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সহজডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে ও হয়রানির ঘটনায় তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে হবে। ২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে টিকিট বিক্রিতে কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে। ৩. অনলাইনে কোটায় টিকিট ব্লক করা বা বুক করা, বিশেষ করে ভিআইপিদের ক্ষেত্রে টিকিট বুক করা বন্ধ করতে হবে এবং অনলাইন-অফলাইনে টিকিট কেনার ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। ৪. যাত্রীচাহিদার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। ৫. ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক-তত্ত্বাবধায়কসহ অন্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক নজরদারি ও শক্তিশালী তথ্য সরবরাহব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বাড়াতে হবে। ৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।


রনি একাই এই কার্যক্রম শুরু করলেও তার সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন অনেকেই। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এই কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন তিনি।

১১ দিন ধরে প্রতিদিনই কমলাপুর রেলস্টেশনের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী অবস্থান নিচ্ছেন রনি। বেশির ভাগ সময়ই থাকেন একা। কখনও কখনও তার সঙ্গে যোগ দেয় বন্ধুরা। তার বিশ্বাস, উদ্যোগ নিলে বদলে ফেলা সম্ভব রেলের জঞ্জাল। তবে স্টেশন কর্তৃপক্ষের হুমকির কারণে নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন রনি।

রনির এ কর্মসূচি ইতোমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। রেলওয়ের অনিয়ম ও ভোগান্তির বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছে। তুলে ধরছেন তাদের ভোগান্তির কথা।
উল্লেখ্য, রনি এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারের নানান সমস্যা নিয়ে অনশন করেছিলেন। পরে ঢাবি ভিসি ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্বাসে অনশন ভাঙেন।

মন্তব্য করুন

daraz
  • বাংলাদেশ এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তীব্র তাপদাহে বেঁকে গেল রেললাইন
রেললাইনে উঠে গেল বাস, প্রাণে বাঁচল হাজারও যাত্রী 
যে কারণে ১০ মিনিট বন্ধ ছিল মেট্রোরেল
ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে ৪ মে থেকে
X
Fresh